সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু আলী ইবনে সিনা'র এই কাজ ক্যানসার পরীক্ষার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এনেছে৷ নতুন এই পদ্ধতিতে কেবল রক্ত ও টিস্যু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়৷ এই পরীক্ষাটি একটি বিশেষ ধরনের ডিএনএ পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছেন তাঁরা৷ তাঁরা বলছেন, ভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ডিএনএন'র বৈশিষ্ট্য ভিন্ন৷
ঐ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জীনগত বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে যার মাধ্যমে কী ধরনের ক্যানসার তা নির্ণয় করা যায়৷ ফলে খুব সহজে ক্যানসার চিহ্নিত করা যাবে৷ এর অর্থ হলো, যত দ্রুত ক্যানসার নির্ণয় করা যাবে, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে৷
বর্তমানে ইবনে সিনা কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছেন৷ এই গবেষণা দলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দু'জন বিজ্ঞানী৷ গত বৃহস্পতিবার ভিডিওটি তাঁদের ফেসবুক পাতায় পোস্ট করে ‘টগবগ'৷ এখন পর্যন্ত এটি দেখা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার বার৷ শেয়ার হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বার৷
বিজ্ঞানে বাংলাদেশিদের অবদান কখনোই কম ছিল না৷ ঐতিহ্যগতভাবেই বাঙালি বিজ্ঞানীরা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন৷ সেখান থেকে কয়েকজনের আবিষ্কার তুলে ধরা হলো৷ এর বাইরেও আরো অনেকেই অসাধারণ সব কাজ করে সমৃদ্ধ করেছেন বিজ্ঞানকে৷
ছবি: Bibliothèque nationale de Franceসবর্প্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু৷ বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে তার মনে হলো, বিদ্যুৎ প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে৷ এর অর্থ, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে৷ ১৯১০ সালের দিকে বিজ্ঞানী বসু তাঁর গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বই আকারে প্রকাশ করেন৷
ছবি: Bibliothèque nationale de Franceগবেষণা জীবনের এক পর্যায়ে, তিনি বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ নিয়ে কাজ করেন৷ বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ন’টি পাটসংক্রান্ত৷ এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য৷ দেশে বিদেশে তাঁর ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: hybridknowledge.info১৯২২ সালে পার্টিকেল স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে সত্যেন বোসের গবেষণাটি, যেটি আইনস্টাইন নিজে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন, অনেকের ভাষায় ২০ শতকের সেরা দশ কাজের একটি৷ যদিও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি, কোয়ান্টাম থিওরির অনেক গবেষণার পথ খুলে দেয় তাঁর গবেষণা৷ কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অনন্য আবিষ্কার ‘গডস পার্টিকেলস’ বা ‘ঈশ্বর কণা’-র নামকরণ করা হয়েছে, তাঁর ও আরেক পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগসের নামে – হিগস-বোসন পার্টিকেল৷
ছবি: public domain বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার৷ তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক লবণ এবং পাঁচটি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন৷
মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা করেন৷ তাপীয় আয়নবাদ সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন৷
নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানী খান৷ এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে৷ তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: AP/NASAকলেরা রোগের কারণ আবিষ্কার করেছেন ডা. ফারুক৷ কলেরার ঘটক ‘ভিবরিও’ নামে এক ধরনের শক্তিশালী ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া এসে কীভাবে একে আরো কার্যকরী বা শক্তিশালী করে তোলে সেটিই ছিল তাঁর গবেষণা৷ আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি-তে তিনি ও তাঁর গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেন৷
ছবি: picture-alliance/Dr.Gary Gaugler/OKAPIAপাটের জিনের আবিষ্কারক ড. মাকসুদুল আলম৷ এই বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা৷
ছবি: Bdnews24.comবিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সৌর বিদ্যুৎ কোষ উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন৷ ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা৷
বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শুভ রায়৷ এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য কীর্তি৷ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন৷ চলতি দশকের গোড়ার দিকে দলটি ঘোষণা দেয় যে, তাঁরা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা অন্য প্রাণীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছে৷
ছবি: hybridknowledge.infoহরিপদ কাপালী ছিলেন এক প্রান্তিক কৃষক৷ কিন্তু তাঁর আবিষ্কার হরিধান কৃষিবিজ্ঞানের এক অনন্য সাফল্য৷ প্রকৃতির কাছ থেকেই শিক্ষা৷ প্রকৃতিতেই তাঁর গবেষণা৷ তাঁর নামে নামকরণ করা এই ধানটি অন্য যে কোনো ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল৷ এতে সার ও ওষুধও লাগে অনেক কম৷ সব মিলিয়ে সোনার বাংলার সোনালি আবিষ্কার হরিপদ কাপালীর হরিধান৷
ছবি: Bdnews24.com এপিবি/এসিবি