ক্যানসারের চিকিত্সায় খেলাধুলা
২২ নভেম্বর ২০১১খেলাধুলা বা কায়িক পরিশ্রমে অভ্যস্ত মানুষদের আয়েশি মানুষদের তুলনায় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল চিকিত্সক সমীক্ষার মাধ্যমে এই ফলাফল পেয়েছেন৷ বিশেষ করে স্তন, মলাশয় ও প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকে তাদের৷ মিউনিখ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ক্রীড়া বিষয়ক চিকিত্সক মার্টিন হালে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পেশিকে সক্রিয় রাখাটাই হল আসল বিষয়৷ এর একটা প্রভাব পড়ে শরীরের রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও রোগ সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া ও উপাদানের ওপর৷ এর ফলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়৷''
নিয়মিত হাঁটাচলা করলে ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকে
যে সব ব্যক্তি নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করেন, তাঁদের মলাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এক চতুর্থাংশ কমে যায়৷ এ জন্য বড় মাপের খেলোয়াড় হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ প্রতিদিন আধ ঘন্টা হাঁটা বা ৪৫ মিনিট সাইকেল চালানোই যথেষ্ট৷ সপ্তাহে কিছুটা সময় একটু ঘর্মাক্ত হলেই চলবে৷ হাঁটার বদলে প্রতিদিন আধঘন্টা দৌড়ালে মলাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস পাবে৷ এছাড়া কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলেও হাঁটাচলা উপকারে আসতে পারে৷ হেলগা রিড'এরও কাজে এসেছিল শারীরিক তত্পরতা৷ আড়াই বছর আগে স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘কেমোথেরাপির পাশাপাশি আমি খেলাধুলাও চালিয়ে গিয়েছি৷ বলা যায় সকালের দিকে কেমোথেরাপি বিকালে শরীরচর্চা, এই ছিল রুটিন৷''
হেলগা রিড সঠিক থেরাপি বেছে নিয়েছিলেন৷ শারীরিক তত্পরতা প্রচলিত থেরাপিকে সহায়তা করে৷ ক্রীড়া চিকিত্সক মার্টিন হালে অবশ্য এ ব্যাপারে শুরুতে সন্দিহান ছিলেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল যে, রোগীরা এমনিতেই কেমোথেরাপি নিয়ে কাহিল, তার ওপর আরো চাপ দেয়াটা কী ভাল? কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, কায়িক শ্রম রোগীকে সাহায্য করে৷ সেটা অল্পসল্প হলেও৷''
ক্যানসারের চিকিত্সায় রোগীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেন
এ ক্ষেত্রে রোগীদের একটা অনুভূতি হয় যে, আরোগ্য লাভের জন্য নিষ্ক্রিয়ভাবে শুধু কেমোথেরাপি নেওয়া নয়, সক্রিয় হয়ে নিজেরাও কিছু করতে পারছেন৷ হাঁটাচলা বা খেলাধুলা রোগীদের শরীরের প্রতিরোধের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়৷ ডা. মার্টিন হালে বলেন, ‘‘এর ফলে রক্তকোষের পুনরুজ্জীবন ত্বরান্বিত হয়৷ কেমোথেরাপিতে দেখা দেওয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন যন্ত্রণা বা ডায়রিয়া হয় খুব কম কিংবা এসব উপসর্গের তীব্রতা হ্রাস পায়৷ রোগীদের জীবনের গুণগত মানও বৃদ্ধি হয় এতে৷''
এসব কারণে এখন ক্যানসারের চিকিত্সায় কেমোথেরাপির পাশাপাশি খেলাধুলা বা শরীরচর্চাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ হেলগা রিড জানান, ‘‘আমি নিজের জন্য এটা করি৷ শরীরচর্চার ইচ্ছা আমার আগেও ছিল৷ ক্যানসার যাতে আর ফিরে না আসে, সেজন্য এই আগ্রহ আরো জোরালো হয়েছে৷''
থেরাপি হিসাবে খেলাধুলা, ক্যানসার চিকিত্সায় বিষয়টিকে নতুন বলা যায়৷ নিখরচায় অংশ গ্রহণের সুবিধাসহ ২০ বছর আগে ‘ক্যানসার স্পোর্টস গ্রুপ' প্রতিষ্ঠিত হলেও, সেটিকে যথেষ্ট বলা যায় না৷ মার্টিন হালের ভাষায়, ‘‘রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ এ ছাড়া সপ্তাহে একবার নয়, একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে অন্তত তিনবার প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকতে হবে৷ আমাদের নতুন কর্মসূচির প্রয়োজন, যাতে শরীর চর্চা ও খেলাধুলাকে ক্যানসারের চিকিত্সায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়৷''
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক