মানুষের শরীরে প্রায় নয় হাজার জেনেটিক মিউটেশন হয়৷ এই মিউটেশনগুলির বেশিরভাগই শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু ভবিষ্যতে এর থেকে বিপজ্জনক কোনো রোগ হতে পারে কি না, তার ধারণা দিতে কি পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই?
মানুষের শরীরের বেশিরভাগ জেনেটিক মিউটেশন বা জিনগত রূপান্তর আসে পূর্বপুরুষদের থেকে৷ কিন্তু ৬৪টি রূপান্তর ঘটে আমাদের জীবদ্দশাতেই৷ এর মধ্যে কিছু আমরা পরের প্রজন্মকেও দিয়ে থাকি৷
এর মধ্যে বেশিরভাগ রূপান্তরের কোনো প্রভাব আমাদের স্বাস্থ্যে না পড়লেও কিছু কিছু রূপান্তর শরীরে প্রোটিনের কার্যকারিতা কমাতে পারে, যা থেকে ক্যান্সার, ডায়বেটিস সহ হৃদরোগ দেখা যেতে পারে৷
বিজ্ঞানীরা এখন জিনগত পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু বিশেষ রোগের সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে পারেন৷ এই কাজে মূল সাহায্য করবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত অ্যালগরিদম৷
হয়তো আন্ড্রেয়া ডাওনিং এর জীবনও এই প্রযুক্তিই বাঁচিয়েছে৷ বয়স বিশের কোঠায় থাকার সময়েই ডাওনিং এর শরীরে বিআরসিএ১ নামের মিউটেশন পাওয়া যায়৷ বিআরসিএ১ ও বিআরসিএ২ শরীরে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে রূপান্তরিত জিনে স্তন ক্যান্সার বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার দেখা যায়৷
শিশুদের মস্তিষ্কে ক্যান্সার: গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
শিশুদের যেসব ক্যান্সার হয়, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মস্তিষ্কে ক্যান্সার৷ জার্মানির এক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এই রোগ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
শিশুদের ক্যান্সার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান
শিশু-কিশোরদের যত ধরনের ক্যান্সার হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার, এরপরে সবচেয়ে বেশি হয় ব্রেইন ক্যান্সার৷ জার্মান ব্রেইন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, যেসব শিশুদের ক্যান্সার হয় তাদের মধ্যে ২৫ ভাগ মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
ছেলেদের ক্যান্সারের হার বেশি
সাড়ে ছয় বছরের শিশুদের মধ্যে এ ধরনের ক্যান্সারের হার বেশি৷ এছাড়া মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে এ ধরনের ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
লক্ষণ
ব্রেইন টিউমারের সাধারণ লক্ষণগুলো হল: মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি, দৃষ্টি বিভ্রান্তি, ভারসাম্যে সমস্যা এবং যেকোন জিনিসের সামঞ্জস্য করতে সমস্যা৷ তবে মস্তিষ্কে স্থান ভেদে লক্ষণ ভিন্ন হয়৷
ছবি: picture alliance / Frank Rumpenhorst
নির্ণয়
এমআরআই এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ছবি তুলে চিহ্নিত করা হয় কোথায় টিউমার আছে৷ এটা ক্যান্সার কিনা সেটা জানার জন্য বায়োপ্সি করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. P. Kasper
মস্তিষ্কে টিউমারের ধরন
শিশুদের মধ্যে অ্যাস্ট্রোসাইটোমা ধরনের টিউমারটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ প্রাথমিক অবস্থায় সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটিকে অপসারণ করা গেলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সুযোগ থাকে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই টিউমারকে ‘গ্রেড ১’ হিসেবে ক্যাটাগরি করেছে৷ এরপর গ্রেড-২ ও গ্রেড -৩ এ আছে এপেনডাইমোমা৷ গ্রেড-৪ এ আছে মেডুলোব্লাস্টোমা৷ এই দুই ধরনের ক্যান্সার শিশুদের মধ্যে কমই দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Vennenbernd
চিকিৎসা
টিউমার কত বড় বা মস্তিষ্কের কোথায় এর অবস্থান সে অনুযায়ী অস্ত্রোপচার, রেডিও থেরাপি, কেমোথেরাপি বা এগুলোর সমন্বয়ে চিকিৎসা করা হয়৷ হাইডেলবার্গের হোপ চিলড্রেনস ক্যান্সার সেন্টারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান পাটলার জানান, শিশুদের এক দুইবারের বেশি রেডিও থেরাপি দেয়া সম্ভব নয়, তখন কেমোথেরাপি দিতে হয়৷ এটা নিতে শিশুদের ভীষণ কষ্ট হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. P. Kasper
ঝুঁকি
মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারে বেশ ঝুঁকি রয়েছে৷ সফলভাবে অস্ত্রোপচার না হলে সারাজীবনের জন্য মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: DW/S. K. Dey
জীবন সংশয়
মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে টিউমার হলে অস্ত্রোপচার বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে কথা বলঅ এবং চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের যে অংশ এবং ব্রেইন স্টেম৷ অস্ত্রোপচারের সময় এগুলোর কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে৷
ছবি: DW/S. K. Dey
ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়
কোন শিশুর ক্যান্সার হওয়া মানেই তার মৃত্যু নিশ্চিত এমন নয়৷ টিউমার সফলভাবে অপসারণ করা গেলে ৭৫ ভাগ সম্ভাবনা থাকে পুরোপুরি সেরে ওঠার৷ খারাপ ধরনের টিউমারের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ৪০ ভাগ৷
ছবি: Colourbox
ফিরে আসা
কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের কয়েক বছর পর এপেনডাইমোমা টিউমার ফিরে আসে৷ এ কারণ হতে পারে কোন কোষ রয়ে গিয়েছিল৷ সেক্ষেত্রে আবারও অস্ত্রোপচার করে টিউমারের প্রতিটি কোষ সরিয়ে ফেলতে হয়, যা বেশ কঠিন কাজ৷
ছবি: picture-alliance/ZB/W. Grubitzsch
শিশুরা মানসিকভাবে শক্ত
জার্মানির ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুরা মানসিকভাবে বেশ সাহসী৷ ভবিষ্যতে কি হবে তা না ভেবে হাসিমুখে তারা চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে অংশ নেয়৷ তবে শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসায় সফলতার হার অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন জার্মান চিকিৎসকেরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
ডয়চে ভেলেকে ডাওনিং বলেন, ‘‘আমার পরিবারে নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের ধারা রয়েছে৷ আমি যখন খুব ছোট, তখন আমার মায়ের শরীরে ক্যান্সার পাওয়া যায়, যা আমার শৈশবকে প্রভাবিত করেছিল৷''
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে স্তন বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি, যার পোশাকি নাম ম্যাসেকটমি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এই সিদ্ধান্তগুলিই আমার জীবন বদলেছে৷ আমি জানতে চাই না এমনটা না করলে আমার জীবন কেমন হতো৷''
এআই-এরযাভূমিকা
ডাওনিং এর অভিজ্ঞতা চিকিৎসার জগতে প্রেডিকটিভ মেডিসিন বা ভবিষ্যতমুখী চিকিৎসার অংশ, যার কেন্দ্রে রয়েছে এআই৷ এআই ব্যবহার করে ডিএনএ সিক্যুয়েন্স, মিউটেশনের প্রাণকেন্দ্র খোঁজা যায়, যাতে করে কোন মিউটেশনের কারণে শরীরে কোন রোগের ঝুঁকি রয়েছে, তা বোঝা যায়৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় জিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্রিস্টোফার মেসন এই গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন৷ তার মতে, এই প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানের দুনিয়া আগাগোড়া বদলে দেবে ৷
তিনি বলেন, ‘‘ক্যান্সারের চিকিৎসা এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ৷ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা দেখতে পারি কোন ধরনের ক্যান্সারকে সবচেয়ে ভালো ঠেকানো যায়৷ কয়েক ঘণ্টা বা দিনের মধ্যে আমরা ডিএনএ সিক্যুয়েন্স পেয়ে যাব, যা দিয়ে সঠিক চিকিৎসা পন্থা নির্ধারণ করা যাবে৷''
কিন্তু মেসন এও বলেন যে চিকিৎসা দুনিয়া থেকে চিকিৎসকেরা চলে যাবেন, এমনটা নয়, কিন্তু কো-পাইলটের মতো সাহায্য করতে অবশ্যই প্রয়োজন পড়বে এআই, যা ডাক্তারদের ওপর চাপও কমাবে৷
এতটাসরলনয়বাস্তবায়ন
আগের চেয়ে এখন চল বেড়েছে ‘২৩অ্যান্ডমি' বা ‘অ্যান্সেস্ট্রি'-র মতো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের পুর্বপুরুষদের খোঁজ করে৷ এতে করে জানা যায় যে কোন ধরনের রোগের চল রয়েছে আপনার পরিবারে, কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা লাভজনক নাও হতে পারে৷
ডাওনিং জানান যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকায় তিনি ম্যাসেকটমির মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন৷ কিন্তু অন্যান্য রোগ, যেমন হৃদরোগ বা আলঝাইমার্স বা স্কিৎজোফ্রেনিয়ার ক্ষেত্রে এমন সমাধান সম্ভব নয়৷
চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা দিক ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই গবেষণা থেকে উঠছে তথ্য নিরাপত্তাজনিত নানা সমালোচনা৷