কার্নি আগে দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। অ্যামেরিকার চাপিয়ে দেয়া শুল্ক নীতির সঙ্গে লড়াই করতে হবে তাকে।
স্ত্রী ডায়ানা ফক্সের সঙ্গে ক্যানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিছবি: Blair Gable/REUTERS
বিজ্ঞাপন
রোববারই মার্ক কার্নিকে ক্যানাডার শাসক দল লিবারাল পার্টির নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তখনই স্পষ্ট হয়ে গেছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। লিবারাল পার্টির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে কার্নি ৮৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
জাস্টিন ট্রুডো এতদিন এই পদ সামলেছেন। গত জানুয়ারি মাসে ট্রুডো নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। তারপরেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খুব বেশি দিন কাজ চালাতে পারবেন না কার্নি। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতেই হবে। সেই ভোটেও জিততে পারলে আগামী কয়েক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারবেন কার্নি।
জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবন
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৩ সালে দলের নেতা নির্বাচিত হন৷ দুবছর পর তার দল সরকার গঠনে সমর্থ হয়৷ বর্তমানে ট্রুডোর দলের প্রতি সমর্থন অনেক কমে গেছে৷ ছবিঘরে ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা থাকছে৷
ছবি: Sean Kilpatrick/The Canadian Press/AP/picture alliance
অক্টোবর, ২০১৩
লিবারেল দলের নেতা নির্বাচিত হন৷ সেই সময় দলটি জনপ্রিয়তার বিচারে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল৷ কারণ, দুই বছর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে লিবারেলরা প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে নেমে গিয়েছিল৷ লিবারেল দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর ছেলে জাস্টিন ট্রুডো৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Vaughan
অক্টোবর, ২০১৫
দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ট্রুডোর দল সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়৷ প্রথমবারের মতো হাউস অফ কমন্সে তিন নম্বরে থাকা একটি দল নির্বাচনে জয়ী হয়৷
ছবি: Reuters/C. Wattie
ডিসেম্বর ২০১৭
২০১৬ সালে আগা খানের কাছ থেকে ভ্রমণ, উপহার ও ফ্লাইট সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে ট্রুডো স্বার্থের দ্বন্দ্ব আইন ভঙ্গ করেছেন বলে রায় দিয়েছিল ক্যানাডার এথিকস কমিশনার৷ কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন রায় ওটাই প্রথম ছিল৷
ছবি: Reuters/C. Wattie
ফেব্রুয়ারি ২০১৯
সাবেক বিচারমন্ত্রী জোডি উইলসন-রেবোল্ড (ছবি) অভিযোগ করেন, এসএনসি-লাভালিন কোম্পানির বিরুদ্ধে যেন দুর্নীতির অভিযোগে বিচার করা না হয় সেজন্য তাকে চাপ দিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা৷ এই ঘটনায় পদত্যাগ করেছিলেন তিনি৷ পাবলিক ওয়ার্কস মন্ত্রী জেন ফিলপটও ট্রুডোর প্রতি আস্থা হারানোর অভিযোগে পদত্যাগ করেন৷ ট্রুডো সবসময় নিজেকে ফেমিনিস্ট হিসেবে উপস্থাপন করেন৷ তাই তাদের পদত্যাগ ট্রুডোর জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর ছিল৷
ছবি: picture-alliance/H. Ruckemann
সেপ্টেম্বর, ২০১৯
ট্রুডো যখন তরুণ ছিলেন তখন কৃষ্ণাঙ্গর রূপ ধারণ করতে মুখে কালো রং লাগিয়েছিলেন৷ ২০১৯ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের আগে এমন কিছু ছবি প্রকাশ হয়ে গেলে বিতর্ক শুরু হয়৷ ট্রুডো ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, তিনি একজন সব সুবিধা পাওয়া ছেলে হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন এবং সে কারণে একটি ‘কালো দাগ’ ছিল৷
ছবি: Reuters/CBC
অক্টোবর, ২০১৯
নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও মেজরিটি সরকার গঠনের মতো আসন পায়নি ট্রুডোর দল৷ সে কারণে তাকে জোট সরকার গঠন করতে হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
আগস্ট, ২০২০
করোনা মহামারি থেকে ক্যানাডারে উদ্ধার করতে কত অর্থ প্রয়োজন তা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পদত্যাগ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী বিল মরনৌ (ছবি)৷
ছবি: picture-alliance/J. Tang
সেপ্টেম্বর, ২০২১
ক্যানাডায় প্রতি চার বছর পর পর নির্বাচন হওয়ার কথা৷ তবে ট্রুডো ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ তার আশা ছিল, করোনা মোকাবিলায় সরকার ভালো করায় নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি মেজরিটি সরকার গঠন করতে পারবেন৷ কিন্তু তা হয়নি৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ট্রুডোর দলের জনপ্রিয়তা অনেক কমছে৷ সবশেষ জরিপ বলছে, এখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি মাত্র ২১ শতাংশ ভোট পাবে৷ বর্তমানের বিরোধী দল কনজারভেটিভরা পাবে ৪৩ শতাংশ ভোট৷ আর নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি এনডিপি পাবে ১৯ শতাংশ৷ এই অবস্থায় বুধবার সরকারের উপর থেকে স্বয়ংক্রিয় সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে এনডিপি৷ তাই ট্রুডোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: Sean Kilpatrick/The Canadian Press/AP/picture alliance
9 ছবি1 | 9
তবে ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা বলছে, এবারের ভোটে লিবারালদের থেকে কনসারভেটিভরা সামান্য হলেও এগিয়ে। আগামী কয়েকমাস কার্নি কীভাবে সরকার চালান, তার উপর অবশ্য অনেকটাই নির্ভর করছে ভোটের ভাগ্য।
ক্যানাডার উপর শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ক্যানাডার অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল অ্যামেরিকায় জিনিসপত্র আমদানি ও রপ্তানি করে। ফলে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হবে কার্নির প্রথম চ্যালেঞ্জ। কার্নি জানিয়েছেন, ''ট্রাম্প ক্যানাডার শ্রমিক, নাগরিক এবং অর্থনীতির উপর বার বার আঘাত করেছেন। আমরা তা মেনে নেব না।'' জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতা ছাড়ার আগে অ্যামেরিকার উপর পাল্টা শুল্ক চাপিয়েছিলেন। কার্নি ট্রুডোর সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেন কি না, সেটাই দেখার। তবে প্রথম থেকেই অ্যামেরিকা নিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে আছেন কার্নি। অন্তত তার কথায় সেই মেজাজই উঠে আসছে।
কার্নি বলেছেন, ''অ্যামেরিকা আমাদের যথেষ্ট সম্মান না দেখানো পর্যন্ত আমরা পাল্টা শুল্কনীতির রাস্তা থেকে সরবো না।''