ক্লাসরুমে মোবাইল নিষিদ্ধের সুফল পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস
১৭ জানুয়ারি ২০২৫নেদারল্যান্ডসের এক স্কুলের শিক্ষার্থীদের কিছু সময়ের জন্য মোবাইল থেকে দূরে থাকতে হবে৷ সকাল আটটা বাজে৷ দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জার্মান ক্লাস নেন থমাস পেটার৷ তার ক্লাসে মোবাইল নিষিদ্ধ৷ ক্লাস শুরুর আগে তাই ফোনটি লকারে বা বাসায় রেখে আসতে হয়৷
তিয়াস শোলটেন নামের এক শিক্ষার্থী এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আগে ক্লাস চলাকালে কখনো কখনো ফোন বাজতো৷ এবং আমি বিষয়টিকে নির্বুদ্ধিতা মনে করতাম৷''
আরেক শিক্ষার্থী সাইনা জোরিৎসমা বলেন, ‘‘এটা প্রয়োজনীয় কি না জানি না৷ আমার উন্নতি হয়েছে কিন্তু এটা আমার চেষ্টার নাকি মোবাইল নিষেদ্ধের ফল বুঝতে পারছি না৷''
ফোনসহ কাউকে পাওয়া গেলে তার কাছ থেকে সেটা নিয়ে নেয়া হয়৷ বিকেল পাঁচটার আগে সেটি ফেরত পাওয়া যাবে না৷ যেদিন ক্লাস আগেই শেষ হয়ে পায় সেদিন ব্যাপারটি বেশ বিড়ম্বনার৷ জোরিৎসমা বলেন, ‘‘আমারটি এখনো জব্দ হয়নি, কারণ আমি যথেষ্ট সচেতন৷ আমি শুধু আমার ফোনের জন্য পাঁচটা অবধি অপেক্ষা করতে চাই না৷''
শিক্ষক থমাস পেটার বলেন, ‘‘গত ছয়মাসের অভিজ্ঞতায় আমি বলতে পারি শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে ক্লাসে বেশি মনোযোগী হয়েছে৷''
প্রধান শিক্ষক ফ্রিক ওপ'ট এইন্ডেও তাতে একমত প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ক্লাস আগের চেয়ে অনেক শান্ত এবং তর্কও কম হয়৷ মোবাইল এক নিয়মিত সমস্যা ছিল৷ সবাই সেটি লকারে রেখে আসে না৷ তাই দরজায় দাঁড়িয়ে তল্লাশি চালিয়ে বলতে হয়: এটা দূরে রেখে আসো৷ অনেকে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে চায় এবং নানা যুক্ত দেয়৷ আর তাতে ক্লাসের আট মিনিট নষ্ট হয়৷''
আমস্টারডামের সিগনাস গিমনাজিউম হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের শুরুর দিকের স্কুলগুলোর একটি যেখানে মোবাইল নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ ডাচ সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছিল, তবে স্কুলগুলো তা মানতে আইনত বাধ্য নয়৷
স্পেন এবং ব্রিটেনে পরিচালিত গবেষণা বলছে: মোবাইল নিষেধাজ্ঞা ক্লাসরুমে মনোযোগ বাড়ায়৷ এটা দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য বলে মনে করেন শ্যেপ ফন ডেয়ার প্লুখ৷ মোবাইল নিষেধাজ্ঞার নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করেছেন তিনি৷
প্লুখ বলেন, ‘‘টিকটক এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো সেলফোন অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তৈরি হয়েছে৷ এই শিল্পে মনোযোগই সব৷ এর অর্থ হচ্ছে বড় টেক ফার্ম এবং তাদের অঢেল সম্পদের বিপরীতে একজন শিক্ষক৷ সবকিছু মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এবং তা ধরে রাখতে অত্যন্ত বুদ্ধি খাটিয়ে তৈরি করা৷ ফলে এটা অসম যুদ্ধ৷''
তবে বিষয়টি শুধু মনোযোগ বিঘ্নের নয়৷ এর সামাজিক দিকও রয়েছে৷ শিক্ষার্থীদেরকে খেলাধুলা এবং সরাসরি কথা বলায় উৎসাহী করা হয়৷ তাই নিষেধাজ্ঞা বিরতির সময়ও বলবৎ থাকে৷
শিক্ষার্থী লিজা মারসেন বলেন, ‘‘মোবাইল ব্যবহার না করে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে শেখাটা রসবোধপূর্ণ ব্যাপার৷ কারণ এখন এআই, চ্যাটিজিপিটি ইত্যাদির সহায়তায় সবকিছুই অনলাইনে চলে গেছে৷ তাই আমাদের অন্যদের সঙ্গে মিশতে শিখতে হবে৷ এজন্য মোবাইলের পেছনে কম সময় দিলে ভালো৷''
তবে সবাই নিয়ম মানে না৷ আজ দুপুরের আগে পাঁচটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে৷ দারোয়ান ইওহান ব্যুনের তত্ত্বাবধানে আছে সেগুলো৷ তিনি বলেন, ‘‘এটার কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বেশি হয় এবং এটা চমৎকার ব্যাপার৷ তবে এটা এক লুকোচুরির খেলাও৷''
যাদের ফোন জব্দ করা হয়েছে তাদের দুপুরটা অনেক দীর্ঘ হবে৷ বাকিরা সবাই ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফোন ফেরত পাবে৷
প্রতিবেদন: টোবিয়াস ব়্যাকমান/এআই