1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ক্লোরিনই তোমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু’

৮ অক্টোবর ২০১৪

অর্থের অভাব নেই, চাই শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাহায্যকর্মী৷ ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স’ সংগঠন তাই ব্রাসেলস-এ গোটা বিশ্ব থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ এই কাজের সমন্বয় করছেন ফাবিয়েন দ্য লেভাল৷

ছবি: picture-alliance/dpa

ডিডাব্লিউ: ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স' সাবধান করে দিয়ে বলেছে, এবোলার বিরুদ্ধে সংগ্রামে পরাজয় ঘটবে, যদি না এর বিরুদ্ধে আরও উদ্যোগ নেয়া হয়৷ এবোলা পীড়িত এলাকার জন্য সাহায্যকারী খোঁজা কত কঠিন?

ফাবিয়েন দ্য লেভাল: ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স' সংগঠনের মধ্যে এটা কোনো সমস্যা নয়৷ আমাদের এখানে অনেক স্বেচ্ছাসেবী আছেন৷ সমস্যা হলো, তাঁদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা কম৷ আমি বলতে চাইছি ডাক্তার ও নার্স, পানীয় জল ও নিকাশি ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞদের কথা, যাঁদের এবোলা পীড়িত এলাকায় কাজের জন্য উপযুক্ত জ্ঞান রয়েছে৷ সাধারণত এবোলা মহামারি কম সময়ের জন্য ঘটে৷ তাই আমরা এতকাল সব সময়ে ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর অভিজ্ঞ কর্মীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাইনি৷ কিন্তু এবার মহামারির আকার এত বড়, যে তা সামলাতে আমাদের যথেষ্ট কর্মী নেই৷ বর্তমানে আমরা সপ্তাহে প্রায় ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে তাঁরা এবোলা পীড়িত এলাকায় কাজ করতে পারেন৷

ফাবিয়েন দ্য লেভালছবি: Ärzte ohne Grenzen

এই প্রশিক্ষণ ঠিক কী রকম?

প্রথমেই দেখতে হবে, হাসপাতালে এবোলা-রোগীদের চিকিৎসা কী ভাবে হবে৷ দুই দিনে আমরা এবোলা মহামারি সংক্রান্ত সব বিষয়ের দিকে নজর দিই৷ যেমন মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা, রোগের চিকিৎসা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ – এই সব৷ তবে এত কম সময়ে আমরা বিষয়গুলির গভীরে যেতে পারি না৷

প্রশিক্ষিতদের জন্য আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ কী?

সবার আগে আমরা তাদের বলি – নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দাও৷ অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সাহায্যকারীদের সবার আগে নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হয়৷ তাই প্রশিক্ষণের সময় সংক্রমণের বিপদের দিকটা ভালো করে বোঝা দরকার৷ ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করলে সাহায্যকারীদের বলতে হবে, সে দিন তারা কাজ করতে পারবে না৷

অভিযানের সময় সাহায্যকারীদের কোন বিষয়ে নজর দিতে হবে?

আরেকটি পরামর্শ আমরা সব সময়ে দিয়ে থাকি৷ বলি, ক্লোরিনই তোমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু৷ এবোলা পীড়িত এলাকায় কোনো সুরক্ষা নেই৷ তোমার হাতে একমাত্র ক্লোরিন রয়েছে৷ কোনো মানুষ অথবা বস্তুকে স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত বা শরীরের অন্য অংশ ক্লোরিন সলিউশন দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷

এবোলা পীড়িত এলাকায় কাজ করলে সাহায্যকারীদের মানসিক অবস্থা কী হয়?

ফাবিয়েন দ্য লেভাল: এমন এলাকায় চারিদিকে মৃত্যুর ছায়া৷ এতে মনের উপর খুব চাপ পড়ে৷ সাধারণত আমরা মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করি৷ কিন্তু এবোলা পীড়িত এলাকায় যাবার সময় আমরা জানি, আমাদের চেষ্টা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মৃত্যু হবে৷ হয়ত কিছু মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবো৷ কিন্তু আসল লক্ষ্য হচ্ছে মহামারির প্রসার রোধ করা এবং নিশ্চিত করা, যাতে মানুষ মর্যাদার সঙ্গে মৃত্যু বরণ করে নিতে পারে৷ এত বড় চাপ সামলানো বেশ কঠিন৷ তার উপর এমন প্রতিরোধক পোশাক পরতে হয়, যা স্বাভাবিক রিফ্লেক্স অ্যাকশনেও বাধা সৃষ্টি করে৷ কেউ কান্নাকাটি করলে সাহায্যকারীরা তাকে জড়িয়ে ধরতে পারে না৷ কোনো শিশুকে আদর করতে বা সান্ত্বনা দিতে কাছে টেনে নিতে পারে না৷ এমন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখানোরও উপায় নেই৷ হাত-পা নাড়াচাড়ার বিষয়টিও নতুন করে ভাবতে হয়৷

সারাদিন কাজের পর কী করতে হয়?

এবোলা চিকিৎসা কেন্দ্রে আমাদের কড়া নিয়ম হলো, সাহায্যকারীরা পরস্পরকেও ছুঁতে পারবে না৷ কাজের শেষে ঘরে ফিরেও তারা সব ভুলে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে পারবে না৷ এটা সাহায্যকারীদের পক্ষে মেনে নেওয়া বেশ কঠিন৷ কিন্তু সংক্রমণের ঝুঁকি কম রাখার এটাই একমাত্র উপায়৷

আপনাদের প্রশিক্ষণে কারা অংশ নেয়?

সারা বিশ্ব থেকেই অংশগ্রহণকারীরা আসে৷ শুধু ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স' সংগঠনেই ৯০টি দেশের সাহায্যকারী সক্রিয় রয়েছে৷ আমরা অন্যান্য সংগঠনের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছি – যেমন ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কর্পস, রেড ক্রস, সেভ দ্য চিলড্রেন৷ জাতিসংঘের কয়েকজন কর্মীও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷

এক বেসরকারি সংগঠনকে কেন এমন প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে?

এটা ঠিক যে এমন প্রশিক্ষণ আসলে আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না৷ আমরা সাধারণত সরাসরি অভিযানে অংশ নিই৷ কিন্তু একমাত্র আমাদেরই এবোলার চিকিৎসার বিশেষ জ্ঞান রয়েছে৷ কিন্তু আমরা জানি, আমাদের একার পক্ষে এই মহামারির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ আমাদের জ্ঞান অন্যান্য সংগঠনগুলির কাছে বিতরণ করা নৈতিক দায়িত্ব, যারা এই এলাকায় কাজ করছে৷

বিভিন্ন দেশের সরকার কি আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করছে?

অবশ্যই অনেক আর্থিক সাহায্য আসছে৷ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাইবেরিয়ায় অনেক চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করেছে৷ কিন্তু যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী না থাকায় তাতে কোনো কাজ হয় না৷ আমিও আবার শুনলাম, যে অর্থের অভাব নেই৷ এই রোগের চিকিৎসার কায়দা জানে এবং আক্রান্ত মানুষদের সেবা করতে পারে, এমন লোকের অভাব রয়েছে৷

ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে?

এত চাহিদা আমরা আর সামলাতে পারছি না৷ সব ক্ষেত্রে আমরা কিছু করতে পারছি না৷ এমনকি ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর সব কর্মীর জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারছি না৷ গোটা বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন, সরকার, সেনাবাহিনী – সবাই প্রশিক্ষণ চাইছে৷ কিন্তু আমাদের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷ আমরা আরও মানুষের প্রশিক্ষণের চেষ্টা করছি৷ এছাড়া আমরা অন্যান্য সংগঠনগুলির জন্য এমন ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করতে চাই, যাতে তারা নিজেরাই এমন প্রশিক্ষণ দিতে পারে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে৷ এবোলার ক্ষেত্রে কোনো কথা ভুল বুঝলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷

এই মুহূর্তে অন্য কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে?

Quadriga - Ebola Epidemic - Too Little, Too Late

42:33

This browser does not support the video element.

অ্যামেরিকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন কনট্রোল' অ্যাটলান্টায় এক ট্রেনিং কর্মসূচি চালু করেছে৷ আগে তাঁরা আমাদের কাছে এসেছিলেন৷ আমরা তাঁদের প্রশিক্ষণের পদ্ধতি দেখিয়েছি৷ এখন ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর প্রশিক্ষকরা অ্যাটলান্টায় গেছেন৷ তাঁরা হয়ত ভবিষ্যতের ট্রেনিং-এও সাহায্য করবেন৷ সেখানেও এখানকার মতো এক ‘সিমুলেশন সেন্টার' গড়ে তোলার কথা হচ্ছে৷

মনস্তত্ত্ববিদ ফাবিয়েন দ্য লেভাল ব্রাসেলসে ‘ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর জন্য কাজ করেন৷ তিনি এবোলা পীড়িত এলাকায় সাহায্যকারীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন৷ এই মুহূর্তে তিনি ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণকারীদের আবেদন সমন্বয় করছেন৷

সাক্ষাৎকার: কাটারিনা ক্যুন/এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ