গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে তাণ্ডব নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি ডনান্ড ট্রাম্পও অভিযুক্ত হবেন? ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কি যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে?
বিজ্ঞাপন
মার্কিন কংগ্রেসের কমিটি এখন ক্যাপিটল-দাঙ্গা নিয়ে তদন্ত করছে। তাদের আটটি শুনানি হয়েছে। যে কোনো ব্লকবাস্টার সিরিজের থেকেও আকর্ষণীয় হয়েছে এই শুনানি।
ক্যাপিটলে সমর্থকদের তাণ্ডবের পরের দিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি মানেন না যে নির্বাচন-পর্ব শেষ হয়ে গেছে। ট্রাম্প তখন নির্বাচনে ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ করছেন। হার মানছেন না, সমর্থকদের উসকানি দিচ্ছেন।
কংগ্রেসের তদন্তকারী কমিটি এবার গরমের ছুটি বা সামার ব্রেকে গেছে। তার আগে বৃহস্পতিবার শেষ শুনানিতে তদন্তকারী কমিটির পুরো ফোকাস ছিল, ৬ জানুয়ারি, সমর্থকদের ক্যাপিটলে ভাঙচুর না করার আবেদন জানাননি ট্রাম্প, তিনি তাদের চলে যেতেও বলেননি। তার পরিবার, পরামর্শদাতারা বারবার করে তাকে এই আবেদন করতে বলার পরও তিনি শোনেননি। দলের নেতারা, এমনকি ফক্স নিউজও এই আবেদন করেছিল। তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রথম শুনানি থেকে এটাও বোঝাবার চেষ্টা করছেন, ট্রাম্প জানতেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়নি তা সত্ত্বেও তিনি তার সমর্থকদের উসকানি দিয়েছেন এবং সহিংসতায় মদত দিয়েছেন।
ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে ক্যাপিটলে যত ক্ষয়ক্ষতি
বুধবার অনেকটা সময় ট্রাম্প সমর্থকদের দখলে ছিল মার্কিন ক্যাপিটল৷ বিস্তর ক্ষতি করেছেন তারা৷ জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Alex Wong/Getty Images
যা হয়েছিল
বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়লেন উত্তেজিত ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা৷ পুলিশের বাধা না মেনে দখল নেন ক্যাপিটল ভবনের একতলার৷ বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে৷ পরে, বাধ্য হয়ে গুলি চালায়৷ সব মিলিয়ে ক্যাপিটল ভবন ও সংবাদমাধ্যমের নানা সম্পত্তির অনেক ক্ষতি হয়৷
ছবি: REUTERS
রক্তাক্ত ক্যাপিটল
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকদের ক্রোধের আঁচ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জ্যাকারি টেলরের আবক্ষমূর্তিতেও লেগেছে৷ ক্যাপিটলের ভেতরে হাতাহাতির ফলে রক্তপাত ঘটে, সেই রক্ত দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট টেলরের মূর্তির গায়েও৷
ছবি: Samuel Corum/Getty Images
ভাঙচুর যত
বুধবার টেলিভিশন থেকে ইন্টারনেট সর্বত্র ছেয়ে ছিল ক্যাপিটলে ভাঙচুরের ছবি৷ বিক্ষুব্ধরা শুধু ক্যাপিটলের বিভিন্ন দরজা, জানালার কাঠ-কাঁচ ভেঙেই থামেনি, ভেতরের মূল পোডিয়ামও কাঁধে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা৷ একটি ভিডিওতে দেখা যায় কয়েক শতক পুরোনো আসবাব, ঝাড়বাতি সব টেনে মাটিতে ফেলে দিতে৷
ছবি: Erin Scott/REUTERS
যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
ক্যাপিটলে উপস্থিত হাউস প্রতিনিধি জেসন ক্রো বলেন, ‘‘আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়৷ পালাবার পথ ছিল না৷ যখন আমি ইরাক বা আফগানিস্তানে লড়ছিলাম, তখনও আমি এতটা ভীত হয়েছিলাম৷ এরপর আর কখনো এমন অনুভূতি হয়নি৷ কিন্তু সেই সময় আমার সামনে লড়ে বিপদ থেকে বেরোবার পথ ছিল৷ লড়ার জন্য ক্যাপিটলে আমার পকেটের কলম ছাড়া আর কোনো অস্ত্র ছিল না৷’’
ছবি: Alex Wong/Getty Images
আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম
শুধু ক্যাপিটলের ভেতরে নয়, বাইরে থাকা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা, মাইক ভাঙা হয়েছে৷ সাংবাদিকদের গালিও দেওয়া হয়৷ ওপরের ছবিতেও তার প্রতিফলন৷ ক্যাপিটলের দরজার ওপরে লেখা ‘মার্ডার দ্য মিডিয়া!’
ছবি: Erin Scott/REUTERS
সন্ত্রাস ও মৃত্যু
বুধবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷ এর মধ্যে, রয়েছেন এক পুলিশকর্মীও৷ ভাঙচুর, মারামারি ও হাতাহাতির ভয়াবহতার কারণে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই বুধবারের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
6 ছবি1 | 6
কমিটির সদস্যরা বলেছেন, ক্যাপিটলে সহিংসতার দায় পুরোপুরি ট্রাম্পের উপরই গিয়ে পড়ছে। তারা তাদের মতো করে টুকরো টুকরো করে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তাদের বক্তব্য প্রমাণ করতে চাইছেন। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার অবশ্য জোরগলায় দাবি করেছেন, এই অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু কমিটির সদস্যরা তাকে প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প জানতেন, তার সমর্থকরা সশস্ত্র , তাও তিনি কেন ১৮৭ মিনিট চুপ করে থেকেছেন? ততক্ষণ তার সদস্যরা ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালিয়েছে।
এই শুনানির গুরুত্ব
শুনানির সময় বিস্তারিতভাবে সকলের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। অপ্রকাশিত ফুটেজ দেখানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হলো, কংগ্রেসের কমিটি তদন্ত করতে পারে, কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো আইনগত অধিকার তাদের নেই। সেটা রয়েছে জাস্টিস বিভাগের ও বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডের হাতে।
এতদিন পর্যন্ত জাস্টিস বিভাগ ৬ জানুয়ারির সঙ্গে যুক্ত ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের ইনার সার্কেলে থাকা মানুষ বা সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দেয়নি তারা। এই কাজটাও কঠিন।
ছবিতে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভ
বুধবার ট্রাম্প সমর্থকরা নজিরবিহীন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ক্যাপিটল ভবনে। পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। ছবিতে ঘটনার কিছু মুহূর্ত।
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
ক্যাপিটলের দিকে মার্চ
ক্যাপিটল ভবনের দিকে মার্চ করছেন বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করছে।
ছবি: Roberto Schmidt/AFP/Getty Images
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
বুধবার ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে বিক্ষোভ দেখান ট্রাম্প সমর্থকরা। পার্লামেন্টের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ট্রাম্প সমর্থনকারীরা। পুলিশ ব্যারিকেড লাগিয়ে তাঁদের থামানোর চেষ্টা করছে।
ছবি: Stephanie Keith/REUTERS
ক্যাপিটলে ঢুকছেন বিক্ষোভকারীরা
জোর করে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ছেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ কোনোভাবেই তাঁদের আটকাতে পারেনি। ভিতরে তখন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছে।
ছবি: Win McNamee/Getty Images
বন্দুকের মুখে
বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটলের ভিতরে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। তাদের আটকাতে পুলিশ বন্দুক বের করতে বাধ্য হয়।
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
সেনেটের হলঘরে ধুন্ধুমার
বিক্ষোভকারীরা পৌঁছে যায় সেনেটের হলঘরে। অধিবেশন কক্ষের দরজা আটকে তখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন সেনেটররা। পুলিশ হলঘর থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করার চেষ্টা করছে।
ছবি: Manuel Balce Ceneta/AP Photo/picture alliance
সেনেট দখলের চেষ্টা
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এই বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়েছে সেনেটের হলঘরে। 'ফ্রিডম' বলে চিৎকার করতে করতে তিনি অধিবেশন কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করেন।
বিক্ষোভকারীরা এভাবেই পৌঁছে যান ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায়। স্পিকারের বক্তৃতা করার পোডিয়াম পর্যন্ত তাঁরা তুলে ফেলেন।
ছবি: Win McNamee/Getty Images
কাঁদানে গ্যাস
শেষপর্যন্ত সেনেট হলেই কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তাতেও বিক্ষোভকারীদের বাইরে পাঠানো যায়নি।
ছবি: Andrew Caballero-Reynolds/AFP/Getty Images
ক্যাপিটলের বাইরের ছবি
সন্ধে থেকে এমনই ছিল ক্যাপিটলের পরিস্থিতি। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ওয়াশিংটনে। কারফিউ ঘোষণা করা হয়।
ছবি: Leah Millis/REUTERS
পুলিশের ঢাল
শেষ পর্যন্ত রায়ট পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীদের বের করা সম্ভব হয়। ততক্ষণে গুলিও চালিয়েছে পুলিশ। মৃত্যু হয়েছে এ বিক্ষোভকারীর।
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
13 ছবি1 | 13
জর্জ ওয়াশিংটন আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যাথারিন রস ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, জাস্টিস বিভাগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ, কংগ্রেসের অধিবেশনে বাধা দেয়া, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনতেই পারে। ভোটের ফল বানচাল করার জন্য ট্রাম্প বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আইনজীবীরা তাকে বলেছিলেন, এগুলি বেআইনি ও তিনি তা করতে পারেন না। কিন্তু তাও তিনি শোনেননি। ফলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা যেতেই পারে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য নিয়ে মামলা করা যেতেই পারে, কিন্তু দাঙ্গার সঙ্গে তার যোগ ছিল, এটা প্রমাণ করা খুবই কঠিন। সাবেক প্রেসিডেন্টকে আদালতের সামনে নিয়ে আসা অ্যামেরিকায় অভূতপূর্ব ঘটনা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা আদালতে টিকবে কি না, সেটাও দেখা দরকার।
আইনের অধ্যাপক উইলিয়াম সি ব্যাংকস বলেছেন, আদালতে শুনানির সময় অভিযোগ প্রমাণ করার মতো তথ্যপ্রমাণ হাতে থাকা দরকার। এই ব্যাপারে আইন খুবই কড়া। তাই যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলে অভিযুক্ত বেনিফিট অফ ডাউট পেয়ে যাবেন।
কংগ্রেস কমিটির শুনানি নিয়ে মানুষের প্রবল আগ্রহ আছে। বৃহস্পতিবারের শুনানি দেখেছেন এক কোটি ৭৭ লাখ মানুষ। বেশির ভাগই রিপাবলিকান সমর্থক। এই নিয়ে উত্তেজনাও আছে। এই অবস্থায় যখন ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তৈরি হচ্ছেন, তখন কি তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হবে? ব্যাংকস বলেছেন, এই প্রশ্নটা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ভাবতে হবে।