অর্থোপেডিস্ট যখন এক্স-রে বা এমআরটি করে ধরতে পারেন না ব্যথাটা ঠিক কোথায়, তখন রোগীকে ফাংশনাল ডায়াগনোসিসের জন্য কোলনে পাঠানো যেতে পারে: সেখানে রোগীর হাঁটা-চলার নিখুঁত পরিমাপ করবে ইনফ্রা-রেড ক্যামেরা৷
বিজ্ঞাপন
ব্যথার কথা বলবে ক্যামেরা
04:10
রোগীদের প্রথমে স্ক্যান করে পরেইনফ্রা-রেড ক্যামেরা দিয়ে মাপা হয়৷ জায়গাটা হল কোলনের ইনস্টিটিউট ফর ফাংশনাল ডায়াগনোসিস৷ চলতে-ফিরতে যে ব্যথা হয়, তা কোথা থেকে আসে, তা জানার জন্য পাউল ক্লাইনের মতো স্পোর্টস মেডিসিনের ডাক্তাররা পেশি আর শরীরের হাড়ের বিভিন্ন গাঁটের মধ্যে সম্পর্কটা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন৷
অস্থিরোগ ও স্পোর্টস মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ড. পাউল ক্লাইন বলেন, ‘‘এ যাবৎ রোগীদের বসা বা শোয়া অবস্থায় পরীক্ষা করা হয়েছে, অস্থি বা গাঁটের কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য৷ কিন্তু এখন আমরা জানি যে, বহু রোগীর কোনো অস্থির ক্ষতি বা বিকৃতি না থাকা সত্ত্বেও তারা যন্ত্রণায় ভোগেন৷ কাজেই নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখতে হবে, রোগীর সমস্যাটা কোথায়৷’’
অজগর সাপ দিয়ে গা মালিশ
গা ম্যাজম্যাজ করছে? মাসাজ, অর্থাৎ মালিশ করাতে চান? একটা অজগর সাপ যদি আপনার গায়ের ব্যথা দূর করে দেয়, কেমন হয়? ভয় পেলেন? ইন্দোনেশিয়ার একটি স্পা-এ কিন্তু অজগরের ‘সেবা’ নেন অনেকেই৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
শরীর মালিশে অজগর কেন?
অজগর কীভাবে বড় বড় প্রাণী শিকার করে, জানেন? কাছাকাছি পেলে প্রথমে শিকারকে সারা শরীর দিয়ে জড়িয়ে ধরে অজগর৷ তারপর যত জোরে সম্ভব চেপে ধরে৷ বড় ভয়ানক সেই চাপ৷ ফলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে মারা যায় সেই প্রাণী৷ তারপর ধীরে ধীরে প্রাণীটিকে গিলে ফেলে অজগর৷ তো এমন ভয়ংকর এক সাপকে দিয়ে কেন মানুষের শরীর মালিশ করানো হয় বালি দ্বীপের ওই স্পা-এ? এর উত্তর এখনো অনেকেরই অজানা৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
তবে ভয়ের কিছু নেই
বলা হচ্ছে, অজগর দিয়ে যেভাবে মাসাজ করানো হয়, তাতে নাকি ভয়ের কিছু নেই৷ কারণ প্রথমত, মাসাজ শুরুর আগে অজগরকে পেট পুরে খাওয়ানো হয়৷ পেটে ক্ষিদে না থাকলে অজগর মানুষকে গিলতে যাবে কেন? দ্বিতীয়ত, মাসাজের আগে অজগরের মুখও বন্ধ করে দেয়া হয়, সুতরাং চাইলেও সে কাউকে কামড়াতে বা গিলতে পারে না৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
অজগরের মাসাজ উপকারী?
যত অভয়ই দেয়া হোক না কেন, গায়ের ওপরে যখন প্রায় তিন মিটার লম্বা আর আট কেজির মতো ওজনের একটা সাপ ছেড়ে দেয়া হয়, ভয় তো লাগেই৷ সাপের পিচ্ছিল শরীর পিঠে যত নড়াচড়া করে, ততই ভয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ সেই ভয়ের কারণে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়৷ তাতে নাকি শরীরের অনেক উপকার!
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
মনেরও উপকার
অজগরকে কে না ভয় পায়! মাসাজ শেষ হলে সেই ভয়ের জায়গায় মনে ঠাঁই নেয় এক ধরনের মুক্তির আনন্দ৷ কেউ কেউ জানিয়েছেন, মাসাজ নেয়ার আগে তারা সাপের নাম শুনলেই ভয় পেতেন৷ কিন্তু মাসাজ নেয়ার পরে নাকি সেই ভয় কেটে গেছে৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন
বিশ্বে এমন মানুষের অভাব নেই, যাঁরা বিপদ ভালোওবাসেন৷ অন্যরকম কিছু করে বাড়তি আনন্দ পান তারা৷ এমন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের জন্য নাকি অজগরের মাসাজ আরো বেশি উপকারী৷ অজগর পিঠে চড়লে নাকি তাদের হরমোনের নিউট্রোট্রান্সমিটার ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
আছেন রক্ষাকর্তা
মাসাজের সময় কোনো মানুষকে কখনোই জলজ্যান্ত অজগরের কাছে একা ছেড়ে দেয়া হয় না৷ সবসময়ই একজন সুপারভাইজার কাছে থাকেন৷ তার কাজই হলো, অজগর কখনো থেমে যাচ্ছে কিনা, কোনো বিপদ ঘটাতে চাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
ব্রিটেন আর ফিলিপিন্সেও...
শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, ব্রিটেন আর ফিলিপিন্সেও সাপ দিয়ে মাসাজ করানো হয়৷ যাবেন নাকি?
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
7 ছবি1 | 7
আমরা হাঁটি কিংবা দৌড়ই পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে৷ হাড়ের গাঁট, পেশি আর লিগামেন্টগুলো একসঙ্গে কাজ করে – যেন ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ৷ সেক্ষেত্রে ব্যথাটা কোত্থেকে আসছে, তা ধরা অতো সহজ নয়৷ যে কারণে কোলনের গবেষকরা একটি নতুন পন্থা নিয়েছেন: তারা রোগীদের চলাফেরা ‘মেপে’ দেখেন৷ সেজন্য রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রনিক ‘মার্কার’ বসানো হয়৷ রোগী যখন চলাফেরা করেন, তখন ইনফ্রা-রেড ক্যামেরা তাদের নড়াচড়ার ত্রিমাত্রিক ছবি তোলে৷ এছাড়া মেঝেতে বসানো পাত পা ও শরীরের বিভিন্ন গাঁটের উপর চাপের হিসেব করে, সেই সঙ্গে ইলেক্ট্রোড দিয়ে পেশির ক্রিয়া মাপা হয়৷
ব্যথার উৎস
এই সব তথ্য থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যথার উৎস বলে দিতে পারেন বায়োমেকানিক্স বিশেষজ্ঞ ড. আঙ্গেলা হ্যোনে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এমন বহু রোগী আসেন, যাঁদের ক্ষেত্রে প্রথাগত রোগনির্ধারণের পদ্ধতি প্রয়োগ করে কিছু পাওয়া যায়নি৷ আমাদের পদ্ধতিতে তাঁদের চলা-ফেরার ধরন খুঁটিয়ে দেখে আমরা প্রায়শই সাহায্য করতে পারি ও ব্যথা-বেদনার কারণটা অনুমান করতে পারি৷’’
প্রথাগত অস্থিরোগ চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে হার মানে, ঠিক সেখানেই ফাংশনাল ডায়াগনোসিসের কাজ শুরু হয়৷ হাঁটা-চলার সামান্য ভুলচুক, বা ভুল জায়গায় চাপ পড়া, এ সবই ধরা পড়ে এই বিশ্লেষণে৷
আরেকটি নতুনত্ব হলো শরীরের উপরিভাগের নিখুঁত পরিমাপ৷ ত্রিমাত্রিক স্ক্যানার মানবদেহের উপরিভাগের একটি নিখুঁত প্রোজেকশান সরবরাহ করে৷ পেশি ও অস্থির গাঁটের সমস্যাকর এলাকাগুলি এই রিলিফে ফুটে ওঠে৷ ড. আঙ্গেলা হ্যোনে বলেন, ‘‘সার্ফেস স্ক্যান দিয়ে ধরুন হাড়ের গাঁটগুলো কতটা ফুলেছে, তা মাপা যায়৷ আগে তা ফিতে দিয়ে মাপতে হতো, এখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গোটা শরীরের উপরিভাগটা মাপা হয়ে যায়৷’’
ব্যথা-বেদনার খোঁজে চলা-ফেরার বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে৷
হাঁটু ও কোমরের ব্যথায় যা করণীয়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় হাঁটু ও কোমরসহ শরীরের নানা জায়গায়, নানারকম ব্যথা৷ এ সব ব্যথাকে দূরে রাখতে কী করবেন তা জেনে নিন একজন জার্মান অর্থপেডিক্সের কাছ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
অবাক হলেও সত্যি
জার্মানিতে হাঁটু ও কোমরের ব্যথায় ভুগছেন অন্তত ৫০ লাখ মানুষ৷ মিউনিখ শহরের অর্থপেডিক্স ডা. কনরাড শয়ারার জানান, ‘‘শুনতে অবাক লাগলেও ব্যথাকে দূরে রাখার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে হাঁটা-চলা এবং শরীর দুলিয়ে নৃত্য করা৷ কারণ একমাত্র শরীরকে ঠিকমতো সচল রাখলেই এ অসুখ কাছে ঘেষতে পারে না৷’’
ব্যথা শুরুর প্রথম লক্ষণ
শারীরিক কোনো পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে তার প্রভাব পড়ে, ব্যথাও হয়৷ অনেকের অবশ্য কম বয়সেও এ সব ব্যথা হয়ে থাকে৷ হাঁটা-চলা করার সময় শরীরে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে কোমর এবং হাঁটু দু’টোয়৷ ডা. শয়ারার জানান, এই দু’টো অঙ্গে যখন ব্যথা অনুভব হয় তখন অনেকেরই হাঁটা-চলার আগ্রহ কমে যায়৷ আর এটাই হচ্ছে ব্যথা শুরুর প্রথম লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/Edler von Rabenstein
নিয়মিত ব্যায়াম
‘‘হাঁটা-চলা বন্ধ করলেই ব্যথা কমে যাবে – এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা৷ বরং নিয়মিত হাঁটা-হাঁটি এবং বিশেষ কিছু ব্যায়াম করে ব্যথা কমানো সম্ভব৷’’ বলেন ডা. কনরাড শয়ারার৷ তাছাড়া জোড়ে হাঁটার সময় পেশিতে চাপ পড়ে, যা পেশির জন্য খুবই ভালো৷ তবে এতে দুর্ঘটনা ঘটার কিছুটা ভয় থাকে৷ এক্ষেত্রে হাতে লাঠি বা ‘স্টিক’ থাকলে হাঁটু ও নিতম্বে চাপ খানিকটা কম পড়ে৷
ছবি: Fotolia/Kalle Kolodziej
নাচ ব্যথা কমায়
গান মনের দুঃখ-কষ্ট ও চাপ কমিয়ে দিয়ে মেজাজ ভালো করে৷ আর গানের সাথে ইচ্ছেমতো নাচলে কমে শরীরের ব্যথা৷ কারণ নাচার সময় শিরা এবং কোমরের ব্যথা কমে যায়৷ নাচ শুরুর পর পরই হাঁটু বা নিতম্বে ব্যথা হতে পারে৷ কিন্তু তখন না থেমে গিয়ে নিয়মিত ‘নাচ’ চালিয়ে যান৷ একসময় দেখবেন ‘ব্যথা’ উধাও!
ছবি: Colourbox
সাইকেল চালান
বাতের ব্যথা অথবা ‘রিউম্যাটিক পেইন’-এর জন্য সাইকেল চালানো খুবই উপকারি৷ আর রাস্তায় সাইকেল চালানো সম্ভব না হলে বাড়িতে, অর্থাৎ ‘হোমট্রেইনার’-এর মাধ্যমে সাইকেল চালাতে পারেন৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যেন পা দু’টোকে বেশি বড় বা ফাঁক করতে না হয়৷