পুলিশের সঙ্গে উদ্বাস্তুদের বিক্ষিপ্ত দাঙ্গার পর উত্তর ফ্রান্সের ক্যালে বন্দরের কাছে ‘জঙ্গল শিবির' ভেঙে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে৷ উদ্বাস্তুদের বাসে করে ফ্রান্সের অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার সকাল থেকেই উদ্বাস্তুদের জিজ্ঞাসাবাদ ও নাম লেখানোর কাজ চলছে৷ প্রথম বাসটি ৫০ জন সুদানি উদ্বাস্তুকে নিয়ে মধ্য ফ্রান্সের বার্গান্ডি এলাকার দিকে যাত্রা শুরু করেছে বলে খবর দিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি৷
রবিবার রাত্রে কয়েক দল উদ্বাস্তু পুলিশের দিকে পাথর ছোঁড়ে ও শৌচালয়গুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে৷
সকালে কিন্তু শত শত উদ্বাস্তুকে তাদের ব্যাগ-সুটকেসসহ ক্যালের বাইরে একটি হ্যাঙ্গারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়৷
উদ্বাস্তুদের নাম লিখিয়ে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর চারটি গোষ্ঠীতে ভাগ করা হচ্ছে: পরিবার, একক পুরুষ, একক অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং অন্যান্য অসহায় ব্যক্তি৷ তারপর তাদের বাসে করে ফ্রান্স জুড়ে প্রায় ৩০০টি শরণার্থী আবাসে নিয়ে যাওয়া হবে৷ সেখানে তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনপত্র দাখিল করতে পারবে৷
যেসব অপ্রাপ্তবয়স্ক একা ক্যালের ‘জঙ্গলে' ছিল, তাদের আপাতত সেখানে থাকতে দেওয়া হবে: সেজন্য বসবাসের উপযোগী কনটেইনার স্থাপন করা হয়েছে৷ গত সপ্তাহে যেমন প্রায় ২০০ শিশু উদ্বাস্তুকে ব্রিটেনে যাওয়ার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়, এদের ক্ষেত্রেও তা ঘটবে কিনা, তা জানা যায়নি৷
বার্লিনের উদ্বাস্তু শিশুরা
বার্লিনের আলোকচিত্রশিল্পী ডানিয়েল জনেনব্যার্গ মিডিয়াতে উদ্বাস্তুদের দেখানোর ধরনটা বদলাতে চেয়েছিলেন৷ এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে ‘দে হ্যাভ নেমস’ বা ‘ওদেরও নাম আছে’ পর্যায়ের ছবিগুলি৷
ছবি: Daniel Sonnentag
ছবির পিছনে থাকে মানুষ
শাহেদ বাস করে বার্লিনের ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস সেন্টারে, যা এখন উদ্বাস্তু আবাসন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সেখানেই ডানিয়েল জনেনব্যার্গ উদ্বাস্তু শিশুদের ছবিগুলি তুলেছেন৷ ‘উদ্বাস্তু কথাটার পিছনে যে সব মানুষ আছে,তাদের আমি দেখাতে চেয়েছিলাম,’ বলেছেন জনেনব্যার্গ৷
ছবি: Daniel Sonnentag
স্মৃতির বোঝা
আট বছর বয়সের এলহাম সিরীয় কুর্দি৷ জনেনব্যার্গ লক্ষ্য করেন, মেয়েটির চোখে যেন সবসময় কিছুটা বিষাদ জড়িয়ে থাকে, যদিও অন্য সময়ে সে বাকি শিশুদের মতোই হাসে, খেলে৷ কিন্তু তার হাসিতেও যেন কোথায় কান্না মিশিয়ে থাকে, যা জনেনব্যার্গকে নাড়া দেয়৷
ছবি: Daniel Sonnentag
সে জানেও না
চার বছরের আলি এসেছে ইরাক থেকে৷ তার পরিবারের লোকজনদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন সম্প্রতি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷ চেষ্টা চলেছে, উকিলকে দিয়ে আদালতে আপিল করে যদি কিছু করা যায়৷ বার্লিনের আইসিসি উদ্বাস্তু শিবিরে বহু মানুষ তাদের আইনগত পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য বছর খানেক ধরে অপেক্ষা করছেন৷
ছবি: Daniel Sonnentag
ক্লাউন সাজা
আট বছরের জয়নাব আর ছয় বছরের রুকাইয়া এসেছে ইরাক থেকে৷ জনেনব্যার্গের মতে বার্লিনে উদ্বাস্তু পরিস্থিতি সামাল দেবার কাজে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা চলেছে৷ ত্রাণ সংগঠনগুলি তারই মধ্যে যেটুকু করা সম্ভব করছে৷
ছবি: Daniel Sonnentag
ভাষা শেখা
ছবিতে জনেনব্যার্গের কাঁধে জয়নাব৷ জয়নাব নাকি তার বয়সের তুলনায় খুবই চালাক-চতুর, কথা বলতে পারে, বোঝে-শোনে - বলেন জনেনব্যার্গ৷ রিফিউজি ক্যাম্পের অন্য ছেলেমেয়েদের মতো জয়নাবও খুব তাড়াতাড়ি জার্মান ভাষা শিখে ফেলেছে, বড়রা যা পারে না৷
ছবি: Daniel Sonnentag
অমিলের চেয়ে মিল বেশি
ছয় বছরের আলমা ও তার বাবা আহমেদ৷ ‘‘আমরা সকলেই খাই-দাই, ঘুমোই, শান্তিতে, নিরাপদে ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে চাই,’ বলেন জনেনব্যার্গ৷ ‘‘মানুষ মানুষের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলই বেশি৷’’
ছবি: Daniel Sonnentag
খবরের কাগজের প্রথম পাতায় যে ছবি থাকে না
সাত বছর বয়সের জারা এসেছে ইরাক থেকে৷ হাসিখুশি, ভাবুক, মিষ্টি একটি মেয়ে৷
ছবি: Daniel Sonnentag
সপরিবারে জার্মানিতে
ছয় বছরের আয়া ও তার সাত বছরের ভাই হামজা জার্মানিতে আছে তাদের ছোটবোন আলমা আর ছয় মাসের ভাই রাইয়ানকে নিয়ে৷ বাবা-মা’ও সাথে আছেন৷ ভালোবাসায় ভরা এই পরিবারে মানুষ হয়ে কোমল মনোবৃত্তির শিশু হামজা সৎ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠবে বলে জনেনব্যার্গের ধারণা৷
ছবি: Daniel Sonnentag
ছিল কনফারেন্স সেন্টার, হলো রিফিউজি ক্যাম্প
ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস সেন্টার বা আইসিসি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম কনফারেন্স সেন্টারগুলির মধ্যে একটি৷ ২০১৪ সালে অ্যাজবেস্টস দূষণের কারণে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয় ও ২০১৬ সালে উদ্বাস্তুদের সাময়িক আবাসন হিসেবে আবার খোলা হয়৷ আজ সেখানে সিরিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া ও বলকান দেশগুলি থেকে আসা প্রায় ৬০০ মানুষ থাকেন৷
ছবি: Daniel Sonnentag
9 ছবি1 | 9
ক্যালের ‘জঙ্গলের' প্রায় ৬,৫০০ বাসিন্দাকে স্থানান্তরণ ও অননুমোদিত শিবিরটিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার অভিযানে ১,২০০-র বেশি পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে৷
ক্যালের ‘জঙ্গলের' ইতিহাস চলে আসছে নব্বইয়ের দশক থেকে৷ সে আমলে যেসব উদ্বাস্তু ব্রিটেনে যাবার আশায় খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছিলেন, তাদের জন্য রেড ক্রস একটি ক্যাম্প খোলে৷ ২০০২ সালে সেই ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্রিটেনের চাপে৷ এরপর শত শত মূলত আফগান উদ্বাস্তু মিলে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প সৃষ্টি করে যে পথ ধরে ব্রিটেনমুখী লরিগুলি ক্যালে বন্দরের দিকে চলেছে, ঠিক সেই রাস্তার পাশে৷ ২০০৯ সালে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির নির্দেশে তা একবার ভেঙেও দেওয়া হয়৷ কিন্তু ২০১৫ সালে আবার সেই ‘জঙ্গল’ গজিয়ে ওঠে৷