ক্রিকেটের ময়দানে রাজনীতি আনলেন সূর্যকুমার যাদব
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বরাবরই হাই ভোল্টেজ। রোববার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ম্যাচে উত্তেজনার পারদ আরেকটু বেশি ছিল কারণ, অপারেশন সিঁদুরের পর এই প্রথম ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটের ময়দানে মুখোমুখি হলো। বস্তুত, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের খেলা ঠিক হয়েছে কি না, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
তবে এদিন খেলার পর ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতি মিলিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। টসের পর পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আলি আঘার সঙ্গে হাত মেলাননি সূর্য। খেলা শেষে দ্রুত মাঠ ছাড়েন তিনি। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাননি। ভারতীয় দল এবং সাপোর্ট স্টাফেরা ক্রিকেটীয় সৌজন্য দেখিয়ে মাঠে নেমে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলাননি। এমনকী, ড্রেসিংরুমে ঢুকে তারা দরজা বন্ধ করে দেন, যাতে পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা সেখানে ঢুকতে না পারেন।
এরপর পুরস্কার নিতে এসে সূর্যকুমার বলেন, এই জয় তিনি পহেলগামের নিহতদের উৎসর্গ করছেন। অপারেশন সিদুঁরে ভারতীয় সেনা যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন সূর্য। বস্তুত, ভারতের কোচ তথা সাবেক বিজেপি সাংসদ গৌতম গম্ভীরও খেলার শেষে বলেছেন, “দল হিসাবে পহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিবারের পাশে থাকতে চেয়েছিলাম। সেটাই করে দেখিয়েছি। অপারেশন সিঁদুরের জন্য ভারতীয় সেনার উপর গর্বিত।”
সূর্য বলেছেন, “কিছু কিছু বিষয় খেলোয়াড়ি মানসিকতার থেকেও বেশি হয়। আমরা পহেলগাম হামলায় নিহতদের পরিবারের পাশে আছি। ভারতের সাহসী সেনাবাহিনীর পাশেও আছি।”
এখানেই শেষ নয়, সূর্য এরপর বলেছেন, “আমরা এখানে আসার সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, শুধু খেলতেই আসছি না, আমরা জবাব দিতে চেয়েছিলাম। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আমরা সহমত।”
এদিকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের এই কাজের পর খেলার শেষের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা। পাশাপাশি ম্যাচ রেফারির কাছে তারা অভিযোগও জানিয়েছেন।
সূর্যকুমারের এই সিদ্ধান্ত নিজের নাকি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং ভারত সরকারের নির্দেশ, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ক্রিকেট সাংবাদিক আর কৌশিক এই প্রশ্ন তুলেছেন। তার বক্তব্য, এটি যদি সূর্যকুমারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত হতো অথবা দলীয় সিদ্ধান্ত হতো, তাহলে ম্যাচের আগের দিন এশিয়া কাপের সমস্ত দলের ক্যাপ্টেনদের সঙ্গে ছবি তোলার অনুষ্ঠানে তিনি পাকিস্তানের অধিনায়ক আঘার সঙ্গে হাত মেলাতেন না। শুধু তা-ই নয়, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির সঙ্গেও ওই দিন তিনি হাত মেলাতেন না।
ম্যাচের দিন উপর থেকে নির্দেশ এসেছে বলেই এ কাজ তিনি করেছেন বলে মনে করছেন কৌশিক। এবং সে কারণেই ম্যাচের পর তিনি বলেছেন যে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং সরকারের সঙ্গে তিনি সহমত।
এই প্রসঙ্গে মন্তব্য না করলেও সাংবাদিক দীপক ঘোষ বলেছেন, ''আজ দিনভর বিতর্ক হলো, কেন ভারত খেলবে পাকিস্তানের সঙ্গে? যারা বিতর্ক করছেন, তারা নিছক রাজনীতির তাওয়া গরম করার জন্যই বিতর্ক বাঁধিয়েছেন। ভারত যদি পাকিস্তানের সঙ্গে খেলবো না বলে পণ করে বসে থাকে, তাহলে বিশ্বের কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবে না টিম ইন্ডিয়া।''
প্রাবন্ধিক এবং সমাজবিজ্ঞানী, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক অভ্র ঘোষ মনে করিয়ে দিয়েছেন অলিম্পিকের কথা। গ্রিসের ছোট ছোট অঞ্চলগুলির মধ্যে যখন তুমুল লড়াই চলছে, তখন অলিম্পিক এক শান্তির বার্তা বয়ে এনেছিল। অভ্র বলেছেন, ''খেলার সঙ্গে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট শব্দটি জুড়ে থাকে। এই স্পিরিট আসলে মৈত্রীর বার্তা দেয়। ভারতীয় ক্রিকেটারের এদিন ঠিক তার উল্টো পথে হেঁটেছেন।'' অভ্রের দাবি, এদিন ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন হলে ভারতের খেলাই উচিত হয়নি বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী।
এসজি/জিএইচ