এক কথায় নজিরবিহীন। অ্যামেরিকার ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সংসদভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়লেন উত্তেজিত ট্রাম্প সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির পর কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তাঁরা। দখল নেন ক্যাপিটল ভবনের একতলা। ভিতরে তখন সেনেট এবং কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছে। বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় এবং পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। তাতেও কাজ না হলে বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়। ঘটনায় প্রথমে একজনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। পরে হাসপাতালে আরো তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
অ্যামেরিকায় নভেম্বরের ৩ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল সামনে আসতেই তা মানতে অস্বীকার করেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কারচুপির অভিযোগ তোলেন। আদালতেও গিয়েছিলেন তাঁর সমর্থকরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আদালত জানিয়েছে, ট্রাম্প সমর্থকেরা নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ফলে তাঁদের অভিযোগ ধোপে টেকেনি। আদালত যাই বলুক, নিজের বক্তব্য থেকে সরতে চাননি ট্রাম্প। বরং যত দিন গিয়েছে, সমর্থকদের ততই উত্তেজিত করেছেন তিনি। তারই চরম পরিণতি দেখা গেল বুধবার। এর এক দিন আগেই একটি সভায় ট্রাম্প ফের ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি হার স্বীকার করছেন না। এবং সমর্থকরাও যেন তাঁর পাশে থাকেন।
ছবিতে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভ
বুধবার ট্রাম্প সমর্থকরা নজিরবিহীন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ক্যাপিটল ভবনে। পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। ছবিতে ঘটনার কিছু মুহূর্ত।
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
ক্যাপিটলের দিকে মার্চ
ক্যাপিটল ভবনের দিকে মার্চ করছেন বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করছে।
ছবি: Roberto Schmidt/AFP/Getty Images
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
বুধবার ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে বিক্ষোভ দেখান ট্রাম্প সমর্থকরা। পার্লামেন্টের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ট্রাম্প সমর্থনকারীরা। পুলিশ ব্যারিকেড লাগিয়ে তাঁদের থামানোর চেষ্টা করছে।
ছবি: Stephanie Keith/REUTERS
ক্যাপিটলে ঢুকছেন বিক্ষোভকারীরা
জোর করে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ছেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ কোনোভাবেই তাঁদের আটকাতে পারেনি। ভিতরে তখন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছে।
ছবি: Win McNamee/Getty Images
বন্দুকের মুখে
বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটলের ভিতরে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। তাদের আটকাতে পুলিশ বন্দুক বের করতে বাধ্য হয়।
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
সেনেটের হলঘরে ধুন্ধুমার
বিক্ষোভকারীরা পৌঁছে যায় সেনেটের হলঘরে। অধিবেশন কক্ষের দরজা আটকে তখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন সেনেটররা। পুলিশ হলঘর থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করার চেষ্টা করছে।
ছবি: Manuel Balce Ceneta/AP Photo/picture alliance
সেনেট দখলের চেষ্টা
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এই বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়েছে সেনেটের হলঘরে। 'ফ্রিডম' বলে চিৎকার করতে করতে তিনি অধিবেশন কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করেন।
বিক্ষোভকারীরা এভাবেই পৌঁছে যান ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায়। স্পিকারের বক্তৃতা করার পোডিয়াম পর্যন্ত তাঁরা তুলে ফেলেন।
ছবি: Win McNamee/Getty Images
কাঁদানে গ্যাস
শেষপর্যন্ত সেনেট হলেই কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তাতেও বিক্ষোভকারীদের বাইরে পাঠানো যায়নি।
ছবি: Andrew Caballero-Reynolds/AFP/Getty Images
ক্যাপিটলের বাইরের ছবি
সন্ধে থেকে এমনই ছিল ক্যাপিটলের পরিস্থিতি। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ওয়াশিংটনে। কারফিউ ঘোষণা করা হয়।
ছবি: Leah Millis/REUTERS
পুলিশের ঢাল
শেষ পর্যন্ত রায়ট পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীদের বের করা সম্ভব হয়। ততক্ষণে গুলিও চালিয়েছে পুলিশ। মৃত্যু হয়েছে এ বিক্ষোভকারীর।
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
13 ছবি1 | 13
বুধবার ক্যাপিটলে যৌথ সভা বসেছিল। কংগ্রেস এবং সেনেটের সদস্যরা সেখানে ছিলেন। এ দিনই জো বাইডেনের জয় সরকারি ভাবে স্বীকৃত হওয়ার কথা ছিল। অধিবেশনে প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনাও শুরু হয়েছিল। সেখানে কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর ট্রাম্পের বক্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছিলেন। তবে সকলে নন। ভাইস প্রেসিডেন্ট পেনস প্রথমে যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বাইডেনের জয়ের বিষয়ে আলোচনা প্রস্তাব আনেন। তখনই কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য অ্যারিজোনায় বাইডেনের জয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। পেনস অবশ্য তা গুরুত্ব দেননি। পরে তাঁদের প্রস্তাব ভোটে খারিজ হয়ে যায়।
আরেক রিপাবলিকান সদস্য, ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককোনেল বলেন, এ ভাবে প্রতিবাদ দেখানো অনুচিত। শেষ পর্যন্ত মার্কিন সংবিধান এবং মার্কিন গণতন্ত্রকে মেনে চলতে হবে। তাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সংসদের ভিতরে যখন এ সব চলছে, ক্যাপিটল ভবনের বাইরে তখন ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন ট্রাম্প সমর্থকরা। ট্রাম্পের হার তাঁরা মেনে নিচ্ছেন না বলে স্লোগান দিতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ তা চলার পরে ক্রমশ ক্যাপিটল ভবনের দিকে এগোতে থাকেন তাঁরা। ভেঙে দেন ব্যারিকেড। পুলিশ তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। মারমুখী সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনের ভিতরে ঢুকে পড়েন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং পেপার স্প্রে ছুড়তে থাকে। তাতেও লাভ হয়নি। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রায়ট পুলিশ। তারা বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে বাধ্য হয়েই গুলি ছোড়ে।
ট্রাম্প সমর্থকদের ‘সেভ অ্যামেরিকা মার্চ’
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে তার সমর্থকরা রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘সেভ অ্যামেরিকা মার্চ’ শুরু করেছে৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: Jim Urquhart/REUTERS
ট্রাম্পের আহ্বান
২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে বরাবরই দাবি করে আসছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এবার ওয়াশিয়টন ডিসিতে এক সমাবেশের আহ্বান করলেন তিনি৷ স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১১টায় হোয়াইট হাউজের কাছে এলিপসে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্পের ভাষণ দেয়ার কথা৷
কী হবে ৬ জানুয়ারি?
ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের যে ফল জানা গেছে সেটা এখনো ‘আনুষ্ঠানিক’ ফলাফল নয়৷ এই ভোটের ফল পাঠানো হয়েছে রাজধানীতে এবং ছয় জানুয়ারি কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে ভোট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করা হবে৷ এরপরই আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা৷
ছবি: Shannon Stapleton/REUTERS
ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড
মার্কিন নির্বাচনে হার নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে একের পর এক নাটকের জন্ম দিয়ে চলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর হয়নি এমন অনেক কিছুই করছেন তিনি৷ এবার দিলেন নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক৷
ছবি: Samuel Corum/Getty Images
উত্তপ্ত ওয়াশিংটন ডিসি
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হচ্ছেন ট্রাম্প সমর্থকরা৷ ‘মার্চ টু সেভ অ্যামেরিকা’ ব্যানার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সামনে জড়ো হয়েছেন তারা৷ বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে৷ এতে আহত হন কয়েকজন৷
ছবি: Shannon Stapleton/REUTERS
সততার জয় কামনা...
‘সততার মূল্যায়ন হোক, জালিয়াতির নয়’ এমন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সুপ্রিম কোর্টের সামনে৷ কারো হাতে প্ল্যাকার্ড ‘চুরি বন্ধ কর’৷
ছবি: Jim Urquhart/REUTERS
হাজারো সমর্থক
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৫ হাজার সমর্থক এরই মধ্যে ডিসিতে পৌঁছেছেন৷ সমাবেশে ৩৫ হাজার সমর্থক যোগ দেবেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: Samuel Corum/AFP
গ্রেপ্তার
ডিসির মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, তারা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে পুলিশকে আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
ছবি: Shannon Stapleton/REUTERS
অদ্ভুত সাজপোশাকে
কেউ কেউ এমন সাজপোশাকে উপস্থিত হয়েছেন, মনে হচ্ছে কোনো কার্নিভালে অংশ নিতে এসেছেন৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
রক্ষণশীলদের সক্রিয়তা
প্রাউড বয়েজসহ অন্য রক্ষণশীল ট্রাম্প-সমর্থকরা বড় ধরনের মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এছাড়া কট্টরপন্থি ডানপন্থি গ্রুপ থ্রি পার্সেন্টার্সও ফ্রিডম প্লাজায় নেমেছে বিক্ষোভে৷ শিরোস্ত্রাণ আর বর্ম পরেও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Leah Millis/REUTERS
মামলা
ভোট চুরির অভিযোগে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালতে ডনাল্ড ট্রাম্পের করা মামলাগুলো একের পর এক খারিজ হয়ে যাচ্ছে৷ ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবেন তারা৷
ছবি: Leah Millis/REUTERS
10 ছবি1 | 10
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গুলিতে এক নারী লুটিয়ে পড়েন। তিনি মার্কিন এয়ারফোর্সের সাবেক অফিসার এবং কট্টর ট্রাম্প সমর্থক ছিলেন। তাঁর কাঁধে গুলি লেগেছিল। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালেই আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে কোনো কোনো সংবাদসংস্থা দাবি করেছে। আরো বেশ কিছু মানুষ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তবে কতজনের শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে, এখনো তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিহত আরেক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় টানতে টানতে নিয়ে যায় পুলিশ। আহত অবস্থাতেই তাঁকে মারা হয়। গোটা ঘটনায় হতভম্ব অ্যামেরিকাবাসী।
ওয়াশিংটনের মেয়র সন্ধে ছয়টা থেকে কারফিউ জারি করেন। তবে তারপরেও যত্রতত্র বিক্ষোভকারীদের ঘুরতে দেখা গিয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশন অবশ্য বন্ধ করা হয়নি। গভীর রাত পর্যন্ত অধিবেশন চলেছে। বুধবার গভীর রাতে ১৫ দিনের জন্য ওয়াশিংটনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।