বাংলাদেশ পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়া তৈরি পোশাকখাতকে সহযোগিতার আহ্বানে সাড়া দিতে শুরু করেছে ক্রেতারা৷
বিজ্ঞাপন
‘‘ব্র্যান্ডগুলো যোগাযোগ করতে শুরু করেছে,'' ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছি৷''
এর আগে গত কিছুদিন ধরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে একের পর এক অর্ডার বাতিল হতে থাকে৷ বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৩৬টি কারখানার অর্ডার বাতিল হতে থাকে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা৷
এ অবস্থায় বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে খোলাখুলিভাবে আবেদন জানান৷ তিনি বলেন, এ রকম সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্র্যান্ডগুলো যদি হাত তুলে নেয়, তাহলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪১ লাখ শ্রমিককে না খেয়ে মরতে হবে৷
তিনি অভিযোগ করেন, অনেক কোম্পানি এরইমধ্যে অর্ডার করা পণ্য তৈরির মাঝামাঝি থাকা অবস্থায়, তৈরি হয়ে যাবার পর এমনকি তৈরি পণ্য পাঠিয়ে দেবার পরও অর্ডার বাতিল হয়েছে, যেটা অনুচিত৷
তিনি এ অবস্থার উত্তরণে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন৷ সেসব প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে অনেকে যোগাযোগ করেছে বলে জানান তিনি৷
করোনার নতুন এপিসেন্টার কি যুক্তরাষ্ট্র?
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে দেশটি মারাত্মক সংক্রামক এই রোগের নতুন এপিসেন্টারে পরিণত হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)।
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/M. Delacroix
আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে
চীন ও ইটালির পর এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস ২৪ মার্চ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যত নতুন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৮৫ শতাংশের বেশি ইউরোপ ও আমেরিকার বাসিন্দা।
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/M. Delacroix
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃত্যু
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪৬ হাজার ৪৮১। মারা গেছেন প্রায় ৬০০ জন।
ছবি: picture-alliance/Zuma/Sopa/R. Utrecht
মারাত্মক ঝুঁকিতে নিউ ইয়র্ক
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্যানুযায়ী নিউ ইয়র্কে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার একদিনেই নতুন আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজারের বেশি মানুষ।
ছবি: picture-alliance/EibnerT. Hahn
ইটালিতে কমছে আক্রান্তের সংখ্যা
মোট আক্রান্তে এখনো চীনকে অতিক্রম না করলেও মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকদিন আগেই চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ইটালি। দেশটিতে প্রতিদিনই মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। তবে আশার কথা কয়েক সপ্তাহ ধরে পুরো দেশ লকডাউন করে রাখায় সেখানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৯ মার্চ থেকে কমতে শুরু করেছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
বিশ্বে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা
চীনের উহানে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। তারপর দুই লাখ হতে সময় লেগেছে ১১ দিন। আর মাত্র চারদিনে আরো একলাখ নতুন আক্রান্ত হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/abaca/Ipa/C. Carlo
ঘরে থাকুন, দূরে থাকুন
করোনার এই বিস্তার রোধের একমাত্র উপায় ঘরে থাকা এবং পরষ্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা। তাহলেই একজন থেকে আরেক জনে সংক্রমণের ভয়াবহ এ চক্র ভাঙ্গা সম্ভব হবে। দূরত্ব বজায় রাখাই এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র হাতিয়ার।
বিজিএমইএ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ প্রথমত, আগে অর্ডার করা যেসব পণ্য এরই মধ্যে উৎপাদনে চলে গেছে কিংবা উৎপাদিত হয়ে সরবরাহের অপেক্ষায় আছে, সব পণ্যের মূল্য সাধারণ নিয়মে পরিশোধ নিতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, যদি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আনকাট ফেব্রিক থাকে, তাহলে হয় এর শিপমেন্ট নিতে হবে, অথবা এর ‘কাট অ্যান্ড মেক' বা শ্রমের খরচটুকু দিতে হবে, যেন শ্রমিকদের বেতন দেয়া যায়৷ তৃতীয়ত, অব্যবহৃত ফেব্রিকের দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে ১৭০ দিন সময় নিতে পারে ক্রেতারা৷ চতুর্থত, ক্রেতা চাইলে উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা এই পণ্য আপাতত মজুদ করেও রাখতে পারে, কিন্তু তা উৎপাদন এলাকা ছাড়লেই সরবরাহকৃত বলে বিবেচিত হবে৷ পঞ্চমত, যদি কোনো বিশেষ কারণে শিপমেন্ট বাতিল হয় তাহলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷
জার্মানির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া
বিজিএমইএ জার্মানির উন্নয়ন সহযোগী মন্ত্রী গার্ড ম্যুলারের কাছেও সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল৷ জবাবে ম্যুলার বলেন, যেহেতু এত লোক এই খাতে কাজ করেন, তাই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ও এর সঙ্গে জড়িতদের সহযোগিতার একটি উপায় বের করা হবে৷
‘‘আমরা জার্মান মন্ত্রীর কাছে বলেছি যেন জার্মান ব্র্যান্ডগুলো তাদের অর্ডার বাতিল না করে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করতে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন রুবানা৷ ‘‘কোভিড পরবর্তী সময়ে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার সময়টুকুতেও তারা যেন আমাদের পাশে থাকেন, সেটি বলেছি৷''
রুবানা জানান, বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক হলো জার্মানি৷ মোট রপ্তানির ১৮ ভাগ করা হয় এই দেশটিতে৷ সবমিলিয়ে ইউরোপে ৬০ ভাগ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ তিন হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির ৮০ ভাগেরও বেশি৷
গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেবার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল ঘোষণা করেছেন৷ উৎপাদন খাতগুলোর জন্য এই তহবিল সাময়িক কিছুটা স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান রুবানা৷
‘‘আমরা মাসে শ্রমিকদের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বেতন দেই৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আমাদের স্বস্তি দিয়েছে৷ তবে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে সামনে আসতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে,'' বলেন তিনি৷
ঢাকা কার্যত লকডাউন
ঢাকায় এখন জরুরি যানবাহন ছাড়া আর কিছু চলছে না।রাজধানী থেকে অন্য শহরে যাওয়া বন্ধ৷ রাস্তায় নেই মানুষ। তবে এরমধ্যেও জুমার নামজের সময় ছিল মসজিদে ভিড়।
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
গাবতলীতে সুনসান নিরবতা
ঢাকার সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনালে গাবতলীতে সব বাস দাঁড়িয়ে আছে। দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়ছে না। সিটি সার্ভিসও বন্ধ।
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
সদর ঘাটে নোঙর করে আছে লঞ্চ
ঢাকার সদরঘাটে নেই কোনো কোলাহল। নৌপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ে লঞ্জগুলো নোঙর করে আছে।
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
ফাঁকা কমলাপুর
কমলাপুর রেলস্টেশনে কয়েকটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু নেই কোনো যাত্রী। এরকম কমলাপুর দেখা যায় না।
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
ঢাকার ফাঁকা সড়ক
ঢাকার সড়কগুলো আরো ফাঁকা হয়ে গেছে। গণপরিবহন একদমই নেই, ব্যক্তিগত যানবাহনও খুব একটা চলছে না।
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
হঠাৎ দেখা মেলে রিকশার
রাস্তায় মাঝে মধ্যে দু’একটি রিকশা, মটরবাইক বা অটোরিকশার দেখা যায়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন না।
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
রিকশার যাত্রী নেই
নানা গলিতে এখনো রিকশা চালকদের দেখা গেলেও যাত্রী প্রায় নেই বললেই চলে। ফাঁকা ঢাকায় দিন আনা দিন খাওয়া এই মানুষগুলো তাই চরম বিপাকে পড়েছে।