1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলার মিছিল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা হচ্ছে৷ মেজর (অব.) সিনহা হত্যার পর এপর্যন্ত আরো নয়টি মামলার খবর পাওয়া গেছে৷ মামলাগুলোর অভিযোগ একই রকম ‘টাকা না পেয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা’৷

ছবি: bdnews24

তবে সিনহা হত্যা মামলার বাইরে অন্য মামলাগুলোর তদন্ত নিয়ে তেমন তোড়জোড় দেখা যাচ্ছেনা৷ মামলাগুলো হয়েছে আদালতে৷ আদালত আবার সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে৷ তাই আশঙ্কা, সিনহা হত্যার বাইরে মামলাগুলোর তদন্ত কি আদৌ সঠিক ও দ্রুতগতিতে হবে? এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘মামলা মামলার গতিতে চলবে৷’’

৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের চেকপোস্টে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যা করা হয় ক্রসফায়ারের নামে৷ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য টেকনাফ থানার পক্ষ থেকে একটি ‘সাজানো’ এজাহার করা হয়৷ পরে সিনহার পরিবারের পক্ষ থেকে নয়জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা হয়৷ সেই মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব৷ এই মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস, এসআই লিয়াকত, নন্দ দুলাল রক্ষিত গ্রেপ্তার হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়৷ টেকনাফের অনেকেই ওসি প্রদীপের ‘ক্রসফয়ার বাণিজ্য’ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন৷ কেউ কেউ মামলাও করেন৷ আর এই মামলা অব্যাহত আছে৷

মামলা মামলার গতিতে চলবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

This browser does not support the audio element.

মামলার পর মামলা
প্রদীপের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয়েছে টাকা না পেয়ে আমানুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক ও তার ছোট ভাই আজাদুল ইসলাম আজাদকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে৷ তাদের ছোট বোন রিনাত সুলতানা শাহিন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের আদালতে ২ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছেন৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, ২০১৮ সালের ১৩ জুলাই রাতে চন্দনাইশ এলাকা থেকে আজাদকে গ্রেপ্তার করে টেকনাফ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ ১৫ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় তার বড় ভাই ফারুককে৷ এরপর আট লাখ টাকা দাবি করা হয় ছেড়ে দেয়ার জন্য৷ টাকা দিতে না পারায় ১৬ জুলাই সকালে ওসি প্রদীপ ফোন করে তাদের লাশ নিয়ে যেতে বলে৷ এদের মধ্যে ফারুক একটি মাদক মামলার আসামি ছিলেন এবং মোবাইল ফোন মেরামতের ব্যবসা করতেন৷ আর তার ছোট ভাই আজাদ বাহরাইন প্রবাসী ছিলেন৷ ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন৷

এর আগে ওইদিনই কক্সবাজার আদালতে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আরো দুইটি হত্যা মামলা দায়ের হয়৷ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং ইউনিয়নে মুছা আকবর ও সাহাব উদ্দিন নামে দুই যুবককে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে মামলা দুটি করা হয়৷ মুছা আকবর হত্যা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টেকনাফ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করায় গত ২৮ মার্চ রাতে পুলিশ মুছাকে তুলে নিয়ে যায়৷ এরপর ২০ লাখ টাকা দাবি করা হলে তার পরিবার তিন লাখ টাকা দেয়৷ তারপরও ভোরে মুছাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়৷

অন্যদিকে নিহত সাহাব উদ্দীনকে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল টেকনাফ থানা পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয় ৷ তার পরিবার ৫০ হাজার টাকা দিতে পারে৷ পুরো টাকা না পেয়ে ২০ এপ্রিল রাতে সাহাব উদ্দীনকে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে৷

প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও রয়েছে একটি৷ দুদক চট্টগ্রামে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে এই  মামলা করে ২৩ আগস্ট৷ এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে৷

আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে: ডিবির সাবেক প্রধান

This browser does not support the audio element.

কেন এখন মামলা?
সিনহা হত্যার আগে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে এরকম মামলার পর মামলা হয়নি৷ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘সিনহা হত্যার তদন্ত এবং ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার হওয়ায় মানুষ মনে করছে সরকার তার অপকর্মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে৷ তাই যারা প্রদীপের অপকর্মের শিকার হয়েছেন তারা সাহস পাচ্ছেন, মামলা করছেন৷’’ এখন এই মামলাগুলোরও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে সাধারণ মানুষের মনে আস্থা আরো দৃঢ় হবে বলে তিনি মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রদীপ ও তার সহযোগীরা ‘ক্রসফায়ারকে’ একটি বাণিজ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলো৷’’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম মনে করেন, ‘‘ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এখন যেসব মামলা হচ্ছে সেগুলোর তদন্ত যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্য আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এটা প্রয়োজন৷ সবাই যাতে ন্যায়বিচার পায় তার নিশ্চয়তা দেয়া দরকার৷’’

ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো আলাদা নজরদারি ও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘‘মামলা মামলার গতিতে চলবে৷ মামলা হচ্ছে, আইনে যেভাবে আছে সেভাবেই তদন্ত হবে৷ এরজন্য আলাদা তো কিছু করার দরকার নাই৷ সব মামলারই তদন্ত হচ্ছে৷’’

আর সিনহা হত্যার পর ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে এত মামলা হচ্ছে কেন সে ব্যাপারে তার ধারণা নেই বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ