ক্যানসার রোগীদের নিয়ে গবেষণা করা বাংলাদেশের এক তরুণ গবেষক বলছেন, প্রথাগত চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি রোগীর মনস্তাত্ত্বিক চাপ কমানোর চেষ্টাও করতে হবে৷ বাংলাদেশে এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না বলে জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতা ৩৮৫ জনক্যানসার রোগীর উপর গবেষণা করেন৷ এই সময় তিনি দেখতে পান, বাংলাদেশে ক্যানসার আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী ও তাঁর পরিবার ধরে নেন, ক্যানসার হলে মানুষ বেশিদিন বাঁচতে পারে না৷ ঈশিতা বলেন, ‘‘আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে যখন কারও ক্যানসার হয় তখন সেই রোগী ও তাঁর পরিবার মনে করে থাকেন যে, তাঁর হয়ত বাঁচার সম্ভাবনা খুব একটা থাকবে না, বা অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা দেয়া হলেও বেশিদিন উনি বাঁচবেন না৷ কিন্তু চিকিৎসা নেয়ার পরও যে একটা মানুষ বেশ কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারে, এটার ধারণা খুব একটা মানুষের থাকে না৷''
তিনি তাঁর গবেষণায় দেখতে পান যে, ৩৫ শতাংশের বেশি ক্যানসার রোগীর মানসিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে৷ এই অবস্থা থেকে তাঁদের বের করে আনার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ ঈশিতা বলেন, ‘‘আমাদের মতো দেশে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে কনভেনশলনাল কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট এগুলোর উপর বেশি নির্ভর করা হয়৷ এগুলোতো লাগবেই৷ তবে এর বাইরে স্ট্রেট ম্যানেজমেন্ট, এক্সারসাইজ, এনার্জি কনজারভেশন ও অ্যাকটিভিটি ম্যানেজমেন্ট, স্লিপ থেরাপি, নিউট্রিশনাল থেরাপি, মিউজিক থেরাপি, রিস্ট্রোরেটিভ থেরাপিরও ব্যবস্থা করা উচিত৷''
বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল, আহছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হসপিটাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ক্যানসার রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেন ঈশিতা৷ তাঁর এই গবেষণাপত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ'-এ প্রথম প্রকাশিত হয়েছে৷
সম্প্রতি তিনি জার্মানির লিন্ডাউ শহরে নোবেল বিজয়ীদের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন৷ প্রায় ৩৯ জন নোবেল বিজয়ী সেখানে অংশ নিয়েছিলেন৷
সারা বিশ্বের প্রায় ৬০০ তরুণ গবেষকও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন৷ ঈশিতা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট অস্টিন'-এ পিএইচডিরত বাংলাদেশি তরুণ গবেষক সামসাদ রাজ্জাকও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন৷
জেডএইচ/ডিজি
ক্যানসার চিকিৎসা ও তার সাফল্যের গল্প
কোথাও অক্সিজেন প্রয়োগ করে, কোথাও লেবুর রস, কোথাও বা বিশেষ ধরণের থেরাপি দিয়ে চলছে ক্যানসার থেকে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা৷ অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা সফল৷ রোগীর পরিবারের কাছ থেকে সাফল্যের পুরস্কারও পাচ্ছেন ডাক্তাররা৷
ছবি: Fotolia/S. Bähren
অক্সিজেন দিন...
টিউমার বড় হলে অনেকক্ষেত্রে ভেতর থেকে অক্সিজেন বের করে নিয়ে টিউমারটিকে ছোট রাখেন ডাক্তাররা৷ তবে জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপতালে ক্যানসারের চিকিৎসার একটি পর্যায়ে নেয়া হয় ঠিক উল্টো ব্যবস্থা৷ দেখা গেছে ক্যানসারে রূপ নেয়া টিউমারে অক্সিজেন প্রবেশ করালে কেমোথেরাপির কার্যকারীতা বেড়ে যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা ইঁদুরের দেহে এভাবে অক্সিজেন প্রয়োগ করে এর কার্যকারীতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন৷
লেবু যখন মহৌষধ
জার্মানির রুহর বিশ্ববিদ্যালয় বোখুমে গবেষকরা ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছেন লেবু! ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোতে লেবুর রস ব্যবহার করে দেখা গেছে, এর ফলে ক্যানসারের বিস্তার কমে, অনেক ক্ষেত্রে থেমেও যায়৷
ছবি: picture alliance/David Ebener
প্রতিরোধথেরাপি
‘ইমিউনোথেরাপি’ অর্থাৎ প্রতিরোধথেরাপি নামের একটা বিশেষ থেরাপিও অদূর ভবিষ্যতে খুব কাজে আসবে৷ বলা হয়ে থাকে, মানবদেহের প্রায় ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ প্রোটিনই ক্যানসার নিরোধক৷ গবেষকরা সেই প্রোটিনগুলোকে সক্রিয় করে দেহকে ক্যানসার প্রতিরোধী করার চেষ্টা করছেন৷ এই গবেষণায় সাফল্য এলে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে গন্য হবে৷
ছবি: bzga
নীরব, নিষ্ক্রিয় প্রোটিন
অনেক সময় প্রোটিন জমে জমে মস্তিষ্কে টিউমার হয় আর সেই টিউমারে হয় ক্যানসার৷ জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিশায়েল প্লাটেন জানালেন, তাঁরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েই মস্তিষ্কের টিউমারকে ছোট করতে সক্ষম হয়েছেন৷ ইঁদুরের মস্তিষ্কে এই পরীক্ষা সফল হয়েছে, এ বছর ৩৯ জন মানুষের ওপরও এর পরীক্ষা চালানো হবে৷
ছবি: Forschungszentrum Jülich
সাত শরীরে অ্যান্টিবডি
ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টিবডি ব্যবহার করেই চলছে ক্যানসার প্রতিরোধের চেষ্টা৷ অ্যান্টিবডির কাজই হলো, শরীরের ভালো কোষগুলোকে ক্যানসার সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো৷ ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. হেলমুট সালিহ জানালেন, তাঁরা এখন সাতজন ক্যানসার রোগীকে অ্যান্টিবডি দিয়েই সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন৷ প্রথমে ক্যানসার সেলগুলোকে ফিরে আসতে দেখা গেলেও পরে সেগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়৷
ছবি: Universität Tübingen
পোস্টকার্ড উপহার
অ্যান্টিবডি থেরাপিতে ফ্রান্সের ৫৯ বছর বয়সি এক রোগী পুরোপুরি সুস্থ৷ লিউকোমিয়ায় ভুগছিলেন তিনি৷ ডা. হেলমুট সালিহ জানালেন সুস্থ হয়ে ফেরার পর থেকে ফ্রান্সের ওই রোগীর স্ত্রী প্রায়ই তাঁকে পোস্টকার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানান৷