পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবর গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহার বৈধ করেছিল ক্যানাডা৷
বিজ্ঞাপন
উদ্দেশ্য ছিল, মাদক সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উন্নতি এবং মাদক কেনাবেচা সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তি কমানো৷
সেটি সম্ভব হয়েছে কিনা, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে ক্যানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল৷
এতে দেখা যাচ্ছে গাঁজার ব্যবহার, গাঁজা সেবনের কারণে জরুরি সেবা নেয়ার পরিমাণ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং গাঁজা সেবন করে গাড়ি চালানোর পরিমাণ হয় বেড়েছে কিংবা একই আছে৷
তবে গাঁজা ব্যবহার সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে৷ ফলে গাঁজা সেবনের কারণে তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের যে নীচু করা হতো, তা কমেছে বলে গবেষকেরা দাবি করেছেন৷
ওষুধ হিসাবে গাঁজার সাফল্য কেমন?
03:47
আইন অনুযায়ী, ক্যানাডার একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম (১.০৬ আউন্স) গাঁজা সেবন করতে পারেন৷ তবে রাজ্যভেদে, ১৮ থেকে ২১ বছরের তরুণরা প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করতে পারেন না৷ এছাড়া দোকান বা অনলাইনে গাঁজা বিক্রি সম্ভব হচ্ছে৷ এছাড়া মানুষ সীমিত পরিমাণে গাঁজার চাষও করতে পারেন৷
জাতীয় এক জরিপে দেখা গেছে, গাঁজা বৈধ করার পর এর ব্যবহার ২০১৭ সালে ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২৭ শতাংশ হয়েছে৷
দৈনিক গাঁজা সেবনের হার একই আছে, ২৫ শতাংশ৷
গাঁজা বৈধ করায় দুই-তৃতীয়াংশ গাঁজা ব্যবহারকারীরা এখন বৈধ উৎস থেকে গাঁজা কিনছেন বলে গবেষণায় দেখা গেছে৷ ফলে খারাপ মানের গাঁজা সেবনের সুযোগ কমেছে৷
সুষ্মিতা রামাকৃষ্ণান/জেডএইচ
গাঁজা: সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যার দিকগুলি কী কী?
মাদকবিরোধীরা ক্যানাবিস অর্থাৎ গাঁজাকে খারাপ বলে মনে করেন৷ আবার কেউ কেউ গাঁজা সেবনকে সমর্থন করেন৷ তাদের দাবি, শণের মতো শুকনো গাছটির নানা অংশ নিরাময় করতে পারে৷ কয়েক দশক ধরে পুরাণের নানা গল্পে রয়েছে গাঁজা-চরসের উল্লেখ৷
ছবি: Bni Hmed/AP/picture alliance
গাঁজায় নিষেধ
গাঁজা শুনলে মনে হয় নিষিদ্ধ মাদক৷ তবে নেশা করার গাঁজা নির্দিষ্ট প্রজাতির গাছ থেকে পাওয়া যায়৷ জার্মানিতে শণজাতীয় এই প্রজাতির চাষ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত৷ ২০০ বছর আগেও জনসাধারণের চোখে পড়ত না এই গাছ৷ তাই গাঁজা নিয়ে নানারকম জনশ্রুতি তৈরি হয়৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
ফরাসি সেনারা নিয়ে এসেছিল হাশিশ
ইউরোপের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, হাশিশ অথবা গাঁজার নেশার মতো বিষয়টি এ মহাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন৷ ফরাসি সেনারা ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়নের মিশর অভিযানের সময় গাঁজা গাছের (স্ত্রী উদ্ভিদ) রজন (পাতা থেকে প্রাপ্ত আঠালো কষের মতো অংশ) থেকে তৈরি একটি অংশ নিয়ে আসেন৷ তারাই মূলত এগুলির ব্যবহার ছড়িয়ে দেন৷ নেপোলিয়ন মিশরে এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও প্যারিসে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷
ছবি: Christian Böhmer/dpa/picture alliance
ঋতুকালীন ব্যথা কমাতে গাঁজা!
১৯৯০ সাল থেকে যুক্তরাজ্য গাঁজার আইনি বৈধতার দিকটি নিয়ে ভাবছে৷ একসময় গুজব রটেছিল রানি ভিক্টোরিয়াকে নাকি ঋতুকালীন ব্যথা কমাতে গাঁজা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল৷ এ কথার একটি প্রমাণও রয়েছে৷ ১৮৯০ সালে রানির ব্যক্তিগত চিকিত্সক জন রাসেল রেনল্ডস মেডিকেল জার্নালে একাধিক সমস্যা সমাধানে গাঁজার উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের কথা লিখেছিলেন৷
ছবি: dpa
পার্চমেন্ট নাকি শণ?
জনশ্রুতি রয়েছে যে আমেরিকান স্বাধীনতাপত্র যে কাগজে লেখা হয়েছিল সেটি এই গাছের তন্তু থেকে তৈরি৷ তবে এটি সম্পূর্ণ সত্যি নয়৷ নথিটি ভ্যাকুয়ামের মাধ্যমে সিল করা হয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল আর্কাইভসের কাচের মোটা প্যানের পিছনে৷ এটি পার্চমেন্ট কাগজে লেখা হয়েছিল৷ স্বাধীনতাপত্রের প্রথম দুটি খসড়া সম্ভবত শণ প্রজাতির গাছের আঁশের তৈরি কাগজে লেখা হয়েছিল৷
ছবি: Rauchwetter/dpa/picture alliance
রিফার ম্যাডনেস
১৯৩৬ সালে অ্যামেরিকা প্রচারমূলক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে৷ চলচ্চিত্রে অর্থ বিনিযোগ করেছিল গির্জার একটি গোষ্ঠী৷ এতে দেখানো হয়েছিল নতুন প্রজন্ম সহজেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে৷ গাঁজা সেবন করলেই তারা হিংস্র হয়ে যাচ্ছে৷ খানিকটা অতিরঞ্জিত করে হাস্যরস মিশিয়ে নির্মিত হয়েছিল সেই চলচ্চিত্র৷ ভুল তথ্যও ছিল তাতে৷ ফলে সে সময়ে গাঁজা নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল, এই চলচ্চিত্র তার প্রমাণ৷
ছবি: Richard Vogel/AP Images/picture alliance
বর্ণবৈষম্যমূলক মনোভাব
ইউএস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান ছিলেন হ্যারি অ্যান্সলিঙ্গার৷ তিনি বর্ণবৈষম্যে বিশ্বাস করতেন৷ ১৯৩০ সাল থেকে গাঁজা নিষিদ্ধ করতে লড়াই করছিলেন৷ অভিযোগ উঠেছিল মেক্সিকান এবং আফ্রিকান অ্যামেরিকানরা গাঁজা সেবন করতেন৷ অ্যান্সলিঙ্গার বলেছিলেন, গাঁজা সেবনের ফলে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিরা মনে করেন, তারা শ্বেতাঙ্গদের মতো ভাল৷ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে,অ্যামেরিকার ড্রাগ নীতির কারিগর তিনি৷
ছবি: Mary Evans Picture Library/picture alliance
ধর্মের ছায়া
অন্যান্য সংস্কৃতি সম্ভবত গাঁজার নেশা সংক্রান্ত প্রভাব সম্পর্কে অনেক খোলামেলা৷ হিন্দু দেবতা শিব সম্পর্কে পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে যে তিনি নাকি গাঁজা সেবন করতেন৷ জীবনের বাকি সব আনন্দ তিনি ত্যাগ করেছিলেন৷ যদিও একাধিকবার ব্যবহারে গাঁজার প্রতি আসক্তি জন্মাতে পারে, এমন দাবিও রয়েছে৷
ছবি: Mukhtar Khan/AP Photo/picture alliance
গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা
গাঁজা অর্থাৎ ক্যানাবিসে থাকা রাসায়নিক যৌগ নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ আদৌ কোনো ভেষজ গুণ রয়েছে কি, গবেষণা করে দেখছেন তারা৷ এই ক্যানাবিস প্রজাতির শণ থেকে শুকনো দড়ি বানানো হত৷ শণের আঁশ দিয়ে পোশাকের ব্যবহারের কথাও উল্লেখ রয়েছে একাধিক বইয়ে৷