যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন জাহিদ সিদ্দিক তারেক বুধবার (৩১.০৭.১৩) রাতে ব়্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন৷ ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগে এই ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে খুন হন যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি৷ এই হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের সনাক্ত করা সম্ভব হয় একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে৷ মূল হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন আরেক যুবলীগ নেতা এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেককে উত্তরার একটি হাসপাতালে গ্রেপ্তারও করে ব়্যাব৷ কিন্তু বুধবার রাতে সেই তারেককে হাসপাতাল থেকে গুলশান থানায় আনার পথে ঘটে ‘ক্রসফায়ারের' ঘটনা৷ এতে তারেক এবং শাহ আলম নামক আরেক ব্যক্তি নিহত হন৷ সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
হরতালের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ
যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিবাদে চলতি সপ্তাহে হরতালের সূচনা করে জামায়াত-শিবির৷ এএফপির হিসেবে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে ৪ই মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ হরতালের কিছু ছবি নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
বরিশালে অগ্নিসংযোগ
জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিন ৪ই মার্চ বরিশালে মোটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগ করছে দলটির সমর্থকরা৷ এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হরতালের সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপর হামলায় অংশ নেয় জামায়াত-শিবিরের সমর্থকরা৷ উদ্দেশ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা৷
ছবি: Reuters
সহিংসতায় নিহত কমপক্ষে ৮০
ঢাকায় ৪ মার্চ হরতাল চলাকালে জামায়াতে ইসলামী কর্মী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিতে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন সহিংস কর্মসূচিতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ নিহতদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের সদস্য ছাড়াও পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, নিরীহ পথচারী এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকও রয়েছেন৷
ছবি: Reuters
ট্রেনে আগুন
ঢাকায় হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থানরত একটি ট্রেনে আগুন লাগে৷ ছবিতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন জনতা৷ ঢাকা থেকে নোয়াখালিগামী ট্রেনটির তিনটি বগি আগুনে পুড়ে গেছে৷ রেলমন্ত্রী মাজিবুল হক ট্রেনে অগ্নিসংযোগের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছেন৷
ছবি: Reuters
মসজিদ থেকে গ্রেপ্তার
হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ ঢাকার একটি মসজিদ থেকে জামায়াত কর্মী সন্দেহে কয়েকজনকে আটকে করে পুলিশ৷ জামায়াতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর বাংলাদেশে সহিংসতার তীব্রতা বেড়ে যায়৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি এই রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় ৪ মার্চ অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪ ব্যক্তি৷
ছবি: Reuters
অব্যাহত অগ্নিসংযোগ
হরতালের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে অগ্নিসংযোগ৷ রাস্তায় টায়ার পোড়ানো, গাড়িতে আগুন, ট্রেনে আগুন, মার্কেটে আগুন – চলতি হরতালে সবই দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে এখন হরতালের সহিংসতার ভিডিও পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের সব প্রান্তে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ৩ মার্চ রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করছে জামায়াতের সমর্থকরা৷
ছবি: Reuters
‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের...
জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নেমেছিলেন এই অটোরিকশা চালক৷ ২ মার্চ ঢাকায় জামায়াতের কর্মীদের ছোড়া ইটের টুকরায় গুরুতর আহত হন তিনি৷ অটোরিকশাও ভেঙ্গে গেছে৷ রাজনৈতিক সহিংসতায় এভাবেই ‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের৷
ছবি: Reuters
শরিক জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি’র তাণ্ডব
দুই মার্চ ঢাকায় এভাবেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র কর্মীরা৷ সেদিন ঢাকায় মিছিল করেছিল বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা৷ পুলিশ অবশ্য বিরোধীদের কঠোর হাতে মোকাবিলার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
রাবার বুলেট, বুলেট
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে বন্দুকে রাবার বুলেট ‘লোড’ করছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা৷ তবে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেদিন সংঘর্ষ চলাকালে সত্যিকারের বুলেটও ব্যবহার করে পুলিশ৷ এছাড়া হরতাল চলাকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ আত্মরক্ষায় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে৷
ছবি: Reuters
চোখের সামনে জ্বলছে আগুন
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি সমর্থকরা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে৷ ছবিতে পুলিশ একটি জ্বলন্ত গাড়ি দেখছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি৷
ছবি: Reuters
একদিনে নিহত কমপক্ষে ৩৪
২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসির রায় ঘোষণার দিনে সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩৪ ব্যক্তি৷ এদের মধ্যের ২৩ জন পুলিশ এবং ইসলামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন৷ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একদিনে এত সহিংসতা দেখেনি বাংলাদেশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
তবে ব়্যাবের দাবি করা এই ‘ক্রসফায়ার'-কে ঠিক ক্রসফায়ার হিসেবে মেনে নিচ্ছেন না অনেকেই৷ কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে আদনান শাহরিয়ার লিখেছেন, ‘‘মিল্কি থেকে তারেক – জীবনের কি নির্মম অপচয়!'' এই ব্লগার মনে করেন, ‘‘যে তারেক ফিল্মি স্টাইলে মিল্কিকে মেরে দিল, সেজন্যই ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই নিজেই ফিল্মি স্টাইলে ফিনিশ! সন্দেহ নাই মোবাইলের অপ্রান্তে যে জন ছিল তার হাত খানিকটা বেশিই লম্বা!''
আমার ব্লগ ডটকমে শাহজাহান আহমেদ প্রশ্ন রেখেছেন, ‘মিল্কি' নাটকের নাটের গুরু কারা...? এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র এবং বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার তাৎক্ষণিক খবরগুলো পড়ে যা বুঝলাম তা হল তারেক কারো নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে৷ কোন শক্তিধর-ক্ষমতাধর নাটের গুরু৷ যেই নাটের গুরুর ক্ষমতা অসীম৷''
ব্লগার আরিফ জেবতিক ‘ক্রসফায়ার'-এর ভিন্ন একটি দিক তুলে ধরেছেন৷ এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের সবচাইতে দুর্বল বাহিনী হচ্ছে রেব (ব়্যাব)৷ গুন্ডাপান্ডারা এমনকি আনসার কিংবা গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও গুলি করতে সাহস করে না, কিন্তু রেবের উপর হরেদরে আক্রমণ করে বসে৷ ভাগ্যিস, রেব পাল্টা গুলি করে বাধ্য হইয়া, নাইলে কী যে হইত-ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠে৷''
‘‘আসামী পরিবহনে রেবের একটা ট্রেনিং দরকার, এরকম খালি হাত ফসকাইয়া লাফাইয়া লাফাইয়া আসামীরা দৌঁড় দিলে কী কাম চলবো? পিছন থাইকা গুলি কইরা আটকানোর চেষ্টা করার চাইতে বরং দড়ি দিয়া আসামী বাইন্ধা রাখাটাই তো যুক্তিযুক্ত সমাধান,'' লিখেছেন আরিফ জেবতিক৷
‘ক্রসফায়ার'-এ তারেক নিহতের ঘটনাকে ‘নাটক' মনে করছেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত৷ ব্লগার আবু সুফিয়ান ফেসবুকে মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে দুটি প্রশ্ন রেখেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রশ্ন-১: শেষ বেলায় ব়্যাবের ‘ক্রসফায়ার'-কে নাটক বলছেন কেন? ভয় শুরু হয়ে গেছে? প্রশ্ন-২: তারেকের জন্য তাঁর ‘দরদ' উথলে উঠেছে কেন?''