ক্যানাবিসকে বৈধ করার দাবি
২৬ এপ্রিল ২০১৪আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ লক্ষ জার্মান নিয়মিত ক্যানাবিস বা মারিজুয়ানা সেবন করেন৷ সাদা বাংলায় যাকে বলা হয় গাঁজা৷ এটা অবশ্য দণ্ডনীয় অপরাধ নয়৷ কিন্তু গাঁজা বিক্রি করা বা গাছ লাগানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কিন্তু সাজার ভয়ে গাঁজা সেবন করা থেকে বিরত হচ্ছেন না সেবনকারীরা৷ অর্থাৎ এতে আসল উদ্যেশ্য হাসিল হচ্ছে না, বলেন ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন প্রফেসর লোরেনৎস ব্যোলিংগার৷ বছর দুয়েক আগে তিনি একটি উদ্যোগ শুরু করেন৷ এতে যোগ দেন ১২০-এরও বেশি প্রফেসর৷ তাঁরা সবাই চান ক্যানাবিসকে বৈধ করা হোক৷
সংসদে আলোচনার আহ্বান
২০১৩ সালের নভেম্বরে সংসদে বিষয়টি নিয়ে একটি কমিশন, অর্থাৎ সব ফ্র্যাকশনের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তাঁরা৷ এখন এই ব্যাপারে সাড়াও পাওয়াও গিয়েছে৷ সবুজদল ও বামদল ডি লিংকের ফ্র্যাকশন সংসদে একটি কমিশন গঠন করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে৷ এসপিডির সাংসদদেরও কাছে টানার চেষ্টা করছেন ব্যোলিংগার৷ কমিশন গঠনের জন্য ১২০ জন সাংসদের সম্মতির প্রয়োজন৷ সংসদে বিরোধীদলের (সবুজ ও বামদলের) সাংসদদের সংখ্যা মোট ১২৭৷
সমাজে ক্যানাবিসকে ‘কোমল মাদক' বলে মনে করা হয়৷ কিন্তু যাঁরা এই মাদক সেবন করেন, তাঁদের অপরাধী বলে সমালোচনা করা হয়৷ এই মাদক কেনার জন্য কালোবাজারে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন তাঁরা৷ অনেকের জীবনে ভাঙন ধরে৷ একবার শাস্তি পেলে কালো দাগ পড়ে যায় জীবনে৷ শিক্ষানবিশির কাজ পেতে অসুবিধা হয়৷ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়৷ সব মিলিয়ে বাঁকা পথে অগ্রসর হয় তাঁদের জীবন, বলেন প্রফেসর ব্যোলিংগার৷
বিভিন্ন ধরনের মতামত
জার্মান সরকারের মাদকের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত মারলেনে মর্টলার অবশ্য এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘বিশেষ করে তরুণদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকিটা খাটো করে দেখলে চলবে না৷ নিয়মিত ক্যানাবিস সেবনে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷ এ থেকে আসক্তিও দেখা দিতে পারে৷''
প্রফেসর ব্যোলিংগার অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন৷ তাঁর মতে, ক্যানাবিস বা গাঁজা সেইসব মানুষের জন্য বিপজ্জনক, যাঁদের আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই মাদক বৈধ হলে ঝুঁকি সম্পর্কে তরুণদের বোঝানো যাবে৷ অ্যালকোহল ও সিগারেটের ক্ষেত্রেও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি রয়েছে৷
এছাড়া এই মাদক বৈধ হলে এর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে৷ ক্যানাবিস সমিতির প্রধান গেওর্গ ভুর্থ এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, এক ডিলার ক্যানাবিসের সাথে ‘লেড সালফেট' মিশিয়ে দেন৷ এই ভেজাল সেবন করে ১০০ জনকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল৷ এর সাথে চিনি ও তরল প্লাস্টিকের ভেজালও দেওয়া হয়৷ মাদকটি বৈধ করলে এসব ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে৷
ম্যুন্সটারের পুলিশের প্রেসিডেন্ট হুবার্ট ভিমবারও এই মাদকের ব্যাপারে আইন পরিবর্তনের পক্ষে৷ তাঁর মতে, এই মাদক নিষিদ্ধ করেও ফল হয়নি৷ যাঁরা চান তাঁরা এটা জোগাড় করতে পারেন৷ শাস্তির ভয়ে পিছপা হন না৷ সাজার ব্যাপারে বেশি অর্থ আর প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কম অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে৷ তিনি মনে করেন, বর্তমান সরকারের হাতে এই মাদকের বৈধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ তবে প্রফেসর ব্যোলিংগারের উদ্যোগটা ভালো বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা৷
উল্লেখ্য, গত বছর উরুগুয়েতে ক্যানাবিস বা গাঁজা উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রিত কেনাবেচার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ অ্যামেরিকার কলোরাডো এবং ওয়াশিংটনেও এই মাদক সেবনকরা দণ্ডনীয় অপরাধ নয়৷