কলকাতা থেকে বার্লিনে বই পাঠাতে গিয়ে জালিয়াতের খপ্পরে পড়েছেন বাংলাদেশি কবি দাউদ হায়দার৷ খুইয়েছেন দুই লক্ষাধিক টাকা৷ সেই টাকা ফেরতের দায়িত্ব নেবে কে?
বিজ্ঞাপন
বার্লিনপ্রবাসী বাংলাদেশি কবি দাউদ হায়দার কলকাতা বইমেলায় এসেছিলেন নিজের নতুন বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ উপলক্ষে৷ যেহেতু বইমেলা, অনেক বই নিজেও কিনেছেন, উপহারও পেয়েছেন৷ সেই বই নিজের বার্লিনের বাসার ঠিকানায় পাঠাতে গিয়ে খোঁজ করেছিলেন একটি নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সংস্থার৷ অনলাইন থেকে এক এজেন্টের ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছিলেন৷ পড়লেন পাক্কা ফেরেব্বাজের খপ্পরে৷ মাত্র পাঁচ টাকায় রেজিস্ট্রেশন করানোর অছিলায় দাউদ হায়দারের কলকাতার বন্ধুর ক্রেডিট কার্ড নম্বর হাতিয়ে নেয় তারা৷ তারপর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই হাতিয়ে নেয় দুই লক্ষেরও বেশি টাকা৷
দুই লক্ষেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে: দাউদ হায়দার
সাধারণভাবে ক্রেডিট কার্ড মারফত যে কোনো লেনদেনের ক্ষেত্রে এ ধরনের জালিয়াতি আটকাতে বিমা করা থাকে৷ তা ছাড়া যে ব্যাঙ্কের কার্ড, তারা সহজেই টাকা পাচারের যে বৈদ্যুতিন পথ, সেই পথ ধরে গিয়ে জালিয়াতের ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি চিহ্নিত করতে পারে এবং চলে যাওয়া টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে৷ ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া ততটা সহজসাধ্য নয়৷ কিন্তু এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যথেষ্ট ভরসা দিতে পারছে না বলে দাউদ হায়দার জানিয়েছেন৷ জালিয়াতি ঘটার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংককে জানানো হলেও তারা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উত্তর দিচ্ছে, সেটাও হিন্দি ভাষায়৷ ফলে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে৷
বরং কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারের যে সাইবার ক্রাইম শাখা, তারা সাহায্যে তৎপর৷ যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সঙ্গে সঙ্গেই একটি নম্বর দিলেন, যা বিশেষভাবে ব্যাংক জালিয়াতির সুরাহার জন্য নির্দিষ্ট হেল্পলাইন৷ দাউদ হায়দার বন্ধুর বাড়ি থেকেও স্থানীয় থানায় এবং সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ জানানো হয় ঘটনার পরেই৷ কিন্তু হেল্পলাইন নম্বর থাকলেও, কতটা হেল্প তারা আদৌ করে উঠতে পারবেন, সে ব্যাপারে খুব একটা আত্মবিশ্বাস তারা দেখাতে পারলেন না৷
সোমবার দুপুরের বিমানে কলকাতা ছেড়ে দিল্লি চলে গেছেন দাউদ হায়দার৷ এরপর সোজা বার্লিনের বিমান ধরতে হবে তাকে৷ তিনি ভারতে আর থাকছেন না, এই কারণেই কি জালিয়াতির সুরাহায় সব পক্ষের গড়িমসি? যদিও তাঁর বন্ধু, যিনি নিজের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে দিয়েছেন, তিনি কলকাতায় থাকবেন এবং বিষয়টির পিছনে লেগে থাকতে পারবেন৷ বেহাত হওয়া টাকা ফেরত পাবেন কিনা, সেটাই এখন দেখার৷
আমাদের অনলাইন বোকামি
বর্তমান যুগে কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে প্রতিনিয়ত৷ ইন্টারনেট আসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে৷ সঙ্গে বাড়ছে বোকামিগুলো৷ অনলাইনে আমাদের একটু বিচক্ষণ হতে হবে বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa
ফোনে লক নেই?
ধরুন ফোনে লক দিতে ভুলে গেছেন, বা নিজেই পছন্দ করেন না লক সিস্টেম৷ তাই যেখানে সেখানে ফোন ফেলে আসাটা আপনার জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে৷ কারণ যেহেতু স্মার্ট ফোনে আপনার ফেসবুক, জিমেইল, কোথাও কোথাও ব্যাংক ডিটেইলও সেভ করা থাকে সেখানে আরেকজনের পক্ষে কপি করা বিষয়ই নয়৷ নিজের ব্যক্তিগত ছবিগুলোর নিরাপত্তা স্বার্থে হলেও ফোন লক করুন৷
ছবি: Reuters/T. Siu
ফ্রি ওয়াফাইয়ে বিপদ!
ফ্রি ওয়াইফাই দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেই বিপদ৷ যদিও ফ্রি ওয়াইফাইয়ের প্রলোভন উপেক্ষা করা কঠিন, তবু বিপদ বুঝে ব্যবহার করতে হবে৷ যেহেতু আপনার মোবাইলের ডাটা অ্যাকসেস পাবে ওয়াফাই সংযোগটি সেহেতু সাবধান৷ এক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করে ওয়াই ফাই সংযোগ গ্রহণ করা উচিত৷ ভিপিএন অর্থ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটোয়ার্ক৷ এটি একটি টানেল তৈরি করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখবে ফ্রি ওয়াফাইয়ে ওঁৎ পেতে থাকা চোরদের থেকে৷
ছবি: picture alliance / dpa
চ্যাটরুমে ভরসা নেই
চ্যাটরুম সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো মাধ্যম হলেও বিশ্বাস করা যাবে না এখানকার মানুষদের৷ কারণ চ্যাটরুমের পরিচয় থেকে আবেগী হয়ে ভিডিওচ্যাট করে ভীষণ বিপদে পড়েছেন অনেকে৷ বিশেষ করে মেয়েদের হয়রানি করার ঘটনাগুলোর সূত্রপাত চ্যাটরুম থেকে৷ এখানেই ছড়ায় ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিওসহ নিজস্ব অনেক তথ্য৷ সুতরাং চ্যাট করতে পারেন কিন্তু তথ্য শেয়ার নয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
কঠিন পাসওয়ার্ড
মনে থাকবে না এই অজুহাতে পাসওয়ার্ডটাকে একেবারে সহজ কিছু বা ধারণা করা যায় এমন করবেন না৷ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, মেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ প্রতিটা বস্তুর জন্য আলাদা আলাদা ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড রাখুন৷ আর মনে রাখার সুবিধায় পাসওয়ার্ড কোনো ইনবক্সে সেভ করবেন না, কিংবা পাসওয়ার্ড লেখা খাতাটা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
ক্রেডিট কার্ডের সেলফি?
নতুন ক্রেডিটকার্ড পেয়ে খুশিতে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ফেলবেন না৷ প্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ডের ছবি তুলে রাখতে পারেন৷ তবে সেটি একেবারেই গোপন স্থানে রাখবেন৷ ইদানিং ইন্টারনেটে এ ধরনের বোকামি বেশ চোখে পড়ছে৷ আইটি বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ঘটনাকে মানবজাতির বুদ্ধিমত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলেই মনে করছেন৷