ক্যানসারের ধাক্কায় শ্রবণশক্তিরও ক্ষতি হতে পারে
১০ অক্টোবর ২০২৩
চার বছর আগে সমস্যা শুরু হয়েছিল৷ ফ্লোরিয়ান ভাগনার এক কানে প্রায় কিছুই শুনতে পারছিলেন না৷ ২৩ বছর বয়সি মানুষটি নিজের শ্রবণযন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘরে বসে এক চলচ্চিত্র দেখছিলাম৷ কোনো এক সময়ে বাঁ কানে শুনতে পারছিলাম না৷ পরের দিনই ইএনটি ডাক্তারের কাছে গেলাম৷ তিনি প্রথমে আমাকে এক কর্টিসন ইনফিউশন দিলেন৷ কয়েক দিন পর আবার একই সমস্যা হলো৷ তখন আর কর্টিসনে কোনো কাজ হলো না৷''
ফ্লোরিয়ান হিয়ারিং এইড ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু এক বছর পর অন্য কানটিতেও সমস্যা দেখা দিলো৷ তিনি প্রায় পুরোপুরি বধির হয়ে গিয়েছিলেন৷
অ্যাকুস্টিক ট্রমা ও কানের ভেতরের রোগ বধিরতার কারণ হতে পারে৷ কিন্তু ফ্লোরিয়ানের ক্ষেত্রে ক্যানসারের কেমোথেরাপি চিকিৎসা এই সমস্যার জন্য দায়ী৷ মানহাইম বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রো. নিকোল রটার বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত কেমোথেরাপির ওষুধেরও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে৷ এই রোগীর কেমোথেরাপির সময় অটোটক্সিক এফেক্ট অন্যতম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে৷ অর্থাৎ অন্তঃকর্ণের কোষ, যা এইচ-সেল নামে পরিচিত, সেখানে ক্ষতিকর প্রভাব ঘটেছে৷ আমাদের অডিটারি কোকলিয়ার মধ্যে সেই কোষ থাকে৷ সেই কোষের বিপাকে বিঘ্ন ঘটে৷ তখন কোষগুলি ধীরে ধীরে মরে যায়৷''
ফ্লোরিয়ানের কাছে একমাত্র আশার আলো ছিল কোক্লিয়ার হিয়ারিং ইমপ্লান্ট৷ এখন তাঁর মাথার দুই পাশেই সেদুটি ভালো করে বসানো আছে৷
মাথার ঠিক বাইরের অংশে অডিও প্রসেসর ধ্বনি গ্রহণ করে ত্বকের নীচে ইমপ্লান্টে পাঠিয়ে দেয়৷ তারপর নমনীয় এক ইলেকট্রোডের মাধ্যমে সেই ধ্বনি ক্ষতিগ্রস্ত কোক্লিয়ায় পৌঁছে যায়৷ সেখানে অডিটারি তথ্য বৈদ্যুতিক স্পন্দনের রূপে সংশ্লিষ্ট স্নায়ু তথা মস্তিষ্কে প্রেরণ করা হয়৷
অপারেশনের কয়েক সপ্তাহ পরেই কোক্লিয়ার ইমপ্লান্টের কল্যাণে ফ্লোরিয়ান ভাগনার আবার শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন৷ তবে এখনো তাঁকে অন্যের কথা বোঝার জন্য স্পিচ কম্প্রিহেনশন ট্রেনিং নিতে হচ্ছে৷ বর্তমানে তিনি ভলিউমের মাত্রা অনুযায়ী ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ কথা বুঝতে পারছেন৷ প্রো. রটার বলেন, ‘‘কোক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে শোনা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার তুলনায় একেবারে ভিন্ন৷ কারণ ইমপ্লান্ট সরাসরি বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় অডিটারি স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে৷ সেইসঙ্গে কোক্লিয়ার ইমপ্লান্টের সেটিংও জরুরি৷ ভলিউম খুব বেশি হলে রোগীর বেশি অস্বস্তি হবে৷ অন্যদিকে ভলিউমের মাত্রা যথেষ্ট না রাখলে আবার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে কথা ঠিকমতো বোঝা যাবে না৷''
ফ্লোরিয়ান ইমপ্লান্টে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন৷ প্রযুক্তির দৌলতে শ্রবণশক্তির উন্নতিও তাঁর পছন্দ হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ফোনে গান চালাতে পারি৷ সেই সিগন্যাল সরাসরি ইমপ্লান্টের মধ্যে চলে যায়৷ ফোনে ফিল্ম দেখলেও সাউন্ড সেখানে যায়৷ ফোনটিকে আমি মাইক্রোফোন হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি৷ যেমন রেস্তোরাঁয় বসলে অনেক মানুষ আমার সঙ্গে কথা বললে সেটা করি৷ ফোন টেবিলে রাখি৷ সব কথা ফোনে রেকর্ড হয়ে আমার ইমপ্লান্টেড ডিভাইসে পৌঁছে যায়৷''
শ্রবণশক্তি হারানোর পর ফ্লোরিয়ান আবার এক মিউজিকাল দেখতে চান৷ ইমপ্লান্ট ও সেল ফোনের মাধ্যমে সবকিছু ঠিকমতো শুনতে পারবেন বলে তাঁর আশা৷
ক্রিস্টিনা গ্রাস/এসবি