আবর্জনা কোথায় কীভাবে ফেলতে হবে এ বিষয়ে মানুষের যে আচরণ, তারই ফল ভোগ করছে সমুদ্র৷ সম্প্রতি ক্যারিবীয় সমুদ্রের এমন এক দ্বীপের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, যে দ্বীপকে ‘আবর্জনা দ্বীপ’ বললে মোটেও ভুল হবে না৷
বিজ্ঞাপন
হন্ডুরাসের সমুদ্র উপকূলবর্তী রোয়াটান দ্বীপের ভিডিওটি দেখলে আপনি বিস্ময়ে হতবাক হতে বাধ্য৷ যে দ্বীপটি এক সময় ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের স্বর্গ, এখন তার আশপাশ প্লাস্টিকের আবর্জনায় পরিপূর্ণ৷ দিন দিন সেখানে আবর্জনা জমে ভাসমান এক দ্বীপের রূপ নিয়েছে, যেটি পুরোটাই প্লাস্টিক আর্বজনায় ভর্তি৷
ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার ক্যারোলিন পাওয়ার সম্প্রতি এই ভিডিওটি ধারণ করে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করেছেন৷ তিনি হাফিংটন পোস্টে এ বিষয়ে একটি ব্লগে লিখেছেন, ‘‘এই ভয়ংকর ভিডিওটি এটাই প্রমাণ করে যে, আমাদের পৃথিবী কতটা ঝুঁকির মুখে রয়েছে এবং এর জন্য আমরাই যে দায়ী সেটা বোঝাই যায়৷ অনেক মানুষই বুঝতে পারে না যে, তাদের প্রতিদিনকার আচরণ আমাদের গ্রহটিতে কতটা প্রভাব ফেলছে৷’’
ধারণা করা হচ্ছে দ্বীপটিতে এত আবর্জনা এসেছে গুয়াতেমালা থেকে৷ সম্প্রতি গুয়াতেমালায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায়, সেখানকার বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে আবর্জনাগুলো ভেসে এখানে এসে জড়ো হয়েছে৷
অক্টোবরের ১৬ তারিখে ক্যারোলিন তাঁর তোলা কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়৷ ৩০শে অক্টোবর তাঁর তোলা ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে ‘নাউ দিস’৷ তখন থেকেই ভিডিওটি ভাইরাল৷ এ পর্যন্ত ফেসবুকে ৮৪ লাখ বার দেখা হয়েছে ভিডিওটি৷ শেয়ার হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ বার৷ কয়েক হাজার মানুষ মন্তব্য করেছেন৷ বেশিরভাগ মানুষই দাবি জানিয়েছেন, যাতে এ বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা হয়৷
ক্যারোলিন পাওয়ার জানিয়েছেন, এই আবর্জনা প্রায় ৫ মাইল ব্যাপী বিস্তৃত৷ এরপর দুই মাইলব্যাপী বিভিন্ন লাইন তৈরি হয়েছে, যেসব এলাকা থেকে আর্বজনাগুলো আসছে৷ যখন এই আবর্জনাগুলো সমুদ্রে এসে পড়ছে, তখন তা পরিষ্কার করার কথা কেউ ভাবছে না৷ আর এটা পরিষ্কার করাটাও ভীষণ ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য৷
প্রিয় পাঠক, ভিডিওটি দেখে আপনি কি ভাবছেন? জানান আমাদের৷ লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
আবর্জনা দিয়ে তৈরি স্কুল
কাম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে প্রতিদিন যে পরিমাণ আবর্জনা সৃষ্টি হয়, তা দেখে উক ভ্যান্ডে শুধু আবর্জনা দিয়ে একটি স্কুল তৈরি করার পরিকল্পনা করেন৷
ছবি: Coconut School
বোতলের প্লাস্টিক থেকে জাতীয় পতাকা
নম পেনের উপকণ্ঠে কো ডাচ দ্বীপের ‘কোকোনাট স্কুল’-এ প্লাস্টিকের বোতলগুলোকে সুন্দর করে কেটে, কাটা প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে নানা রঙে স্প্রে-পেইন্ট করে, পরে আবার জোড়া দিয়ে কাম্বোডিয়ার জাতীয় পতাকার একটি মুরাল বা দেয়ালচিত্র তৈরি করা হয়েছে৷ স্কুলের নামে কিন্তু কোনো প্লাস্টিক নেই: নাম রাখা হয়েছে ‘নারকেলি স্কুল’৷
ছবি: Coconut School
কাচ বসানো দেয়াল
মানে ঠিক কাচ নয়, খালি বিয়ারের বোতল৷ বোতলের ক্যাপগুলো দিয়ে মেঝেতে ফুলের নকশা করা হয়েছে৷
ছবি: Coconut School
পাখিরা যেভাবে বাসা সাজায়
ছাত্রছাত্রীরা আবর্জনা রিসাইক্লিং ও সেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য মালমশলা দিয়ে হাতের কাজ করার প্রশিক্ষণ পায়, কাজেই এ সব প্রকল্প তাদের নিজেদের সৃষ্টি৷ ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এভাবে আবর্জনা কমিয়ে পরিবেশ বাঁচাতে শেখে – এছাড়া তাদের শিল্পবোধ ও সৃজনীশক্তির উন্মেষ হয়, বলেন উক ভ্যান্ডে৷ ছবিতে স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্কুলের প্রতীকটিকে প্লাস্টিকের চামচ আর বোতলের ছিপি দিয়ে সাজাচ্ছে৷
ছবি: Coconut School
ফেলে দেওয়া বলে কিছু নেই
ভ্যান্ডে স্কুল থেকে কোনো আয় করেন না৷ বরং স্কুল চালানোর জন্য তাঁকে বন্ধুবান্ধব, কলেজের ছাত্রছাত্রী ও আরো অনেকের দানের উপর নির্ভর করতে হয়৷ নম পেনের কিছু কিছু কাফে তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কাপ-চামচ ভ্যান্ডেকে দেয়, যা থেকে কোকোনাট স্কুলের ছাদের একাংশ তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Coconut School
ঝোলানো বাগান
ফুলগাছ যে শুধু টবে লাগানো চলে, এমন তো নয়; পুরনো ফেলে দেওয়া গাড়ির টায়ারেও লতাপাতা গজাতে পারে – টায়ারটা শুধু রং করে নিলেই হলো৷
ছবি: Coconut School
আবর্জনা থেকে আলপনা
কোকোনাট স্কুলে আবর্জনার পালানোর পথ নেই: পড়ুয়া থেকে মাস্টার, সকলেরই চোখ কোন জিনিসটা দিয়ে কী তৈরি করা যায়, সেই দিকে৷ এই কামরাটি শুধুমাত্র প্লাস্টিক বোতলের টুকরো দিয়ে সাজানো হয়েছে, ভাবতে পারেন?
ছবি: Coconut School
শিক্ষার পরিবেশ ও পরিবেশ শিক্ষা
কাম্বোডিয়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ-বান্ধব করে তোলার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন, বিশ্বাস ভ্যান্ডের৷ ছোটদের নানা ধরনের টেকসই কাজকর্মে সংশ্লিষ্ট করতে হবে, যাতে তারা তার ফলশ্রুতি দেখতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে যে, পরিবর্তন আনায় তাদেরও অবদান রয়েছে৷