শুক্রবার রাতে কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে ‘ক্রসফায়ারে’ সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হয়েছেন৷ এই ঘটনার পরই শনিবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
রোববার সেই কমিটি পূণর্গঠন করে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে নেতৃত্বে আনা হয়৷ অর্থাৎ কমিটিকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে৷
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন তাহলে ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনাগুলোর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কেন করা হয়নি? সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহত হওয়ার পরই কেন এই ধরনের কমিটি? তাহলে এতদিন যারা ‘ক্রসফায়ারে' মারা গেছেন তারা কি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন না? জানতে চাইলে মানবাধিকার সংগঠন আইন সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন সবার জন্য সমান বলা হলেও আসলে তা নয়৷ আমরা তো অনেকদিন ধরেই বলে আসছি, গত ১০ বছরে যারা বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন সেই সবগুলো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ আমরা তো মনে করেছিলাম, কাউন্সিলর একরামুল হকের ঘটনার পর ‘ক্রসফায়ার’ থামবে৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ বরং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আমরা ক্রসফায়ারের প্রতিযোগিতা হতে দেখেছি৷’’
নূর খান লিটন
সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ‘ক্রসফায়ারে’ মারা যাওয়ার পর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শামলাপুরের পাহাড়ি এলাকায় ‘রোহিঙ্গা ডাকাত দল' হাকিম বাহিনীর আস্তানায় ‘সশস্ত্র লোকজনের আনাগোনা’ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা৷ তারা জানায়, ওই পাহাড়ি এলাকা থেকে বোরকা পরিহিত দুই লোককে নেমে এসে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে মেরিন ড্রাইভের দিকে যেতে দেখেছে তারা৷ একটি গাড়ি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় তল্লাশির জন্য সেটি থামায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা৷ ওই গাড়ির দুই জনের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর হিসেবে পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন৷ এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তারা তর্ক-বিতর্কে জড়ায়৷ এক পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি পিস্তল বের করে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করার চেষ্টা চালায়৷ আত্মরক্ষার্থে পুলিশ তখন গুলি ছোড়ে৷ এতে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে মারা যান৷
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, পুলিশ ওই গাড়ি তল্লাশি করে জার্মানিতে তৈরি একটি পিস্তল, নয়টি গুলি, ৫০টি ইয়াবা, দুটি বিদেশি মদের বোতল এবং চার পোটলা গাঁজা উদ্ধার করেছে৷ ওই গাড়িতে থাকা অন্যকজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়েরের কথাও জানান পুলিশ সুপার৷
এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ সংশ্লিষ্টরা জানান, সিনহা মো. রাশেদ একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন৷ সেখানে তারা চারজন ছিলেন৷ রাতের ঘটনার পর পুলিশ ওই রিসোর্টেও অভিযান চালায়৷
এই ক্রসফায়ারের ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বেসরকারি একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন৷ তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং ডয়চে ভেলের হাতেও এসেছে৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘একটি প্রাইভেট কার থেকে একজন নামার পর বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলী তাকে গুলি করেছেন সেটা তিনি দেখেছেন৷’’
গ্রেপ্তারকৃতের সঙ্গে আচরণ: আইন যা বলে, বাস্তবে যা হয়
গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে তা বলা রয়েছে বিভিন্ন আইন আর পুলিশের অপরাধ তদন্ত নির্দেশিকাতেও৷ কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই তা মানছে না৷ আইনের বরখেলাপ ঘটছে গণমাধ্যমের আচরণ ও সংবাদ পরিবেশনেও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
কখন অপরাধী?
আইন অনুযায়ী আদালতে একজন ব্যক্তি অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্দোষ৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তারের পর তাকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করে৷ গ্রেপ্তারকৃতের শরীরে ‘আমি জঙ্গি’, ‘চোর’, ‘মাদক ব্যবসায়ী’, ‘ইয়াবা কারবারি’, ‘ধর্ষক’-এমন পরিচয় ঝুলিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা যায়৷ গণমাধ্যমেও তাদের সেই ছবি, পরিচয় প্রকাশ ও প্রচার করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
আদালতের আগে গণমাধ্যমে
২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট গ্রেপ্তার বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া কোনো ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির না করার নির্দেশ দেয়৷ বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মিন্নিকে দেওয়া জামিন সংক্রান্ত রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধের তদন্ত চলার সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার আগেই গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অ-অনুমোদনযোগ্য৷
ছবি: bdnews24
মিডিয়া ট্রায়াল
বিচারের আগেই কোন ব্যক্তিকে গণমাধ্যমে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতা মিডিয়া ট্রায়াল নামে পরিচিত৷ সম্প্রতি এমন মিডিয়া ট্রায়ালের ঘটনা বাড়ছে৷ যাচাই, বাছাই ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হচ্ছে৷ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে এমন প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট আইন এবং সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতার নীতিমালাও অনুসরণ করা হচ্ছে না৷
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin
হাতকড়া ও রশির ব্যবহার
পুলিশের অপরাধ তদন্ত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে গ্রেপ্তারকৃত আসামি বা বিচারাধীন বন্দিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানোর সময় পলায়ন বন্ধের জন্য যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি কঠোর ব্যবস্থা নেয় উচিত নয়৷ হাতকড়া ও দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় ও অমর্যাদাকর৷ অথচ নিখোঁজের ৫৪ দিন পর ২০২০ সালের মে মাসে সাংবাদিক কাজলকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয়৷ সেই ছবি সমালোচনার জন্ম দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
শিশুদের সঙ্গে আচরণ
শিশু আইনের ৪৪ ধারা অনুযায়ী, শিশুকে কোনোমতেই হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাবে না৷ কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এর ব্যাত্যয় ঘটায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ২০১৯ সালের আগস্টে চট্টগ্রামে দুই শিশুকে হাতকড়া পরিয়ে হাজির করা হয়৷ ঢাকার আদালতে এমন একাধিক ঘটনার খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
শিশুর ছবি
শিশু আইন ২০১৩-এর ৮১ ধারায় কোনো মামলায় বা অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনায় কোনো শিশুর ছবি বা পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ বলা হয়েছে, বিচারাধীন কোনো মামলায় কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে কোনো শিশুর স্বার্থের পরিপন্থী কোনো প্রতিবেদন, ছবি বা তথ্য প্রকাশ করা যাবে না, যার দ্বারা শিশুটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা যায়৷ কিন্তু আদালতে শিশুদের হাজিরার শনাক্তযোগ্য ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
যেন পরিচয় প্রকাশ না পায়
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ (১) ধারায় সংবাদমাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা-নিষেধ রয়েছে৷ বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধের শিকার নারী, শিশুর সংবাদ এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে তাদের পরিচয় প্রকাশ না পায়৷ তবে এ ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম ঘটছে৷ ধর্ষণ কিংবা নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর ছবি, পরিচয় প্রকাশ করার ঘটনা ঘটেছে অনেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
রিমান্ড মানে কি নির্যাতন?
কোনো মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে হেফাজতে নিতে পারে৷ কিন্তু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করার এখতিয়ার নেই৷ এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ১৫ দফা নির্দেশনাও রয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশে রিমান্ড আর নির্যাতন অনেকটা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে৷ অনেক সময়ই রিমান্ডে নিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ শোনা যায়৷ পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও আছে৷
ছবি: Gina Sanders - Fotolia.com
8 ছবি1 | 8
এই ঘটনার পর বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জসহ ২০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ পুলিশ সুপার বলেছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ২০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
এই ঘটনার পর কেন উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হলো? এতদিন কেন সেটা হয়নি? জানতে চাইলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক খন্দকার গোলাম ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যেহেতু তদন্ত কমিটি হয়েছে ফলে এখন আর কিছু বলা ঠিক হবে না৷ তাই তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলতে চাই না৷'
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোববারই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশটি পেয়েছি৷ কমিটিতে সদস্য মনোনয়নের জন্য সোমবার কক্সবাজারের জিওসি ও পুলিশের ডিআইজিকে চিঠি পাঠিয়েছি৷ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কক্সবাজারের সার্কিট হাউজে কমিটির একটি মিটিং ডেকেছি৷’’এই তদন্তে আগের ঘটনাগুলো আসবে কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তো একটি নির্দিষ্ট ঘটনার তদন্ত করতে বলা হয়েছে৷ তবে তদন্তের প্রয়োজনে যদি আগের কোন ঘটনা আসে তাহলে সেটাও আমরা দেখবো৷’’
এই তদন্ত কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে৷ যাকে মনোনীত করবেন সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার৷ পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির মনোনীত একজন প্রতিনিধি৷ এছাড়া কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকেও এই তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে৷ তাকে শুরুতে এই কমিটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছিল৷
মিজানুর রহমান
কক্সবাজারের একজন প্রবীন সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৮ সালের ৪ মে থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারে ক্রসফায়ারে ২৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে ১৬৯ জন, বিজিবির গুলিতে ৬০ জন ও র্যাবের গুলিতে ৫১ জন মারা গেছেন৷ এই ধরনের বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড কেউই সমর্থন করেন না৷ তারপরও যখন কোন মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠে তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একটু শিথিল হয়৷ তখন আবার ইয়াবা ব্যবসায়িরা সক্রিয় হয়ে উঠেন৷ ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণের একটা গ্রহণযোগ্য পথ খোঁজা দরকার৷’’
টেকনাফ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত দুই বছরে ক্রসফায়ারে যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে৷ তবে কয়েকজন নিরিহ মানুষও মারা গেছেন৷ এই ধরনের মৃত্যু কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়৷ আসলে এভাবে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব নয়৷’’
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিছুদিন পরপর এমন একটা ক্রসফায়ার নিয়ে বিতর্ক হয় তারপর সবকিছু থেমে যায়৷ আসলে মাদকের গডফাদার সাবেক একজন সংসদ সদস্যের নাম সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও এক নম্বরে৷ তার পরিবারের ২১ জন আত্মস্বীকৃত মাদক ব্যবসায়ী৷ তারা আত্মসমর্পনও করেছেন৷ আসলে তাকে আইনের আওতায় আনা গেলে ৯০ ভাগ মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে৷ তা না হলে কিছুদিন পরপর আমরা ক্রসফায়ার দেখবো৷ তাতে কিছু খারাপ মানুষের পাশাপাশি ভালো মানুষও মারা যাবে৷ এতে মাদক ব্যবসা বন্ধ হবে না৷’’
২০১৫ সালের একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ডিসি-এসপির সামনে আমি বলেছি, আপনাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাঁচ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করলে ২ হাজার দেখায়৷ বাকীগুলো বিক্রি করে দেয়৷ এসব আগে বন্ধ হওয়া উচিৎ৷’’
২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
‘ক্রসফায়ার’ – একটি প্রদর্শনী
‘ক্রসফায়ার’ নামের একটি প্রদর্শনী ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে ২০১০ সালের মার্চে দেখানোর কথা ছিল৷ কিন্তু উদ্বোধনীর দিন সরকার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়৷ দাঙ্গা পুলিশে ঘিরে রাখে দৃক৷ সেই প্রদর্শনীর কিছু ছবি৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
মৃতদেহের পাশে কোনো গুলি ছিল না
পশ্চিম কুনিয়া বাগানবাড়ি, বরিশাল৷ একজন মহিলা দেখতে পেলেন ধানক্ষেতে একটা মৃতদেহ পড়ে আছে৷ ব়্যাবের লোকজন তাদের গাড়ি থেকে গুলি এনে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে৷ মহিলাটি প্রথম যখন মৃতদেহটা দেখেন তখন সেখানে কোনো গুলি ছিল না৷ আশেপাশে কোনো রক্তও ছিল না৷ ধানক্ষেতে পায়ে মাড়ানোর কোনো চিহ্ন ছিল না৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
আনিস কেন মারা গেল?
আনিসুর রহমান, ছাত্রদলের স্থানীয় এক নেতা৷ রাত আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর থেকে তাঁকে আটক করা হয়৷ দু’জন প্রতক্ষ্যদর্শী জানান, ব়্যাব ৪-এর একটি দল আনিসের বাসায় তল্লাশি চালায়, কোনো পরোয়ানা বাদেই৷ দু’দিন বাদে সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আনিস মারা যান৷ ব়্যাবের দুই কর্মকর্তা হাসপাতাল থেকে আনিসের কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছে বলেও জানান এক প্রতক্ষ্যদর্শী৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
ক্রসফায়ারে শেষ মোহাম্মদ
মোহাম্মদ মইনউদ্দিন৷ ও আর নিজাম রোড৷ মেহেদিবাগ৷ পাঁচলাইশ থানা৷ চট্টগ্রাম৷ তাঁর বাড়িতে ফোন করে জানানো হলো তিনি ক্রসফায়ারে মারা গেছেন৷ ব়্যাবের নজরদারিতেই জেনারেল হাসপাতালে তাঁর ময়নাতদন্ত হলো৷ মৃতের পিঠে চারটি গুলির চিহ্ন বাদেও বুকে সাতটা ছোট ফুটো পাওয়া যায়৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
সেন্টুকে নিয়ে যায় ব়্যাব-৩
মো. মশিউল আলম সেন্টু৷ ছাত্রদলের সহসভাপতি৷ আনুমানিক সন্ধ্যে সাতটার দিকে সেন্টুরা রিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল থেকে নীলক্ষেত মোড়ে এলেন৷ ব়্যাব ৩ লেখা একটি সাদা মাইক্রোবাস সেন্টুদের থামার নির্দেশ দিতে দিতে ওদের পেছনে পেছনে আসছিল৷ ব়্যাব কর্মকর্তারা রিকশা আরোহীদের থামিয়ে সেন্টুর বাঁ পায়ে গুলি করে৷ এরপর তোয়ালে দিয়ে চোখ বেঁধে, হাত পিছমোড়া করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
শরীরে বৈদ্যুতিক শকের দাগ
সুমন আহমেদ মজুমদার ছিলেন যুবলীগের সহসম্পাদক৷ বাড়ি টঙ্গির আমতলীতে৷ এক তরুণসহ সুমনকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এক রেস্তোরাঁয় বসিয়ে তাঁর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে খুলতে বলা হয়৷ ভেতরে দু’টো ৫০০ টাকার নোট আর একটা সাদা কাগজ৷ তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ৷ হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সুমনের ডান পায়ের গভীর ক্ষত আর সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে অনুমান করেন, তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছিল৷