অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান করলে কী ক্ষতি হয় – তা অনেকেই জানেন৷ তবু দেদার বিক্রি হচ্ছে পানীয়গুলো৷ যুক্তরাষ্ট্রের কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো বলেছে, এখন থেকে ক্যালরি কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেবে৷
বিজ্ঞাপন
কোকাকোলা, পেপসিকোলা এবং ড. পেপার স্ন্যাপি – যুক্তরাষ্ট্রের এই তিন কোমল পানীয় কোম্পানি বলেছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে তারা নিজেদের পন্যে ক্যালরির মাত্রা ২০ শতাংশ কমাবে৷ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ পুষ্টিবিদরা বলছেন, বেশি ‘স্ন্যাকস' খাওয়া এবং কোমল পানীয় পান করার কারণেই এমনটি হচ্ছে৷ বেশি মুটিয়ে গেলে শরীরে নানা রকমের রোগ বাসা বাঁধে৷ এসব রোধ করতেই উঠেছে কোমল পানীয়ে ক্যালরি কমানোর দাবি৷ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ'-এর উদ্যোগে নিউ ইয়র্ক শহরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ দাবি পূরণে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বেভারেজ, অর্থাৎ কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো৷
কোকাকোলা, পেপসিকোলা আর ড. পেপার স্ন্যাপি জানিয়েছে, তারা ধীরে ধীরে প্রচলিত বোতলের চেয়ে ছোট আকারের বোতল বাজারে ছাড়তে শুরু করবে৷ এ ছাড়া পানীয়ে চিনির মাত্রা কমানো এবং ক্রেতাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে বলেও জানিয়েছে তারা৷ এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে যে স্বয়ংক্রিয় মেশিন (অটোম্যাট) রয়েছে সেগুলো থেকেও কম ক্যালরিযুক্ত পানীয় সরবরাহ করার আশ্বাস দিয়েছে কোম্পানিগুলো৷
মিষ্টিমিশ্রিত পানীয় ওজন বাড়ায়
অল্প বয়সিরা পান করা বলতেই বোঝে মিষ্টি পানীয়, অর্থাৎ পানির সাথে প্রচুর চিনি৷ কিন্তু তারা বোঝে না যে এর পরিণাম কতটা ভয়ঙ্কর! শুধুমাত্র অতিরিক্ত মিষ্টির কারণে ডায়াবেটিসের মতো কঠিন অসুখও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
মিষ্টি পানীয় থেকে সাবধান!
কোকাকোলা, ফান্টা বা এ ধরনের মিষ্টি পানীয় নিয়মিত পান করলে মানুষ স্থায়ীভাবে মোটা হয়ে যায়, অর্থাৎ পরে এই অতিরিক্ত ওজন কমানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে৷ বিভিন্ন ফলের রস, চা, মিল্ক শেক-এ যথেষ্ট পরিমাণে চিনি মেশানো থাকে যা পান করলে ওজন তো বাড়েই, সেই সাথে ডায়াবেটিস টাইপ- ২ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে খুব বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুধু সফ্ট ড্রিংক থেকে ৩০ কেজি চিনি
জার্মানিতে ছয় বছরের একটি বাচ্চা লিমোনেড বা ফান্টা জাতীয় মিষ্টি পানীয় পান করার মধ্য দিয়ে বছরে প্রায় ৫ কেজি চিনি শরীরে ঢুকিয়ে থাকে৷ আর ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের মধ্যে এই হিসেব বেড়ে দাড়ায় ৩০ কেজি৷ সেজন্যই জার্মানির ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থা স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বা কাছাকাছি দোকানগুলোতে মিষ্টি পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধ করার পক্ষে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি শতকরা ২২ ভাগ
ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থার সভাপতি ও হানোভার শিশু হাসপাতালের প্রধান প্রোফেসর ড. টোমাস ডানে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, দিনে নিয়মিত মাত্র এক গ্লাস করে এ জাতীয় মিষ্টি পানীয় পানের ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে শতকরা ২২ ভাগ৷ তাই এসব পানীয়ের লোভনীয় বিজ্ঞাপণ দেখে না ভোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কৃত্রিম গন্ধ
কোকাকোলা, লিমোনেড বা ফান্টা জাতীয় পানীয়গুলোতে থাকে কৃত্রিমগন্ধ আর চিনি৷ ফলের রসগুলোতেও বেশিরভাগই থাকে ফলের রসের বদলে শুধু ফলের কৃত্রিম গন্ধ ও চিনি৷ মাল্টিভিটামিন জুস-এ থাকে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে চিনি, ফলে এ সব জুস পান করা পিপাসা মেটানোর জন্য কোনো ভালো সমাধান নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
বাবা-মায়ের উচিত বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই মিষ্টি জাতীয় সফ্ট ড্রিংক পান করার অপকারিতা সম্পর্কে জানানো৷ কারণ, পরে অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে তা কমানো খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়৷ সময়মতো এদিকে নজর দিলে অনেক সমস্যার সমাধান নিজে থেকেই হয়ে যায়৷ এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞদেরও উচিত বাচ্চার বাবা-মাকে আগে থেকে জানানো, পরামর্শ ড. ডানের৷
ছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb
তাজা ফলের জুস
মিষ্টি পানীর বদলে বাচ্চাদের কম চিনি মিশ্রিত পানীয়, চিনি ছাড়া চা এবং ঘন ও অতিরিক্ত মিষ্টি ফলের জুসের সাথে বেশি পরিমাণে পানি মিশিয়ে পান করানো যেতে পারে৷ তাজা ফলের রস প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে পান করা উচিত৷
ছবি: pressmaster/Fotolia
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থার উদ্যোগে ডায়াবেটিস বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি প্রচারণা চালানো হয়৷ সুস্থ্য জীবনযাপনের জন্য লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, স্কুলের কাছাকাছি ছোট দোকানগুলোতে মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং পানীয় বিক্রি বন্ধ,প্রতিদিন পুরো এক ঘণ্টা শরীর চর্চা৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ার মতো এমন খাবার বা পানীয়র বিজ্ঞাপন স্কুলে বন্ধ করতে হবে৷ ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে খাবারের পাশেই লেখা থাকা প্রয়োজন খাবারে পুষ্টিগুণের তালিকা৷
ছবি: imago/imagebroker
টিভি দেখার সময় খাওয়া নয়
যখন তখন টিভির সামনে বসে চিপস বা এ জাতীয় খাবারের সাথে মিষ্টি জাতীয় পানীয় পান করা কমাতে হবে৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে কিশোর-কিশোরীদের শুধু শরীরিক সমস্যা নয়, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কাও থাকে অনেক, মত বিশেষজ্ঞদের৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
8 ছবি1 | 8
কোকাকোলা, পেপসিকোলা এবং ড. পেপার স্ন্যাপি-কে এভাবে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর পানীয় বাজারে ছাড়তে রাজি করানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ'৷ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন৷ কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে পন্যে ক্যালরি কমাতে সম্মত হওয়ায় ক্লিনটনের প্রশংসা করেছেন অনেকে৷
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য সেন্টার ফর সায়েন্স ইন দ্য পাবলিক ইন্টারেস্ট' এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘এ উদ্যোগের জন্য আমরা প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে ধন্যবাদ জানাই৷ কিন্তু আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আরো দ্রুত এবং বেশি হারে (ক্যালরি) কমানো দরকার৷ ''
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক মারিয়ন নেসলে মনে করেন, এক দশকে ২০ ভাগ ক্যালরি কমানো খুব উল্লেখযোগ্য কাজ নয়৷ তাঁর মতে, কোকাকোলা, পেপসিকোলার মতো প্রতিষ্ঠান যদি সত্যি জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করা থামাতেই চায়, তাহলে তাদের উচিত সোডাজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চহারে কর আরোপের দাবির বিরোধিতা না করা৷