‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন', সংক্ষেপে র্যাব গঠন হয় ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ৷ এরপরই ‘ক্রসফায়ার'-এর ‘গল্পের' সঙ্গে পরিচিত হন সাধারণ মানুষ৷ ঐ সব যুদ্ধ শেষে একজন বা একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, উদ্ধার করা হয় অস্ত্রও৷
বিজ্ঞাপন
এতদিন পর্যন্ত এই ‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে পেশাদার অপরাধী৷ আবার কখনও কখনও বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ৷ ফলে সরকারি লোকজন এ নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি৷ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও, বাংলাদেশের সরকার খুব একটা কর্ণপাত করেনি, নির্লিপ্তভাবে উল্টে এর প্রতিবাদ করেছে৷ আর সরকারি দলের নেতারা মণ্ডুপাত করেছেন মানবাধিকার কর্মীদের৷
কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন৷ সম্প্রতি এই ‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন সরকারের সমর্থক কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা৷ বলা বাহুল্য, তারপরই নড়েচড়ে বসেছে সরকার৷ সরকারি দলের একাধিক এমপি-র তোপের মুখে পড়েছে র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ ফলে সরকারও ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে৷
সর্বশেষ রাজধানীতে ছাত্রলীগের এক নেতার ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব-এর একটি ব্যাটেলিয়নের প্রধানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ ঐ কর্মকর্তারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিহত ছাত্রলীগ নেতার ভাই আদালতে নালিশী মামলা করেছেন৷ এলাকার দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বদলি করা হয়েছে৷ এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের যে প্রবণতা সরকারের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগের৷ ‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধ' কোনো সমাধান হতে পারে না৷''
র্যাব – বিতর্কিত এক বিশেষ বাহিনী
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের কর্মকাণ্ডে সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ সম্প্রতি আলোচিত কয়েকটি ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা র্যাব ও পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন৷ এই ঘটনায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে৷ অপরাধী যে দলেরই হোক ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক৷ কিন্তু আইন বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটবে না৷ বরং উল্টে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে৷''
গত ১৭ই আগস্ট রাজধানীর হাজারিবাগে চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ এ ঘটনায় অভিযুক্ত হাজারিবাগ থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আরজু মিয়া ওই দিন রাতেই র্যাব-এর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন৷ এই ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস৷ তিনি বলেন, ‘‘বন্দুকযুদ্ধ নয়, আরজুকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে র্যাব৷ আরজুর কোনো অপরাধ থাকলে তার জন্য আইন ছিল, বিচার হতো৷ কিন্তু এ রকম একটা ছেলে, যার কোনো খারাপ রেকর্ড নেই, কোনো মামলা-জিডি পর্যন্ত নেই, সেই ছেলেটাকে ধরে নিয়ে সকালবেলা মেরে দিল৷ এটা কোনো কথা হতে পারে? বিএনপির আমলে তৈরি এই র্যাব বন্দুকযুদ্ধের নামে একটা তথাকথিত গৎবাধা কথা বলে যাচ্ছে, যেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ আমি এর তীব্র নিন্দা করি এবং পাশাপাশি জড়িতদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই৷''
ছাত্রলীগ সভাপতি আরজু মিয়াকে ‘অপহরণের' পর গুলি করে হত্যার অভিযোগ এনে র্যাব ও পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি নালিশি মামলা করেছেন নিহতের ভাই মাসুদ রানা৷ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে৷ পাশাপাশি সরকারও নড়ে চড়ে বসছে৷ গত রবিবার র্যাব ২-এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাসুদ রানাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ পরদিন, অর্থাৎ গত সোমবার, প্রত্যাহার করা ঐ এলাকার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সহকারী কমিশনার রেজাউল ইসলামকে৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে দেখা গেছে, গত বছর কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যে ধারা চলতি বছরও অব্যাহত আছে৷ এখন পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৬৭ জন৷
তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ক্রসফায়ারের সপক্ষে যুক্তি দেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধে' যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তা আইনসম্মতভাবেই হচ্ছে৷ পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকার আছে৷ পুলিশ যখন আক্রান্ত হয়, তখন আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়৷ পাশাপাশি এই ঘটনাগুলোর বিভাগীয় তদন্ত হয়৷ সেই তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়৷'' কারো বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই হয়েছে৷
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের ওপর ক্ষেত্র বিশেষে হামলা হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে তারা পাল্টা হামলা চালাবেন, এতে ভিন্নমত নেই৷ তবে যাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাঁর জীবন রক্ষা তাদের দায়িত্বের অংশ, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷ তবে আইনের আওতায় গ্রেপ্তার, তদন্ত ও বিচারের ওপর সবারই আস্থা রাখা সংগত৷ আইনের অনুশাসন মেনেই বিচার হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার৷ তেমনি জেএমবি সন্ত্রাসীদেরও৷ একইভাবে বিচার চলছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের৷ এ সব তদন্ত কাজে তো সংশ্লিষ্ট ছিলেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা৷ তাহলে দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, সম্পত্তি দখল, টেন্ডারবাজির মতো অপরাধ যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনের আওতাতেই তো ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ আর তা নিতেও হবে৷ বিচারবহির্ভূত কোনো প্রক্রিয়াকে নৈতিক সমর্থন দেওয়ার পরিণতি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার মতো বিয়োগান্ত অনেক কিছু হতে পারে৷ এ ধরনের কিছু ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অনেক ভালো কাজ ম্লান হয়৷''