1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রীড়া ফেডারেশন অর্ধশত, খেলা কোথায়?

৬ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের খেলাধুলার মূল সংগঠন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ৷ তাদের ওয়েবসাইটে মোট ৪৬টি ক্রীড়া ফেডারেশন এবং অ্যাসোসিয়েশনের নাম রয়েছে৷ এর মধ্যে অনেক খেলাই আছে যার নাম দেশের সাধারণ মানুষ শোনেনি৷ আবার কেনোটি হয়ত ঐতিহ্য হারিয়েছে৷

ছবি: Mir Farid

একেক খেলার জন্য একেক ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন৷ আবার খেলা না থাকলেও আমদানি করেও সংগঠন বানানো হয় কাউকে খুশি করতে বা কারুর অস্তিত্ব বজায় রাখতে৷ সেরকমই একটি হলো বাংলাদেশ শারীরিক আত্মরক্ষামূলক পদ্ধতি (বাশআপ)৷ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে পরাজিত হন ঢাকা মহানগর পুলিশের তখনকার অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান৷ তাকে কী! তাকে তো ক্রীড়াঙ্গনে রাখতে হবে! তাই বাশআপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদে নিয়োগ দেয় সরকার৷ বাশআপ মূলত মার্শাল আর্টের আরেকটি সংস্করণ৷

বাংলাদেশে যেসব ক্রীড়া ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনের নাম ক্রীড়া পরিষদের ওয়েবসাইটে আছে, সেগুলো হলো: ১. বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, ২. বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, ৩. বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, ৪. বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, ৫. বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশন, ৬. বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন, ৭. বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, ৮. বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন, ৯. বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনl ১০. ভারোত্তোলন ফেডারেশনl ১১. হ্যান্ডবল ফেডারেশনl ১২. বাংলাদেশ জুডো ফেডারেশন, ১৩. বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন, ১৪. বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো ফেডারেশন, ১৫. বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন, ১৬. বাংলাদেশ অ্যামেচার রেসলিং ফেডারেশন, ১৭. বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশন, ১৮. বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন, ১৯. বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন, ২০.বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন, ২১.বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশন, ২২. বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন, ২৩. বাংলাদেশ খো খো ফেডারেশন, ২৪. বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশন, ২৫. বাংলাদেশ শরীরগঠন ফেডারেশন, ২৬. বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, ২৭. বাংলাদেশ ক্যারম অ্যাসোসিয়েশন, ২৮. বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন, ২৯. বাংলাদেশ স্কোয়াশ র‌্যাকেটস ফেডারেশন, ৩০. বাংলাদেশ বিলিয়ার্ড ও স্নুকার ফডারেশন, ৩১. বাংলাদেশ মার্শাল আর্ট কনফেডারেশন, ৩২. বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন, ৩৩. বাংলাদেশ বধির ক্রীড়া সংস্থা, ৩৪. বাংলাদেশ ব্রীজ ফেডারেশন, ৩৫. বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন, ৩৬. বাংলাদেশ বাসআপ অ্যাসোসিয়েমশন, ৩৭. বাংলাদেশ ঘুড়ি অ্যাসোসিয়েশন, ৩৮. বাংলাদেশ রাগবি অ্যাসোসিয়েশন (ইউনিয়ন), ৩৯. বাংলাদেশ ফেন্সিং ইউনিয়ন, ৪০. বাংলাদেশ উশু অ্যাসোসিয়েশন, ৪১. বাংলাদেশ বেসবল – সফটবল অ্যাসোসিয়েশন, ৪২. বাংলাদেশ বুত্থান অ্যাসোসিয়েশন, ৪৩. বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, ৪৪. আন্তর্জাতিক তায়কোয়ানডো অ্যাসোসিয়েশন, ৪৫. ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অফ বাংলাদেশ এবং ৪৬. বাংলাদেশ কিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন৷

খো খো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বাবুল

This browser does not support the audio element.

এর বাইরে নতুন করে আরো কয়েকটি ক্রীড়া ফেডারেশনকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সম্প্রতি৷ বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন৷ তবে অনুমোদন পায়নি বাংলাদেশ সেপাকটাকরো অ্যাসোসিয়েশন৷ এবার এই খেলাধুলা খাতে বাজেট আরো বেড়েছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১,৩৩৭ কোটি টাকা৷ গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৯২২ কোটি টাকা৷ পরবর্তিতে তা দাঁড়ায় ৯৫৯ কোটি টাকা৷ এ খাতে বাজেট বেড়েছে ৩৭৮ কোটি টাকা৷

‘এমন অনেক ফেডারেশন আছে, যা নাম ও প্যাড সর্বস্ব’

This browser does not support the audio element.

 

এ বছর উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৭ কোটি টাকা৷ আর অনুন্নয়ন খাতে ধরা হয়েছে ১,০৫৯ কোটি টাকা৷ উন্নয়ন বাজেটে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জন্য ৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-র জন্য ৮৯ কোটি ৫ লাখ টাকা ও যুব উন্নয়ন অধিদফতর খাতে ১১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷

এইসব ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন যেসব খেলার সঙ্গে যুক্ত, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খেলার সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পরিচয় নাই৷ কোনো কোনো খেলার চর্চাও হয় না৷ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় হোক আর অপ্রয়োজনীয় হোক, সব সংগঠনই কিছু না কিছু অর্থ বরাদ্দ পায় প্রতিবছর৷ আবার বিদেশ সফরও আছে৷ তাছাড়া পদ-পদবীও একটা বিষয়৷ আছে ভোটের বিষয়৷ অভিযোগ আছে, একই ব্যক্তি একাধিক ফেডারেশনের ভিন্ন ভিন্ন পদে আছেন৷ সব মিলিয়ে আছে রাজনৈতিক প্রভাব এবং ক্ষমতার বিষয়৷ অনেক ফেডারেশনের কর্তাব্যক্তি রাজনৈতিক নেতা বা সরকারি কর্মকর্তা৷ যাদের বড় একটি অংশের সঙ্গে খেলার কোনো সম্পর্ক নাই৷

‘আমাদের গ্রামীণ জনপদেও অনেক খেলা হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা দরকার'

This browser does not support the audio element.

দেশীয় সম্ভাবনাময় খেলা কাবাডির দুরবস্থার কারণ নিয়ে কথা বলেছেন কাবাডির ফেডারেশনরে যুগ্ম সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ মেজাম্মেল হক৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিভিন্ন ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের আগে এখানে পাঠানো হত৷ নির্বাচনের কারণে অন্য ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের এখানে পাঠান হত৷ তারা এই খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না৷ ফলে কাবাডির উন্নয়নে কোনো কাজ হয়নি৷ কাবাডি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেভাবে এগিয়েছে আমরা সেভাবে পারিনি৷ এমন হয়েছে যে ফেডারেশন আছে, কিন্তু মাঠে খেলা নাই৷ তবে এখন আমরা উন্নয়নের চেষ্টা করছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরাও কাবাডি খেলোয়াড় ছিলাম না৷ তবে আমাদের সাংগঠনিক দক্ষতা আছে৷ আমি মনে করি ফেডারেশনের সবাইকে যে খেলোয়াড় হতে হবে তা নয়৷ তবে আগ্রহ এবং সাংগঠনিক দক্ষতা থাকতে হবে৷'' আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কাবাডি ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি হলেন পুলিশের আইজি৷ আমি নিজেও একজন সরকারি কর্মকর্ত৷ ফেডারেশনগুলোর শীর্ষ কর্মর্তাদের প্রায় সবাই সরকারি কর্মকর্তা৷ তাই আমার পক্ষে অন্য ফেডারেশন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়৷’’

বাংলাদেশ খো খো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বাবুলের  কাছে জানতে চেয়েছিলাম ওই খেলা সম্পর্কে৷ তিনি জানান, ‘‘১৯৯৫ সালে এই খেলা বাংলাদেশে চালু হয়৷ তখন যাঁরা ফেডারেশন করেছিলেন, তাঁরা প্রায় সবাই পরে চলে যান৷ চলে যান অন্য ফেডারেশনে৷ বা নতুন ফেডারেশন গঠন করেন৷''

 

কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তখন কেবল ভারতেই এই খেলা হতো৷ তাই বিদেশ সফরের তেমন কোনো সুযোগ ছিল না৷ এই খেলা দিয়ে হাইলাইটেড হওয়ারও সুয়োগ ছিল না৷ অনেক বছর তাই এই ফেডারেশন বলতে গেলে অকার্যকর ছিল৷ আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এখন কিছু কাজ করার চেষ্টা করছি৷ আমাদের সারাদেশে এখন ৮০০ খেলোযাড় আছে৷ আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় আমাদের মেয়েদের একটি দল রৌপ্য পদকও পেয়েছে৷''

এটা কী ধরনের খেলা – জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা ক্ষীপ্রতা এবং বুদ্ধির খেলা৷ এটা না দেখলে বুঝবেন না৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘এখন বছরে সাত লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাই৷ এছাড়া স্পন্সদের মাধ্যমেও কিছু অর্থ আসে৷''

বাংলাদেশে এখন জনপ্রিয়তা এবং অর্জনের দিক দিয়ে ক্রিকেট সবার শীর্ষে৷ আর ফুটবল জনপ্রিয় হলেও তার স্বর্ণযুগ হারিয়েছে৷ কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি এবং ক্রীড়া লেখক সনৎ বাবলা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই দু'টি খেলা বাদ দিলে আর ৬-৭টা খেলায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে৷ হকি,শ্যুটিং, দাবা, কাবাডি, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার প্রভৃতি৷ বাংলাদেশের উচিত ওই খেলাগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়৷ এতগুলো ফেডারেশনের দরকার নাই৷''

তাহলে কেন এত ফেডারেশন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো নানা কারণে হয়৷ বরাদ্দ পাওয়া যায়, বিদেশে যাওয়া যায়৷ আবার ফেডারেশন হলে স্টেডিয়াম এলাকায় একটা কক্ষও বরাদ্দ পাওয়া যায়৷ আসলে এমন অনেক ফেডারেশন আছে, যা নাম ও প্যাড সর্বস্ব৷''

‘কাবাডি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেভাবে এগিয়েছে আমরা সেভাবে পারিনি’

This browser does not support the audio element.

আরেকজন ক্রীড়া সাংবাদিক, ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনো কোনো ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মানব পাচারেরও অভিযোগ আছে৷ তবে আমি ফেডারেশবিরোধী নই৷ আমি চাই, কার্যকর ফেডারেশন৷ বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই নতুন নতুন খেলা চালু হলে তাকে ভালো বলেই মনে করি আমি৷ কিন্তু এর নামে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে৷''

বাংলাদেশে এইসব খেলা বাদে গ্রামীণ জনপদে আরো অন্তত ৩৬ ধরনের খেলা আছে৷ সেই খেলাগুলোর কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা নাই৷ বলি খেলায় কোনো ফেডারেশনের ভূমিকা নাই৷ আবার রোয়িং ফেডারেশন থাকলেও গ্রামীণ জনপদের নৌকা বাইচে তারা পৃষ্ঠপোষকতা করে না৷ কাবাডি ফেডারেশন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাবাডি বা হাডুডু খেলার খবর রাখে না৷ অনেক সম্ভাবনার এই খেলাটি এখন মৃতপ্রায়৷ সনৎ বাবলা বলেন, ‘‘ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলাই এখন সঠিক নেতৃত্বের অভাবে পিছিয়ে পড়েছে৷''

দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামীণ জনপদেও অনেক খেলা হারিয়ে যাচ্ছে৷ সেগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা দরকার৷''

এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ