1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষতির মুখে চামড়া ব্যবসা

আসমা মিতা
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এ বছর পরপর তিন দফার বন্যা ও দেশের বাইরে থেকে পশু আমদানি কম হওয়ায় কোরবানির পাশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ কমেছে৷ ট্যানারি মালিক, চামড়া ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা এবার বড় ক্ষতির আশংকার কথা জানিয়ছেন৷

Hazaribagh eine Gerberei in Bangladesch
ছবি: DW

এই মৌসুমে ৮শ' থেকে ২ হাজার কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হলেও এবার এরইমধ্যে ৫-৬ শ' কোটি টাকার চামড়া  সরবরাহ কম হওয়ায় এই ক্ষতির আশংকা করছেন তাঁরা৷ 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)-র সভাপতি শাহীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এবার আসলে চামড়াকে ঘিরে আমাদের যে টার্গেট ছিল তা বাস্তবায়ন হবে না৷ ২০টি জেলাতে বন্যার কারণে পশু কোরবানি কম হয়েছে৷ প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় ১০ ভাগ বেশি পশু জবাই হয়ে থাকে৷ কিন্ত এবার একদিকে বন্যা, অন্য দিকে দেশের বাইরে থেকে পশু কম এসেছে৷ সব মিলিয়ে শতকরা ২০ ভাগ কম চামড়া পাওয়া যাবে৷ ''

তিনি বলেন,  ‘‘এবার ৬০-৬৫ লাখ গরুর চামড়া সংগ্রহ করার টার্গেট ছিল৷ সেখানে হয়ত ৫০ লাখ পিস পাওয়া যাবে৷ ছাগল ও অন্যান্য পশুর চামড়া ২৫ লাখের মতো আশা করা হলেও ১৫ লাখের মতো আসবে৷''

এক্ষেত্রে বন্যাকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি৷ এর বাইরে, কোরবানির সময় ভারত ও মিয়ানমার থেকে এই পশুগুলো আসে৷ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই সেখান থেকে পশু আসেনি৷ এছাড়া শুধু ভারত থেকেই আসে ১৯- ২০ লাখ পশু৷ সীমান্তে ভারত সরকার কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছুদিন ধরে সেখান থেকে গরু আসাও কমে গেছে বলে জানান শাহীন আহমেদ৷

শাহীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

তবে কেবল এই দুই কারণই নয়, এর বাইরেও কোরবানির আগে আগে লবণের বাজার গরম হয়ে ওঠা, রাজধানী থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেয়াসহ বেশকিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন কাঁচামাল সংগ্রহকারী , আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা৷ তাঁদের মতে, এসব কারণেই চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি এবার৷

এ বছর লবণ আগের বছরের তুলনায় বস্তা প্রতি ১৩- ১৪শ' টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে৷ দাম বাড়ার কারণে লবণের তীব্র সংকটে পড়তে হয়৷ যার প্রভাব পড়ে প্রাথমিক মজুতদারদের ওপর৷ ফলে আড়তদারদের কাছে তাঁরা লবণ বেশি দামে বিক্রি করেন৷ চাহিদা মেটাতে এবার সরকারকে পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানি করার অনুমতি দিতে হয়েছিল্৷ ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, ‘‘‘লবণের জন্য এবার যে ভোগান্তি হয়েছে তা আর কখনো হয়নি৷''

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় এবার গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ৫০- ৫৫ টাকা ঠিক হয়েছিল৷ সেই চামড়া আড়ত মালিকরা কিনেছেন ৬০-৬৫ টাকায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়৷ আর ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকায় হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ৫০ থেকে ৫৫,  আবার কোথাও কোথাও ৬০ টাকাতেও কিনতে হয়েছে৷ অর্থাৎ সরকারের সাথে একমত হয়ে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেও সেই দামে শেষ পযর্ন্ত স্হির থাকা যায়নি৷

ঢাকায় গত পাঁচ বছরে কোরবানির গরুর চামড়ার দাম (প্রতি বর্গফুট)

২০১৩      ৮৫-৯০ টাকা

২০১৪      ৭৫-৮০ টাকা

২০১৫      ৫০–৫৫ টাকা

২০১৬      ৫০ টাকা

২০১৭        ৫০-৫৫ টাকা

ট্যানারি মালিকদের অ্যাসোসিয়েশন জানায়, গত বছর ৫৫ লাখ পিস গরু, ছাগল ও মহিষ মিলিয়ে ২০ লাখ পিস  চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল৷ তাতে টার্গেটও পূর্ণ হয়েছিল৷ কিন্ত এ বছর আর তা হচ্ছে না৷ এবার গরুর চামড়ার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ লাখের মতো৷ একইভাবে ছাগল ও অন্যান্য পশুর চামড়াও কমেছে৷

রবিউল আলম

This browser does not support the audio element.

ইটিপি স্থানান্তরের পর বতর্মানে ১৫৫টি ট্যানারির কাজ চলছে, ৫৮টি প্রাথমিক উৎপাদনে আছে, ১০টি কোম্পানি রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে৷ ইটিপি স্থানান্তরের ফলে অনেক ট্যানারি পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ব্যাংক ঋণগ্র্রস্ত হয়েছে৷

বাংলাদেশ লেদার অ্যাণ্ড গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো্. আরিফ জানান, ‘‘হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো সাভারে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় এবার চামড়া কেনার চাহিদা অনেক কমে গেছে৷''

ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, ‘‘চামড়ার দুর্দিন যাচ্ছে এখন৷ দুইশ' ট্যানারি এখনো চালু হয়নি৷ ৬৮টি প্রাথমিক উৎপাদনে গেছে৷ আমরা যারা কাঁচা চামড়ার ব্যবসা করে থাকি, তারা তাকিয়ে থাকি ট্যানারির মালিক ও সরকারের দিকে৷ সরকারকে দেখতে হবে ট্যানারির মালিকরা সঠিক দামে কিনতে পারছে কিনা৷ আর তা না হলে মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া রক্ষা করা যাবে না৷''

 

এ ব্যাপারে তিনি অবশ্য ট্যানারি মালিকদের বিরুদ্ধে ম্যানিপুলেশনের অভিযোগও করেন৷ বলেন, ‘‘ট্যানারির মালিকরা সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার দাম কমায়৷ তারা যদি সঠিক দাম না দেয়, তাহলে খুব মুশকিল হয়ে যায়, যার পরিণতি সবার জন্যই খারাপ হবে৷'' ট্যানারির মালিকরা সময়মতো টাকা পরিশোধ করেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘গত বছর অনেক ট্যানারির মালিক ১০-১৫ ভাগ মূল্য পরিশোধ করেছেন৷ কোনো কোনো মালিক তো কোনো টাকাই পরিশোধ করেননি৷ বাকিতে চামড়া কিনেছেন৷ অনেক ট্যানারির মালিক আমাদের টাকা-পয়সা না দিয়ে আত্মগোপনে আছেন৷''

এই অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)-র সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘‘কয়েকটা হাত বদল হয়ে আমাদের কাছে চামড়া আসে৷ ফলে সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সেই দামে আমরা কিনতে পারি না৷ বরং তার চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি টাকা দিয়েও আমাদের কিনতে হয়৷ বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনেছে৷ সেই সময় স্টক করে এখন তারা মুনাফা করছে৷ তারা খুব কম সময়ে তাদের বিনিয়োগ ফেরত পেতে চায়৷ তাই বেশি দামে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দিতে চায় তারা৷ মাঝের কয়েকটা দিন যাদের কাছে চামড়াগুলো থাকে, তারা কয়েকটা দিন চামড়া রাখে৷ আর আমাদের কাছে বিক্রি করতে বা পৌঁছাতে পৌঁছাতেই তার দাম বেড়ে যায়৷ ফলে আমাদেরকে আরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে৷ অর্থাৎ এই মধ্যস্বত্তভোগীরাই মূলত কাঁচা চামড়ার এই মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে৷''

শাহীন আহমেদ আরো বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারদর কমা চামড়ার সংগ্রহ ও ব্যবসার ক্ষতির পেছনে আরেক বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে৷ আগের বছরগুলোতে চামড়ার সংগ্রহ ভালো থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর কমায় গত প্রায় তিন বছর থেকে লোকসানে আছি আমর৷ বিশেষত আমাদের বেঞ্চমার্ক ইউএস হাইড, ব্রাজিলিয়ান হাইডের অবস্থান যেহেতু পড়তির দিকে, ওইভাবেই বাংলাদেশকেও দাম নির্ধারণ করতে হয়েছে৷ তিন বছর ধরেই এইরকম চলছে যে, ট্রেণ্ড এখনও অব্যাহত আছে৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি৷'' 

শাহীন আহদেম জানান, ‘‘ইউএস হাইড ২০১৩-২০১৪ সালে প্রতি কিলোগ্রামের দাম রাখতো ১০৫ ডলার৷সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ২০১৭-তে এসে দাঁড়িয়েছে ৭০ ডলারে৷ যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের পণ্যের দামও তারা অনেক কম করে নির্ধারণ করে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ