বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলবস্থার অবসান এবং সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে৷ এরই মধ্যে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার কথা জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
গত ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশে একরফা নির্বাচনের বছর পূর্তির দিন থেকে রাজনীতিতে আবারো অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷ ৬ই জানুযারি থেকে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে টানা অবরোধ এবং হরতাল পালন করছে৷ চলতি সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসেই হরতাল পালন করছে তারা৷ গত সপ্তাহেও ছিল টানা পাঁচদিন হরতাল৷ বৃহস্পতিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহম্মেদ দাবি না মানলে আগামী রবিবার থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন৷
এদিকে এই টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে সহিংসতায় বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন৷ এঁদের মধ্যে ১০ জন শিশুও আছে৷ এছাড়া আগুন ও পেট্রোল বোমায় আহত হয়েছেন দু'শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু৷ তাঁদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিত্সা নিতে ভর্তি হয়েছেন ১২৩ জন৷ ৫৩ জন এখনো চিকিত্সা নিচ্ছেন৷ তাঁদের মধ্যে ন'জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ এ সময়ে একহাজার ১০টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে, করা হয়েছে ভাঙচুর৷ রেলে নাশকতা হয়েছে ১১টি৷
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
বাংলাদেশে টানা অবরোধ ও হরতালের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা৷ ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে৷ শুধু অর্থনীতি নয়, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় মুষড়ে পড়েছে পরিবহন ও শিক্ষা ব্যবস্থাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন
পুরনো ঢাকার বাবু বাজারে কাগজ বোঝাই একটি ট্রাকে জ্বলছে দুষ্কৃতিকারীদের দেয়া পেট্রোল বোমার আগুন৷ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ৷ ডাকা হচ্ছে হরতালও৷ অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে আলোচিত পেট্রোল বোমা৷ শুধু পেট্রোল বোমার আগুনেই পুড়ে মরেছে কমপক্ষে ৬৫ জন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশ প্রহরায় চলছে পরীক্ষা
ঢাকার মতিঝিল আইডিয়িাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পুলিশ প্রহরা৷ চলমান এ অবরোধ-হরতালে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা অন্যতম৷ বর্তমানে সারা দেশে চলা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন তাই অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে৷ টানা অবরোধের মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে চলছে পরীক্ষা৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূরপাল্লার বাস নেই বললেই চলে
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলির ডাকা অবরোধে বাংলাদেশের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্ত৷ দুপুর বেলায় তোলা এ ছবিতে মহাসড়কটি প্রায় যানবাহন শূন্য৷ কিন্তু সাধারণ সময়ে এ সড়কটি থাকে যানবাহনে ভরা৷ বাংলাদেশে চলমান অবরোধে দূর পাল্লার গাড়ি চলাচল কমে গেছে বহুলাংশে৷ একের পর এক পেট্রোল বোমার ঘটনায় ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাচ্ছেন না অনেক মালিকই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিজিবি-র টহল পর্যাপ্ত নয়
অবরোধের মধ্যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয়, মানে ঢাকার বাইরে বিজিবি-র টহল থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য৷ এছাড়া সম্প্রতি রাত ন’টার পরে বাস চলাচলে সকলকে নিরুৎসাহ করার কারণে বাস মালিকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকায় অস্বাভাবিক নয় যানজট
বাংলাদেশে চলমান এই অবরোধে ঢাকার ভেতরের সড়কের দৃশ্য অবশ্য আলাদা৷ যান চলাচল অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও, অনেক জায়গাতেই যানজট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসযাত্রীরা
ঢাকার ফার্মগেটে অফিস শেষে গাড়ির অপেক্ষায় বাড়িমুখী মানুষের ভিড়৷ টানা অবরোধে গণ পরিবহন ব্যবস্থা বেহাল হলেও, অর্থাৎ গাড়িঘোড়ার চলাচল কম থাকাতে দুর্ভোগ বেড়েছে অফিসমুখী ও অফিস ফেরত মানুষের৷ অফিসে যেতে বা অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সাধারণ মানুষ তাই পড়ছেন দুর্ভোগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
অবরোধে নদীপথের ভিন্ন চিত্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদীবন্দর ঢাকার সদরঘাটের চিত্র এটি৷ গত একমাসেরও বেশি সময়ের এই অবরোধে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি নদীপথে৷ তাই নদীপথে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিকই আছে৷ ঢাকা থেকে প্রধানত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যাচ্ছে না দূরপাল্লার বাসগুলো
বিএনপি ও সমমনা দলের জোটসমূহের ডাকা হরতাল-অবরোধে ঢাকার অন্যতম প্রধান বাস স্টেশন গাবতলীর দৃশ্য এটি৷ বেশিরভাগ দূর পাল্লার রুটের বাসই এ স্টেশনে পার্ক করে রাখা৷ হরতাল-অবরোধে দূর পাল্লার বাস চলাচল অনেকাংশেই বন্ধ আছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
খদ্দেরহীন এক রেস্তোরাঁ
ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশনের খদ্দেরশূন্য মোহাম্মাদীয়া রেস্তোরাঁ৷ অবরোধের কারণে এ রেস্তোরাঁর লোকবল ১৬ জন থেকে ৮ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ বাকি যে আটজন আছেন তাঁদেরও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিক৷ গাবতলী স্টেশন থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় এ রেস্তোরাঁটি দিনের বেশিরভাগ সময় খালি থাকছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ
অবরোধ আর হরতালকারীদের প্রধান লক্ষ্য সড়কে চলাচলকারী বাস আর ট্রাক৷ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগেই যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রাকে৷ এতে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পোড়ায় ক্ষত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছেন আরো শতাধিক সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কমলাপুর রেল স্টেশনে অপেক্ষায় যাত্রীরা
অবরোধে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করলেও, সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ৷ বিভিন্ন সময়ে অবরোধকারীদের রেল লাইনের ‘ফিশপ্লেট’ খুলে ফেলার কারণে কয়েকটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায় ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে৷ তাই বেশিরভাগ ট্রেনই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন৷
ছবি: DW/M. Mamun
খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা
টানা অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা৷ স্বল্প পুঁজির এ সব ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকেরই৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুঁজি ভেঙে চলছে যাঁর সংসার
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকার ফুটপাথে কম্বলের ব্যবসা করেন গাজীরুল ইসলাম৷ দুপুরবেলা পর্যন্ত এ দিন তাঁর বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৭’শ টাকার একটি কম্বল৷ তাও তার কেনা দামের থেকে ৩০০ টাকা কম৷ লাভ তো দূরের কথা সংসার চালাতে এখন পুঁজি টুকুনিই ভরসা৷
ছবি: DW/M. Mamun
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই যখন ভরসা
ঢাকার নবাবপুর থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ফিরছেন এক গাড়ি চালক ও তাঁর সহকারী৷ টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে নিজেদের গাড়িতে এখন থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
এ অবস্থায় বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের মুখপাত্র স্টেফান দুয়ারিচ এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্টেফান দুয়ারিচ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷''
গত সংসদ নির্বাচনের আগের ঘটনা নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘‘বান কি-মুনের সাবেক রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং তিনি তা করছেন৷''
জাতিসংঘ কি কেবল উদ্বেগ প্রকাশকরেই দায়িত্ব শষ করবে, নাকি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জাতিসংঘের কোনো করণীয় আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গত বছর থেকে চলে আসা সহিংসতায় জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷''
অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় দেখা করেছেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন৷
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করে বেরিয়ে রবার্ট গিবসন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে সবাই যেন আস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, যা দেশের বর্তমান অস্থিরতা নিরসন করবে৷ দীর্ঘমেয়াদি আস্থার প্রক্রিয়া জোরদার হবে বলে আমি আশা করি, যা বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহিংসতায় অভ্যাসগত যে চরিত্রায়ন ঘটেছে তার বিলুপ্তি ঘটাবে এবং সব বৈধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শান্তিপূর্ণভাবে পালনকে অনুমোদন করবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সমৃদ্ধি-অগ্রযাত্রার অংশীদার৷ বাংলাদেশে যে সহিংসতা চলছে তা দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়৷ আমি ক্রমাগতভাবে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে আসছি – যেন রাজনীতিবিদরা তাঁদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে ভাবেন৷ তাঁরা যেন দেশের স্বার্থহানিকর কাজ থেকে বিরত থাকেন৷''
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াউদঁ বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনতিবিলম্বে সংলাপের আহ্বান জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন৷ বুধবার দুপুরে ইইউ রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এ অনুরোধ জানান৷
ইইউ ঢাকা অফিস থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন৷ চলমান সহিংসতা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনে প্রভাব ফেলছে৷''
তাই ‘‘যে কোনো ধরনের সহিংসতার বিপক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন'' – এ তথ্য আবারো জানিয়ে পিয়ের মায়াউদঁ প্রধানমন্ত্রীকে অনতিবিলম্বে সংলাপের আহ্বান জানানোর অনুরোধ করেন৷
সাক্ষাত্ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানান, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে আগুন দিয়ে সাধারণ নাগরিক হত্যার ঘটনাকে বর্বরোচিত ও মর্মান্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন৷''
আন্তর্জাতিক এই প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এটা স্পষ্ট যে সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে৷ তাঁরা একদিকে যেমন সহিংসতা বন্ধ করতে বলছেন৷ অন্যদিকে সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এই চাপ আরো বাড়বে৷''
তিনি বলেন, ‘‘যে কোনো সংকট থেকে উত্তরনের একমাত্র পথ আলাপ-আলোচনা বা সংলাপ৷ দেশের মানুষও তাই চায়৷''
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ভারতীয় একটি দৈনিককে বলেন, ‘‘চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপ আয়োজনে জাতিসংঘের যে কোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাবেন তারা৷''