ক্যানাডার কুইবেক অঞ্চলের সরকারি কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরতে পারবেন না ৷ সেখানে সম্প্রতি এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জনসেবামূলক কাজে জড়িত ব্যক্তিদের কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরার ওপর চালু হলো নতুন নিষেধাজ্ঞা৷ ফলে, ক্যানাডার কুইবেক অঞ্চলের আইনজীবী, শিক্ষক, নার্স, ডাক্তার থেকে বাস চালক বা সরকারি আমলারা কাজের সময় পরতে পারবেন না হিজাব বা পাগড়ির মতো কোনো ধর্মীয় পরিধেয়৷
অতি সম্প্রতি চালু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে বিতর্ক, আলোচনায় উঠে আসছে ধর্মচর্চার স্বাধীনতা বিষয়ে নানা দিক৷
উল্লেখ্য, কুইবেক অঞ্চলে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি রয়েছে শিখ, ইহুদীদের বসবাস, যারা দৈনন্দিন জীবনে পরেন বিশেষ কিছু ‘ধর্মীয় পোশাক'৷
টার্গেট মুসলমানেরা?
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নেলসন ওয়াইসম্যান বলেন, ‘‘কুইবেকে সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ফলে, এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব তাদের ওপরেই পড়বে বেশি৷''
বর্তমানে কুইবেকের মোট জনসংখ্যা ৮৩ লক্ষ, যার মধ্যে তিন শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷
হালের মুসলিম ফ্যাশন
ইসলাম ও হালের স্টাইল? এই দুইয়ের সমন্বয় অনেকের কাছে সমস্যার মনে হতে পারে৷ তবে ইসলামি রীতি-নীতি মেনেই মুসলিম নারীর ফ্যাশন কীভাবে সম্ভব, তারই প্রদর্শনী হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ডে ইয়াং মিউজিয়ামে৷
ছবি: Sebastian Kim
পরিশীলিত থেকেই আধুনিকতার ছোঁয়া
প্রদর্শনীতে হাল আমলের মুসলিম স্টাইল ও পোশাক তুলে ধরা হয়৷ তারই একটি ছিল মালয়েশিয়ার খ্যাতনামা ডিজাইনার বার্নার্ড চন্দ্রনের সিল্ক ও সারোভস্কির ক্রিস্টাল দিয়ে এই উপস্থাপন৷ যেসব ফ্যাশন নিয়ে অনেক কথা হয় কিন্তু সেগুলো উপস্থাপনের তেমন সুযোগ হয় না, সেগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় এখানে৷
ছবি: Fine Arts Museums of San Francisco
জাকার্তা থেকে নিউ ইয়র্ক
পশ্চিমা ফ্যাশন জগতেও সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে ডিয়ান পেলাঙ্গির মুসলিম ফ্যাশন৷ ২৭ বছরের এই তরুণী সেই গুটিকয়েক মুসলিম ফ্যাশন ডিজাইনের একজন, যিনি লন্ডন, মিলান ও নিউ ইয়র্কের ক্যাটওয়াকসে নিজের কাজ তুল ধরতে পেরেছেন৷
ছবি: Fine Arts Museums of San Francisco
রাজনৈতিক বার্তা
ইসলামভীতি দূর করতে ভূমিকা রাখার একটা প্রচেষ্টাও ছিল সান ফ্রান্সিসকোর এই প্রদর্শনীতে৷ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী আরবি হরফে ছাপা হয় জ্যাকেটের গায়ে৷ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথাও বলা হয় এই সংশোধনীতে৷ এই জ্যাকেটের ডিজাইন করেছেন লেবাননের সেলিনে সিমান ভারনন৷ উনিশ শতকের আশির দশকে শরণার্থী হিসেবে বাবা-মার সঙ্গে ক্যানাডায় এসেছিলেন তিনি, পরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে৷
ছবি: Sebastian Kim
ট্রাম্পের ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞার’ জবাব
রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশে ডিজাইনকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন সেলিনে সিমান৷ ২০১৭ সালে তিরি তৈরি করেন ‘ব্যানড’ স্কার্ফ৷ এ সব স্কার্ফের কোনো কোনোটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া দেশগুলোর স্যাটেলাইট ছবি তুলে ধরেন তিনি৷ এই ছবিতে মডেল হিসেবে আছেন ইরানি-অ্যামেরিকান পলিটিক্যাল ফ্যাশন ব্লগার হোডা কাতেবি৷
ছবি: Fine Arts Museums of San Francisco/Driely Carter
স্পোর্টস ফ্যাশন
পোশাক, জ্যাকেট ও রাজনৈতিক বার্তাবাহী স্কার্ফের পাশাপাশি স্পোর্টস ফ্যাশনও উঠে আসে প্রদর্শনীতে৷ এ ধরনের ফ্যাশন পণ্যগুলোর মধ্যে নাইকির হিজাব এবং আহেদা জেনেট্টির আলোচিত সাঁতারের বিকিনি ছিল৷ ২০১৬ সালে এই বিকিনি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল ফ্রান্স সরকার৷
ছবি: DW/A. Binder
স্থাপত্যবিদ্যার প্রতীকী ক্ষমতা
এই প্রদর্শনীর ডিজাইন করেছে দুই ইরানি-অ্যামেরিকান বোনের নেতৃত্বাধীন নিউ ইয়র্কভিত্তিক আর্কিটেকচার ফার্ম হারিরি অ্যান্ড হারিরি৷ দর্শনার্থীকে বিস্তৃত পরিসর দেওয়ার পাশাপাশি তার রহস্য উন্মোচনের উপলব্ধি লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে এই ডিজাইন করা হয়৷ ২০১৯ সালের বসন্তে এই প্রদর্শনী আবার হবে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট আম মাইনে৷
ছবি: DW/A. Binder
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক: প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম
অগণিত ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট ও ফ্যাশন ম্যাগাজিন মুসলিম ফ্যাশন জগতের জন্য নিবেদন হয়েছে৷ ইনস্টাগ্রামে গতানুগতিক হেডস্কার্ফকে অত্যাবশ্যক ফ্যাশন হিসেবে উদযাপন করেছে কথিত ‘হিজাবিস্টাস’৷ এই দিকটিও ‘কনটেমপোরারি মুসলিম ফ্যাশনস’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে৷ সান ফ্যান্সিসকোতে আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী৷
ছবি: DW/A. Binder
7 ছবি1 | 7
এমন নিষেধাজ্ঞা চালু হলেও এর বিরোধিতা করেছেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ভাবতেই পারি না আজকের দিনে এমন একটা বিদ্বেষী নিয়ম চালু হয়েছে৷''
ইতিমধ্যে এই নতুন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতায় পথে নেমেছেন কুইবেকের বেশ কয়েকটি স্থানীয় খ্রিষ্টান, মুসলমান ও ইহুদীদের সংগঠন৷ তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যসহ সমাজের আরো কিছু অংশের মানুষ৷
কিন্তু কুইবেকের প্রধান ফ্রাসোঁয়া লেগল্ট এই নতুন নিয়মকে দেখছেন সাম্যের নজরে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে এখন কুইবেকে যাঁরা সরকারি পদে নিযুক্ত, তাঁদের কোনো ধর্মীয় চিহ্ন বহন করা উচিত নয়৷ এটাই ন্যায্য ও যুক্তিসম্মত৷ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যেও এটা দরকার৷''