জাতিগত বিদ্বেষে হত্যার শিকার হয়েছেন ক্যানাডার প্রায় ১২শ আদিবাসী নারী ও শিশু, যেটাকে ‘জাতীয় গণহত্যা' হিসাবে অভিহিত করেছে সরকারি তদন্ত কমিশন৷
বিজ্ঞাপন
১৯৮২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এসব নারী ও শিশুর নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধান চালায় ওই তদন্ত কমিশন৷ সোমবার ১২শ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা৷
ওই ৩০ বছরে এক হাজার ১৭ জন অ্যাবরিজিনাল নারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে ২০১৪ সালে জানিয়েছিল রয়্যাল ক্যানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ৷ এরপর ২০১৬ সালে এসে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷
তদন্তের সময় দুই হাজার ৩০০ ক্যানাডিয়ানের সাক্ষ্য নেয় তদন্ত কমিশন৷ যাতে প্রায় ১২শ নারী-শিশু খুন ও নিখোঁজ হওয়ার তথ্য উঠে আসে৷
কুইবেকের গ্যাটিনিয়াউতে যে অনুষ্ঠানে সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, সেখানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং নিখোঁজ ও হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা৷
আদিবাসী নারীদের রক্ষায় ক্যানাডা সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন ট্রুডো৷ ‘‘আমরা আর ব্যর্থ হব না৷ এমন ঘটনা লজ্জাজনক ও অগ্রহণযোগ্য৷ এটাকে থামাতেই হবে,'' অনুষ্ঠানে বলেছেন তিনি৷
তদন্ত কমিশনের সুপারিশের আলোকে সরকার কাজ করবে বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো৷
যা আছে তদন্ত প্রতিবেদনে
ক্যানাডায় আদিবাসী মানুষের প্রতি 'দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্য' এবং তাঁদের রক্ষায় ‘উদ্যোগহীনতার' সমালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে৷
এতে বলা হয়, আদিবাসী নারী-শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁদের ‘সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার সমুন্নত ও বাস্তবায়ন' জরুরি৷
আদিবাসীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ক্যানাডা ‘ব্যর্থ হয়েছে' বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে৷
নারী-শিশুদের হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনে আদিবাসী ও অনাদিবাসী পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সিরিয়াল কিলারদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্ত কমিশন৷
একইসঙ্গে চরম দারিদ্র্য, বর্ণবাদ, সেক্সিজম ও ভূমি থেকে উচ্ছেদসহ নানা রকম সামাজিক অসঙ্গতিকে হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে তারা৷
‘‘যদিও নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিরা ভিন্ন পরিস্থিত ও প্রেক্ষাপট থেকে এসেছেন, তবুও সব ঘটনার পেছনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রান্তিকীকরণ কোনো না কোনোভাবে সংযুক্ত,'' বলেছেন তদন্ত কমিশনের প্রধান ম্যারিয়ন বালার৷
এমবি/ (রয়টার্স, এএফপি)
জার্মানির ভয়ংকর যত সিরিয়াল কিলার!
সিরিয়াল কিলাররা শুধু মানুষই খুন করেন না, তারা ধর্ষণ, শিশু উৎপীড়ন কিংবা নরমাংস ভক্ষণের মতো ভয়ঙ্করতম অপরাধগুলোর অনেকগুলোই করেন৷আসুন, জার্মানির কিছু ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারের সঙ্গে পরিচিত হই৷
ছবি: bilderbox
ম্যুনস্টারব্যর্গের নরখাদক
১৯০৩ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে তৎকালীন প্রুসিয়া (বর্তমান ম্যুনস্টারব্যর্গ)-এ নিজের বাড়িতে কার্লে ডেনকে নামক এক ব্যক্তি কমপক্ষে ৪২ জনকে মেরে তাদের মাংস খেয়েছেন৷ ধারণা করা হয়, তিনি গ্রামের মানুষদের মেরে তাঁদের মাংস পোল্যান্ডে শূকরের মাংস বলে বিক্রিও করতেন৷ তার শিকার এক ব্যক্তি পালিয়ে গিয়ে পুলিশকে খবর দিলে মানুষের মাংসসহ কার্লেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ দু’দিন পরে জেলেই আত্মহত্যা করেন কার্লে৷
ছবি: 171413picture-alliance/arkivi
হানোফারে আতঙ্ক
১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে ফ্রিটৎস হারমান নামক এক ব্যক্তি কমপক্ষে ২৪ জন বালক ও তরুণকে যৌন উৎপীড়ন, হত্যা ও অঙ্গচ্ছেদ করেছেন৷ হানোফারে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়৷ আতঙ্কিত স্থানীয়রা তার কাছে ৫শ’ হাড় উদ্ধার করার পর তার অপরাধ ধরা পড়ে৷ তিনি ছিলেন পুলিশের ইনফর্মার৷ ১৯২৫ সালে তার শিরশ্ছেদ করা হয়৷
কার্ল গ্রসমানকে বলা হয় বার্লিনের কসাই৷ তিনি মানুষ মেরে তাদের মাংস বিক্রি করতেন কালোবাজারে৷ একবার চিৎকার শুনে পুলিশ তার বাড়িতে হানা দিয়ে এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে৷ ঠিক কতজনকে গ্রসমান হত্যা করেছেন তার সঠিক হিসেব না থাকলেও অন্তত ২৩ জন নারী তার শিকার বলে ধারণা করা হয়৷ এছাড়া সে সময় আশেপাশে আরো ১০০ জনের নিখোঁজ সংবাদ পাওয়া যায়৷ মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আগেই ১৯২২ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন৷
ছবি: Gemeinfrei
ফালকেনহাগেন লেকের ভয়
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে ফ্রিডরিশ শুমান অসংখ্য ধর্ষণ, হত্যা ও চুরির মতো অপরাধ করেছেন৷ স্থানীয় এক বনকর্মীর সঙ্গে একবার ঝগড়া হবার পর তাকে গুলি করেন শুমান৷ পরে আদালত তাকে ছয় জনকে হত্যা ও ১১ জনকে হত্যা চেষ্টায় ছয়বার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন৷ ২৮ বছর বয়সি এই যুবক সে সময় স্বীকার করেন যে, তিনি মোট ২৫ জনকে হত্যা করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
এস-বান খুনি
১৯৪০ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে নাৎসি যুগের বার্লিনে ৩১টি ধর্ষণ, ৮ জন নারীকে হত্যা এবং আরো ৬ জনকে হত্যার চেষ্টা করেন পাওল অগরসো৷ জার্মানির যাত্রীবাহী রেলের কর্মচারী ছিলেন অগরসো৷ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়ার দু’দিনের মাথাতেই তার শিরশ্ছেদ করা হয়৷
ছবি: Gemeinfrei
মৃত্যুর কারিগর
১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালে হার্ৎস মাউন্টেনে বর্ডার গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রুডলফ প্লাইল৷ তখন পূর্ব থেকে পশ্চিম জার্মানিতে অবৈধ নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷ তার দুই সঙ্গী নারীদের ফাঁদে ফেলে নিয়ে আসতেন৷ তার বিরুদ্ধে আদালতে একজন দালাল ও নয় নারীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়৷ তবে তিনি ২৫ জনকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন৷ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলেও আট বছর পর আত্মহত্যা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডুইসবুর্গের মানুষখেকো
ইওয়াকিম গেরো ক্রোল একজন সিরিয়াল কিলার, ধর্ষক, শিশু নিপীড়নকারী ও নরখাদক ছিলেন৷ ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি ১৪ জনকে হত্যা করেছেন৷ এদের প্রায় সবাই তরুণী৷ ১৯৭৬ সালে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয়, তখন তার ফ্রিজে মানুষের অঙ্গ পাওয়া যায়৷ এক চার বছরের কন্যাশিশুর কাঁধ ও হাত রান্না করার জন্য তৈরি রেখেছিলেন তিনি৷ ১৯৮২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ১৯৯১ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Sieländer
ঠান্ডা মাথার খুনি
১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে অন্তত চার জন নারীকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ফ্রিটৎস হোনকার বিরুদ্ধে৷ শ্বাসরোধ করে যৌনকর্মীদের মেরে ফেলতেন তিনি৷ এরপর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন৷ একবার ঘরে আগুন লেগে যাবার পর দমকলকর্মীরা তার বাড়িতে ভিক্টিমদের শরীরের বিভিন্ন অংশ লুকানো অবস্থাতে পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট পাওলি’র খুনি
হামবুর্গের রেড লাইট এলাকায় দালালদের জন্য ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করতেন ভের্নার পিন্সনার৷ তিনি ৭ থেকে ১০ জনকে হত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়৷ ১৯৮৬ সালে তাকে পুলিশ বিভাগে আনা হলে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে গুলি করেন৷ পরে নিজেকে ও স্ত্রীকে গুলি করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিষাক্ত নার্স
কোলন শহরের এই নার্সের নাম মারিয়ানে ন্যোলে৷ ১৯৮৪ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বিষ দিয়ে ১৭ জন রোগীকে হত্যা করেন৷ আরো ১৮ জনকে হত্যার চেষ্টা করেন৷ তবে তার বিরুদ্ধে মাত্র ৭ জনের হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়৷ এই নারী কখনোই তার অপরাধ স্বীকার করেননি৷ এখনো তিনি যাবজ্জীবন জেল খাটছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DB
রাস্তার শিকারি
ফলকার একার্ট একজন ট্রাক চালক৷ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি কমপক্ষে ৯ জন নারীকে হত্যা করেছেন৷ এর বাইরে আরো চারজনকে ফলকার হত্যা করেছেন বলে পুলিশের ধারণা৷ ইউরোপে ঘুরে ঘুরে যৌনকর্মীদের তুলে নিয়ে পরে তাদের হত্যা করতেন তিনি৷ ভুক্তভোগীর চুল বা অন্য কোনো চিহ্নও রেখে দিতেন ৷ ২০০৭ সালে একার্ট আত্মহত্যা করেন
ছবি: Imago
মৃত্যুর দূত
বাভারিয়ার একটি হাসপাতালে ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে কমপক্ষে ২৯ জন রোগীকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছেন স্টেফান লেটার৷ তিনি এখন যাবজ্জীবন জেল খাটছেন৷
ছবি: picture alliance/AP/U. Lein
আরেক হন্তারক নার্স
নিয়েল্স হ্যোগেল রোগীদের হৃদযন্ত্র বন্ধ হবার ইনজেকশন দিতেন৷ দু’জনকে হত্যার অভিযোগ প্রথমে প্রমাণিত হলে ২০১৫ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ তবে সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে, আরো ১০০টি হত্যার সঙ্গে এই ব্যক্তি জড়িত৷ তাই তাকে ভয়ঙ্করতম খুনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷