জাতিসংঘের এক গবেষণায় দেখা গেছে বন রক্ষায় ল্যাটিন অ্যামেরিকা ও ক্যারিবিয়ানের আদিবাসীরা সবচেয়ে বেশি কার্যকর৷ তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি ও বন সম্পর্কে জ্ঞান এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় জানা যায়৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু বনে অর্থ উপার্জনের উপায় না থাকায় তরুণ আদিবাসীদের অনেকে শহরে চলে যাচ্ছেন৷ ফলে বনে মানুষ কমে যাচ্ছে, আর তার সুযোগ নিচ্ছেন অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা৷
ব্রাজিলের এনজিও দ্য হেলথ অ্যান্ড হ্যাপিনেস প্রোজেক্ট বা পিএসএ গত ৩০ বছর ধরে অ্যামাজনের পারা রাজ্যে সক্রিয় আছে৷ বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে তারা বনের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তেল, মাখনের মতো পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷
পিএসএর সঙ্গে কাজ করছেন ২২ বছর বয়সি তরুণ লুইস হেনরিক লোপেস ফেরেইরা৷ ব্রাজিলের পূর্ব অ্যামাজনের তাপাখোস আরাপিয়নস এক্সট্র্যাক্টিভ রিজার্ভে বাস করেন তিনি৷ সেখানকার প্রায় ১৩ হাজার বাসিন্দার অধিকাংশই আদিবাসী৷
বনে জন্মানো একশোর বেশি প্রজাতির ফল দিয়ে মিষ্টি, জ্যাম ও লিকার তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করেন ফেরেইরা৷ তার সঙ্গে কাজ করে প্রায় ৪০টি পরিবার উপকৃত হচ্ছে৷
ফেরেইরা জানান, বনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় আগের চেয়ে অনেক বেশি তরুণ এখন শহরে না গিয়ে বনে থাকছে৷
মহামারিকালে অ্যামাজন অঞ্চলের সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতা
কোভিড-১৯ নিয়ে অ্যামাজনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে ডয়চে ভেলে অ্যাকাডেমির উদ্যোগে একটি প্লাটফর্মে যুক্ত হয় লাতিন অ্যামেরিকার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম৷ কী কাজ করেছে তারা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Lismari Camacho/Hacemos Memoria
যাদের কথা শোনা হয় না
লাতিন অ্যামেরিকার পাঁচ অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে ডয়চে ভেলে অ্যাকাডেমির গড়ে তোলা মাল্টিমিডিয়া প্লাটফর্ম ‘ভোৎসেস’৷ অ্যামাজন অঞ্চলের সবচেয়ে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, সংকটের চিত্র তুলে ধরেছে এই প্রকল্প৷ এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের বাস্তবতা উঠে এসেছে অডিও, ভিডিও আর স্থিরচিত্রে৷
ছবি: Lismari Camacho/Hacemos Memoria
অ্যামাজনকে একত্রিতকরণ
ইকুয়েডরে অ্যামাজন ইন্টারকালচারাল রেডিও নেটওয়ার্ক (আরআইএআর) স্টেশন ব্যবহার করে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছায় করাপে৷ স্প্যানিশ ও স্থানীয় ভাষাগুলোতে তারা বিভিন্ন সস্প্রদায়ের বিশেষত্ব, সমস্যা এবং মহামারি বিষয়ে জনসচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করে৷ করাপের নির্বাহী সচিব খর্খে গুয়াচামিন বলেন, ‘‘আমরা বিষয়বস্তুকে আরো বিশদভাবে উপস্থাপনের জন্য আমাদের প্রযুক্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি কাভারেজের পরিধি বাড়িয়েছি৷’’
ছবি: Corape
স্বাস্থ্য তথ্য
পেরুভিয়ান অ্যামাজনিয়া অঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, টিকা প্রাপ্তি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জ্ঞানের বৈচিত্র্য নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করে সারভিন্দি৷ এই উদ্যোগটির পরিচালক খর্খে আগুর্তো বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগের অভাবে আমরা এখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা নিয়ে প্রতিরোধও দেখেছি৷’’
ছবি: Willman Caichihua/Servindi
বিপদে ঐক্য
কলোম্বিয়ার কাউকা অঞ্চলের সিআরআইসি এর ম্যাগাজিন আলভারো উলকুয়ে৷ সেখানকার জনগোষ্ঠীরা কিভাবে ভাইরাস থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারে এবং তাদের অঞ্চলকে নিরাপদ রাখতে পারে তা নিয়ে তথ্য দিয়ে গেছে৷ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে তারা ম্যাগাজিনটিতে এই বিষয়ে একটি বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করেছে৷ এর প্রথম পাতার একটি শিরোনাম ছিল, ‘‘মহামারি আমাদের আক্রান্ত করার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধও করেছে৷’’
ছবি: Alex Sekwe/CRIC
সত্যতা যাচাই
‘‘রোগ ছাড়ানোর সঙ্গে করোনা ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিকভাবে ভুয়া তথ্যেরও মহামারি ঘটে,’’ এমনটাই জানিয়েছে কলম্বিয়াচেক নামের ওয়েবসাইটটি৷ কলম্বিয়ান কনসেহো দ্য রেদাকসিওন নামের ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্যাক্ট চেকারদের সঙ্গে সমন্বয়ে কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে ছাড়ানো ভুয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷
ছবি: Colombiacheck
রিওস ফলাদোরেস
বিদ্যমান প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই ও ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবিলায় রিওস ফলাদোরেস নামের জোট গঠন করেছে ডয়চে ভেলে অ্যাকাডেমি৷ এর অংশীদার হিসেবে রয়েছে আসেমোস মেমোরিয়া, সারভিন্দি, করাপে, কনসেহো দ্য রেদাকসিওন এর প্রতিষ্ঠান৷ সাংবাদিকতার মাধ্যমে গণমাধ্যমকে আরো শক্তিশালী করা, অ্যামাজন অঞ্চল এবং তার বাসিন্দাদের রক্ষা যার মূল উদ্দেশ্য৷
ছবি: Consejo de Redacción
6 ছবি1 | 6
পিএসএর কোঅর্ডিনেটর সেতানো স্কানাভিনো বলেন, ‘‘(বনে) ভালো জীবনযাপনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তা না হলে তরুণ প্রজন্ম বন ছেড়ে শহরে চলে যাবে৷'' এভাবে রেনফরেস্ট খালি হয়ে গেলে খনি ও কাঠ ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি৷
আরেক এনজিও টেনিওর ফ্যাসিলিটির কর্মকর্তা ডেভিড কায়মোউইটস বলেন, ‘‘আমরা যা জানি তা হচ্ছে, যখন আদিবাসী ও স্থানীয়রা বন রক্ষার দায়িত্ব নেন তখন বন ধ্বংসের হার অনেক কমে যায়৷''
প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা জাতিসংঘের গবেষণার প্রধান ছিলেন কায়মোউইটস৷ গত ২০ বছরে প্রকাশিত ৩০০র বেশি গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করা জাতিসংঘের ঐ গবেষণায় বন রক্ষায় আদিবাসী ও স্থানীয়দের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়৷ কিন্তু স্থানীয়রা যেন বনে থাকেন সেজন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দরকার বলে মনে করেন কায়মোউইটস৷
এ বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত আরেক গবেষণা বলছে, অ্যামাজন রক্ষার মাধ্যমে মহামারিকেও দূরে রাখা যেতে পারে৷ কারণ অ্যামাজন টিকে থাকলে বানর ও প্রাইমেটদের মতো ভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী প্রাণীদের বনেই রাখা যাবে বলে যুক্তি দেয়া হয়েছে৷