বৃহস্পতিবার অ্যামেরিকার আদালত স্টুয়ার্ট রোহডসকে ১৮ বছরের হাজতবাসের সাজা শুনিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অতি দক্ষিণপন্থি সংগঠনের প্রধান স্টুয়ার্ট রোহডসের নির্দেশেই অ্যামেরিকার ক্যাপিটল ভবনে আক্রমণ চালিয়েছিল দাঙ্গাকারীরা। পৃথক পৃথক মামলায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। তবে এই মামলার মূল চক্রী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ৫৭ বছরের স্টুয়ার্ট রোহডস। বৃহস্পতিবার তাকে ১৮ বছরের কারাবাসের সাজা শুনিয়েছে আদালত।
মার্কিন ফেডারেল কোর্ট এদিন কী রায় দেয়, তা নিয়ে অনেকেরই উৎসাহ ছিল। তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানিয়েছিলেন সরকারি আইনজীবী। বস্তুত, তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী ধারা প্রয়োগের আবেদন জানানো হয়।
বাস্তেই থেকে ক্যাপিটল: সরকারি ভবনে হামলার কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা
৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে হামলার ঘটনায় হতবাক বিশ্ব৷ কিন্তু এটাই প্রথম নয়৷ ইতিহাসে এমন আরও কয়েকটি ঘটনার কথা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: akg-images/picture alliance
১৭৮৯: ফরাসি বিপ্লব
১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসের বাস্তেই দুর্গ পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়৷ এই দুর্গে স্বাধীনতাকামী রাজনীতিবিদদের বন্দি করে নির্যাতন করা হত৷ বিক্ষুব্ধ মানুষ ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করতে দুর্গে চড়াও হয়৷ নিহত হয় দুই শতাধিক৷ ফ্রান্সে বর্তমানে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় ১৪ জুলাই৷
ছবি: akg-images/picture alliance
১৯১৭: অক্টোবর বিপ্লব
রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লব শুরু হয় যখন বলশেভিকরা উইন্টার প্যালেসে হামলা চালায়৷ প্রাদেশিক সরকারের অফিস ছিলো এটি৷ ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার জারের পতন ঘটে৷ ‘রেড অক্টোবরে’ বলশেভিকরা রাজধানী সেন্ট পিটার্সব্যর্গ থেকে সরকার উৎখাতে সফল হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg
১৯৫৮: ইরাকে সামরিক অভ্যুত্থান
সে বছরের জুলাইয়ে বাগদাদে বাদশাহ ফয়সালের প্রাসাদে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা৷ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় রাজতন্ত্রের৷ বাদশাহ ফয়সাল এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
১৯৭৩: চিলির সামরিক অভ্যুত্থান
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাতরে আলেন্দে তিন বছর ক্ষমতায় থাকার পর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী৷ ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবন দখল করে নেয় সামরিকবাহিনীর সদস্যরা৷ আলেন্দে আত্মহত্যা করেন এবং চিলিতে আগুস্তো পিনোশের নৃশংস সামরিক স্বৈরাচারী শাসন শুরু হয়৷
ছবি: OFF/AFP/Getty Images
১৯৮১: স্পেনে অভ্যুত্থানের চেষ্টা
ঐ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি লেফটেনেন্ট গভর্নর আন্তোনিও তেজেরো মলিনা ২০০ পুলিশ ও সেনা নিয়ে স্পেনের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পার্লামেন্ট সদস্যদের ১৮ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে৷ রাজা খুয়ান কার্লোসের মধ্যস্থতায় ফ্রাঙ্কো শাসনামলের শেষে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ হয় দেশটির৷ অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় এবং মলিনাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
১৯৩৩: জার্মান পার্লামেন্ট
সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ঘটনা ঘটে৷ চ্যান্সেলর হিসেবে হিটলারের শপথ নেয়ার চার সপ্তাহ পর এক বিদ্রোহী জার্মান পার্লামেন্ট ভবনের নীচতলায় আগুন দেয়৷ গত বছরের আগস্টে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কড়াকড়ি উঠিয়ে নেয়ার দাবিতে ভবনে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছিল বিক্ষোভকারীরা৷ এদের বেশিরভাগই ছিলো কট্টর ডানপন্থি দলের সমর্থক৷
ছবি: Reuters/C. Mang
২০২১: ক্যাপিটল ভবন
২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ৬ জানুয়ারি কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক কংগ্রেস ভবনের সামনে জড়ো হয়৷ এক পর্যায়ে ভবনে হামলা চালায় সহিংস বিক্ষোভকারীরা৷ নিহত হয় চারজন৷
ছবি: Shannon Stapleton/REUTERS
7 ছবি1 | 7
সন্ত্রাসবাদী ধারা যুক্ত না করলেও তার কাজ যে সন্ত্রাসবাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, তা মেনে নিয়েছেন ফেডারেল বিচারক। বিচারক অমিত মেহেতার কাছে ২৫ বছরের সাজা ঘোষণার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চরমতম সাজা ঘোষণা করেননি তিনি। ১৮ বছরের কারাবাস ঘোষণা করেছেন। এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে রোহডস দোষী প্রমাণিত হয়েছিল। এদিন তার সাজা ঘোষণা হলো।
কী ঘটেছিল
২০২০ সালেরনির্বাচনে হারের পর নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার কথা ছিল জানুয়ারি মাসে। তার ঠিক আগে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবন আক্রমণ করেন একদল ট্রাম্পভক্ত। ক্যাপিটল ভবনের ভিতরে ঢুকে কার্যত সবকিছু তছনছ করে দেন তারা। অভিযোগ, রোহডসের নির্দেশেই ওই দলটি ক্যাপিটল ভবনে আক্রমণ চালিয়েছিল। যদিও রোহডসের আইনজীবীর বক্তব্য, তার মক্কেল ক্য়াপিটল ভবনের ভিতরে ঢোকেননি। বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাউকে ভিতরে ঢোকার নির্দেশও দেননি।
ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে ক্যাপিটলে যত ক্ষয়ক্ষতি
বুধবার অনেকটা সময় ট্রাম্প সমর্থকদের দখলে ছিল মার্কিন ক্যাপিটল৷ বিস্তর ক্ষতি করেছেন তারা৷ জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Alex Wong/Getty Images
যা হয়েছিল
বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়লেন উত্তেজিত ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা৷ পুলিশের বাধা না মেনে দখল নেন ক্যাপিটল ভবনের একতলার৷ বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে৷ পরে, বাধ্য হয়ে গুলি চালায়৷ সব মিলিয়ে ক্যাপিটল ভবন ও সংবাদমাধ্যমের নানা সম্পত্তির অনেক ক্ষতি হয়৷
ছবি: REUTERS
রক্তাক্ত ক্যাপিটল
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকদের ক্রোধের আঁচ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জ্যাকারি টেলরের আবক্ষমূর্তিতেও লেগেছে৷ ক্যাপিটলের ভেতরে হাতাহাতির ফলে রক্তপাত ঘটে, সেই রক্ত দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট টেলরের মূর্তির গায়েও৷
ছবি: Samuel Corum/Getty Images
ভাঙচুর যত
বুধবার টেলিভিশন থেকে ইন্টারনেট সর্বত্র ছেয়ে ছিল ক্যাপিটলে ভাঙচুরের ছবি৷ বিক্ষুব্ধরা শুধু ক্যাপিটলের বিভিন্ন দরজা, জানালার কাঠ-কাঁচ ভেঙেই থামেনি, ভেতরের মূল পোডিয়ামও কাঁধে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা৷ একটি ভিডিওতে দেখা যায় কয়েক শতক পুরোনো আসবাব, ঝাড়বাতি সব টেনে মাটিতে ফেলে দিতে৷
ছবি: Erin Scott/REUTERS
যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
ক্যাপিটলে উপস্থিত হাউস প্রতিনিধি জেসন ক্রো বলেন, ‘‘আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়৷ পালাবার পথ ছিল না৷ যখন আমি ইরাক বা আফগানিস্তানে লড়ছিলাম, তখনও আমি এতটা ভীত হয়েছিলাম৷ এরপর আর কখনো এমন অনুভূতি হয়নি৷ কিন্তু সেই সময় আমার সামনে লড়ে বিপদ থেকে বেরোবার পথ ছিল৷ লড়ার জন্য ক্যাপিটলে আমার পকেটের কলম ছাড়া আর কোনো অস্ত্র ছিল না৷’’
ছবি: Alex Wong/Getty Images
আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম
শুধু ক্যাপিটলের ভেতরে নয়, বাইরে থাকা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা, মাইক ভাঙা হয়েছে৷ সাংবাদিকদের গালিও দেওয়া হয়৷ ওপরের ছবিতেও তার প্রতিফলন৷ ক্যাপিটলের দরজার ওপরে লেখা ‘মার্ডার দ্য মিডিয়া!’
ছবি: Erin Scott/REUTERS
সন্ত্রাস ও মৃত্যু
বুধবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷ এর মধ্যে, রয়েছেন এক পুলিশকর্মীও৷ ভাঙচুর, মারামারি ও হাতাহাতির ভয়াবহতার কারণে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই বুধবারের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
6 ছবি1 | 6
আদালত কী বলেছে
বিচারক জানিয়েছেন, রোহডস অত্যন্ত স্মার্ট এক ব্যক্তি। তিনি যা বলেন, মানুষ তা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে। আর সেটাই সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ। তার কথা শুনেই একদল মানুষ ক্যাপিটল আক্রমণ করে। ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে। সে কারণেই চরম শাস্তি তার পাওয়া উচিত।
তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের চার্জ না লাগালেও বিচারক মুখে বলেছেন, রোহডস যা করেছেন, তা কোনো অংশেই সন্ত্রাসবাদের কম নয়। সন্ত্রাসবাদের চার্জ তার বিরুদ্ধে আনাই যায়। তবে সিডিশন বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।
ডনাল্ড ট্রাম্প এই গোষ্ঠীটিকে উসকে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। সেই অভিযোগ নিয়েও আদালতে শুনানি চলছে। বস্তুত, দেশকে বাঁচাতে এমনই কিছু করা উচিত বলে প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
এদিন আদালত কক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় রোহডসও বলেছেন, তিনি যা করেছেন, তা দেশকে বাঁচানোর স্বার্থে করেছেন।