এক মাস আগে সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া সুদানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে পুনর্বহাল করতে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী৷
বিজ্ঞাপন
গত মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন আবদাল্লাহ হামদক৷ এরপর সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলতে থাকে৷ বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
কয়েক সপ্তহের আলোচনা শেষে রোববার সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে ক্ষমতায় পুনর্বহাল কারার বিষয়ে একটি চুক্তি সই করেছে৷ তবে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে পুনর্বহাল করা হবে৷ পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি সুদানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে৷
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ২০২৩ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন হামদক৷
চুক্তি স্বাক্ষরের পর হামদক বলেন, ‘‘সুদানের প্রতিটি নাগরিকের জীবন গুরুত্বপূর্ণ৷ চলুন আমরা রক্তপাত বন্ধ করে তরুণদের এ শক্তিকে উন্নয়নের কাজে লাগাই৷''
বন্দিদেরমুক্তিদেবেসেনাবাহিনী
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে হামদক জানান, সেনাবাহিনীর সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, তিনি স্বাধীনভাবে মন্ত্রণালয় গঠন করতে পারবেন৷
সুদানের রাস্তায় বিক্ষোভ, সেনার গুলি
সোমবার সুদানের ক্ষমতা দখল করেছিল সেনা। তারপর থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সেনার গুলি।
ছবি: AFP/Getty Images
সেনার গুলি, মৃত অন্তত সাত
সুদানের রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। সেনার বিরুদ্ধে সরব মানুষ। সেনার পাল্টা গুলি। অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১৪০। হাসপাতাল সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা বাড়ছে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
রাস্তাই একমাত্র রাস্তা
হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গুলির চালিয়েও তাদের প্রতিবাদ বন্ধ করা যায়নি। যেভাবে সোমবার সেনা ক্ষমতা দখল করেছে, সাধারণ মানুষ তার প্রতিবাদ করছেন। পুরনো সরকার ফেরানোর দাবি করছেন।
ছবি: Ashraf Idris/AP Photo/picture alliance
মধ্যবর্তী সরকার
সুদানে এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারই শাসন করছিল। দেশ পরিচালনায় সামরিক ও রাজনৈতিক দলের নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ যার প্রধান ছিলেন আব্দাল্লা হ্যামডক। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার সেনা তাকে গ্রেপ্তার করে গোপন ডেরায় নিয়ে যায়।
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
সেনার অভ্যুত্থান
সোমবার সকালে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চালায় সেনা। সভরেন কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান হয়। এরপরেই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
ছবি: Mahmoud Hjaj /AA/picture alliance
গ্রেপ্তার মন্ত্রীরা
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশের অধিকাংশ মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকলকেই অজানা ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুরহান জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্যই এই অভ্যুত্থান হয়েছে।
ছবি: Rasd Sudan Network/AA/picture alliance
২০১৯ সালের অভ্যুত্থান
তিন দশক ধরে সুদানের শাসন ক্ষমতা ছিল ওমর আল-বশিরের হাতে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপরেই সামরিক এবং রাজনৈতিক দলের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ২০২৩ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নতুন নির্বাচিত সরকার গঠনের কথা ছিল।
ছবি: Getty Images/AFP/E. Hamid
বুরহানের দাবি
বুরহান জানিয়েছেন, আগামী দুই বছর সামরিক শাসন জারি থাকবে। তবে ২০২৩ সালের নির্বাচন হবে। সেনাই সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
সাধারণ মানুষের বক্তব্য
সাধারণ মানুষ বলছেন, এর ফলে সুদানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে গেল। সেনা নতুন করে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিল দেশকে।
ছবি: Nureldin Abdallah/REUTERS
বিশ্বের নিন্দা
অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে সোমবার রাতেই বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সুদানের ঘটনা অত্যন্ত চিন্তার এবং দুঃখজনক। দুই বছর আগে রীতিমতো বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক শক্তি একনায়ক শাসককে ক্ষমতাচ্যূত করেছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটি নষ্ট করে দেওয়া হলো।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
অনুদান বন্ধ
অ্যামেরিকা এবং জাতিসংঘ সুদানের নতুন শাসককে অনুদান দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে। সুদানের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। অনাহারে আছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি অনুদান বন্ধ হলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
10 ছবি1 | 10
জানা গেছে, দেশটিতে চলমান বিক্ষোভে রক্তপাত ঠেকাতেই তিনি সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তিতে রাজি হয়েছেন৷
এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ বুরহান ধন্যবাদ হামদককে জানিয়ে বলেন, ‘‘তিনি ধৈর্য্য ধরে এখন (চুক্তিতে পৌঁছা পর্যন্ত) পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন৷''
১৪ দফার এ চুক্তি অনুযায়ী, সকল রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেবে সেনাবাহিনী৷
ইউরোপওযুক্তরাষ্ট্রেরপ্রতিক্রিয়া
হামদককে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফরেন পলিসি চিফ ইয়োজেফ বোরেল বলেন, ‘‘অক্টোবরের সেনা অভ্যুত্থানের পর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে৷ শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের জন্য সুদানের জনগণ একতা ও অন্তর্ভুক্তি দেখতে চায়৷''
নতুন এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটি হলো অন্তর্বতীকালীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার প্রথম ধাপ৷''
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, দুপক্ষের এ আলোচনার ফলে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, প্রধানমন্ত্রীর পুনর্বহাল, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং সমন্বয় প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি ইতিবাচক৷
তবে সুদানের গণতন্ত্রপন্থী কিছু গোষ্ঠিী চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের দাবি, সেনা অভ্যুত্থানের সাথে যুক্ত ব্যাক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে৷ সেই সাথে জনগণের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তাদের৷