1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যানাডায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গাদের ক্যানাডায় আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ করেছেন রোহিঙ্গা সংকটে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নিয়োগকৃত বিশেষ দূত বব রে৷ রোহিঙ্গা সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও সুপারিশ করেছেন তিনি৷

Myanmar Rakhine Flüchtlinge
ছবি: Getty Images/AFP/P. H. Kyaw

গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রাখাইনের প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ গত অক্টোবরে ক্যানাডার টরেন্টোর সাবেক এমপি বব রে'কে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে বিশেষ দূত নিয়োগ করেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷

তিনি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন৷ সেই তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ‘‘বব রে'র চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ক্যানাডাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি, সংগঠন ও কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্যানাডা ও এর মিত্র দেশগুলোকে সুর্নিদিষ্ট অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে৷''

বব রে মনে করেন মিয়ানমার ও বাংলাদেশে চলমান সংকটে ক্যানাডার উদ্যোগ দেশটির পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি লিটমাস টেস্ট বা অগ্নিপরীক্ষা৷ সংকট নিরসনে চলতি মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন তিনি৷ মে মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য জি-সেভেন সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সংকটকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছেন রে৷

সি আর আবরার

This browser does not support the audio element.

বব রে বলেন, ‘‘মিয়ানমার সরকার দেশটি থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের পুনর্বাসনের আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধভিক্ষুদের হাতে বছরের পর বছর ধরে কৌশলগত সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এমন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে৷''

বাংলাদেশের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রধান অধ্যাপক সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বব রে রোহিঙ্গাদের ক্যানাডায় আশ্রয় দেয়ার যে সুপারিশ করেছেন তার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক দিক আছে৷ ক্যানাডা তো আর সবাইকে আশ্রয় দিতে পারবে না৷ কিন্তু এর একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে৷ সেখানে যে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে বব রে'র সুপারিশের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আরো একবার জানানো হলো৷ এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ কমানোরও চেষ্টা করেছেন তিনি, যাতে বিশ্বের সবাই রোহিঙ্গাদের জন্য এগিয়ে আসে৷ বাংলাদেশকে এককভাবে যেন এই চাপ বহন করতে না হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে আমরা আশা করেছিলাম বব রে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনকে গণহত্যা বলে চিহ্নিত করবেন৷ তিনি অনেক শক্ত অবস্থান নিয়েছেন৷ কিন্তু আরো একটু শক্ত অবস্থান নিলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো বাড়তো৷''

রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনেকে বর্তমানে অনেক কষ্টে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বাস করছেন৷ মে মাসে শুরু হতে যাওয়া বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়েছে৷

ক্যানাডার সরকার এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ বর্ষাকালে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য গত ১৬ মার্চ আরও ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার তহবিল জোগানের ঘোষণা দেয় ক্যানাডার সরকার৷

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে৷ রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ছাড়াও বন্যা, বৃষ্টি বা অন্য ঝুঁকিসহ এবং স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দেওয়ার জন্য মোট ১২টি খাতে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে৷

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দুই লাখ রোহিঙ্গা চরম ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে সম্প্রতি এক সেমিনারে জানিয়েছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম৷

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷ একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ও সাইক্লোনের ক্ষতি এড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকার নির্ধারিত তিন হাজার একর জমি ছাড়াও ক্যাম্পের আয়তন বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে৷ ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা বসতিগুলো সরিয়ে সেখানে পুনঃস্থাপন করা হবে৷''

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করতে ২ কোটি থেকে আড়াই কোটি ডলার প্রয়োজন৷

সিপিডির হিসাব অনুযায়ী, আগামী জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ হবে ৮৮ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা৷ সিপিডি বলছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প তৈরির কারণে ৬ হাজার একর বনের জমি উজাড় হয়েছে৷ সিপিডির হিসাবে এর আর্থিক মল্য ৭৪১ কোটি টাকা৷

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সিপিডি হিসাব করে দেখেছে, এ বছরের জুন পর্যন্ত ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা জরুরি, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮ ভাগ৷ এছাড়া এত বিপুল অর্থ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের দশমিক ০৩ শতাংশ ও মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ৷

সি আর আবরার বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের খরচ দিন দিন বাড়ছে৷ আন্তর্জাতিক সহায়তা আসছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম৷ জাতিসংঘ এরইমধ্যে ৯ মাসের খরচের হিসাব দিয়েছে৷ ক্যানাডা সহায়তা করেছে৷ অন্যান্য দেশেরও এগিয়ে আসতে হবে৷ বাংলাদেশের একার পক্ষে তাদের দীর্ঘদিনের খরচ মেটানো অনেক বড় চাপ৷''

সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে৷ বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাকে খাদ্য, বাসস্থানসহ অন্যান্য খাতে নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিচ্ছে৷ বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে৷ আরো রাখতে হবে৷ কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য চাপ হবে৷ তাই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিতে হবে৷ দীর্ঘ মেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আর বাংলাদেশে আগে থেকে যে দুই আড়াই লাখ রোহিঙ্গা আছেন, তাদের কথা কেউ বলছেন না৷ বব রে যে সুপারিশ করেছেন তার আলোকে কানাডাসহ আরো অনেক দেশ যদি তাদের আশ্রয় দেয়, তাহলে এটা বড় কাজ হবে৷''

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ