এগারো দফা দাবি তুলে দেশের ক্রিকেটারদের ডাকা ধর্মঘটের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-র সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন৷ দাবিগুলো বিসিবিকে জানালে মেনে নেয়া হতো বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
মিরপুর অ্যাকাডেমি মাঠে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘটের ডাক দেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমসহ অন্য ক্রিকেটাররা৷ এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের অবস্থান তুলে ধরেন পাপন৷
তিনি বলেন, ‘‘যেসব দাবি খেলোয়াড়রা সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলেছে, তার মধ্যে এমন কিছু নেই যা বিসিবির সামনে তুললে পূরণ হতো না৷ এরপরও ক্রিকেটাররা কেন তাদের দাবি-দাওয়া বিসিবিকে না বলে সাংবাদমাধ্যমে বললো, সেটা বোধগম্য নয়৷''
তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট খেলতে ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের৷ এমন সময় খেলোয়াড়দের এ কর্মসূচিকে ওই সফরটি ভেস্তে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বলেও মনে করেন বিসিবি সভাপতি৷
ক্রিকেটারদের ধর্মঘট নিয়ে বিসিবিতে বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে এক জরুরি সভার পর সংবাদ সম্মেলেনে আসেন তিনি৷
ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবির অনেকগুলোই পূরণ করা হয়েছে বা হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে দাবি করে বোর্ড প্রধান বলেন, ‘‘দাবি ওরা জানাতেই পারে, খুবই ন্যাচারাল৷ কিন্তু সেটির জন্য তারা স্ট্রাইকে গেছে, এটা এক্সট্রিমলি শকিং৷ আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমাদের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এমন কিছু হতে পারে৷’’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতানো নায়কেরা
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জেতা ১৩টি ম্যাচে সেরার স্বীকৃতি টাইগাররা পেয়েছেন ১২ বার৷ বাকি একটি পুরস্কার যায় পরাজিত দলে৷ টাইগারদের মধ্যে দুইবার করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছেন শুধু মোহাম্মদ আশরাফুল ও ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অংশ নেয় ক্রিকেট বিশ্বকাপে৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যাত্রাটি শুরু হয় ছয় উইকেটের হার দিয়ে৷ বাংলাদেশ প্রথম জয় তুলে নেয় তৃতীয় ম্যাচে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে৷ এই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু৷ বাংলাদেশের ২২ রানে জেতা ম্যাচে ৬৮ রান (অপরাজিত) করেন তিনি৷ পাশাপাশি ৩ ওভার বল করে ১টি উইকেটও নিয়েছিলেন বিসিবির বর্তমান নির্বাচক৷
ছবি: M. Mohammad
খালেদ মাহমুদ সুজন, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আসরের দ্বিতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ ৬২ রানে জেতা সেই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন খালেদ মাহমুদ সুজন৷ ব্যাট হাতে ২৭ রান করার পর বোলিংয়ে ৩ উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মাশরাফি বিন মোর্তজা, ২০০৭
১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দুই ম্যাচে জয় পেলেও বিশ্বকাপে পরের জয়ের জন্য ৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে৷ ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই জয়ের দেখা পায় টাইগাররা৷ ৪ উইকেট নিয়ে সেবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মোর্তজা৷
ছবি: Getty Images/C. Rose
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭-এর আসরে বিশ্বকাপের তৃতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ের সেই ম্যাচে বারমুডাকে হারায় টাইগাররা৷ ব্যাট হাতে ৩২ বলে হার না মানা ২৯ রান করায় ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিহ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭ সালের সেই আসরেই প্রথম বারের মতো সুপার এইটে উঠে সাউথ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ৷ ৮৩ বলে ৮৭ রান করে আবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৭ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
তামিম ইকবাল, ২০১১
২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তিনটি জয় পায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ে প্রথমে আয়ারল্যান্ডকে হারায় ২৭ রানে৷ ওই ম্যাচে ৪৩ বলে ৪৪ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের আরেক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ সেই ম্যাচে ১০০ বলে ৬০ রান করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন ইমরুল কায়েস৷ বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল ২ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/M. Lewis
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ সালের সেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে আরেকটি জয়ও পেয়ে যায় সহ-আয়োজক বাংলাদেশ৷ ওই ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা৷ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ১১৩ বলে ৭৩ রান করে ম্যাচ সেরা হন ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
মুশফিকুর রহিম, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও ম্যাচে ম্যান অব ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের৷ তবে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারানোয় ৫৬ বলে ৭১ রানের অবদান রেখে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম৷
ছবি: Getty Images/C. Spencer
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে টাইগাররা দ্বিতীয় জয়টি পায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে৷ ওই ম্যাচে ১৩৮ বলে ১০৩ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ৷ বাংলাদেশ ওই ম্যাচ জিতেছিল ১৫ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
সাকিব আল হাসান, ২০১৯
২০১৯ সালে বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ৷ ম্যাচে অলরাউন্ডার নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন সাকিব৷ ব্যাট হাতে করেছেন ৮৪ বলে ৭৫ রান আর বল হাতে ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নেন এক উইকেট৷ বাংলাদেশ জিতে যায় ২১ রানে৷
ছবি: picture-alliance/A. Salahuddin
11 ছবি1 | 11
‘‘ওদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে৷ আমার চেয়ে বেশি মনে হয় না কেউ যোগাযোগ রাখে৷ ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে সবকিছুতে কথা হয়৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ওদের অ্যাকসেস আছে৷ বলার কিছু থাকলে ওরা বলতে পারত৷‘‘
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘‘ওরা তো চাইলেই পাবে, আসেনি কেন? আমাদের কাছে চাচ্ছে না কেন? ফোন ধরছে না৷ সবকিছুর পেছনে কারণ আছে৷ আমাদের কাছে না গিয়ে মিডিয়ায় বলেছে, সেটির পেছনে বিশেষ কারণ আছে৷ আমাদের সুযোগ না দিয়ে মিডিয়ায় গিয়েছে, এটি বিশেষ একটি পরিকল্পনার অংশ৷’’
‘‘পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে৷ একজন লোকই আছেন, যিনি বারবার এসব করছেন৷ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে৷ এই ষড়যন্ত্রের কথা সরকার থেকে শুরু করে সবাই জানে৷ সব ক্রিকেটার এটির সঙ্গে জেনে-শুনে জড়িয়েছেন বলে মনে হয় না৷ ১-২ জন জানতে পারে। এই মুহূর্তে বের করা দরকার, কারা এই কাজ করছে৷ কিছুদিনের সময় চাচ্ছি আপনাদের কাছে, সব বের করে ফেলব৷’’
বিসিবি প্রধানের ভাষ্য, ‘‘খেলোয়াড়রা না খেললে খেলবে না৷ আমাদের কিছু করার নেই৷ ওরা ক্যাম্পে গেলে ভালো, না গেলে যাবে না৷ ক্রিকেটারদের ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তারা নিজেরাও জানে না৷ দু’একজন জানতে পারে৷ আমার দুয়ার ওদের জন্য খোলা৷ ওরা যদি আমার কাছে আসে, অবশ্যই কথা হবে৷ আমি তো কথা বলতেই চাই৷ আমি আশা করি ক্যাম্প চলবে, ভারত সফর হবে৷’’