রোহিঙ্গাদের ক্যানাডায় আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ করেছেন রোহিঙ্গা সংকটে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নিয়োগকৃত বিশেষ দূত বব রে৷ রোহিঙ্গা সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও সুপারিশ করেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রাখাইনের প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ গত অক্টোবরে ক্যানাডার টরেন্টোর সাবেক এমপি বব রে'কে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে বিশেষ দূত নিয়োগ করেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷
তিনি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন৷ সেই তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ‘‘বব রে'র চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ক্যানাডাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি, সংগঠন ও কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্যানাডা ও এর মিত্র দেশগুলোকে সুর্নিদিষ্ট অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে৷''
বব রে মনে করেন মিয়ানমার ও বাংলাদেশে চলমান সংকটে ক্যানাডার উদ্যোগ দেশটির পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি লিটমাস টেস্ট বা অগ্নিপরীক্ষা৷ সংকট নিরসনে চলতি মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন তিনি৷ মে মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য জি-সেভেন সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সংকটকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছেন রে৷
সি আর আবরার
বব রে বলেন, ‘‘মিয়ানমার সরকার দেশটি থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের পুনর্বাসনের আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধভিক্ষুদের হাতে বছরের পর বছর ধরে কৌশলগত সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এমন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে৷''
বাংলাদেশের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রধান অধ্যাপক সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বব রে রোহিঙ্গাদের ক্যানাডায় আশ্রয় দেয়ার যে সুপারিশ করেছেন তার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক দিক আছে৷ ক্যানাডা তো আর সবাইকে আশ্রয় দিতে পারবে না৷ কিন্তু এর একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে৷ সেখানে যে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে বব রে'র সুপারিশের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আরো একবার জানানো হলো৷ এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ কমানোরও চেষ্টা করেছেন তিনি, যাতে বিশ্বের সবাই রোহিঙ্গাদের জন্য এগিয়ে আসে৷ বাংলাদেশকে এককভাবে যেন এই চাপ বহন করতে না হয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘তবে আমরা আশা করেছিলাম বব রে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনকে গণহত্যা বলে চিহ্নিত করবেন৷ তিনি অনেক শক্ত অবস্থান নিয়েছেন৷ কিন্তু আরো একটু শক্ত অবস্থান নিলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো বাড়তো৷''
রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনেকে বর্তমানে অনেক কষ্টে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বাস করছেন৷ মে মাসে শুরু হতে যাওয়া বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়েছে৷
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
ক্যানাডার সরকার এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ বর্ষাকালে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য গত ১৬ মার্চ আরও ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার তহবিল জোগানের ঘোষণা দেয় ক্যানাডার সরকার৷
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে৷ রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ছাড়াও বন্যা, বৃষ্টি বা অন্য ঝুঁকিসহ এবং স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দেওয়ার জন্য মোট ১২টি খাতে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে৷
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দুই লাখ রোহিঙ্গা চরম ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে সম্প্রতি এক সেমিনারে জানিয়েছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷ একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ও সাইক্লোনের ক্ষতি এড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকার নির্ধারিত তিন হাজার একর জমি ছাড়াও ক্যাম্পের আয়তন বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে৷ ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা বসতিগুলো সরিয়ে সেখানে পুনঃস্থাপন করা হবে৷''
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করতে ২ কোটি থেকে আড়াই কোটি ডলার প্রয়োজন৷
সিপিডির হিসাব অনুযায়ী, আগামী জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ হবে ৮৮ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা৷ সিপিডি বলছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প তৈরির কারণে ৬ হাজার একর বনের জমি উজাড় হয়েছে৷ সিপিডির হিসাবে এর আর্থিক মল্য ৭৪১ কোটি টাকা৷
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সিপিডি হিসাব করে দেখেছে, এ বছরের জুন পর্যন্ত ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা জরুরি, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮ ভাগ৷ এছাড়া এত বিপুল অর্থ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের দশমিক ০৩ শতাংশ ও মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ৷
সি আর আবরার বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের খরচ দিন দিন বাড়ছে৷ আন্তর্জাতিক সহায়তা আসছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম৷ জাতিসংঘ এরইমধ্যে ৯ মাসের খরচের হিসাব দিয়েছে৷ ক্যানাডা সহায়তা করেছে৷ অন্যান্য দেশেরও এগিয়ে আসতে হবে৷ বাংলাদেশের একার পক্ষে তাদের দীর্ঘদিনের খরচ মেটানো অনেক বড় চাপ৷''
সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে৷ বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাকে খাদ্য, বাসস্থানসহ অন্যান্য খাতে নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিচ্ছে৷ বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে৷ আরো রাখতে হবে৷ কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য চাপ হবে৷ তাই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিতে হবে৷ দীর্ঘ মেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আর বাংলাদেশে আগে থেকে যে দুই আড়াই লাখ রোহিঙ্গা আছেন, তাদের কথা কেউ বলছেন না৷ বব রে যে সুপারিশ করেছেন তার আলোকে কানাডাসহ আরো অনেক দেশ যদি তাদের আশ্রয় দেয়, তাহলে এটা বড় কাজ হবে৷''
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
রোহিঙ্গাদের ইতিহাস
একটা সময় ছিল যখন কয়েকজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার সংসদে সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আর এখন রোহিঙ্গাদের ভোট দেয়ারই অধিকার নেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
স্বাধীনতার আগে
বর্তমানে মিয়ানমার নামে পরিচিত দেশে ১২ শতক থেকে মুসলমানরা বাস করছে বলে দাবি অনেক ইতিহাসবিদ ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমার যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীন (১৮২৪-১৯৪৮) ছিল তখন বর্তমানের ভারত ও বাংলাদেশ থেকে অনেকে শ্রমিক হিসেবে সেখানে গিয়েছিল৷ তবে তারা যেহেতু ব্রিটিশ আমলে এসেছে তাই স্বাধীনতার পর মিয়ানমার তাদের অবৈধ হিসেবে গণ্য করে৷ প্রতিবেদন পড়তে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
রোহিঙ্গা সাংসদ
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সংসদকে জানান, বার্মায় ১৯৫১ সালের নির্বাচনে পাঁচজন ও ১৯৫৬ সালে ছ’জন রোহিঙ্গা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ সব মিলিয়ে মিয়ানমার সংসদে মোট ১৭ জন রোহিঙ্গা সাংসদ ছিলেন বলে জানান তিনি৷ এর মধ্যে দুজন ছিলেন নারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
অভ্যুত্থান
১৯৬২ সালে বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থান হয়৷ এরপর সব নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন কার্ড করতে বলা হলেও রোহিঙ্গাদের দেয়া হয়েছিল বিদেশি পরিচয়পত্র৷ ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য চাকরি ও পড়াশোনার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়৷ ছবিটি ১৯৬২ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন বার্মার রাজধানী রেঙ্গুন থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AFP
প্রথমবার বিতাড়ন
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে তাড়াতে ১৯৭৭ সালে নির্যাতন শুরু করা হয়৷ ফলে ১৯৭৮ সালের মে মাসের মধ্যে প্রায় দু’লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর জুলাইতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ জাতিসংঘও মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল৷ ফলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল মিয়ানমার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Huda
‘গোপন’ চুক্তি
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া ঐ চুক্তির উপর ‘সিক্রেট’ অর্থাৎ ‘গোপন’ শব্দটি লেখা ছিল৷ ২০১৪ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়টি চুক্তিটি প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যাঁদের পরিবারের একসময় জাতীয় নিবন্ধন কার্ড ছিল তাঁদের মিয়ানমার সরকার ‘বার্মার বৈধ বাসিন্দা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ চুক্তিটি পড়তে উপরে (+) চিহ্ন ক্লিক করুন৷
ছবি: http://dataspace.princeton.edu
রাষ্ট্রহীন
১৯৮২ সালে পাস হওয়া নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের বস্তুত রাষ্ট্রহীন করে দেয়া হয়৷ ঐ আইনে মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতিগত গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম নেই৷ এই আইনের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য পড়াশোনা, চাকরি, ভ্রমণ, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া ইত্যাদি সীমিত হয়ে যায়৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটের অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতাড়ন
১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে আবার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার৷ ফলে প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর তাদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল৷ বিবৃতিতে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমারের বাসিন্দা’ এবং ‘মিয়ানমার সমাজের সদস্য’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল৷
সবশেষ ঘটনা
গত আগস্টের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান শুরু করে৷ ইতিমধ্যে এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ৷ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ছয় লক্ষ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে৷ তবে তাদের ফিরিয়ে নিতে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷