টেস্ট ক্রিকেটটা বাংলাদেশের জন্য এক অত্যন্ত সুন্দরীর একতরফা প্রেমে পড়ার মতো৷ প্রণয়কুসুমে হৃদয় ভরপুর, কিন্ত অন্যপক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া দূরে থাক, প্রণয়ী হিসেবে অনুমোদন পাওয়াই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
টেস্ট ক্রিকেটের মান নির্ণয়ের যে সাম্প্রতিক হিসাব কিতাব চলছে সেখানে আমাদের সংগ্রহ আপাতত শূন্য৷
ধারাভাষ্যকারদের ভাষায় এখনো আমরা হিসাবের খাতাটাই খুলতে পারিনি৷ আর আনকোরা অনভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কাছে দুই টেস্টের সিরিজের দুটিতে হারার সাথে সাথে দীর্ঘমেয়াদী ক্রিকেটের এই সংস্করণে আমাদের আদৌ কোনো মান আছে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে আমাদের ক্রিকেটপিয়াসী মন৷ অথচ এ সিরিজের আগে আগে প্রেক্ষাপটটা ছিল সাফল্য সম্ভাবনায় টইটুম্বুর৷ সিরিজের আগে তিন ম্যাচের একদিবসী সিরিজ গেছে, আমাদের পক্ষে বিশালাকার সব জয়ের দামামা বাজিয়ে৷ সফরকারীদের দুর্বলতার আবরণ উন্মোচিত ছিল সূর্যালোকে৷ ঘরের মাঠে আমাদের প্রাবল্য ছিল নানা মাত্রায় সুবিদিত৷ আশা ছিল স্বপক্ষীয় সুবিধাদি ও অন্যপক্ষের অসুবিধাদির আলোকে সিরিজটা আমরা সহজেই তুলে নেবো, ওয়নডেতে যেমন নিয়েছি৷ কিন্তু হলোনা৷ কেন হলোনা, এই নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি৷ মাথা ঘামানোর প্রথম পর্বে খেলাটি এবং খেলা পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট মহল নিজেদের মধ্যে এক ধরনের পারস্পরিক দায় চাপানোর একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন বা তুলছেন৷ তবে এটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া৷ আশাহত ক্রিকেটামোদী জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হৃদয়ে দেখতে চাইছে ঘটনাটা কী হলো বা কেন হচ্ছে৷ ভাবনার সারসংক্ষেপ এমন যে, সাদা বলে তো আমাদের কিছু কিছু হচ্ছে, কিন্তু লাল বলে একেবারে কিছুই হচ্ছে না কেন? সাদা বলে বিশ্বসেরা দলগুলো আমাদের হিসাব করে, পাত্তা দেয়, আর লাল বলে দুগ্ধপোষ্য আফগানিস্তান, বিকল্প দল নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘরের উঠোনে হারিয়ে দিয়ে যায়৷ এমন হলে আক্ষেপের, হতাশার একটি প্রবল শৈত্যপ্রবাহ আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে বয়ে যাওয়া স্বাভাবিক৷ তাই যাচ্ছে৷
আশা জাগিয়েও জিততে না পারা ছয় টেস্ট
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ১২১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে মাত্র ১৪টিতে জিতেছে৷ আরো কয়েকটি ম্যাচে জেতার আশা জাগিয়ে তুলেছিল টাইগাররা৷ এমন ছয়টি টেস্টের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
মুলতান টেস্ট, ২০০৩
বাংলাদেশের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদকে চোখ মুছতে মুছতে মাঠ ছাড়তে দেখা যাচ্ছে৷ কারণ, ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের মুলতানে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচ জেতার ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ ২৬১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা পাকিস্তানের সংগ্রহ একটা সময় ছিল ৮ উইকেটে ২০৫৷ কিন্তু মাঠে থাকা ইনজামাম বলতে গেলে প্রায় একাই সেদিন বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন৷ ১৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি৷ পাকিস্তান জিতেছিল এক উইকেটে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
ফতুল্লা টেস্ট, ২০০৬
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে শাহরিয়ার নাফীসের শতকের (১৩৮) সুবাদে ৪২৭ রান করে বাংলাদেশ৷ এরপর রফিকের অসাধারণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রানে অলআউট হয়ে যায়৷ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৮ রানে অলআউট হওয়ায় বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৩০৭ রানের লক্ষ্য দেয়৷ আবারও রফিকের কারণে ২৭৭ রানে ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার৷ কিন্তু মাঠে তখনো ছিলেন রিকি পন্টিং৷ অপরাজিত ১১৮ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেন তিনি৷
ছবি: Hamish Blair/Getty Images
চট্টগ্রাম টেস্ট, অক্টোবর ২০০৮
প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানে বাংলাদেশের ৪ উইকেট পড়ে গেলেও মুশফিকুর রহিম ও মেহরাব জুনিয়রের ব্যাটিংয়ের কারণে ২৪৫ রান তুলেছিল টাইগাররা৷ এরপর সাকিব ৩৬ রানে সাত উইকেট নিয়ে কিউইদের ১৭১ রানে আটকে দিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৪২ রান তুললে মোট ৩১৭ রানের টার্গেট পায় নিউজিল্যান্ড৷ ওপেনার রেডমন্ডের ৭৯ আর চার নম্বরে নামা ড্যানিয়েল ভেট্টোরির ৭৬ রানের সুবাদে তিন উইকেটে জিতে যায় কিউইরা৷
ছবি: Farjana Khan Godhuly/AFP/Getty Images
ঢাকা টেস্ট, ফেব্রুয়ারি ২০০৮
মর্কেল আর স্টেইনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ৷ তবে শাহাদাত হোসেনের (২৭ রানে ছয় উইকেট) কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ১৭০ রানেই অলআউট হয়ে যায়৷ এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৮২ রানে অলআউট হয়ে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে মাত্র ২০৫ রানের টার্গেট দিতে সমর্থ হয় টাইগাররা৷ স্মিথ ও হাশিম আমলার ব্যাটিংয়ে ভর করে পাঁচ উইকেটের জয় পায় প্রোটিয়ারা৷
ছবি: Duif du Toit/Gallo Images/Getty Images
চট্টগ্রাম টেস্ট, ২০১৬
সাব্বিরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জো রুট৷ পঞ্চম দিনে জেতার জন্য ৩৩ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের৷ ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ২ উইকেট৷ বাংলাদেশ হেরে যায় ২২ রানে৷ তাই ৬৪ রানে অপরাজিত থাকা সাব্বিরকে হতাশা ঘিরে ধরেছিল৷ প্রথম ইনিংসে মিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে (৮০ রানে ৬ উইকেট) ইংল্যান্ড ২৯৩ রান তুলতে সমর্থ হয়৷ জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ২৪৮ রান৷ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রান করে ইংলিশরা৷ বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৬৩ রানে৷
ছবি: Getty Images/G. Copley
ঢাকা টেস্ট, ২০২১
প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৯ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাদেরকে ১১৭ রানে বেঁধে ফেলে টেস্ট জয়ের আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ৷ দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ২৩১ রানের টার্গেট পেয়েছিল টাইগাররা৷ কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২১৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ৷ ফলে ১৭ রানে হেরে যায় টাইগাররা৷ এটাই টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে পরাজয়৷ ৯ উইকেট পাওয়ায় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন রাহকিম কর্নওয়াল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
বলা হচ্ছে এবং আমরা যুক্তি মেনে বুঝতে পারছি যে, স্বল্প ও দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট নিয়ে আমাদের চর্চাগত বা ঐতিহ্য ও অভ্যাসবশত যে পার্থক্য, তারই প্রতিফলন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুই ধরনের খেলায় আমাদের অগ্রধাবনের ছবিতে৷ আরেকটু খোলাসা করে বললে বলতে হয় যে, সীমিত ওভারের খেলা ও টেস্ট ক্রিকেটের উৎসে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের যে মনোনিবেশ ও আন্তরিকতাগত তফাৎ, তারই ফলাফল আমাদেরকে আন্তর্জাতিক হিসাবের খাতায় প্রত্যেক বিভাগে অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে৷ আমরা অধিকতর প্রতিযোগী আবহে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের চর্চা করি৷ ফলে এই চরিত্রের ক্রিকেটে কিছুটা মর্যাদার জায়গায় পৌঁছেছি৷ অগ্রসারির দলগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচ-জয়, সিরিজ-জয় আছে৷ বিশ্বকাপেও আমাদের দাগ কাটার মতো প্রদর্শন আছে৷ সম্প্রতি আমাদের যুবারা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে বিশ্বমঞ্চে আমাদের প্রবলতর সম্ভাবনার নগদ আকুতি জানিয়ে রেখেছে৷ এসবই আমাদের চর্চাগত ঐতিহ্য এবং প্রসারিত নিবেদনের ফল৷ আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসেবে আমরা সেই ১৯৭৯ থেকে আইসিসি ট্রফি খেলেছি৷ ১৯৯৭-এ আইসিসি ট্রফি জয়ের পর থেকে খেলছি বিশ্বকাপ৷ সেই হিসেবে আমাদের ওয়ানডে খেলার বয়স চল্লিশ বছর৷ প্রকারান্তরে টেস্ট খেলার বয়স সেটার অর্ধেক৷ এই সময়ের পার্থক্য অভিজ্ঞতার একটি দিক নির্দেশ করে৷ তবে সেটা টেস্টে পিছিয়ে থাকার মূখ্য কারণ মোটেই নয়৷ সেটাকে মূখ্য কারণ বললে আফগানিস্তান একটি প্রশ্ন হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়৷ সে প্রশ্নের জবাব আপাতত দেয়া যাচ্ছে না৷
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে অপ্রত্যাশিতভাবে টেস্ট সিরিজ হারার পর আমাদের ক্রিকেট আলোচনায় টেস্ট ক্রিকেটের হতশ্রী অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ বিরতির টনক নড়া আবার ফিরে এসেছে৷ ইতোপূর্বে টনক নড়া সময়গুলোতে আমরা মোটা দাগে যেসব কারণ নির্ণয় করে এসেছি, সেগুলো আবার নতুন আলোড়নে ফিরে আসছে৷ যেমন টেস্ট ক্রিকেট কম খেলা এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘপরিসরের খেলাগুলোর পিছনে, আয়োজনে এবং খেলায়, পেশাদারিত্বের অভাব৷ প্রতিযোগী দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘনত্বের অভাব, প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দলে ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে অনীহা, ইত্যাদি ইত্যাদি৷ উইকেটের চারিত্রিক বৈচিত্র্য, পারিশ্রমিক এবং অঞ্চলে অঞ্চলে দলীয় চেতনার ঐতিহ্যনির্মাণের তাড়নাহীনতা বা প্রণোদনার অভাবসহ অন্যান্য প্রসঙ্গও মাঝে মাঝে আলোচিত হয়৷ অসুবিধাগুলো ডিঙ্গিয়ে আসার সম্ভাব্য সুরাহাও আলোচনায় আসে৷ কিন্তু অবসর হয় না সংশ্লিষ্ট কারো উদ্যোগী হয়ে সমস্যা নিরসনের৷ ফলে সমস্যাগুলো নিয়েই চলে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আমাদের খুঁড়িয়ে চলা৷
আমাদের বিশ বছরের টেস্ট জীবনে আহরণের ছবিটি বড়ই বিবর্ণ৷ অন্তর্জালে বোতাম টিপলেই ছবিটি পাওয়া যায় বলে পরিসংখ্যানের বিস্তৃতি দিয়ে সময় নষ্ট করছি না৷ এ পর্যন্ত যতগুলো টেস্ট আমরা খেলেছি তার দশমাংশ জিতেছি, ড্র করার পরিমান একই অংকে আর আশি শতাংশ পরাজয়ের খাতে৷ এই অন্ধকারের দিকে হেলানো চিত্র বলে দেয় আমরা এ খেলার শারীরিক, মানসিক এবং কারিগরি কৌশলের দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের চাইতে বহুধাপ পিছিয়ে আছি৷ কেবলমাত্র ঐতিহ্যগত ব্যবধান বা পিছনের দীর্ঘসূত্রী ইতিহাসলব্ধ অভিজ্ঞতার ব্যবধানই কার্যকারণ নয়৷ ধারাবাহিক ব্যর্থতা কোনো প্রণোদনার উন্মেষ ঘটায় না৷
যেসব টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা৷ তার মধ্যে জয় এসেছে ২১টিতে৷ চলুন জেনে নিই সেই টেস্টগুলোর কথা৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
আগস্ট ৩০-সেপ্টেম্বর ০৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
পরপর ২ টেস্ট পাকিস্তানকে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ৷ রাওয়ালপিন্ডিতে বাবর আজমদের দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেন শান্তরা৷ লিটনের সেঞ্চুরি, মিরাজের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট, হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখে৷ এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মধ্য সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
আগস্ট ২১-২৫, ২০২৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪তম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। টেস্টে নবম দল হিসেবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম জয়। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। পাকিস্তানের ২য় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১, বাংলাদেশ:৩১০ ও ৩৩৮৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
জুন ১৪-১৮ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
মিরপুরে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ৷ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের তিন নম্বরে আছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৮২ রানে অল-আউট হয়। পালটা ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ ইনিংসে আফগানিস্তান অল-আউট হয় ১১৫ রানে।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
এপ্রিল ৩-৭ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা৷ আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংসে ২১৪ এবং ২য় ইনিংসে ২৯২ করে৷ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৬৯ এবং ২য় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৮ রান করে ৭ উইকেটের জয় পায়৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
জানুয়ারি ১-৫ (২০২২), প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটেই এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মুমিনুলবাহিনী।
ছবি: Marty Melville/Photospor/AP/picture alliance
জুলাই ৭-১১ (২০২০) প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবোয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে। এই জয়ের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক (২০৩) আর মুমিনুলের শতকে (১৩২) ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় পায়৷ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবোয়ে ২৬৫ রান করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ছয় উইকেটে ৫৬০ রান তোলে৷ পরের ইনিংসে জিম্বাবোয়ে ১৮৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ৩০-ডিসেম্বর ২, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানো ও ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অনির্বচনীয় দুটি স্বাদ দল পেল একদিনেই৷ দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়৷ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ১১৭ রানে ১২ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি৷ ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ম্যান অব দা সিরিজ সাকিব আল হাসান৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
নভেম্বর ২২-২৪, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রতিপক্ষকে দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম বলে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ৷ আড়াই দিনে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা৷ সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে৷ এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়৷ নাঈম হাসান প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট৷ দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পেয়েছেন ৬ উইকেট৷ মুমিনুল হক পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ১১-১৫, ২০১৮ প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সিরিজ ১-১ ড্র৷ ৪৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ে থামে ২২৪ রানে৷ ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ৷ দ্বিশত হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম৷ সিরিজ সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
জানুয়ারি ৬-১০, ২০০৫, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী
টাইগাররা প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রামে৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান তোলে স্বাগতিকরা৷ আর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে৷ প্রথম ইনিংসে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জুলাই ৯-১৩, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী
দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই৷ কিংসটাউনে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারায় টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
জুলাই ১৭-২০, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্টইন্ডিজ: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল সাফল্যে ঠাসা৷ দ্বিতীয় টেস্টে সেন্ট জর্জেসে স্বাগতিকদের হারায় টাইগাররা, সেবার জিতেছিল চার উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
এপ্রিল ২৫-২৯, ২০১৩, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী
জিম্বাবোয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের আবার ‘বধ’ করে টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Njikizana
অক্টোবর ২৫-২৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়৷ তিন দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে শুরুতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান করে জিম্বাবোয়ে৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৪৷ অন্যদিকে, প্রথম ইনিংসে ২৫৪ আর দ্বিতীয় ইনংসে ৭ উইকেটে ১০৭ রান তুলে জিতে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ৩-৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী
খুলনায় জিম্বাবোয়েকে হারায় বাংলাদেশ৷ সেই টেস্ট পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়ালেও শেষমেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবোয়ে৷ ফলাফল স্বাগতিকদের ১৬২ রানের জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ১২-১৬, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী
আবারো চট্টগ্রামে জিম্বাবোয়েকে হারায় টাইগাররা৷ সেবার ব্যবধান ছিল ১৮৬ রানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
অক্টোবর ২৮-৩০, ২০১৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জয় এটি৷ ঢাকায় ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
মার্চ ১৫-১৯, ২০১৭, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
একদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে জয়, অন্যদিকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়-দুই দিক দিয়েই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটি৷ পঞ্চম দিনে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷ ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
আগস্ট ২৭-৩০, ২০১৭, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে৷ এটা ছিল সাকিব ও তামিমের ৫০তম টেস্ট। সাকিব মোট ১০ উইকেট নিয়ে এবং তামিম দুই ইনিংসেই অর্ধশত করে স্মরণীয় করে রাখলেন এই টেস্টকে৷ ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান৷ দ্রষ্টব্য: ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
21 ছবি1 | 21
সাম্প্রতিক টেস্ট দুটোর কথাতেই আসি৷ চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দুটো ম্যাচেই আমরা কোনো না কোনো সময়ে সম্ভাব্য জয়ের ইঙ্গিতবহ সময়ের মুখোমুখি হয়েছিলাম৷ কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারিনি৷ সিরিজ-পূর্ব সময়ে আমরা প্রবলতর বা শ্রেয়তর বিবেচিত ছিলাম৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল সময়ের সদ্ব্যবহার প্রতিপক্ষ আমাদের চাইতে ভালো করেছে৷ মনোবল ও দলীয় সংহতির দাপুটে ব্যবহারে আমাদেরকে পরাভূত করেছে৷ আমাদের একটি ‘দরদী বাহানা’ হতে পারে সাকিবের ইনজুরি ও অনুপস্থিতি৷ কিন্তু দলীয় খেলায় একজনের দোহাই দেয়া লজ্জাস্কর এবং সেটাকে অন্যতম কারণ হিসেবে ধরেও যদি নেই, তবে বলবো সাকিব না থাকার যে সুযোগ, সেটা সফরকারীরা খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেছে৷ যে-কোনো সুযোগ কাজে লাগানোটাই টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক, আমরা সেখানে পিছিয়ে ছিলাম৷ পরস্পরের উপর নির্ভরশীলতার বাইরে গিয়ে, অধিনায়ক ও তার কৌশলের উপর ষোলোআনা আস্থা না রেখে আমরা দৈবের উপর, উইকেটের সমর্থনের উপর বেশি নিভর্র করেছি এবং ঠকেছি৷ প্রতিপক্ষ দলীয় সংহতিতে প্রবলতর ছিল, ওরা জিতেছে৷ লড়াইয়ে পরিকল্পনা এবং প্রতি-পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী ক্রিকেটের প্রাধান্য বিস্তারের চাবিকাঠি৷ ওরা সে চাবিকাঠি যথাযথ প্রয়োগ করে জিতেছে৷ আমরা পারিনি৷ না পারার কারণ পরাজয়ের ধরনে প্রকাশ্যে এসেছে৷
ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস আধুনিক ক্রিকেটের এক অপরিহার্য্ অংশ৷ এই সুযোগ ব্যবহারের তৎপরতায়ও আমরা এই সিরিজে পিছিয়ে ছিলাম, আমাদের ভুগতে হয়েছে৷ এসব ক্ষেত্র সংশ্লিষ্টজনার আত্মবিশ্বাস বা খেলানিবিষ্টতার অভাবকেই প্রকাশ্য করে৷ এটাকেও দলীয় সংহতির দুর্বলতাই বলবো৷
ওয়ানডে সিরিজে তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের ধারাবাহিকতার অভিজ্ঞ উপস্থিতি এবং দুই দলের সীমিত ওভারের খেলার উপর অর্জিত কারিগরি নিয়ন্ত্রণের ফারাক দলীয় কাঠামোগত অসঙ্গতি লুকাতে পেরেছিল বাংলাদেশ৷ টেস্টের পরিবর্তিত বাংলাদেশ সেই দলীয় চেতনা সাকিব, মাহমুদুল্লাহর অনুপস্থিতি এবং দল নিয়ন্ত্রণ বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অসফলতার কারণে কার্যকর করতে পারেনি৷ ফলে ফাটলগুলো ক্ষতিকর চেহারা নিয়ে মুখ ভাসায়, আমরা আশাহত হই৷ প্রতিপক্ষ এই সূত্রে তাদের লড়াকু উদ্যোগের সফল প্রয়োগে বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে৷ আমাদের প্রধান অস্ত্রগুলো এককভাবে অথবা একে অপরের পরিপূরকভাবে কাজ করেনি, ওদের করেছে৷ আর সুসংহত পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী ইউনিট না হয়ে ওঠার জন্যে সিরিজটা টেস্ট ব্যর্থতার ধারাবাহিকতার মিছিলটাই দীর্ঘ করেছে৷ ব্যক্তি খেলোয়াড়দের প্রত্যাশাগত আচরণের ভালোমন্দ বিবেচনায় না গিয়ে সামগ্রিকভাবে কথাটা বলছি৷ সে-সব অনেক হয়েছে৷ আমরা একটু অন্যভাবেই নৈরাশ্যটাকে দেখি৷
সুমনের চোখে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট একাদশ
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ গত ১০ নভেম্বর উনিশ বছর পূর্ণ করে বিশে পা রেখেছে৷ সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের গড়া বাংলাদেশের সেরা টেস্ট একাদশে কারা এবং কেন স্থান পেয়েছেন তা জানতে দেখুন আমাদের এই ছবিঘর৷
ছবি: AP
মাশরাফি
সেরা একাদশের নেতৃত্ব নির্দ্বিধায় মাশরাফি বিন মর্তুজার হাতে তুলে দিয়ে সুমন বলেছেন, ‘‘এত জোরে বল করতে আমি দেশের খুব কম বোলারকেই দেখেছি৷ সুইংও ছিল৷ অত্যন্ত বুদ্ধিমান বোলার৷’’
ছবি: AP
তামিম
‘সেরা পারফর্মার‘ হিসেবেই ওপেনিংয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তামিম ইকবাল৷ লর্ডসে সেঞ্চুরি করা এই খেলোয়াড়কে একাদশে রাখার পেছনে দেশ ও দেশের বাইরে পারফর্ম্যান্সকেই বড় করে দেখেছেন হাবিবুল বাশার৷ তিনি বলেন, ‘‘পেস ও স্পিন সমান ভালো খেলে৷ সবচেয়ে বড় কথা, ওর ব্যাটিং অন্য ব্যাটসম্যানদেরও আত্মবিশ্বাস দেয়৷ ওকে এক নম্বরে রাখতে তাই একদমই সময় লাগেনি৷’’
ছবি: picture-alliance/A. Salahuddin
জাভেদ ওমর
৪০টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা এবং টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হাবুডুবু খাওয়ার সময়ে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকার মানসিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে জাভেভ ওমরকে দলে রেখেছেন সুমন৷
ছবি: Shamsul Hoque Tanku
মুমিনুল
তিন নম্বর পজিশনে স্থান পেয়েছেন তিনি৷ সুমন বলছেন, মুমিনুলকে বাছতে কষ্ট হয়নি তার৷ তবে এই পজিশনে মুমিনুলকে বাদ দিলে নিজেকে জায়গা দিতেন তিনি৷ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুলকে একাদশে রাখার ব্যাখ্যায় সুমন বলছেন, ‘‘রান করার দক্ষতা অনেক এবং ব্যাকফুটে শক্তিশালী৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
বুলবুল
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে একাদশে রেখে সুমন বলছেন, ‘‘বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছুই দেওয়ার ছিল তাঁর৷’’ মাত্র ১৩ টেস্ট ক্যারিয়ারেও বুলবুল সর্বকালের সেরা একাদশে থাকার মতো ঝলক দেখিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করেন হাবিবুল বাশার সুমন৷
ছবি: Shamsul Hoque Tanku
আকরাম খান
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক আকরাম খানকে সেরা একাদশে জায়গা দিয়ে সুমন বলছেন, ‘‘যে-কোনো বোলিং আক্রমণকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা ছিল উনার৷ পেস ও স্পিন খেলার সামর্থ্যের দিক থেকে অত্যন্ত উঁচু দরের ব্যাটসম্যান তিনি৷’’
ছবি: DW/Z. Chowdhury
সাকিব
অলরাউন্ডার হিসেবে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান৷ সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়ও তিনি৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP/Getty Images
মুশফিক
সুমন বলছেন, মুশফিক অলরাউন্ডার, কারণ, তিনি উইকেটের পেছনেও দাঁড়াবেন৷ বিশেষজ্ঞ উইকেটরক্ষক হিসেবে খালেদ মাসুদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও মুশফিককে দিয়ে কিপিং করালে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান খেলাতে পারার চিন্তা থেকেই তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন সুমন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
রফিক
এই সি্পন বোলারকে একাদশে রেখে সুমন বলছেন, ‘‘রফিক আমার দলে সব সময়ই থাকবে৷ আমি অধিনায়ক থাকাকালে সে আমাকে খুব কমই বঞ্চিত করেছে৷ রান আটকানোর পাশাপাশি উইকেট তুলে নেওয়ায় ওর চেয়ে ভালো আর কেউ নয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
শাহাদাত
ভীতিকর পেসার হিসেবে একাদশে শাহাদাত হোসেনকে রেখে সুমন বলছেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ক যে রকম আক্রমণাত্মক বোলার চায়, শাহাদাত সে রকমই একজন৷ সত্যিকারের টেস্ট বোলার৷’’
ছবি: AP
মুস্তাফিজ
টেস্ট ক্যারিয়ারে এখনো বলার মতো কিছু না করলেও মুস্তাফিজকে যে-কোনো উইকেটে উইকেট নেওয়ার মতো বোলার বলেই মনে করেন সুমন৷ এজন্য তাঁর সেরা টেস্ট একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তরুণ এই বোলার৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
11 ছবি1 | 11
খেলাটা তো দলীয়, দলকে নিয়েই কথা বলি৷ দলের ভালো-মন্দ প্রকৃত প্রস্তাবে এর আদলটা আরো বৃহত্তর পরিসরে সুপ্ত৷ দল গঠন প্রক্রিয়া, কারিগরি বা কৌশলগত নীতি নির্ধারণ, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট সকল মহলের পারষ্পরিক সংযোগের মসৃণতা ছাড়া সফল দল হয় না৷ সফল বলতে শুধু জেতার কথা হচ্ছে না, হারজিতের সীমানা ছাড়িয়ে দলের ভিতর সর্বাবস্থায় জেতার মেজাজটা উপস্থিত থাকার ব্যাপারটা সাফল্যের সাথে জড়িত৷ আমাদের টেস্টের শরীরে সেই চিহ্নটাই অনুপস্থিত৷ কেন অনুপস্থিত, সে খবরের খোঁজ, গবেষণা প্রয়োজন নেই৷ যে বৃহত্তর দলীয় সংহতির কথা বলেছিলাম, সেদিকে একটু চোখ ফেরালেই বিষয়টি বুঝতে পারি৷ সেখানে দেখি খেলোয়াড়ে, কারিগরি ও নীতি নির্ধারকে, নির্বাচকে যে যোগসূত্রের সাঁকো, সেটা নড়বড়ে, শিশুশিল্পীর আঁকা৷
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সিরিজ হারের পরপরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রধান সাংবাদিকদের যে বয়ান দেন, তাতে উপরের কথাগুলোই উঠে এসেছে৷ তিনি দল নির্বাচনে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি রণকৌশল নির্ধারণে তার নিয়ন্ত্রণহীনতার কথা বলেছেন৷ তার আগ্রাসী উষ্মার মুখে পড়েছেন নির্বাচক, কোচ, অধিনায়ক এবং অন্যান্য নিকট সহযোগীরা৷ এসব তিনি বলেছেন হারের কারণ হিসেবে৷ চরম অসহায়ত্বের সুর বেজেছে তার কথায়৷ মুদ্রা নিক্ষেপ থেকে নির্বাচন, খেলোয়াড়-বিন্যাশ সব কিছুতেই খণ্ড খণ্ড স্বেচ্ছাচারিতার ছবি উঠে এসেছে সভাপতির কথায়, যেগুলোর উপর তার নিয়ন্ত্রন নেই৷ অর্থাৎ, তাকে গ্রাহ্যের মধ্যে নেয়া হয় না৷ তিনি নিজের কথা বলেছেন, তবে আমরা ধরেই নিতে পরি, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের কথাই বলেছেন৷ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সমূহে এই যে উপর মহলে মতানৈক্য, এই আবহাওয়ায় আমরা একটি সুসংহত দল আশা করবো কী করে? মাঠের খেলোয়াড়দের শাপান্ত করে লাভ নেই৷ অসুখ অন্য জায়গায়৷ বোর্ড সভাপতি সেটা ভালো বোঝেন, আর বোঝেন বলেই বলেছেন, দৃঢ় স্বরেই বলেছেন, এভাবে চলতে দেয়া যায় না, বদলাতে হবে৷ খোল নলচে পাল্টে একটি সুনিয়ন্ত্রিত পরিচালনা ব্যবস্থায় আনতেই হবে নিজেদেরকে৷ এই বিষাদ আক্রান্ত সময়ে বোর্ড পরিচালকরাও অনেকেই নিজ নিজ ছাতা ধরেছেন৷ কেউ প্রশ্নের আঙুল তুলেছেন বিদেশি প্রশিক্ষকদের দিকে, কেউ ক্রিকেটারদের কমিটমেন্টের দিকে৷ মোদ্দা কথা, আমরা বুঝতে পারছি মাথাটার কলকব্জা সমানুপাতিক নয়, একটু মেরামতের অপেক্ষা রাখে৷ বোর্ড সভাপতি নড়েচড়ে বসার ইঙ্গিত দিয়েছন৷ সদাশয়ের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক৷ তিনি কামিয়াব হোন এই মেরামতির কাজে৷ সাফল্যের দাবিদার তাকে করুক সময়ে আর ব্যর্থতার দায় সবাই ভাগ করে নিন দুঃসময়ে৷ আমাদের ক্রিকেট-প্রেমের পালে অব্যাহত থাক দখিন হাওয়া৷
একটি প্রসঙ্গ টেনে শেষ করছি৷ প্রতিটি টেস্ট সিরিজ হারের পর আমাদেরকে আশার আলো দেখিয়ে ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণের কথা বলা হয়৷ দীর্ঘসূত্রী ক্রিকেটকে উন্নত করার জন্য আঞ্চলিক বা বিভাগীয় সংস্থাসমূহকে একেকটি মিনি বোর্ডের আদল দেয়ার কথা বলা হয়৷ বলা হয় সেই সব সার্বভৌম সংস্থার কল্যাণে ক্রিকেট উন্নতির প্রতিযোগী আবহ তৈরি হবে৷ মান বাড়বে খেলার, খেলোয়াড়ের, আম্পায়ার, নির্বাচক, কোচ, কিউরেটর, সবাই ঐ সব আঞ্চলিক সংস্থার চর্চাগত ফসল হিসেবে নিজেদেরকে অভিজ্ঞ করে কেন্দ্রে আসবে৷ খেলোয়াড়দের দলের প্রতি ‘সেন্স অব বিলঙ্গিং’ তৈরি হবে উন্নত প্রণোদনায়৷ এবারও সে-সব কথা হবে৷ বোর্ডের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এসব কথা আরো বেশি হবে৷ এমনতর প্রকল্প অনেক পড়ে আছে বোর্ডের মহাফেজখানায়৷ শেষমেশ অলিখিত ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণ প্রকল্পের আওতায় আঞ্চলিক সংগঠনের ফাইল লালফিতামুক্ত হয় না৷ আমরা আশায় থাকি, হবে৷ একটা সময় ছিল আমাদের ক্রমান্নতির প্রধান বাধা ছিল অর্থের জোগান৷ আল্লাহ'র কৃপায় আর ক্রিকেটারদের সাধনায় সে অসুবিধা গেছে৷ এখন সে জায়গায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের বাইরে আসায় সদিচ্ছার অভাব দখল নিয়েছে৷ মাননীয় বোর্ড সভাপতির ভাষ্যে ও আচরণে সেই সদিচ্ছার আগমনী ধ্বনিত হচ্ছে৷ তিনি মেরামতে নামছেন৷ সফল হোক তার মেরামত কর্মসূচি৷