খাদ্যের উপর আমাদের স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভর করে৷ খাদ্য বাছাই, খাদ্যের পরিমাণ ও অনুপাত, রান্নার পদ্ধতিসহ আরো অনেক বিষয় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷ ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এমন সচেতনতা খুব জরুরি৷
বিজ্ঞাপন
অনেকে প্রায় প্রতিদিনই মাংস খান৷ তবে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস খাবার পরামর্শ দেন৷ এর চেয়ে বেশি মাংস খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ বিশেষ করে বেশি পরিমাণ আয়রনের কারণে ‘রেড মিট' নিয়ে তাঁদের মনে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে৷
সাম্প্রতিক গবেষণায় আয়রন-তত্ত্বের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলেও বেশি মাংস ঝুঁকির কারণ থেকে যাচ্ছে৷ পুষ্টিবিজ্ঞানী উলরিকে গোন্ডার বলেন, ‘‘মাংস খাবার ক্ষেত্রে আসল সমস্যা হলো রান্নার পদ্ধতি৷ আমরা যদি কড়া করে মাংস ভাজি, বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত রান্না করি, কয়লার চুলায় সেঁকি, তখন মাংস ক্যানসারের সহায়ক পদার্থ নিঃসরণ করে৷ যেমন, পলিঅ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন৷ বার্বিকিউ করার সময় এমনটা দেখা যায়৷ তাই মাংসের ফ্যাট জ্বলন্ত কয়লার উপর না পড়লেই ভালো৷ এছাড়া মাংস বাদামী করে রান্না করলে হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনের আবির্ভাব ঘটে৷ অর্থাৎ, মাংস খাবার সময় ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে হলে পরিমাণ কম রাখার পাশাপাশি মাংস পুড়িয়ে ফেললে চলবে না৷ সেই অংশ ফেলে দিতে হবে, বেশি কড়া করে রান্না করলে চলবে না৷''
আপনার খাবার ঘরে এই জিনিসগুলোর অবশ্যই দেখা মিলবে৷ আর এগুলোতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ছবিঘরে সেই সব খাদ্যের তালিকাই তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Printemps / Fotolia
সাদা ময়দা
ময়দা সাদা করার জন্য গমকে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং তাতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়৷ এই একই ক্লোরিন কিন্তু কাপড়ের রং ওঠাতেও ব্যবহার করা হয়৷ বলা বাহুল্য, এই ক্লোরিন ব্যবহারের ফলে খাদ্যের সব পুষ্টিগুণ কমে যায়৷
ছবি: Fotolia/BK
লবণাক্ত স্ন্যাকস
পট্যাটো বা আলুর চিপসে অতিরিক্ত লবণ থাকে৷ তাই খুব বেশি চিপস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত৷ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য সব ধরনের উপাদান রয়েছে এই চিপসে৷ এছাড়া চিপসকে মচমচে করতে যে অ্যাক্রিলামাইড ব্যবহার করা হয়, সেই একই উপাদান পাওয়া যায় সিগারেটেও৷
ছবি: picture-alliance/Romain Fellens
লাল মাংস
অল্প মাত্রায় এ ধরনের মাংস খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ কিন্তু ‘লাল মাংস’ যদি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে কোলন বা প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, রেড মিট বা গরু, ছাগল এবং ভেড়ার মাংসে এক ধরনের সিলিসিক অ্যাসিড থাকে, যেটা ক্যানসারের কারণ৷
ছবি: Fotolia/hjschneider
কোমল পানীয়
কোকাকোলা, পেপসি এবং এ ধরনের অন্যান্য পানীয়তে উচ্চ মাত্রায় চিনি রয়েছে, যা কৃত্রিমভাবে রং করা৷ এ ধরনের কোমল পানীয় ভীষণ ক্ষতিকর৷ এছাড়া কৃত্রিম সুইটেনারে বেশি মাত্রায় সোডিয়াম থাকে৷ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও মাদক প্রশাসন জানিয়েছে, এ সব কোমল পানীয় গ্রহণ করলে মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে৷
ছবি: Fotolia/B. Hofacker
ভেজিটেবল তেল
সূর্যমুখী তেলে এক ধরনের রং ব্যবহার করা হয়, যাতে তা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে৷ এই তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর৷ কিন্তু তেলে যদি রঙের পরিমাণ বেশি হয়, তবে তা স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি৷
ছবি: Printemps / Fotolia
প্রক্রিয়াজাত মাংস
সসেজ, নানা রকম সালামি – এগুলো দেখতে এবং খেতে ভালোই লাগে৷ কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের জন্য উচ্চমাত্রার ‘প্রিজারভেটিভ’ ব্যবহার করা হয়৷ যত বেশি প্রিজারভেটিভ থাকে খাবারে বিষাক্ত সোডিয়াম নাইট্রেটের পরিমাণ তত বেড়ে যায়৷ ফলে ক্যানসারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়৷
ছবি: eyewave - Fotolia.com
নন-অরগ্যানিক ফল
সেসব ফলের বাগানে সার হিসেবে নাইট্রোজেন ব্যবহার হয় এবং গাছে পোকা মারার বিষ দেয়া হয়, সেই সব ফল খাওয়া খুবই বিপজ্জনক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে মাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ তাই এ রকম ‘নন-অরগ্যানিক’ ফল বেশি খেলে দীর্ঘদিন পর এর ক্ষতিকর প্রভাব শরীরেও দেখা যায়৷
ছবি: Fotolia
7 ছবি1 | 7
তবে ‘ব্যাড গাই' চেনা সহজ নয়৷ উলরিকে গোন্ডার বলেন, ‘‘অ্যাক্রিলামাইড ক্যানসারের অন্যতম কারণ হতে পারে৷ যখনই স্টার্চ বা মাড় দেওয়া খাদ্য গরম করা হয়, তখনই এই পদার্থ সৃষ্টি হয়৷ যেমন, মচমচে ও বেক করা খাবার, কফি ইত্যাদি৷ এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারকদের উৎপাদনের সময় স্টার্চের পরিমাণ কমানো উচিত৷ অ্যাক্রিলামাইড কমাতে বাসায়ও অনেক কিছু করা যেতে পারে৷ যেমন, কড়া করে ভাজা বা বেকিং না করাই উচিত৷''
মাছের ক্ষেত্রে উলরিকে গোন্ডার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের খোঁজ করেন৷ উলরিকে বলেন, ‘‘রোগ প্রতিরোধ করতে সামান্য পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড খেলেই চলে৷ সপ্তাহে দু-একবার মাছ খেলেই সাপ্তাহিক চাহিদা পূরণ হয়ে যায়৷ এই ফ্যাটি অ্যাসিড সংক্রমণ প্রতিরোধ করে৷ সেটা খুব ভালো, কারণ, ক্যানসারসহ অনেক রোগের ভিত্তিই হলো প্রদাহ বা সংক্রমণ৷''
মোটকথা, অনেক কিছু আমাদের হাতেই রয়েছে৷ যত বেশি ‘গুড গাই' ও যত কম ‘ব্যাড গাই' আমরা খাবো, ক্যানসারের ঝুঁকিও তত কমবে৷ সব কিছু ত্যাগ করার কোনো প্রয়োজন নেই৷ স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে সঠিক মিশ্রণের দিকে নজর দিলেই চলবে৷
মোনিকা কোভাকসিক/এসবি
ইন্সট্যান্ট নুডলস থেকে ক্যানসার
নুডলস কে না পছন্দ করে! রান্না করতে হয় না বলে ইন্সট্যান্ট নুডলস সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়৷ ম্যাগি নুডলস তো আজ ঘরে ঘরে! কিন্তু ইন্সট্যান্ট নুডলস মানেই যে রোগের ডিপো, তা কি জানেন?
ছবি: Fotolia/WavebreakmediaMicro
হজম ক্ষমতা কমায়
ইন্সট্যান্ট নুডলস খাওয়ার পর স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন শাক-সবজি বা ফলমূল খেলেও প্রত্যাশিত লাভ হয় না৷ কারণ শাক-সবজি বা ফলের পুষ্টিকর উপাদানগুলোকে শরীর আর তখন গ্রহণ করতে পারে না৷ ইন্সট্যান্ট নুডলস খাওয়ার কারণেই এমন হয়৷ ইন্সট্যান্ট নুডলস খেলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত শরীরের হজম প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজই করে না৷
ছবি: Colourbox
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে
ইন্সট্যান্ট নুডলসে এমন কিছু উপাদান থাকে, যেগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়৷ বিশেষ করে নুডলস অনেকদিন ভালো রাখার জন্য যে ‘প্রিজারভেটিভ’ মেশানো হয়, সেগুলোর কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে৷ কাপ-নুডলসের কাপ তৈরি করা হয় ‘পলিস্টাইরিন’ দিয়ে৷ সেই পলিস্টাইরিনেও থাকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ানোর মতো উপাদান৷ কাপে গরম পানি ঢাললেই সেই উপাদানগুলো গলে নুডলসে মিশে যায়৷
ছবি: imago/Levine-Roberts
কিডনির সমস্যা
ইন্সট্যান্ট নুডলসে প্রচুর ‘সোডিয়াম’ থাকে৷ কমপক্ষে ৮০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে নুডলসের ছোট একটা প্যাকেটে৷ অথচ একটা মানুষ সারাদিনে মাত্র ২৪০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম নিতে পারে৷ ফলে প্রতিদিন একটা করে নুডলস খেলেও কিডনিতে অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Christian Thiele
অ্যালার্জি, মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা...
প্রচুর এমএসজি, অর্থাৎ ‘মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট’-ও থাকে ইন্সট্যান্ট নুডলসে৷ এই এমএসজি, যা সাধারণভাবে ‘চাইনিজ লবণ’ বলে পরিচিত, অনেকের একদমই সহ্য হয় না৷ ফলে ইন্সট্যান্ট নুডলস খেলেই শুরু হয় মাথাব্যথা, বুক ব্যথাসহ নানা ধরণের সমস্যা৷ তাই দীর্ঘদিন ইন্সট্যান্ট নুডলস খাওয়ার ফলে এক সময় ক্যানসারও হতে পারে৷
ছবি: colourbox
ক্যানসারের আরো কারণ....
নুডলস যাতে শুকিয়ে শক্ত হয়ে না যায়, সেজন্য ‘প্রোপিলিন গ্লাইকল-’এর মতো ‘অ্যান্টিফ্রিজ’ উপাদানও মেশানো হয় ইন্সট্যান্ট নুডলসে৷ এ সব উপাদান অনেক ধরণের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়৷ এ সবের কারণে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং কোনো এক সময় ক্যানসারও হতে পারে৷