ক্যানাডায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ দায়ের
১৫ জুন ২০২১
ক্যানাডায় মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার দায়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনল পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আগেই বলেছিলেন, ওই হত্যা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী কাজ, যার মূলে রয়েছে ঘৃণা। পুলিশও ২০ বছর বয়সী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগই এনেছে।
অভিযুক্ত পাকিস্তান থেকে আসা এক মুসলিম পরিবারের ৭৪ বছর বয়সী নারী, ৪৬ বছর বয়সী পুরুষ, ৪৪ বছর বয়সী নারী সদস্য এবং ১৫ বছর বয়সী কিশেোরীকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। খালি নয় বছর বয়সী একটি ছেলে বেঁচে গেছে। তবে তার আঘাত গুরুতর।
ক্যানাডার কর্তৃপক্ষ কী বলছে
রয়্যাল ক্যানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ জানিয়েছে, ফেডারেল ও আঞ্চলিক অ্যাটর্নি জেনারেল সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনার বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তাদের মত হলো, যেভাবে হত্যা ও হত্যার চেষ্টা হয়েছে, তা অবশ্যই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ।
ক্যানাডায় ‘ট্রাক হামলায়’ নিহত মুসলিম পরিবারের দাফন
ক্যানাডার ওন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে ‘ট্রাক হামলায়’ নিহত এক মুসলিম পরিবারের চার সদস্যের দাফন হয়েছে৷ দাফনে সব ধর্ম, বর্ণের মানুষের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
ক্যানাডার পতাকায় ঢাকা কফিন
গত ৬ জুন, রোববার ক্যানাডার ওন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে একটি মুসলিম পরিবারের পাঁচ সদস্যের ওপর নাথানিয়েল ভেলটম্যান নামের এক ব্যক্তি পিকআপ ট্রাক তুলে দেয়৷ ঘটনার পরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ১২ জুন নিহত চারজনকে সমাধিস্থ করা হয়৷ ছবিতে ক্যানাডার পতাকায় ঢাকা চারজনের কফিন৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
একটু পরেই দাফন
ট্রাক চাপায় সৈয়দ আফজাল (৪৪), তার স্ত্রী মাদিহা সালমান (৪৪) এবং তাদের ১৫ বছর বয়সি মেয়ে ইয়ুমনা আফজাল আর সৈয়দ আফজালের ৭৪ বছর বয়সি মা নিহত হন৷ পুলিশ মনে করে, পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হয়েছে তাদের৷ ঘটনার পর ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান৷ ছবিতে আফজাল পরিবারের চারজনের মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
ক্ষোভের ভাষা
হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ তারপরও ছবির এই ব্যক্তির মনে বিচার হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে, তাই প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘‘নিপীড়িত আফজাল পরিবারের কথা আমরা ভুলবো না৷ বিচার হলেই শুধু শান্তি আসবে৷’’
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
সপরিবারে দাফনে
কোলের শিশুকেও সঙ্গে নিয়ে আফজাল পরিবারের দাফনে অংশ নিতে যাচ্ছে একটি পরিবার৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
জনস্রোত
যেখানে আফজাল পরিবারের চারজনকে হত্যা করা হয়েছিল সেখান থেকে স্থানীয় মসজিদের দিকে এগিয়ে চলেছে দাফনে অংশ নিতে আসা জনস্রোত৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
অশ্রু নয়, কাজ চাই
২৪ বছর বয়সি আয়া এলমাল্লাহ-ও ক্যানাডা সরকারের সহানুভূতিশীল আচরণেই খুশি নন, তাই তার হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ চোখের জল কম, বেশি দরকার নীতিমালা৷’’
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
মসজিদের সামনে শোকবার্তা
ক্যানাডার লন্ডন শহরের মসজিদের সামনে ছোট এক পোস্টারে আফজাল পরিবারের উদ্দেশ্যে একজন লিখেছেন, ‘‘এটা তোমাদের বাড়ি, এখানে তোমাদের নিরাপদে থাকতে পারা উচিত ছিল৷’’
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
হাতে হাতে আফজাল পরিবার
দাফনের জন্য নির্ধারিত স্থানের দিকে এগিয়ে চলেছে জনস্রোত, অনেকের হাতেই আফজাল পরিবারের নিহত চারজনের প্রতীকী উপস্থিতি৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
এখানে ঘৃণার স্থান নেই
দাফনে অংশ নেয়া একজনের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘এখানে ঘৃণার কোনো স্থান নেই৷’’
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
ঘৃণাকে প্রত্যাহার...
জনস্রোতে আরেকজনের হাতে দেখা যায়, ‘‘ঘৃণার ওপরে ভালোবাসা’’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
সবাইকে স্বাগত
আফজাল পরিবারের চারজনকে মুসলিম রীতি অনুযায়ী সমাধিস্থ করা হলেও সেখানে সব ধর্ম, বর্ণের মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ এক নারীর হাতের পোস্টারে তাই লেখা ছিল, ‘‘এখানে সবাইকে স্বাগত জানাই৷’’
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
11 ছবি1 | 11
কর্মকর্তাদের বক্তব্য, অভিযুক্ত ন্যাথানিয়েল ভি এই হত্যা করেছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এবং সে মুসলিমদের টার্গেট করেছে। সন্ত্রাসবাদ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে চার দফা অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে আছে, হত্যা ও হত্যার চেষ্টা।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো অপরাধ করার নজির নেই। সোমবার সে আদালতকে জানিয়েছে, তার এখনো কোনো আইনজীবী নেই। আবার ২১ জুন তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
ক্যানাডার নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ক্যানাডার রাজনৈতিক নেতারা এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো হাউস অফ কমন্সে বলেছেন, এই হত্যা হলো সন্ত্রাসবাদী কাজ। এর মূলে রয়েছে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা।
ক্যানাডায় মুসলিম পরিবার হত্যা, চলছে প্রতিবাদ, শোক
এক মুসলিম পরিবারের চারজনকে হত্যা করার ঘটনায় ক্যানাডা এখন শোকাচ্ছন্ন৷ প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ সমাজের সব স্তরের মানুষদের মতো তিনিও শোক জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে গিয়ে ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
শোকের ছায়ায় ওন্টারিও
রোববার ক্যানাডার ওন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে একটি মুসলিম পরিবারের পাঁচ সদস্যের ওপর এক ব্যক্তি পিকআপ ট্রাক তুলে দেয়৷ ট্রাকে চাপা পড়ে চারজন মারা যায়৷ পুলিশ মনে করে, এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা। ছবিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর সময় নিজের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা কায়রা স্টেফানি৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
প্রধানমন্ত্রীর শোক
ঘটনার পরই নাথানিয়েল ভেলটম্যান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ২০ বছর বয়সি ভেলটম্যান লন্ডনের বাসিন্দা৷ তার বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওপরের ছবিতে ওন্টারিওর লন্ডন শহরের মসজিদের সামনে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷
ছবি: Nathan Denette/REUTERS
শোকের জনস্রোত
নাথানিয়েল ভেলটম্যানকে ইতিমধ্যে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। ছবিতে ওন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে ঘটনায় নিন্দা ও শোক জানাতে আসা মানুষের স্রোত৷
ছবি: Nathan Denette/REUTERS
ঘৃণার কথাও নিষিদ্ধ হোক...
ঘটনার পর লন্ডন পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা পল ওয়েইট বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, নিহতরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে৷’’ ছবিতে লন্ডনের শোকসভায় এক শোকাচ্ছন্নের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ইসলামের প্রতি ভীতি ছড়ানোর মতো কথা মুসলিমদের প্রতি ঘৃণাকে উসকে দেয়৷’’ অর্থাৎ, তিনি মনে করেন, সমাজে ঘৃণার আবহ তৈরি না হলে এমন ঘটনা ঘটতো না৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
শিশুর শোক
লন্ডন ফ্রি প্রেস জানিয়েছে, রোববারের ঘটনায় সৈয়দ আফজাল (৪৪), তার স্ত্রী মাদিহা সালমান (৪৪) এবং তাদের ১৫ বছর বয়সি মেয়ে ইয়ুমনা আফজাল আর সৈয়দ আফজালের ৭৪ বছর বয়সি মা নিহত হন৷ ছবিতে এক শিশুর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড, সেখানে হামলার শিকার মুসলিম পরিবারের নিহত কিশোরীর কথা মনে করে লেখা, ‘‘সে আমার বন্ধু ছিল!’’
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
ভালোবাসা বাঁচায়, ঘৃণা হত্যা করে...
শোকসভায় নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে একদল শিশু৷ সব প্ল্যাকার্ডে লেখা ভালোবাসার মাহাত্ম আর ঘৃণার ভয়ঙ্কর ক্ষতির কথা৷ একটিতে (বাঁ দিকে সবার ওপরে) লেখা, ‘‘ঘৃণা হত্যা করে৷’’
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
ঐক্যের আলিঙ্গন
শোকে, প্রতিবাদে ওন্টারিওর লন্ডন শহর এখন ঐক্যবদ্ধ৷ ছবিটি তারই প্রমান৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
মসজিদ এখন শোকের মিনার
ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরেই এই মসজিদ৷ মসজিদের দরজার দু’ পাশে ফুল রেখে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়দের অনেকে৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
শোক
রাস্তায় মোম জ্বেলে শোক জানাচ্ছে স্থানীয় এক পরিবার৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
ভালোবাসার পোস্টার
রাস্তার পাশের লাইট পোস্টে পোস্টার লাগাচ্ছেন জুবায়ের আহমেদ ও তার স্ত্রী৷ পোস্টারের প্রথম শব্দটিই ‘ভালোবাসা’৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
10 ছবি1 | 10
উপ প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, ''এটা যে সন্ত্রাসবাদী কাজ, তা বলা জরুরি। কারণ, এই বর্ণ ও জাতিবাদ ক্যানাডার পক্ষে ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ।''
ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ক্যানাডিয়ান মুসলিমস জানিয়েছে, ''এটা মামলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এই ধরনের সন্ত্রাস ও ইসলামোফোবিয়ার কাছে আমরা মাথা নত করব না।''
ক্যানাডায় এর আগেও মুসলিম-বিরোধী আক্রমণ হয়েছে। ২০১৭ সালে ২৭ বছর বয়সী এক যুবক মসজিদে প্রার্থনাকারীদের উপর গুলি চালিয়েছিল। তাতে ছয়জন মারা যান। পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন।