ক্যানসারের জন্য দায়ী কয়েকটি জিনের মধ্যে মিক (এমওয়াইসি) একটি৷ প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ক্যানসারই হয়ে থাকে এই জিনের কারণে৷ এবার মিককে নিয়ন্ত্রণের দিকে এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা৷
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাগচীর সঙ্গে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এখন ওষুধ উদ্ভাবনের কাজ শুরু হবে৷ তারপর সেটা বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে রোগীদের কাছে যেতে সাত-আট বছর লাগতে পারে৷
[No title]
বাগচী বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে মিক জিন আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য তাঁরা নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন৷ ‘‘মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় এই জিনের বিকৃতি ঘটলে তখনই ক্যানসার হয়,'' বলে জানান তিনি৷
সারা বিশ্বের ক্যানসার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকদিন থেকেই মিক নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু দুটো কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বাগচী৷ ‘‘এক, মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় হওয়ায় মিককে সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়৷ আর দুই, মিকের কোনো ‘পকেট' নাই, যেখানে আটকে গিয়ে কোনো ওষুধ তার কার্যকারিতা দেখাতে পারে,'' বলেন তিনি৷
ক্যানসারকে দূরে রাখার ৯ উপায়
ক্যানসারের মতো অসুখকে শুধু ভাগ্যের লিখন বলা যায়না৷ কারণ টিউমার হওয়ার কারণগুলো গবেষকরা খুব ভালো করেই জানেন৷ ক্যানসারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রত্যেকেই কিছু করতে পারেন৷
ছবি: Getty Images
ভাগ্য নিজের হাতেই
‘আপনার ক্যানসার ধরা পড়েছে’ এমন দুঃসংবাদ শোনার জন্য কেউ কখনো অপেক্ষা করেনা৷ তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হতে পারে৷ ক্যানসার রোগীর প্রতি পাঁচজনের একজনই হচ্ছে ধূমপায়ী৷ বিষাক্ত তামাকের ধোঁয়া যে শুধু ফুসফুসের ক্যানসারের জন্যই দায়ী তা নয়, ধূমপান অন্যান্য ক্যানসারের হওয়ারও একটি কারণ৷ তবে ধূমপান ক্যানসার হওয়ার একমাত্র কারণ নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতিরিক্ত ওজন মৃত্যুর কারণও হতে পারে
ক্যানসার হওয়ার নানা কারণের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকা৷ ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হলে তা কিডনি, গলব্লাডার, খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মোটা মহিলাদের শরীরের মেদের কারণে খুব সহজে জরায়ু এবং স্তন ক্যানসার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলসেমি নয়, সোফা থেকে উঠে পড়ুন!
যারা সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকেন অর্থাৎ হাঁটা-চলা কম করেন, তাদের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে ব্যায়াম বা খেলাধুলা টিউমার হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে৷ শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিনের মাত্রা কমায় এবং পাশাপাশি মোটা হওয়াও রোধ করে৷ শরীরচর্চা বলতে যে সব সময় ফিটনেস সেন্টারে যাওয়া বোঝায় তা কিন্তু নয়৷ যে কোনো ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা সাইকেল চালানোও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
অ্যালকোহলকে না করুন
অ্যালকোহল বা মাদককে ক্যানসার উত্তেজক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে অ্যালকোহল পানে মুখের ভেতর, গলা এবং পাকস্থলীর নালীতে টিউমার ছড়ানোকে প্রভাবিত করে৷ তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ধূমপান এবং মদ্যপান যদি একসাথে করা হয়৷ এই দুটো একসাথে হয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ১০০ ভাগ৷ তবে বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একগ্লাস ওয়াইন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পশুর মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো
রেড-মিট বা গরু বা ভেড়ার মতো প্রাণীর মাংস ক্যানসার হতে সহায়তা করে৷ তবে এর আসল কারণ ঠিক কী তা এখনও খুঁজে বের করা যায়নি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় এটুকু জানা গেছে যে রেড-মিটের সাথে ক্যানসারের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ শুকরের মাংসের তুলনায় গরুর মাংস খাওয়া বেশি বিপজ্জনক৷ অন্যদিকে মাছ খেলে হয় ঠিক তার উল্টোটা, অর্থাৎ মাছ খেলে ক্যানসার হওয়া থেকে দূরে থাকা যায়৷
ছবি: Fotolia
ফাস্টফুডকে না বলুন!
ফাস্টফুড বা রেডিমেড খাবার সব সময়ই যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সে কথা কম বেশি সবাই জানি৷ অন্যদিকে বেশি বেশি সবজি এবং ফলমূল ক্যানসার রোধে সাহায্য করে৷ দীর্ঘ গবেষণায় অবশ্য গবেষকরা দেখেছেন যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে মাত্র দশ শতাংশ ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেশি রোদ, বেশি ক্ষতি
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকের অনেক পরিবর্তন করে৷ তবে সানক্রিম সূর্যের বিকিরণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে ঠিকই, তবে তারও সময়সীমা রয়েছে৷ ত্বক যখন পুড়ে যায়, ধরে নিতে হবে যে ত্বকে অনেক বেশি সূর্যের কিরণ লেগে গেছে৷
ছবি: dapd
আধুনিক ওষুধ থেকে ক্যানসার
এক্সরে রশ্মি জেনোটাইপের ক্ষতির কারণ, তবে সাধারণ এক্সরেতে তেমন ক্ষতি হয়না৷ সে রকম প্রয়োজন না হলে কম্পিউটার-টোমোগ্রাফি না করাই ভালো৷ আবার অন্যদিকে এমআরআই কিন্তু মোটেই শরীরে জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ ভালো খবর যে, প্লেন ভ্রমণ থেকে ক্যানসার হবার কোনো আশঙ্কা থাকেনা৷
ছবি: picture alliance/Klaus Rose
ইনফেকশনের মাধ্যমে ক্যানসার
হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস লিভার কোষের ক্ষতি করতে পারে৷ ছবিতে যে ব্যাকটেরিয়া দেখা যাচ্ছে সেটা পাকস্থলী নষ্ট করে দিয়ে সেখানে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে৷ তবে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে টিকা বা অ্যান্টিবায়োটিকও নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
এই পরিস্থিতিতে বাগচীর দল যেটা করেছেন সেটা হচ্ছে তাঁরা মিকের একটা ‘রেগুলেটর' বা নিয়ন্ত্রক বের করেছেন৷ ‘পিভিটিওয়ান' নামের নন-কোডিং আরএনএ-ই হলো সেই রেগুলেটর৷ ‘‘আমরা দেখেছি যে, পিভিটিওয়ানের কারণে মিক জিন বিকৃতি রূপ লাভ করে৷ আবার যদি পিভিটিওয়ানকে সরিয়ে দেয়া যায় তাহলে সেটা আগের অবস্থায় ফিরে আসে৷''
অর্থাৎ পিভিটিওয়ানকে লক্ষ্য করে যদি কোনো ওষুধ বানানো যায় তাহলে তার মাধ্যমে মিককেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷ বাগচীর দল এখন সে লক্ষ্যেই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন৷