অর্থের অভাব নেই, চাই শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাহায্যকর্মী৷ ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স’ সংগঠন তাই ব্রাসেলস-এ গোটা বিশ্ব থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ এই কাজের সমন্বয় করছেন ফাবিয়েন দ্য লেভাল৷
বিজ্ঞাপন
ডিডাব্লিউ: ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স' সাবধান করে দিয়ে বলেছে, এবোলার বিরুদ্ধে সংগ্রামে পরাজয় ঘটবে, যদি না এর বিরুদ্ধে আরও উদ্যোগ নেয়া হয়৷ এবোলা পীড়িত এলাকার জন্য সাহায্যকারী খোঁজা কত কঠিন?
ফাবিয়েন দ্য লেভাল: ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স' সংগঠনের মধ্যে এটা কোনো সমস্যা নয়৷ আমাদের এখানে অনেক স্বেচ্ছাসেবী আছেন৷ সমস্যা হলো, তাঁদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা কম৷ আমি বলতে চাইছি ডাক্তার ও নার্স, পানীয় জল ও নিকাশি ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞদের কথা, যাঁদের এবোলা পীড়িত এলাকায় কাজের জন্য উপযুক্ত জ্ঞান রয়েছে৷ সাধারণত এবোলা মহামারি কম সময়ের জন্য ঘটে৷ তাই আমরা এতকাল সব সময়ে ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর অভিজ্ঞ কর্মীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাইনি৷ কিন্তু এবার মহামারির আকার এত বড়, যে তা সামলাতে আমাদের যথেষ্ট কর্মী নেই৷ বর্তমানে আমরা সপ্তাহে প্রায় ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে তাঁরা এবোলা পীড়িত এলাকায় কাজ করতে পারেন৷
এই প্রশিক্ষণ ঠিক কী রকম?
প্রথমেই দেখতে হবে, হাসপাতালে এবোলা-রোগীদের চিকিৎসা কী ভাবে হবে৷ দুই দিনে আমরা এবোলা মহামারি সংক্রান্ত সব বিষয়ের দিকে নজর দিই৷ যেমন মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা, রোগের চিকিৎসা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ – এই সব৷ তবে এত কম সময়ে আমরা বিষয়গুলির গভীরে যেতে পারি না৷
প্রশিক্ষিতদের জন্য আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ কী?
সবার আগে আমরা তাদের বলি – নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দাও৷ অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সাহায্যকারীদের সবার আগে নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হয়৷ তাই প্রশিক্ষণের সময় সংক্রমণের বিপদের দিকটা ভালো করে বোঝা দরকার৷ ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করলে সাহায্যকারীদের বলতে হবে, সে দিন তারা কাজ করতে পারবে না৷
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
ইবোলা বা এবোলা ভাইরাসকে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাইরাস হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এতে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করেছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চান এবোলাকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্যতম ঘাতক জ্বর হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন যে, আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তপ্রদাহজনিত এই জ্বর৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa
পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি
মারাত্মক এবোলা ভাইরাসের আক্রমণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭১১৷ গিনিতে গত মার্চে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এবোলা ভাইরাসের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাইবেরিয়ায় জরুরি অবস্থা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ লাইবেরিয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷ এতে সরকার বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে৷ প্রাণঘাতী এবোলা ভাইরাস এখন আফ্রিকা থেকে বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আক্রান্ত অন্যান্য দেশের নাগরিক
স্পেনের একজন প্রবীণ ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে গেছেন৷ তিনি এবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সৌদি আরবে একজন রোগীর মৃত্যুর কারণও এবোলা বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা৷ নাইজেরিয়াতেও একজন নার্স এবোলার সংক্রমণে মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবোলা সংক্রমণের লক্ষণ
এবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মারাত্মক জ্বর এবং কারও কারও অবিরত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে৷ সঙ্গে থাকে মাথা, পেশী এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা৷ রোগীর একদিকে ক্ষুধা কমে যায়, অন্যদিকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা৷ সাধারণত শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আক্রান্ত চিকিৎসক
বলা বাহুল্য, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীর মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ লাইবেরিয়াতে যেমন এবোলা রোগীদের পরিচর্যাকারী দুই মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর, তাঁদের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংক্রমণের আশঙ্কা
মূলত কোনো প্রাণী বা মানুষের রক্ত, বীর্য, যোনিরস বা দেহ নির্গত অন্য কোনো তরলের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়৷ বলা বাহুল্য, অনিয়ন্ত্রিত এবং অনিরাপদ যৌন মিলনেও এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইডস রোগের সঙ্গে এবোলার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পশ্চিম আফ্রিকায় এবোলা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল৷ এই প্রাণীটি ভাইরাসটি বহন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ এমনকি সংক্রমিত প্রাণীটি যখন ফলমূল ও অন্যান্য প্রাণী খাচ্ছে, তখন সেসব খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে এবোলা৷
ছবি: imago
সংক্রমণের ঝুঁকি
তার মানে শুধু মানুষ থেকে মানুষে নয়, মানুষ যখন এবোলায় আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত বা মাংসের সংস্পর্শে আসে, তখনও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বরং সেক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানান চিকিৎসকরা৷ তাই খ্যাঁকশিয়াল থেকে অন্য প্রাণী বা ফলমূল হয়ে সহজেই মানুষের মধ্যে এবোলা ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধি করে৷
ছবি: DW
৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু
এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ সেজন্যই তো একে মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Reuters
বড় সমস্যা
বলা বাহুল্য, আফ্রিকায় বন্য প্রাণী খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে৷ সব বাজারেই এ সব মাংস পাওয়া যায়৷ গবেষকদের ধারণা, এ ধরনের বন্য প্রাণীর মাংস থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবোলা৷ তার সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন তো রয়েছেই!
ছবি: picture-alliance/dpa
পরীক্ষামূলক ওষুধ এখনই নয়
এবোলা সংক্রমণ নিরাময়ের উপায় এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ কারণ মার্কিন দুই স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগে তাঁদের উন্নতির ধরণে তারতম্য দেখা গেছে৷
ছবি: LEON NEAL/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
অভিযানের সময় সাহায্যকারীদের কোন বিষয়ে নজর দিতে হবে?
আরেকটি পরামর্শ আমরা সব সময়ে দিয়ে থাকি৷ বলি, ক্লোরিনই তোমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু৷ এবোলা পীড়িত এলাকায় কোনো সুরক্ষা নেই৷ তোমার হাতে একমাত্র ক্লোরিন রয়েছে৷ কোনো মানুষ অথবা বস্তুকে স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত বা শরীরের অন্য অংশ ক্লোরিন সলিউশন দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
এবোলা পীড়িত এলাকায় কাজ করলে সাহায্যকারীদের মানসিক অবস্থা কী হয়?
ফাবিয়েন দ্য লেভাল: এমন এলাকায় চারিদিকে মৃত্যুর ছায়া৷ এতে মনের উপর খুব চাপ পড়ে৷ সাধারণত আমরা মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করি৷ কিন্তু এবোলা পীড়িত এলাকায় যাবার সময় আমরা জানি, আমাদের চেষ্টা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মৃত্যু হবে৷ হয়ত কিছু মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবো৷ কিন্তু আসল লক্ষ্য হচ্ছে মহামারির প্রসার রোধ করা এবং নিশ্চিত করা, যাতে মানুষ মর্যাদার সঙ্গে মৃত্যু বরণ করে নিতে পারে৷ এত বড় চাপ সামলানো বেশ কঠিন৷ তার উপর এমন প্রতিরোধক পোশাক পরতে হয়, যা স্বাভাবিক রিফ্লেক্স অ্যাকশনেও বাধা সৃষ্টি করে৷ কেউ কান্নাকাটি করলে সাহায্যকারীরা তাকে জড়িয়ে ধরতে পারে না৷ কোনো শিশুকে আদর করতে বা সান্ত্বনা দিতে কাছে টেনে নিতে পারে না৷ এমন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখানোরও উপায় নেই৷ হাত-পা নাড়াচাড়ার বিষয়টিও নতুন করে ভাবতে হয়৷
সিয়েরা লিওনে ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই
পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা বা এবোলার সংক্রমণ মহামারির রূপ নিয়েছে৷ সিয়েরা লিওনও আছে সেই তালিকায়৷ ছোট্ট দেশটিতে চলছে ইবোলার বিরুদ্ধে বড় এক লড়াই৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
জীবন তবু বহমান...
সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের সবজির বাজারে গোলমরিচ বিক্রি করেন সুয়ার্ড ডেম্বি (ডানে)৷ প্রতিদিন শত শত লোক এবোলায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ বাজারে এত ভিড়, কার কাছ থেকে যে এবোলা এসে তাঁর শরীরেও বাসা বাঁধবে, কে বলবে! ভয় আছে ঠিকই, তবুও ডেম্বিকে প্রতিদিন আসতে হয় বাজারে৷ তাঁর আয়েই সংসারটা চলে৷ ডেম্বি মরিচ বিক্রি না করলে সংসার চলবে কী করে!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
স্থপতিও লড়াইয়ে
এবোলায় সংক্রমিতদের চিকিৎসা করতে হয় আলাদাভাবে৷ সে কারণে চাই বিশেষ ইউনিট৷ এখন অনেক জায়গাতেই এমন ইউনিট গড়ে তুলতে হচ্ছে৷ আছে উপযুক্ত স্থানের অভাব, প্রশিক্ষিত সেবাকর্মীর অভাব তো আরো বেশি৷ ছবির এই মানুষটির নাম কামারা৷ পেশায় স্থপতি৷ নানান প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন৷ সব ছেড়ে চলে এসেছেন ফ্রিটাউনে৷ নিজেকে সঁপে দিয়েছেন এবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ ইউনিট গড়ার কাজে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পুলিশই সবার ‘মা’
ইনি নিজের নাম কাউকে বলতে চান না৷ স্থানীয়রা তাঁর নাম দিয়েছেন ‘মামা জি’৷ সিয়েরা লিওনের সাধারণ এক মহিলা পুলিশ৷ স্বভাবে মায়ের মতো৷ সবার দুঃখ দুর্দশায় পাশে থাকেন৷ এখনো আছেন৷ এবোলার শিকার হয়ে কেউ মারা গেলে লাশ দাফন করতে আর কেউ না এলেও ‘মামা জি’ আসেন৷ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় আছে জেনেও লাশ হয়ে যাওয়া মানুষদের পরম মমতায় পৌঁছে দেন শেষ ঠিকানায়৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
এক জার্মান
ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক জার্মান নাগরিক৷ প্রায় এক বছর ধরে আছেন সিয়েরা লিওনে৷ ‘ক্যাপ আনামুর’ নামের এক বেসরকারি সংস্থার হয়ে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে৷ লিওন প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের হয়ে ফুটবলও খেলছেন চুটিয়ে৷ সে দেশে এখন এবোলা আতঙ্ক৷ ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ সিয়েরা লিওন তাঁর কাছে দ্বিতীয় জন্মভূমি৷ রোগের ভয়ে জন্মভূমি ছাড়বেন, তা হয় নাকি!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
প্রথম অভিজ্ঞতা
সংক্রমণ নিরোধক এই পোশাক আগে কখনো পরেননি মোমেডো লাম্বো৷ এবোলা রোগীদের ওয়ার্ডে কাজ করতে চান বলে ফ্রিটাউনে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে৷ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনেই পরতে হলো এ পোশাক৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সচেতনতা বাড়াতে...
এবোলার সংক্রমণ রুখতে হলে এ ভাইরাস সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷ পকেটের টাকা খরচ করে এ সম্পর্কে জেনেছেন উসমান রহিম বাহ৷ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে এবোলা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন সবাইকে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সদাব্যস্ত স্টেলা
৩০ বছর বয়সি স্টেলা এক হাসপাতালের সেবিকা৷ রোগযন্ত্রণা, মৃত্যু, কান্না, আহাজারি কম দেখেননি৷ কিন্তু এবোলা-আতঙ্ক তাঁর জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ এবোলায় সংক্রমিত প্রথম রোগীটি যখন এলো, বলতে গেলে সব সহকর্মীই হাসপাতাল ছাড়লেন৷ কিন্তু স্টেলা যাননি৷ তাঁর দেশ শিগগিরই এ বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসবে - এ আশায় দিন-রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছেন এখনো৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পায়ে পায়ে বিপদ
ডেসমন্ড রিজ রেড ক্রসের টিম লিডার৷ দলনেতা হিসেবে তাঁর মূল দায়িত্ব, মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যস্ত সহকর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করা৷ বড় কঠিন দায়িত্ব৷ ডেসমন্ড রিজ বললেন, ‘‘আমরা যে ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি সেটা আমি জানি৷’’ তবু ভয় একটু থাকেই৷ রিজ প্রতিদিন ভাবেন, আজই হয়তো মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ হবে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
8 ছবি1 | 8
সারাদিন কাজের পর কী করতে হয়?
এবোলা চিকিৎসা কেন্দ্রে আমাদের কড়া নিয়ম হলো, সাহায্যকারীরা পরস্পরকেও ছুঁতে পারবে না৷ কাজের শেষে ঘরে ফিরেও তারা সব ভুলে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে পারবে না৷ এটা সাহায্যকারীদের পক্ষে মেনে নেওয়া বেশ কঠিন৷ কিন্তু সংক্রমণের ঝুঁকি কম রাখার এটাই একমাত্র উপায়৷
আপনাদের প্রশিক্ষণে কারা অংশ নেয়?
সারা বিশ্ব থেকেই অংশগ্রহণকারীরা আসে৷ শুধু ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স' সংগঠনেই ৯০টি দেশের সাহায্যকারী সক্রিয় রয়েছে৷ আমরা অন্যান্য সংগঠনের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছি – যেমন ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কর্পস, রেড ক্রস, সেভ দ্য চিলড্রেন৷ জাতিসংঘের কয়েকজন কর্মীও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷
এক বেসরকারি সংগঠনকে কেন এমন প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে?
এটা ঠিক যে এমন প্রশিক্ষণ আসলে আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না৷ আমরা সাধারণত সরাসরি অভিযানে অংশ নিই৷ কিন্তু একমাত্র আমাদেরই এবোলার চিকিৎসার বিশেষ জ্ঞান রয়েছে৷ কিন্তু আমরা জানি, আমাদের একার পক্ষে এই মহামারির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ আমাদের জ্ঞান অন্যান্য সংগঠনগুলির কাছে বিতরণ করা নৈতিক দায়িত্ব, যারা এই এলাকায় কাজ করছে৷
বিভিন্ন দেশের সরকার কি আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করছে?
অবশ্যই অনেক আর্থিক সাহায্য আসছে৷ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাইবেরিয়ায় অনেক চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করেছে৷ কিন্তু যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী না থাকায় তাতে কোনো কাজ হয় না৷ আমিও আবার শুনলাম, যে অর্থের অভাব নেই৷ এই রোগের চিকিৎসার কায়দা জানে এবং আক্রান্ত মানুষদের সেবা করতে পারে, এমন লোকের অভাব রয়েছে৷
ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে?
এত চাহিদা আমরা আর সামলাতে পারছি না৷ সব ক্ষেত্রে আমরা কিছু করতে পারছি না৷ এমনকি ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর সব কর্মীর জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারছি না৷ গোটা বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন, সরকার, সেনাবাহিনী – সবাই প্রশিক্ষণ চাইছে৷ কিন্তু আমাদের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷ আমরা আরও মানুষের প্রশিক্ষণের চেষ্টা করছি৷ এছাড়া আমরা অন্যান্য সংগঠনগুলির জন্য এমন ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করতে চাই, যাতে তারা নিজেরাই এমন প্রশিক্ষণ দিতে পারে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে৷ এবোলার ক্ষেত্রে কোনো কথা ভুল বুঝলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷
এই মুহূর্তে অন্য কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে?
Quadriga - Ebola Epidemic - Too Little, Too Late
42:33
অ্যামেরিকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন কনট্রোল' অ্যাটলান্টায় এক ট্রেনিং কর্মসূচি চালু করেছে৷ আগে তাঁরা আমাদের কাছে এসেছিলেন৷ আমরা তাঁদের প্রশিক্ষণের পদ্ধতি দেখিয়েছি৷ এখন ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর প্রশিক্ষকরা অ্যাটলান্টায় গেছেন৷ তাঁরা হয়ত ভবিষ্যতের ট্রেনিং-এও সাহায্য করবেন৷ সেখানেও এখানকার মতো এক ‘সিমুলেশন সেন্টার' গড়ে তোলার কথা হচ্ছে৷
মনস্তত্ত্ববিদ ফাবিয়েন দ্য লেভাল ব্রাসেলসে ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর জন্য কাজ করেন৷ তিনি এবোলা পীড়িত এলাকায় সাহায্যকারীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন৷ এই মুহূর্তে তিনি ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণকারীদের আবেদন সমন্বয় করছেন৷