‘‘এ খেলাকে যাঁরা প্রফেশন হিসেবে নিয়েছেন, তাঁদের টাকা আসবে-যাবে৷ কিন্তু প্যাশনটা থাকলে খেলার যে চরিত্র, সেটা আমরা মেইনটেইন করতে পারবো৷'' ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশ শততম টেস্টটি খেললো, জিতলোও৷ প্রথম টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন আপনি৷ তা সেটা কতটা গর্বের ব্যাপার ছিল?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা মাইলফলক৷ প্রথম টেস্টে অধিনায়কত্ব করা যে সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার৷ কারণ এটা ইতিহাসে থাকবে৷ সেদিক থেকে চিন্তা করলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি, এ জন্য যে সে সময় আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম৷ সেই সঙ্গে আরাকটা জিনিস ছিল – ভারতীয় টিমের অধিনায়ক ছিলেন পশ্চিমবাংলার৷ তিনি সৌরভ গাঙ্গুলি৷ ফলে দু'পার থেকে দু'জন ক্যাপ্টেনই বাঙালি ছিল৷
টেস্টের শুরুর দিনের কথা কি কিছু মনে আছে আপনার?
মনে না থাকার তো কিছু নেই৷ ওখানে প্রতিটি মোমেন্টই আমাদের জন্য নতুন ছিল৷ অনেক ইমোশোন জড়িত ছিল৷ আমরা টেনশনেও ছিলাম৷ কারণ জীবনে প্রথম টেস্ট খেলবো আর লংগার ভার্সনে আমাদের খুব একটা অভিজ্ঞতাও ছিল না৷ আমরা তখন খুব একটা লংগার ভার্সন খেলিনি৷ শুধু খেলোয়াড় বা টিমই না, সারাদেশই এক ধরনের উত্তেজনার মধ্যে ছিল৷ আমরা যখন মাঠে যাই, তখন দেখি যে তখনকার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাদের আগেই মাঠে গিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছেন৷ সবাই খুব এক্সসাইটেড ছিল৷ প্রতিটি টেস্টের আগে অফিসিয়াল ছবি তোলা হয়৷ অথচ আমাদের ছবি তোলা হয়নি৷ ফলে আমাদের কোনো অফিসিয়াল ফটোগ্রাফও নেই৷ ডেব্যু হলে প্লেয়ারদের ক্যাপ পরিয়ে দেয়া হয়৷ আমাদের সেটাও দেয়া হয়নি৷ এখন এগুলো দেখি আর মনে হয়, তখন আসলে এ সব ব্যাপারগুলো গোছানো ছিল না৷ ডিসঅর্গানাইজড বলব না, আসলে আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল না৷ তখন আমরা সবাই খুব এক্সসাইটেড ছিলাম, তাই এগুলো মিস করে গেছি৷
নাঈমুর রহমান দুর্জয়
আপনি কতটা নার্ভাস ছিলেন?
নার্ভাস বলব না, আসলে ইনএক্সপেরিয়েন্সড৷ তবে খানিকটা নার্ভাস হয়ত ছিলাম৷ প্রথম টেস্ট, টস জিতলে আগে কী করব? টসের সময় একটা ঘটনা ঘটেছিল৷ আগে তো টসের কয়েন ম্যাচ রেফারিরা তুলতেন না৷ আমি কয়েন ছোড়ার পর সৌরভ গাঙ্গুলি বললেন ‘হেড'৷ এবং পরে উনি কয়েন তুলে বললেন যে তিনি জিতে গেছেন৷ আমি তখন ম্যাচ রেফারিকে ডাকলাম৷ তিনি এসে কিন্তু বললেন যে, আসলে আমিই টসে জিতেছি৷ এরকম কিছু ছোট ছোট ঘটনা...৷ আমি নার্ভাস থাকলে তো আর ঐ ঘটনা ঘটত না৷ আমি হয়ত ছেড়ে দিতাম৷
আপনি নিজে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন৷ এটা কি আপনি প্রত্যাশা করেছিলেন?
প্রত্যাশা ছিল না৷ কারণ তখন ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ অনেক স্ট্রং ছিল৷ বলতে গেলে, তখন ইন্ডিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ ছিল৷ তার এগেইনস্টে ৬ উইকেট পাওয়াটা সত্যিই আমি প্রত্যাশা করিনি৷ ভালো বল করার ইচ্ছা ছিল, চেষ্টা ছিল৷ উইকেট পাওয়াটা তো লাকেরও ব্যাপার৷ তারপরও যে উইকেট পেয়েছিলাম, তাতে খুব খুশি হয়েছিলাম৷
সব মিলিয়ে আপনাদের দলীয় পারফরম্যান্স কেমন ছিল?
প্রথম টেস্ট হিসেবে আমি খারাপ বলব না৷ ফাস্ট ইনিংসে তো আমরা ভালোই করেছিলাম৷ সেকেন্ড ইনিংসে ব্যাটিং কল্যাপসটা এখনো হচ্ছে৷ ১৬-১৭ বছর পর এসেও সেকেন্ড ইনিংসটা কেমন যেন ধসে যাচ্ছে৷ ওই সময়কার ইন্ডিয়া টিমের এগেইনস্টে প্রথম টেস্টে ঐ সেকেন্ড ইনিংসটা ছাড়া সবকিছু ভালোই ছিল বলবো৷
বাংলাদেশ তো শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছে কলম্বোতে৷ এই ১৬ বছরে বাংলাদেশ কি যথেষ্ট টেস্ট খেলেছে?
আমি মনে করি শততম টেস্টটা আরো অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল৷ বিভিন্ন সময় আমরা বলেছি টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য৷ আমি মনে করি, ১৬ বা ১৭ বছর পর এসে আমরা অবশ্যই কম টেস্ট খেলেছি৷
এই সময়ে বাংলাদেশের যতটা উন্নতি হওয়া উচিত ছিল, ততটা কি হয়েছে?
যে পাঁচ কারণে টেস্টে পিছিয়ে বাংলাদেশ
টেস্ট ক্রিকিটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে৷ পরিসংখ্যানে এখনো বেশ পিছিয়ে সেদেশ৷ এখন পর্যন্ত খেলা ৯৯ টেস্টের মধ্যে হেরেছে ৭৬টিতে, জয় মাত্র আটটি৷ টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের পিছিয়ে থাকার পাঁচ কারণ জানাচ্ছে এএফপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
কম টেস্ট খেলা
বিশ্বের ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত ভারত এবং ইংল্যান্ড যেখানে বছরে ২০টির মতো টেস্ট ম্যাচ খেলে, বাংলাদেশ সেখানে গড়ে ছয়টি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়৷ মোটের উপর বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ আরো সীমিত৷ গত ১৭ বছরের মধ্যে ভারতের মাটিতে একবারই টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে টাইগাররা, তাও গতমাসে৷ ফলে টেস্ট খেলার সুযোগ কম থাকায় খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা
গত জুলাইয়ের ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার পরও ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফর করেছিল, যা টাইগারদের জন্য এক ইতিবাচক ব্যাপার৷ সেই সফর না হলে বাংলাদেশের অবস্থা পাকিস্তানের মতো হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট টিমের উপর হামলার পর সেদেশ সফর করেনি কোনো বিদেশি ক্রিকেট দল৷ তবে ইংল্যান্ড ঢাকা সফর করলেও নিরাপত্তার শঙ্কায় আগের বছর অস্ট্রেলিয়া সেদেশ সফর করেনি৷ আরো কয়েকটি দল সফর সীমিত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
খেলার মাঠের সংখ্যা কম
৫৫ হাজার বর্গ মাইল দেশের বাসিন্দা ১৬ কোটি মানুষ৷ আর শুধু ঢাকাতেই থাকেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ৷ দেশটিতে খেলার মাঠের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ঢাকাতে সাধারণ মানুষের খেলার মাঠ পাওয়া মুশকিল৷ ফলে তৈরি হচ্ছে না খেলোয়াড়৷ অবস্থা এমন যে, বর্তমান টেস্ট টিমে ঢাকার খেলোয়াড় শুধু একজন, তাসকিন আহমেদ৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ আয়োজনে দুর্বলতা
যদিও বাংলাদেশে চারদিনের দু’টি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, কিন্তু সেগুলো বেশ দুর্বল পর্যায়ের৷ নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক নেই, নেই প্রফেশনালিজমের ছোঁয়া৷ ফলে সেসব প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক মানেরতো হয়ই না, অনেকক্ষেত্রে হয়ে পড়ে একপাক্ষিক৷ দেখা যায়, সেসব টুর্নামেন্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানও পরের সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বোল্ড আউট হন দ্রুত৷ টেস্টের মান বাড়াতে গেলে এসব আয়োজনের মানও বাড়াতে হবে৷
ছবি: Getty Images
স্পিনার থাকলেও পেসারের অভাব
বাংলাদেশ দলে আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও টেস্ট জিততে ভালো মানের পেসারও প্রয়োজন৷ কিন্তু টিমে পেসারের ঘাটতি রয়ে গেছে৷ যারা সম্ভাবনা তৈরি করেছেন, যেমন মাশরাফি বিন মোর্তুজা, তারা ইনজুরির কবলে পড়েছেন৷ বর্তমানে দলে থাকা দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদও ইনজুরির কবলে পড়েছেন একাধিকবার৷ ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য টেস্টের জন্য পেসার তৈরিতে চেষ্টা করছে৷ তবে সেই চেষ্টার ফল এখনও পাওয়া যায়নি৷
ছবি: AP
5 ছবি1 | 5
উন্নতি হয়নি, এটা বলব না৷ তবে উন্নতি হওয়ার আরো জায়গা আছে৷ আমাদের ডোমেস্টিক ক্রিকেটে লংগার ভার্সনকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে৷ এটাকে আরো প্রতিযোগীতামূলক করলে আমরা আরো ভালো করবো৷ একটা টেস্ট প্লেয়িং জাতির যে ধরনের কালচার থাকা উচিত, সেটাকে আরো উন্নতি করা৷ প্লেয়ার প্রডিউস করার জন্য আমাদের অ্যাকাডেমিগুলোকে আরো তাগিদ দেয়া৷ আমরা যেহেতু বিভিন্ন দেশে গিয়ে টেস্ট খেলি, টেস্টের উইকেট একটু অন্যরকম হয়৷ ওয়ানডেতে পৃথিবীর যে কোনো দেশে গেলে একই রকম উইকেট পাওয়ার সম্ভবনা থাকে৷ কিন্তু টেস্টে যে দেশে খেলা হয়, তারা নিজেদের মতো উইকেট করার চেষ্টা করে৷ আমাদের বিভিন্ন ধরনের উইকেট বানিয়ে খেলার চেষ্টা করতে হবে এবং আমাদের প্লেয়ারদের স্কিল আরো ডেভেলপ করবে৷
আপনি তো সবসময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টেস্টকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন৷ সেটা কি আমরা দিচ্ছি ঠিকমতো?
এখনো না৷
কারণ কী?
আমার কাছে বাণিজ্যিক কারণটাই বেশি বলে মনে হয়৷ টি-টোয়েন্টি বা একদিনের ম্যাচে দর্শকদের আগ্রহ থাকে৷ স্পনসরদেরও আগ্রহ থাকে বেশি৷ যেহেতু আমরা ক্লাব বেসড ক্রিকেট খেলি, সেখানে ফ্র্যানচাইজি বা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে গিয়ে টি-টোয়েন্টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা৷ কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে, লংগার ভার্সন ভালো খেললে তবেই আমরা শর্ট ভার্সন ভালো খেলবো৷ টি-টোয়েন্টি ভালো খেললে কিন্তু লংগার ভার্সন ভালো খেলার স্কোপ নেই৷
আপনি তো ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকও৷ তাক্রিকেট নিয়ে বোর্ডের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, আপনি একজন বোর্ড পরিচালক হিসেবে কী মনে করেন, বোর্ড কি সে দায়িত্ব পালন করছে?
বোর্ড দায়িত্ব পালন করছে না, সেটা বলব না৷ তবে আরো কিছু এরিয়া আছে....এই যেগুলোর কথা বললাম...৷ আমাদের গ্রাউন্ড, ফেসিলিটি – সবকিছু মিলিয়ে আর একটু জোরে শোরে কাজ করা দরকার৷
ফিরে দেখলে এই ১০০টি টেস্টের মধ্যে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
অবশ্যই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড, সম্প্রতি আমরা যেটা জিতলাম৷
আপনাকে যদি একটি টিম করতে বলা হয়, যাঁরা এই ৯৯টি টেস্টে অংশ নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে থেকে৷ আপনি কাদের নেবেন দলে?
এটা আসলে চিন্তার বিষয়৷ হুট করে এমন একটা দল করতে গেলে কেউ বাদ পড়তে পারেন৷ তাই এই মুহূর্তে কারুর নাম বলতে পারবো না৷
যেসব টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা৷ তার মধ্যে জয় এসেছে ২১টিতে৷ চলুন জেনে নিই সেই টেস্টগুলোর কথা৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
আগস্ট ৩০-সেপ্টেম্বর ০৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
পরপর ২ টেস্ট পাকিস্তানকে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ৷ রাওয়ালপিন্ডিতে বাবর আজমদের দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেন শান্তরা৷ লিটনের সেঞ্চুরি, মিরাজের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট, হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখে৷ এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মধ্য সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
আগস্ট ২১-২৫, ২০২৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪তম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। টেস্টে নবম দল হিসেবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম জয়। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। পাকিস্তানের ২য় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১, বাংলাদেশ:৩১০ ও ৩৩৮৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
জুন ১৪-১৮ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
মিরপুরে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ৷ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের তিন নম্বরে আছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৮২ রানে অল-আউট হয়। পালটা ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ ইনিংসে আফগানিস্তান অল-আউট হয় ১১৫ রানে।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
এপ্রিল ৩-৭ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা৷ আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংসে ২১৪ এবং ২য় ইনিংসে ২৯২ করে৷ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৬৯ এবং ২য় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৮ রান করে ৭ উইকেটের জয় পায়৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
জানুয়ারি ১-৫ (২০২২), প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটেই এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মুমিনুলবাহিনী।
ছবি: Marty Melville/Photospor/AP/picture alliance
জুলাই ৭-১১ (২০২০) প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবোয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে। এই জয়ের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক (২০৩) আর মুমিনুলের শতকে (১৩২) ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় পায়৷ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবোয়ে ২৬৫ রান করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ছয় উইকেটে ৫৬০ রান তোলে৷ পরের ইনিংসে জিম্বাবোয়ে ১৮৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ৩০-ডিসেম্বর ২, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানো ও ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অনির্বচনীয় দুটি স্বাদ দল পেল একদিনেই৷ দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়৷ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ১১৭ রানে ১২ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি৷ ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ম্যান অব দা সিরিজ সাকিব আল হাসান৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
নভেম্বর ২২-২৪, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রতিপক্ষকে দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম বলে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ৷ আড়াই দিনে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা৷ সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে৷ এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়৷ নাঈম হাসান প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট৷ দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পেয়েছেন ৬ উইকেট৷ মুমিনুল হক পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ১১-১৫, ২০১৮ প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সিরিজ ১-১ ড্র৷ ৪৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ে থামে ২২৪ রানে৷ ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ৷ দ্বিশত হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম৷ সিরিজ সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
জানুয়ারি ৬-১০, ২০০৫, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী
টাইগাররা প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রামে৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান তোলে স্বাগতিকরা৷ আর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে৷ প্রথম ইনিংসে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জুলাই ৯-১৩, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী
দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই৷ কিংসটাউনে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারায় টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
জুলাই ১৭-২০, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্টইন্ডিজ: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল সাফল্যে ঠাসা৷ দ্বিতীয় টেস্টে সেন্ট জর্জেসে স্বাগতিকদের হারায় টাইগাররা, সেবার জিতেছিল চার উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
এপ্রিল ২৫-২৯, ২০১৩, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী
জিম্বাবোয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের আবার ‘বধ’ করে টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Njikizana
অক্টোবর ২৫-২৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়৷ তিন দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে শুরুতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান করে জিম্বাবোয়ে৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৪৷ অন্যদিকে, প্রথম ইনিংসে ২৫৪ আর দ্বিতীয় ইনংসে ৭ উইকেটে ১০৭ রান তুলে জিতে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ৩-৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী
খুলনায় জিম্বাবোয়েকে হারায় বাংলাদেশ৷ সেই টেস্ট পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়ালেও শেষমেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবোয়ে৷ ফলাফল স্বাগতিকদের ১৬২ রানের জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ১২-১৬, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী
আবারো চট্টগ্রামে জিম্বাবোয়েকে হারায় টাইগাররা৷ সেবার ব্যবধান ছিল ১৮৬ রানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
অক্টোবর ২৮-৩০, ২০১৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জয় এটি৷ ঢাকায় ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
মার্চ ১৫-১৯, ২০১৭, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
একদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে জয়, অন্যদিকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়-দুই দিক দিয়েই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটি৷ পঞ্চম দিনে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷ ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
আগস্ট ২৭-৩০, ২০১৭, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে৷ এটা ছিল সাকিব ও তামিমের ৫০তম টেস্ট। সাকিব মোট ১০ উইকেট নিয়ে এবং তামিম দুই ইনিংসেই অর্ধশত করে স্মরণীয় করে রাখলেন এই টেস্টকে৷ ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান৷ দ্রষ্টব্য: ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
21 ছবি1 | 21
এখন যাঁরা ক্রিকেট খেলছেন বা সামনে যাঁরা আসবেন, তাঁদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আমার পরামর্শ হলো – ক্রিকেট খেলাটা নট অনলি এ গেম৷ এটার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত৷ খেলাটাকে এনজয় যেমন করতে হবে, রেসপেক্টও করতে হবে তোমনই৷ দিন শেষে ক্রিকেট আমাদের সমাজেও অনেক ভূমিকা রাখে৷ ক্রিকেট আমাদের জাতিকে এক করে৷ কাজেই ক্রিকেটের প্যাশনটাকে ধরে রাখতে হবে৷ এটাকে যাঁরা প্রফেশন হিসেবে নিয়েছেন, তাঁদের টাকা আসবে আর যাবে৷ কিন্তু প্যাশনটা যদি থাকে তাহলে এই খেলার যে চরিত্র, সেটা আমরা মেইনটেইন করতে পারবো৷