ক্রাইমিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র সেতুতে শনিবারের বিস্ফোরণের ঘটনার পর সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে ঝাপোরিজঝিয়ায় বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ৷
শনিবার সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া একটি ট্রাক বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, বিস্ফোরণের পর ক্রাইমিয়াগামী একটি তেলবাহী ট্রেনের সাতটি ট্যাংকারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে৷ এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানায় মস্কো৷
বিস্ফোরণে সেতুর তিনটি স্প্যান ভেঙ্গে পড়ে৷ তাৎক্ষণিকভাবে সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়৷ মেরামত শেষে দশ ঘণ্টা পর পুনরায় যান চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করা হয়৷
২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখলের পর রাশিয়ার সাথে উপদ্বীপটিকে সংযুক্ত করতে ২০১৮ সালে সেতুটি চালু করে মস্কো৷ ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকে সেতুটি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগপথ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল৷ কেননা খেরসন অঞ্চলে যুদ্ধরত রাশিয়ার সেনাদের কাছে অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ এটি৷
এই হামলা উদ্দেশ্যমুলক কি না সে বিষয়ে আলোচনার জন্ম নিয়েছে৷ এই বিষয়ে রাশিয়া কিংবা ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি৷
রাশিয়ার উপ-প্রধামন্ত্রী মারাত খুসনুলিন জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় সেতুর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে রোববার কাজ শুরু করছেন ডুবুরিরা৷
সেতুর নিরাপত্তা বাড়াতে একটি ডিক্রি জারি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট৷ ডিক্রি অনুযায়ী, ক্রাইমিয়াতে যাওয়া গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ লাইনের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে৷ দেশটির ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসকে সেতুর নিরাপত্তা দেখভাল করার জন্য বলা হয়েছে৷
কী কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া৷
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় ঝাপোরিজঝিয়ারএক কর্মকর্তা আন্তোলি কুর্টেভ বলেন, রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ঝাপোরিজঝিয়ারআবাসিক ভবন এবং রাস্তাঘাট ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
উল্লেখ্য ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝাপোরিজঝিয়াতে অবস্থিত৷ বেশ কিছুদিন আগেই ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখল নিয়েছিল রাশিয়ার সেনা৷
আরআর/এফএস (এপি, এফপি. ডিপিএ, রয়টার্স)
ইউক্রেন যুদ্ধ: পরমাণু যুদ্ধ কি আসন্ন!
ফের ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রের সামনে রকেট হামলা রাশিয়ার। আরো অঞ্চল পুনর্দখলের দাবি জেলেনস্কির।
ছবি: REUTERS
রকেট হামলা
বৃহস্পতিবার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের খুব কাছে রকেট হামলা চালায় রাশিয়া। রকেটের আঘাতে একটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
ইউক্রেন প্রশাসনের স্থানীয় সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ভাঙা বাড়ির নীচে এখনো অন্তত পাঁচজন আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মৃতদের মধ্যে একজন নারী। অন্যজনের অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হয়েছে।
ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রটি রাশিয়া দখল করতে চায়। বুধবার এবিষয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন। পরমাণু কেন্দ্রটির সম্পূর্ণ হস্তান্তর চেয়েছিলেন তিনি।
ছবি: REUTERS
ইউক্রেনের বক্তব্য
ইউক্রেন কোনোভাবেই পরমাণু কেন্দ্রটি রাশিয়ার হাতে দিতে প্রস্তুত নয়। বুধবার দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন ঝাপোরিজ্ঝিয়া অঞ্চলে আরো তিনটি জায়গা পুনর্দখল করেছে। কোনোভাবেই ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্র রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
ছবি: Ukrainian Presidency/AP/picture alliance
পরমাণু সংস্থার প্রধান ইউক্রেনে
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির প্রধান কিয়েভে গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন। কীভাবে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। জেলেনস্কিকে আশ্বাস দিয়েছেন।
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
রাশিয়ার অধিকারে
যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়া দখল করে। তার ভিতর থেকেই তারা লড়াই চালাচ্ছিল। কিন্তু পরমাণু কেন্দ্রটি দখল করলেও কর্মীদের তারা তাড়িয়ে দেয়নি। ইউক্রেনের কর্মীরাই সেখানে কাজ করছিলেন।
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
বাইডেনের ভয়
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার সেনা লড়াইয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এবং সে কারণেই তার ভয়, পুটিন যে কোনো সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের পর পরমাণু অস্ত্র নিয়ে এত চিন্তা করতে হয়নি বলে এদিন মন্তব্য করেছেন বাইডেন।
ছবি: picture alliance / Consolidated News Photos
রাশিয়ার অবস্থান
পুটিন আগেই জানিয়ে রেখেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব আঘাত পেলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতেও তিনি ভয় পাবেন না।
ছবি: Dmitry Astakhov/Sputnik/REUTERS
ইউক্রেনের অবস্থান
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের যে জমি দখল হয়েছে, দেশের সেনা তা উদ্ধeর করতেও বদ্ধপরিকর। যার অর্থ ইউক্রেন ক্রাইমিয়া দখলেরও চেষ্টা করবে। পুটিন আগেই জানিয়েছিলেন, ক্রাইমিয়ায় আঘাত হানলে রাশিয়া ফের কিয়েভের অভিমুখে যাত্রা করবে।