1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রিকেটে সমালোচনা: কোথায় থামতে হবে জানা জরুরি

রাকিবুল হাসান
২৯ অক্টোবর ২০২১

২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে৷ ২০০৭ সালের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েও ভারত সেবার ছিল এলোমেলো৷ ক্রিকেট ছাপিয়ে দলের ভেতরের টানাপোড়েনের নানা খবর মিডিয়া গরম করে ফেলে৷

Cricket T20 World Cup 2021 | Sri Lanka v Bangladesch
ছবি: Alex Davidson/Getty Images

বিশেষ করে ধোনি-শেবাগ বিরোধ নিয়ে পারলে রূপকথাও লিখে ফেলে৷ স্কোয়াডে ছিলেন শেবাগ৷ দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডও গিয়েছিলেন৷ কিন্তু হঠাৎ সার্জারির কথা বলে অনুশীলন ছেড়ে যান৷ ভারতীয় পত্র-পত্রিকা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মুখরোচক সব গল্প ঠেকাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে পুরো দল নিয়ে হাজির হন অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি৷ জানিয়ে যান, দলের ভেতর কোনো সমস্যা নেই৷ কিন্তু সমস্যা যে ছিল সেটা ঠিক প্রকাশ পায় সুপার এইটে টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্সে৷ ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটা ম্যাচও জেতেনি টিম ইন্ডিয়া৷ প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নদের তাই ফিরতে হয় খালি হাতে৷

স্মৃতিচারণের কারণ একটাই, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে ঘটনাটা মেলানো৷ যেখানে ক্রিকেট যেন গৌণ হয়ে গেছে৷ সবাই ব্যস্ত কথা দিয়ে জিততে৷ ক্রিকেটার, কর্মকর্তা, দর্শক এমনকি ক্রিকেটারের পরিবারের লোকজনও নেমে পড়েছে লড়াইয়ে৷ নইলে সাকিব আল হাসানের স্ত্রী শিশির কেন স্ট্যাটাস দিয়ে মাশরাফি-তামিমকে খোঁচা দেবেন৷ তিনি নাম না বললেও পুরো দেশ জানে ২০১৯ বিশ্বকাপে স্পিডস্টার আর বেস্ট ওপেনিং জুটির পর বিস্ময় চিহ্ন দিয়ে শিশির কী বুঝিয়েছেন৷ মুশফিকের কারণে আয়নায় মুখ দেখাদেখিতে ব্যস্ত পুরো দেশ, বিসিবি সভাপতিকে ইঙ্গিত করে মাহমুদউল্লাহ জবাব দিচ্ছেন আর সাকিব স্বপ্ন বারবার বদলায় না বলে সাংবাদিকের করা প্রশ্নকে হেয় করছেন৷ অথচ এই তিন ক্রিকেটার সেই ছয় জনের অংশ যারা সবগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন৷ এর বাইরে রোহিত শর্মা, ক্রিস গেইল আর ডোয়াইন ব্রাভোর আছে এমন সাফল্য৷ প্রশ্ন হলো এমন কেন করছেন ক্রিকেটাররা?

২১ বছর ক্রীড়া সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ক্রিকেট খেলাটা ক্রিকেটার ও বোর্ডের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার যতটা হয়েছে, ততটা কাজ হয়নি খেলাটার সংস্কৃতি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে৷ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নড়বড়ে, ক্রিকেটের অবকাঠামো নেই ঠিকঠাক, ক্রিকেটাররা কীভাবে মিডিয়ার মুখোমুখি হবেন, বিরূপ সময়ে কী করতে হবে, এসব নিয়ে সেভাবে কাজ হয় না বয়সভিত্তিক কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে৷ সংবাদ সম্মেলন সামলানোও এখনকার সময়ে ক্রিকেটারদের বড় একটা দায়িত্ব৷ সেখানে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাজে হারের পর প্রেসের সামনে পাঠানো হয় নাসুম আহমেদকে যিনি কিনা অর্ন্তমুখী, যিনি ঠিকঠাক কথাই বলতে পারেনা৷ তবে সবচেয়ে মূল্যবান কথাটা মুখ ফসকে তিনিই বলে ফেলেছেন, ‘‘আমাদের দিয়ে হচ্ছে না৷''

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে নুরুল হাসান সোহানকে পাঠানো হলো, যার ম্যাচ খেলা নিয়েই সংশয় ইনজুরির কারণে৷ এসবের একটাই কারণ, সিনিয়ররা ওলট-পালট কথা বলে পরিস্থিতি এমন করে রেখেছেন যে আসরের বাকিটা সময় তারা সংবাদ সম্মেলন এড়াতে পারলেই যেন বাঁচেন৷

বিসিবিও বিষয়টিকে কখনোই খুব গুরুত্ব দেয়নি৷ সাকিব যখন প্রথমবার অধিনায়ক হয়েছিল, তখন তার অধীনেই বাংলাদেশ নিজের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলে৷ কোনো এক ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে আপনার ভাবনা কী? সাকিবের জবাব, জিততে চাই!! এমন উত্তরে হয়ত ব্যাকরণগতভাবে দোষের কিছু নেই৷ কিন্তু এই সাধারণ প্রশ্নেও অধিনায়ককে তো প্রয়োজনে জানা কথাই বলতে হবে বারবার৷ ফলে সাকিবের ওই উত্তর কিন্তু একঅর্থে মিডিয়ার সঙ্গে বেয়াদবি৷ ২০১১ থেকে আজ ২০২১৷ এক দশক পরও চিত্রটার উন্নতি হয়নি কোনো৷ ক্রিকেটাররা সিনিয়র হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ক্রিকেট মাঠ ও মাঠের বাইরের সংস্কৃতি তৈরিতে কতটা অবদান রেখেছেন সে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে৷

রাকিবুল হাসান, ক্রীড়া সাংবাদিকছবি: Rakibul Hasan

সাংবাদিক আর ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আরেকটা বড় সংকট৷ বাংলাদেশের ক্রিকেটের খবরগুলো বেশিরভাগই হয় ব্যক্তি সম্পর্কের জেরে৷ কখনো কখনো সাংবাদিক হয়েও অযাচিতভাবে প্রোমোট করা হয় ক্রিকেটারদের৷ যেহেতু ক্রিকেটের খবরের বাজারমূল্য বেশি, ফলে মিডিয়াগুলোও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্রিকেটমুখী৷ ব্যক্তি সম্পর্কের কারণে ড্রেসিংরুমের খবর অবলীলায় বাইরে আসে৷ এমনকি বিসিবি সভাপতি একবার বোর্ড মিটিংয়ে পরিচালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করেছিলেন৷ কারণ ভেতরের খবর মিডিয়ায় চলে আসে৷ এই সব ইনফরমাল সম্পর্ক ফরমাল বিষয়গুলো ঠিক করার পথে বড় এক অন্তরায়৷

ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটা অংশ৷ বিনোদনের অন্য মাধ্যমগুলো দুর্বল হয়ে পড়াতেই এই মাধ্যমে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সবাই৷ নাসির-সাব্বির-বিজয়দের হারিয়ে যাওয়ার পেছনেও কিন্তু কারণ একটাই৷ অনেক আলোতে চোখে অন্ধকার দেখা৷ সেই সমস্যাগুলো সামলে দেশের ক্রিকেটকে উঁচুতে তুলেছেন মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, একশব্দে পঞ্চপান্ডব৷ কিন্তু সেখানেও এখন বিভেদের সুর৷ সাকিব-তামিম বন্ধু থেকে শত্রু হয়েছেন কিনা, টি-টোয়েন্টি দলে মাহমুদউল্লাহ চাননি তামিমকে এমন সব বিষয়ে বিব্রত পুরো দেশ৷ আসল ক্ষতিটা হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের৷ আর বেদনায় নীল হচ্ছে ভক্তদের হৃদয়৷ সেই কষ্টটা কি আসলেই প্রাপ্য? যাদেরকে মাথায় করে রাখা হয় তারা নিজেদের সেখানেই রাখুন৷

ভুলে যাবেন না দায়িত্বটা আপনারদেরই বেশি!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ