ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ‘প্রিজাম্পটিভ' রিপাবলিকান নমিনি, সেটা অস্বীকার করার আর কোনো উপায় নেই৷ যেমন নভেম্বরে ট্রাম্প-ক্লিন্টন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা৷ প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে, দু'পক্ষেই৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার ইন্ডিয়ানায় জেতার পর থেকেই ট্রাম্প তাঁর সুর বদলাতে শুরু করেছেন,সেটাই সম্ভবত বড় খবর৷ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা যখন ‘‘ট্রাম্প কিভাবে আধুনিক রাজনীতির সব রীতিনীতি ভেঙেও জিতলেন'', তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, তখন হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন ও তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার দলবল আরো বড় এবং বেশি করে ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে কামান দাগতে শুরু করেছেন৷
হিলারি শিবিরের একটি পন্থা হল, ট্রাম্প বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে যে সব মত প্রকাশ করেছেন, সেগুলিকে তুলে ধরা; যেমন ট্রাম্প বলেছেন, তিনি স্কুলে বন্দুক ঢুকতে দেবেন; অথবা মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবেন না; মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর দেবেন; অথবা ওয়াটারবোর্ডিং-এর মতো বিতর্কিত জেরার পদ্ধতি আবার চালু করবেন৷
অপরদিকে ক্লিন্টন সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘বাস্তবিক হিলারিকে হারানো অন্যান্য অনেক সেনেটর কিংবা গভর্নরকে হারানোর চেয়ে সহজ হবে'' – ট্রাম্প যেরকম এনবিসি টেলিভিশনকে বলেছেন৷ নয়ত সিএনএন-এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী জনসমর্থনের ক্ষেত্রে হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বনাম ৪১ শতাংশে এগিয়ে আছেন৷
ট্রাম্প তাতে বিচলিত হবার পাত্র নন৷ তাঁর লক্ষ্য আপাতত তাঁর নিজের দল, রিপাবলিকানদের পুনরায় একত্রিত করা৷ বুধবার রাত্রে তিনি সেনেটে সর্বোচ্চ রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল-এর ‘এনডোর্সমেন্ট' অর্থাৎ সমর্থন পেয়েছেন৷ ম্যাককনেল-এর যুক্তি হলো, হিলারির জয় বস্তুত বারাক ওবামার ‘তৃতীয়' কর্মকালের সমতুল হবে, তাই তা রোখা প্রয়োজন৷ অপরদিকে রিপাবলিকান দলের অনেক অতীত ও বর্তমান হোমরা-চোমরা ট্রাম্পকে সমর্থন করতে রাজি নন৷ যেমন...
ট্রাম্প কিন্তু বুধবার ফক্স নিউজ-কে বলেছেন, ‘‘আমরা এবার দলকে একত্রিত করব, সকলকে একসঙ্গে আনব৷'' এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি কেমন হবে, সে বিষয়ে জনমানসে যদি কোনো দ্বিধা থাকে, তবে তা দূর করার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প৷ ‘‘লোকে এখনও ঠিক বুঝতে পারছে না, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেমন হবে'', নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে বলেছেন ট্রাম্প; ‘‘কিন্তু সবই ঠিক থাকবে৷ আমি দেশের অবস্থা আরো স্থিতিহীন করার জন্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হইনি৷''
বুকমেকার বা বুকি-রা বৃহস্পতিবার সকালে যা ধরছিল, তা অনুযায়ী আপাতত ক্লিন্টনের জেতার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশের বেশি হলেও, ট্রাম্প প্রায় ৩২ শতাংশে পৌঁছে গেছেন৷
অপরদিকে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস লিখছে, ট্রাম্প যতই অভব্য হোন না কেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, বলে ইউরোপের মানুষদের ধারণা৷
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)
স্লোভেনিয়ার লাজুক কিশোরী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি
ট্রাম্প তখন একটা করে জয় পাচ্ছেন, সেই সঙ্গে বাড়ছে স্লোভেনিয়া থেকে আসা এক নারীকে নতুন রূপে দেখার সম্ভাবনা৷ দরিদ্র দেশের সাধারণ কিশোরী থেকে মডেল, তারপর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ঘরণী৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফার্স্ট লেডি’ও হলেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
লাজুক মেয়ে
স্লোভেনিয়া তখনো যুগোস্লাভিয়ার অংশ, সেখানে তখনো চলছে ‘সমাজতান্ত্রিক শাসন’, সেই সময়েই সেভনিকা নামের ছোট্ট এক শহরে জন্ম মেলানিয়া নাভস-এর৷ ছোটবেলা থেকেই মেলানিয়া খুব লাজুক প্রকৃতির৷
ছবি: picture alliance/AP Images/A. Harnik
স্কুলের শান্ত, সুবোধ বালিকা
বাবা ভিক্টর নাভস ছিলেন গাড়ির ডিলার৷ মা আমালিয়া কাজ করতেন পোশাক কারখানায়৷ বাড়ির পাশেই ছিল মেলানিয়ার স্কুল৷ কর্মজীবী বাবা-মায়ের কাছে কোনোদিন স্কুল থেকে মেয়ের নামে নালিশ আসেনি৷ বার্তা সংস্থা এপি-র প্রতিবেদকের কাছে কয়েকদিন আগেও মেলানিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সেই স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীরা৷ সবার এক কথা, ‘‘বড় ভালো মেয়ে ছিল মেলানিয়া৷ খুব মৃদুভাষী আর ভদ্র মেয়ে৷’’
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
স্বপ্নের পথের সন্ধান
প্রাথমিক স্কুল পর্ব শেষে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবিয়ানার এক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যায় মেলানিয়া৷ সেখানেই তাকে দেখে ফেলে ফটোগ্রাফার স্টেইন জেরকো৷ ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী কিশোরীটির ছবি তুলে নিতে ভুল করেননি স্টেইন৷ সেভনিকায় থাকতেই মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মেলানিয়া৷ স্টেইনের চোখে পড়ায় স্বপ্ন পূরণে বেশি সময় লাগেনি৷
ছবি: imago/UPI Photo
সুপার মডেল
মাত্র ১৬ বছর বয়সে মডেল হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু৷ প্রথমে স্লোভেনিয়ায়, তারপর ইটালির মিলান, ফ্রান্সের প্যারিস হয়ে ১৯৯৬ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে৷ বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে তখন তাঁর খুব চাহিদা৷ ইংরেজি, ইটালিয়ান, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শিখে প্রতিষ্ঠা সহজসাধ্য করার কাজও অনেকটাই সেরে নিয়েছেন ততদিনে৷ ওপরে ফিলাডেলফিয়া স্টাইল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবির সামনে মেলানিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় এবং পরিণয়
নিউইয়র্কে প্রথম সাক্ষাতেই মেলানিয়াকে ট্রাম্পের ভালো লেগে যায়৷ নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ফোন করো৷’ মেলানিয়া পাত্তা দেননি৷ পরে ট্রাম্পই আবার ফোন করে দেখা করতে চান৷ সেই দেখার সুবাদেই ১৯৯৬ সালে ২৪ বছরের বড় ট্রাম্পকে বিয়ে করেন মেলানিয়া৷
ছবি: Reuters/J. Bourg
অমিল নিয়েই সুখি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী হলেও মেলানিয়ার কম এবং যৌক্তিক কথা বলার সুনাম রয়েছে৷ স্বামীর নির্বাচনি প্রচারে নেমেও নিজের কথা সুস্পষ্ট যুক্তিতেই বলেছেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢুকতে দেবেন না, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তেও দেয়াল দাঁড় করাবেন৷ মেলানিয়া বলেন, কেউ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাইলে সে সুযোগ রাখা উচিত৷
ছবি: Getty Images/K. Winn
‘ফার্স্ট লেডি’
বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করে, নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প৷ মেলানিয়া হয়ে গেলেন ‘ফার্স্ট লেডি’৷