1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রিকেট: এসএসসির প্রশ্নে বাংলাদেশের এইচএসসির প্রস্তুতি

নোমান মোহাম্মদ ঢাকা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরাধ্য জয়? নাকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রার্থিত প্রস্তুতি? দুটো তো সমান্তরালে থাকতেই পারতো। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেটে তা দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো মুখোমুখি। তাতে ‘অর্জন' কতটা?

Erstes internationale Twenty20 Cricket | Bangladesh vs. Neuseeland
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP

কুড়ি-বিশের ফরম্যাটে কুঁড়ি হয়ে আছে বাংলাদেশ বরারবই। ওয়ানডে ক্রিকেটে যতটা ফুল হয়ে ফুটেছে, টি-টোয়েন্টিতে মোটেই তেমন নয়। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ ফরম্যাটে জয়টাই তো অধরা ছিল। সেখানে সিরিজ জয়ের হাতছানি উপেক্ষা করা হয়ত কঠিন। তা বিশ্বকাপ প্রস্তুতিকে উপেক্ষা করে হলেও!

নইলে বিশ্বকাপে যেখানে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের ধারণা সবার, সেখানে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে মিরপুরের অমন ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি তৈরি কেন?

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল দায় দেন সাহসের অভাবকে, ‘‘নিউজিল্যান্ড দলটা দেখার পরই মনে হয়েছিল, এ সিরিজে চাইলে আমরা বিশ্বকাপের প্রস্ততিটা ভালোভাবে নিতে পারতাম। যদিও ম্যানেজমেন্ট, কিংবা (প্রধান নির্বাচক) নান্নু ভাইও বললেন, বিশ্বকাপে প্রস্তুতি নিয়ে তারা চিন্তাই করছেন না। ম্যাচ, কিংবা সিরিজ কিভাবে জেতা যায়, সে ভাবনা থেকেই ধীরগতির উইকেট বানিয়েছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘ফেয়ার' উইকেট দিয়েও সিরিজ জেতা যেতো। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও নেয়া যেতো। সে সাহস আমরা করতে পারিনি।''

‘‘নীতিনির্ধারকরা তা পারেননি কেন? হেরে যাওয়ার ভয়ে? ‘এটা তো আমারও প্রশ্ন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রু উইকেটে খেলার সাহস করা উচিত ছিল। অন্তত প্রথম দুটো ম্যাচ ট্রু উইকেটে খেলতাম, যেখানে ১৭০-১৮০ রান হবে। তাতে হেরে গেলে সিরিজ জয়ের জন্য স্লো উইকেটের চিন্তা করতে পারতাম। আবার ওই হাই স্কোরিং প্রথম দুটো ম্যাচে যদি আমরা জিততে পারতাম, তাহলে পুরো সিরিজই অমন উইকেটে খেলা যেতো। এ সাহসটা করা উচিত ছিল। কেন করেনি, তা ম্যানেজমেন্টই ভালো বলতে পারবে','  প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন আশরাফুল।

‘‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও নেয়ার সাহস আমরা করতে পারিনি’’: মোহাম্মাদ আশরাফুল

This browser does not support the audio element.

বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও সাহসের অভাব দেখতে পান স্পষ্ট। আবার এ দুটো সিরিজ জয়ে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে বলে যে সাধারণ মত, সেটিও মানেন না, ‘‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতে আমরা খুব ভালো একটা মানসিকতা নিয়ে ফিরে এসেছিলাম। বিশেষত শেষ ম্যাচে ১৯৩ রান তাড়া করে জেতাটা দলকে উজ্জীবিত রেখেছিল। কিন্তু দেশে ফেরার পর মোরালি বোধহয় সে জায়গাটায় আর থাকতে পারিনি। যখনই আমরা সুবিধা নিয়ে জেতার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামলাম, তখন থেকেই মানসিক শক্তি আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে একটা জিনিস মনে মনে স্বীকার করে নিয়েছি, একটু বেটার কন্ডিশন হলেই আমরা আর পারবো না। তাই বোঝা যায়, আত্মবিশ্বাসের কথা বলা হলেও ভেতরের আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে।''

কিন্তু ওই যে বলা হয়, জয়ের চেয়ে বড় আত্মবিশ্বাস হয় না! এর সঙ্গেও দ্বিমত নাজমুল আবেদীন ফাহিমের, ‘‘জয়টা অবশ্যই ভালো। তবে জয়ের ভেতরে যদি অর্জন না থাকে, সেখান থেকে কিছু পাওয়া যায় না। তাহলে তো যেটা করা উচিত, আমাদের চেয়ে দুর্বল দলের বিপক্ষে সবসময় খেলবো এবং জিতবো। কিন্তু তাতে লাভটা কী হবে? লাভ হবে না। এ দুটো সিরিজে কিছু ম্যাচ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। চাপে পড়লে কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়, সেটি শিখেছি। কিন্তু আমরা জানি না, ১৭০ রান কিভাবে করতে হয়। কিংবা ১৫০ করার পর ব্যাটিং উইকেটে কিভাবে বোলিং করতে হয়। বিশ্বকাপের পরীক্ষায় কিন্তু এ প্রশ্নটাই আসবে।''

সে প্রশ্নপত্র বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য হবে অপরিচিত। ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের আশঙ্কাটা ঠিক সে জায়গাতেই, ‘‘জয়ের জন্য যদি এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিয়ে নিই, তাহলে সেটি হবে না তো। প্রস্তুতিতে আমি খুব ভালো রেজাল্ট করবো ঠিক। কিন্তু এ আত্মবিশ্বাস এইচসএসসি পরীক্ষায় কোনো কাজে আসবে না। আমার কাছে, বাংলাদেশে দলের ব্যাপার অনেকটা সে রকমই মনে হচ্ছে।''

জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যান তুষার ইমরান চান মানসিকতার পরিবর্তন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো টার্গেট দেখতে পাচ্ছেন না তিনি, ‘‘নির্বাচকদের বা বোর্ড প্রেসিডেন্টের কথায় বোঝা যায়, এ দুটো সিরিজে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হয়নি। হোম কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে আমরা জয়ের একটা অভ্যাস করেছি মাত্র। এখানে মানসিকতা পরিবর্তন দরকার। বিশ্বকাপে আমাদের বড় কোনো টার্গেট নেই। থাকলে এখান থেকেই প্রস্তুতিটা শুরু করা উচিত ছিল। বিশ্বকাপে গিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত যাবো, এটুকুই মনে হয় টার্গেট। সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলবো, সে আশাটা নেই।''

লক্ষ্যহীন বাংলাদেশকে দেখে তুষার কিছুটা অবাক। আবার দীর্ঘদিন একই চর্চা দেখছেন বলে যেন অতটা অবাকও নন, ‘‘এত বড় একটা ইভেন্ট খেলতে যাচ্ছি, আমাদের দুই-তিন বছর আগে থেকেই টার্গেট ঠিক করা উচিত ছিল। আগে কিন্তু বলা হয়েছিল, আমাদের টার্গেট ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ; এরপর ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট। কিন্তু টুর্নামেন্টগুলো কাছে চলে এলে এসব ভুলে যাই। তখন টার্গেট হয়ে যায় সিরিজ বাই সিরিজ। বড় কোনো টুর্নামেন্ট ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি থাকে না। বড় কোনো টার্গেটও সেট করা থাকে না।''

তাহলে এই গোলমেলে প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপে কতটা কী করতে পারবে বাংলাদেশ? নাজমুল আবেদীন ফাহিম ভালো কিছুর আশা ছাড়ছেন না তবুও, ‘‘আমি জানি না, আমরা কেমন করে যেন কোনো না কোনোভাবে বেঁচে যাই। বিশ্বকাপেও দুটো প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করলে প্রথম পর্বটা ভালোভাবে উতরে যেতে পারবো। এমনটা হলে আমরা হয়ত ট্র্যাকে ফিরবো। বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে পারবো।''

‘‘বড় কোনো টুর্নামেন্ট ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি থাকে না’’: তুষার ইমরান

This browser does not support the audio element.

আশরাফুল তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমনকি সেমিফাইনালে যাওয়াও সম্ভব বলে আশায় আছেন, ‘‘সুপার টুয়েলভে আমাদের প্রথম খেলা আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অবশ্যই আশা করি, এ ম্যাচটা জিতবো যদিও টি-টোয়েন্টিতে ওরা আমাদের চেয়ে ভালো দল। আয়ারল্যান্ড হয়ত আসবে; ওদের সঙ্গেও জেতার আশা করি। বাকি থাকে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ভারত। এসব ম্যাচে যদি সিনিয়র কোনো ক্রিকেটার নিজের সেরা ইনিংস খেলেন, কিংবা সেরা বোলিং স্পেল করেন, তাহলে বাংলাদেশ সুপার ফোরে বা সেমিফাইনালে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে বলে আমি মনে করি।''

এসএসসির প্রশ্নপত্রে এইচএসসির প্রস্তুতি কি এত ভালো ফল দেবে সত্যিই?

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ