দেশটির কুইবেক রাজ্য প্রশাসন সম্প্রতি একটি ধর্মীয় নিরপেক্ষতা বিল পাস করেছে৷ এতে সরকারি সেবা দেয়া-নেয়ার সময় নাগরিকদের মুখ খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বিলে নির্দিষ্ট কোনো পোশাকের কথা উল্লেখ না করলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মুসলিম নারীদের লক্ষ্য করে বিলটি করা হয়েছে৷
কূটনীতিক, পুলিশ সদস্য, শিক্ষিকা, বাস চালকসহ সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, সেবিকা, দন্ত্য চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে৷
কুইবেকের প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ কুইলার্ড বলেন, ‘‘সরকারি সেবা দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে মুখ খোলা রাখতে হবে৷ শুধু কুইবেক নয়, ক্যানাডার একটা বড় জনগোষ্ঠী এমনটা মনে করেন৷ আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, আপনি আমার সঙ্গে বলছেন৷ আমি আপনার চেহারা দেখছি, আপনি আমারটা দেখছেন৷ এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার৷''
কুইলার্ড মনে করেন, অনেকে এই বিল চ্যালেঞ্জ করতে পারেন৷ তবে সহজ যোগাযোগের জন্য, একজন আরেকজনকে চেনার জন্য, নিরাপত্তার জন্য এটা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷
নতুন আইন অবিলম্বে কার্যকর হবে৷ তবে আগামী জুনের মধ্যে আইন প্রয়োগের নীতিমালা তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কুইবেকে ইসলামভীতি বেড়েছে৷ গত জানুয়ারিতে সেখানকার এক মসজিদে হামলায় ছয় ব্যক্তি নিহত হন৷
ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, বুলগেরিয়া ও জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে সরকারি সেবা আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে মুখ ঢাকা পোশাক পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে৷
কুইবেকের এই আইনের সমালোচনা করেছে রাজ্যের দুটি প্রধান বিরোধী দল৷ বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ও শিক্ষাবিদরাও বিলের সমালোচনা করেছেন৷ ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ক্যানাডিয়ান মুসলিম' বলছে, বিলের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় কিনা তা খুঁজে দেখা হচ্ছে
এদিকে, ক্যানাডার সংসদে বিলের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোরমন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ এই বিল চ্যালেঞ্জ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘দেশের আইন অনুযায়ী সব নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি আমি নিশ্চিত করব৷''
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷