বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের বিষয়টি সমালোচিত হচ্ছে অনেক দিন, সেই ব়্যাব প্রতিষ্ঠার কাল থেকে৷ কিন্তু ২০১৪ সালে রাজনীতির একটা ভিন্ন রূপ ধরা পড়েছে৷ আর সেটা হলো সহিংসতা৷ ক্রসফায়ারকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’৷
বিজ্ঞাপন
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন ১২৮ জন৷ ওদিকে একই জরিপের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৪৭ জন৷ এই জরিপ থেকে গাণিতিকভাবে এটাই স্পষ্ট হয় যে, সহিংসতায় রাজনীতি এগিয়েছে (না পিছিয়েছে!)৷ বহুল সমালোচিত ক্রসফায়ারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমাদের রাজনীতি এখন সবার ওপরে তার অবস্থান ঘোষণা করছে৷
আসক-এর জরিপে আরো কিছু তথ্য রয়েছে৷ জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৮৮ জন গুম এবং গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন৷ হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭৬১টি বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে৷ তাঁদের ১৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে৷ ভাঙচুর করা হয়েছে ২৪৭টি মন্দির এবং প্রতিমা৷ এছাড়া ২০১৪ সালে সীমান্তহত্যা ও নির্যাতনসহ ২৭৩টি ঘটনা ঘটে বাংলাদেশে৷
পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুড়ছে যানবাহন, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, মরছে মানুষ৷ হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো অনেকে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সারি সারি পোড়া মানুষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট এখন হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো জীবিকার তাগিদ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষে ভরে গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশুর কষ্ট বোঝেনা তারা!
কোলের শিশুও বাঁচতে পারছেন না জ্বালাও-পোড়াওয়ে হাত থেকে৷ প্রতিপক্ষের আদর্শকে ভুল প্রমাণ করে শ্রেয়তর আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, প্রতিপক্ষকে আঘাত করে, হত্যা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা অনেক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ স্বাধীন দেশে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে পোড়ানোও দেখতে হচ্ছে৷ ৩ নভেম্বর আট বছরের সুমি দাদীর সঙ্গে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসছিল৷ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় তাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বোবা কান্না...
নির্মমতার আরেকটি ছবি হয়ে আছে মজিবরের পোড়া শরীর৷ মজিবর বাকপ্রতিবন্ধী৷ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ট্রাকের হেলপার৷ পিকেটারদের বোমা হামলায় বাসের সঙ্গে তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ সবাই শুনে বুঝবে এমনভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না, বোবা কান্নায় শুধু পারেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে, আর্তনাদ করতে আর এ অন্যায়ের প্রতিকার আশা করতে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মেয়েকে দেখতে গিয়ে মা হাসপাতালে
জাহানারা বেগম৷ বয়স ৫২৷ পেশা – ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা৷ হরতাল-অবরোধ থাকলে বিক্রি কমে যায় বলেই হয়তো সেদিন কাপড় নিয়ে বাড়ি বাড়ি না ঘুরে জাহানারা গিয়েছিলেন শ্যামপুরে৷ সেখানে তাঁর মেয়ের বাড়ি৷ মেয়েকে দেখে অটো রিক্সায় ফেরার সময়েই বিপদ৷ বিরোধী দলের কিছু সমর্থক সেই অটোরিক্সাতেও ছুড়ে মারে পেট্রোল বোমা৷ সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের মূল্য আগুনে পুড়ে চুকাচ্ছেন জাহানারা বেগম!
ছবি: Mustafiz Mamun
তালহার অসহায়ত্ব
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা৷ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় আবু তালহা সেই থেকে ১ নম্বর বার্ন ইউনিটে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রাজমিস্ত্রী
রাজমিস্ত্রী ও ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের শরীর পুড়েছে গত ১২ নভেম্বর৷ সেদিন ঢাকার রায়েরবাগেও একটি চলন্ত বাসে ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা৷ সেই থেকে তাঁরও ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বাসচালক
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো সেই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাহবুব৷ যাত্রীদের মতো তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৭১ সালেই জন্ম মাহবুবের৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশ পুড়ছে, তিনিও পুড়েছেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘুমের মাঝেই আগুন...
৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরিঘাটে বাসে ঘুমাচ্ছিলেন হেলপার আলমগীর৷ থামানো বাসেই দেয়া হয় আগুন৷ পোড়া দেহ নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেগুনার যাত্রী
১০ নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো হয় একটি লেগুনা৷ লেগুনা পুড়ে শেষ, লেগুনার যাত্রী কামাল হোসেন ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন৷ তবে শরীরের ৩৫ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে৷ ৩৬ বছরের এ তরুণ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে৷ চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতার প্রতিটি মানুষের শুভকামনায় তিনি শিগগিরই হয়তো ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু এই দুর্ভোগ, এই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কি কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
ছবি: Mustafiz Mamun
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভও ছিলেন রায়েরবাগের সেই বাসে৷ তাই ১২ নভেম্বর থেকে তিনিও পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
আসক-এর তথ্যে যে চিত্র পাওয়া গেল, তাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে – এমন হোমিওপ্যাথিক কথা বলার পক্ষে আমি নই৷ আমি বরং বলতে চাই যে, মানবাধিকারের সংজ্ঞা না পল্টালে আমরা হয়ত আর মানবাধিকারের পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যই থাকবো না৷ কারণ প্রবাদেই আছে, ‘সারা অঙ্গে ব্যাথা ওষুধ দেব কোথা'৷
আসক তাদের প্রতিবেদনে তুলনামূলক চিত্রও প্রকাশ করেছে৷ তাতে দেখা যায়, ২০১৩ সালের তুলনায় বাংলাদেশে ক্রসফায়ার বেড়েছে৷ ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭২ জন৷ আর ২০১৪ সালে তা হয়েছে দ্বিগুণ৷ তবে চিত্রটা গত দু'বছরে সীমাবদ্ধ রাখলে ক্রসফায়ারের প্রতি সুবিচার করা হবে বলে মনে হয় না৷
২০০৪ সালে ব়্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে চার হাজার ব্যক্তি৷ তবে ২০১৪ সালে ব়্যাবের কতিপয় কর্মকর্তা তাঁদের নতুন রূপ দেখিয়েছেন আমাদের৷ নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে কয়েক কোটি টাকা ঘুস নিয়ে হত্যার অভিযোগ আছে তাঁদের বিরুদ্ধে৷ এতে জড়িত ব়্যাবের পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা৷ মামলাটি যেহেতু বিচারাধীন, তাই তাঁরা আসলেই দোষী কিনা – তা এখন বলতে পারলাম না৷ কিন্তু কত ঘটনার অভিযোগ তো আমলেই নেয়া হয়নি৷ সেসবের কী হবে?
বাংলাদেশে চলতি বছরের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন রাজনৈতিক সহিংসতাকে তুঙ্গে নিয়ে গেছে৷ আসক-এর হিসাব অনুযায়ী, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৬৬৪টি রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে. যাতে নিহত হয়েছেন ১৪৭ জন৷ আর আহত হয়েছেন আট হাজার ৩৭৩ জন মানুষ৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
বলা বাহুল্য, এ হিসাব ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন কেন্দ্রিক৷ কিন্তু তার আগে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে সহিংসতা হয়েছে, রাজনীতির মোড়কে তা অতীতের সব রেকর্ডকে ভেঙে ফেলেছে৷ আর সেই রাজনীতিই বাংলাদেশে পুরনো বছরের শেষ এবং নতুন বছরের প্রথম দিনে হরতালের ছায়া ফেলেছে৷
রাজনৈকি সহিংসতার ঘটনায় ২০১৪ সালে সারা দেশে কয়েক হাজার মামলা হয়েছে৷ কিন্তু এ সব মামলার পরিণতি কী – তা জানা যায়নি৷ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, এই সব মামলায় শেষ পর্যন্ত আসামিদের শাস্তি পাওয়ার তেমন কোনো নজির নেই৷ তার ওপর অনেক সময় মূল হোতারা আড়ালেই থেকে গেছেন৷
রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার নেতা-কর্মীদের চেয়ে সাধারণ মানুষই বেশি৷ তাঁদের জীবন গেছে, নষ্ট হয়েছে সম্পদ৷ কিন্তু তাঁরা এর কোনো প্রতিকার পাননি৷ অনেকে আজ পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন৷ কেউ তাঁদের খোঁজও রাখেন না৷ আসলে সহিংসতায় শুধু একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয় না৷ মৃত্যু হয় একটি স্বপ্নের, একটি পরিবারের৷
সর্বশেষ সোমবার বিএনপি-র ডাকা হরতালে নোয়াখালিতে পিকেটারদের ইটের আঘাতে নিহত হয়েছেন স্কুল শিক্ষিকা শামসুন্নাহার৷ ঢাকার বাসিন্দা শামসুন্নাহার তাঁর কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু হয়ে গেলেন লাশ৷ তাঁর মৃত্যু নিয়ে আমরা দোষারোপের রাজনীতি দেখেছি৷ কিন্তু তাঁর পরিবারের পাশে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাকে দাঁড়াতে দেখিনি৷
বাংলাদেশে গুম, গুপ্ত হত্যা, হত্যা যেন এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ নিখোঁজ ব্যক্তিদেরও মিলছে না কোনো খোঁজ৷ অভিযোগ রয়েছে যে, এই নিখোঁজ আর গুমের সঙ্গে যোগ আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের৷ তবে এ কথা অস্বীকার করেছে তারা৷ ঢাকার শাহজাহানপুরে শিশু জিহাদ যেমন মরে প্রমাণ করেছে যে, সে ওয়াসার-পাইপে সত্যিই পড়ে গিয়েছিল, তেমনি কোনো ঘটনা না ঘটার আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুম-অপহরণে তাদের জড়িত থাকার স্বীকার করবে না৷ অথবা নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মতো হাতে-নাতে ধরা না পড়লে, হবে না৷
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে৷ এতে উল্লসিত সরকারের নীতি-নির্ধারকরা৷ তাঁরা বলছেন, ‘‘বাংলাদেশ যে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে, এটা তার স্বীকৃতি৷'' এর উত্তরে মানবাধিকার নেতারা বলছেন, ‘‘মানবাধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, বাংলাদেশ এই পদের যোগ্য৷''
তবে এই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় যে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে৷ এটা আসক-এর প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে আরো বেশি৷ সহিংসতা-হত্যাকাণ্ডে রাজনীতিই যখন শীর্ষে অবস্থান নেয়, তখন বলাই যায় যে ‘মাথায় পচন ধরেছে'৷ এ বড় কঠিন রোগ৷ এটা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে, চুল থেকে নখ পর্যন্ত সব জায়গায়৷
রাজনীতিই সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ পুলিশ, প্রশাসন, ব়্যাব, নাগরিক – সবকিছু৷ আর রাজনীতির চরিত্র অনুযায়ী রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ আচরণ করে৷ তাই আমরা প্রায়ই শুনি, ‘‘রাজনীতি ঠিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷'' আর রাজনৈতিক সহিংসতা যদি ক্রসফায়ারকেও ছাড়িয়ে যায়, তাহলে আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, আমরা কোন দিকে যাচ্ছি!
নতুন বছর, নতুন সময়, নতুন দিন৷ আশাবাদী হতে চায় মন৷ কিন্তু সেটা তো হতে পারছে না৷ কারণ সামনেই ৫ই জানুয়ারি আবারো ফিরে আসছে৷ কী হয় কে জানে?
অন্যরকম নির্বাচন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়নি৷ নির্বাচনের দিনের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এজন্য ৫৯ জেলায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বাকি পাঁচটি জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অলস সময়
ভোটার না থাকায় ঢাকার মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলসভাবে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোটারের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি ভোটকেন্দ্রের ছবি এটি৷ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ভোটারদের জন্য বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটার নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখানেও একই অবস্থা
ছবিটি হারম্যান মাইনার কলেজ কেন্দ্রের৷ পাশাপাশি স্থাপিত কয়েকটি বুথ যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ এটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন৷ একতরফার সঙ্গে আছে ব্যাপক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিড়ম্বনার শিকার
নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে অনেক ভোটার ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে কেউ কেউ অবশ্য কষ্টটা শিকার করেই ভোট দিয়েছেন৷ ছবিতে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে দেখা যাচ্ছে৷ তাঁদের সহায়তা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
ভোটাধিকার প্রয়োগ
ভোট দিচ্ছেন একজন ভোটার৷ অবশ্য তাঁর মতো ভাগ্যবান হতে পারেননি দেশের মোট ভোটারের শতকার ৫২ জন৷ অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এসব ভোটারের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ এই কারণে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে পারেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ভোটার
ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের অপেক্ষায় কয়েকজন নারী ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
উৎসাহে কমতি নেই
আব্দুল হাকিম নামে ৮৯ বছরের এই ভোটার দুই ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেনা সদস্যদের পাহারা
দুজন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন৷ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেখানে ছিলেন সেনা সদস্যরা৷