ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফরিদপুরের আসলাম ফকির এখন রাজনীতির মাঠে৷ কীভাবে আসলাম কারাগার থেকে মুক্ত হলেন ও রাজনীতি শুরু করলেন, তা দৈনিক প্রথম আলোতে তুলে ধরেছেন প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম৷ এই আলাপচারিতা তাঁর সঙ্গেই৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: আসলাম ফকিরকে আপনি কী কারণে অনুসরণ করতে উৎসাহিত হয়েছিলেন?
রোজিনা ইসলাম: আসলাম ফকিরের প্রাণভিক্ষার আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছিল৷ যাদের আবেদন সাধারণত এ পর্যন্ত আসে, ধরেই নিতে হয় যে নিশ্চয়ই এর পেছনে ক্ষমতাবান কেউ আছে৷ আর অনেক বড় কোনো অপরাধ করলেই সাধারণত ফাঁসির আদেশ হয়৷ এই আসলাম ফকিরের ঘটনাতে দেখা গেল যে তিনি আরেক জনপ্রিয় ইউপি সদস্যকে খুন করেছিলেন বলে তার ফাঁসির দণ্ড হয়েছিল৷ ২০১৬ সালে একদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জানতে পারলাম, এক ফাঁসির আসামীর রাতে ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি৷ বরং অসুস্থ বলে সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে৷ এরপর থেকে আমি নিয়মিত খোঁজ নিতে থাকলাম৷ কবে মুক্তি পান সে ব্যাপারে৷ এরপর তিনি মুক্তি পেলেন৷ এলাকায় গেলেন৷ আমরা ‘ফলো' করতে থাকলাম৷ দেখলাম, ক'দিনের মাথাতেই তিনি রাজনীতি শুরু করেছেন৷ এখানে বলে রাখা ভালো যে, ২০১৩ সালে প্রথম তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু তখন তা মওকুফ হয়নি৷ তবে এবার মুক্ত হয়েই তিনি জানান যে, তার অসুস্থতার খবর একেবারেই সত্যি ছিল না৷ তাছাড়া ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ ও তাঁর স্ত্রী সাংসদ নিলুফার জাফর উল্যাহর সঙ্গে এলাকার নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল, যাচ্ছে আসলাম ফকিরকে৷ এমনকি প্রকাশ্য মঞ্চেও তাঁরা এ কথা স্বীকার করেছেন৷
রোজিনা ইসলাম
This browser does not support the audio element.
এই ধরনের উদাহরণ কি আপনার আরও জানা আছে বলেই আপনি এই ঘটনা পর্যবেক্ষণের উৎসাহ পেয়েছিলন?
ফাঁসির আসামিদের নিয়ে আমি আরও অনেক কাজ করেছি৷ যেমন লক্ষীপুরের তাহের হত্যার একটা ঘটনা আছে৷ সেটা ফলো করতে গিয়েই মূলত আমি এ ধরনের ঘটনার পেছনে লেগে থাকা শুরু করি৷ যতবারই যত আসামি প্রাণভিক্ষার আবেদন করত, ততবারই আমি লিখতাম৷ বরিশালের আলোচিত চাপা হত্যা, জয়ন্তী রেজা হত্যা – এই ঘটনাগুলের পেছনে অনেক প্রভাবশালী ছিল৷ আমাদের রিপোর্টের কারণে শেষ পর্যন্ত আর প্রাণভিক্ষা পাননি তারা৷ সর্বশেষ উদাহরণ শীর্ষ সন্ত্রাসী যোসেফ৷ তার সাজা মওকুফ করতে অনেক তোড়জোড় হয়েছে৷ তবে আসলাম ফকিরের ঘটনা তো খুবই ‘ইন্টারেস্টিং'৷ কারণ ২০১৩ সালে একবার তার আবেদন নাকচ করা হয়েছিল৷ এরপর আবারও তিনি কীভাবে ছাড়া পেলেন, তাও আবার ফাঁসির আদেশ কার্যকরের দিন? আইনের শাসনে এ রকম ঘটনা আসলে দু'বার ঘটে না৷ এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় বাংলাদেশে আসলে আইনের ফাঁকফোকরটা কোথায়!
এ ধরনের প্রতিবেদন করতে গিয়ে আপনার কি মনে হয় যে আইনের গলদ নয়, আইন ঠিকই আছে৷ কিন্তু প্রভাবশালীদের কারণে অপরাধীরা ফাঁক গলে বের হয়ে যাচ্ছে?
আইনে তো আসলেই ফাঁসির আসামিরও সাজা মওকুফ করার বিধান আছে৷ রাষ্ট্রপতি তা করতে পারেন৷ যাদের ফাঁসির আদেশ হয়, তারা নিশ্চয় সবাই এই আবেদন করেন৷ কিন্তু সবারটা কি মওকুফ হয়? হয় না৷ পেছনে প্রভাবশালী কেউ না থাকলে সেই আবেদন কি কারা অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়? মন্ত্রণালয় কি সেটা ফাইল করে? আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত লাগে৷ তারপর সেটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যায়৷ তারও পরে যায় রাষ্ট্রপতির কাছে৷ এটা তো একটা লম্বা প্রক্রিয়া৷ এতকিছু তখনি সম্ভব, যখন পেছনে কোনো ক্ষমতাবান থাকে৷ অন্যথায় নয়৷
বাংলাদেশে আইনের কিছু ফাঁকফোকর
বাংলাদেশের প্রায় সব আইনেই আছে ফাঁকফোকর৷ এ কারণে প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার নজিরও অনেক৷ অপরদিকে আইনের এই ফাঁকফোকরের কারণে নিরীহ মানুষও অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ফাঁকের কারণে মূল আসামীরা প্রায় সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়৷ এ আইনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আলামত জব্দ করা৷ অর্থাৎ কার দখলে কিংবা কোন জায়গা থেকে মাদক জব্দ করা হয়েছে সেটাই প্রধান বিবেচ্য৷ তাই এ ধরনের মামলায় মাদক দ্রব্যের বাহক, অর্থাৎ চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও আসল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে৷
ছবি: picture-alliance/epa/Barbara Walton
যৌতুক নিরোধ আইন
যৌতুক নিরোধ আইনে নানান ফাঁকের কারণেও অনেকক্ষেত্রেই পার পেয়ে যায় অপরাধী৷ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গে পরিপন্থি না হলে এ আইনে যৌতুক বলতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বোঝাবে৷ তবে কোনো উপঢৌকন যৌতুক হিসেবে গণ্য হয় না এ আইনে৷ ফলে হালে সমাজে উপঢৌকন বা উপহারের নামেও যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নারী ও শিশু নির্যাতন আইন
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, তা বলা নেই৷ তবে এরপর মামলার বিচারকাজ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী চলার কথা৷ তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচারকাজ বা তদন্ত শেষ করতে না পারলে আসামিরা জামিন পেতে পারে – উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তও রয়েছে৷ এ সিদ্ধান্তের কারণেও এ আইনে তৈরি হয় ‘ফাঁক’ আর সেই ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায় আসামীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
অর্থঋণ আইন
অর্থঋণ আইনেরও সমালোচনা রয়েছে৷ আইনে ফাঁক থাকায় ঋণখেলাপিরা ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েও তা পরিশোধ করেন না বা করতে চান না৷ বাংলাদেশে আইনের ফাঁক গলে ঋণখেলাপিদের পার পেয়ে যাওয়ার নজির অনেক৷ উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের অর্থঋণ আইনে ঋণখেলাপির কোনো সংজ্ঞাই নেই৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
অস্ত্র আইন
বাংলাদেশে যে অস্ত্র আইন প্রচলিত আছে, তা ১৮৭৮ সালে প্রণীত৷ বিভিন্ন ধারায় সরকারি অনুমোদন ছাড়া অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার, প্রদর্শন, ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ করা এ আইনের ১৯এ আর ১৯এফ ধারায়ই সাধারণত অবৈধ অস্ত্র দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ তবে যারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না৷
ছবি: Getty Images/AFP
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন
পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু নিবারণের উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’৷ এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ তবে এ আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কারাদণ্ড অথবা জরিমানা করতে পারবেন আদালত৷ ফলে হেফাজতে নির্যাতন করে মৃত্যু ঘটিয়েও শুধু জরিমানা দিয়েই মুক্তি পেতে পারবে অপরাধী৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Z. Chowdhury
6 ছবি1 | 6
অর্থাৎ প্রভাবশালীতের কারণেই আইনের দুর্বলতার সুযোগ নেয়া যাচ্ছে?
হ্যাঁ৷ যদি ক্ষমতাসীন দল পাশে থাকে তাহলে সবকিছু একটু সহজ হয়ে যায়৷ আমি এতদিন ধরে কাজ করতে গিয়ে দেখছি, যে সব আবেদন ফাইল করা হয়, সেগুলোর পেছনে প্রভাবশালী কেউ আছেন৷ এর পেছনে দৌড়াদৌড়ি করছেন৷
কোন প্রক্রিয়ায় গিয়ে খবরগুলো বের করেন?
আমাদের পত্রিকার নির্দেশ আছে, যখন যে বিষয় নিয়ে কাজ করব, তখন সে সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য-প্রমাণসাথে নিয়ে এগোতে হবে৷ সরেজমিন করতে হবে৷ সবগুলো দিক থাকতে হবে৷ প্রতিটি ঘটনার ‘ফলোআপ' করতে চেষ্টা করি৷ ফলোআপ না করলে হয়ত আসলাম ফকিরের এই ঘটনাও আমি পেতাম না৷ কাজেই ফলোআপ করা খুব জরুরি৷
ফলোআপের এ ধরনের আর কোনো অভিজ্ঞতা?
একটা রিপোর্টের কথা মনে করতে পারি....চাকুরির শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার হিড়িক৷ তখন ছ'জন সচিব মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছিলেন৷ পরে তাঁদের সনদ বাতিল করা হয়৷ তাঁদেরকে চাকুরি ছাড়তেও বাধ্য করা হয়েছিল৷ সেই ধারাবাহিকতায় আমি ফলোআপ করে গেছি এবং বহু অমুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে৷ এরপর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বর্ণের ক্রেস্ট দেয়ার ওপর একটা রিপোর্ট করেছিলাম৷ যে ক্রেস্টে কোনো স্বর্ণই ছিল না৷ আমি এখনও সেই ঘটনা ফলোআপ করি৷ একটা করতে গিয়ে আরেকটার খোঁজ পাই৷ কিছু মানুষ আছেন যাঁরা চান যে এই অপরাধগুলো যেন না হয়, তাঁরাই সাহায্য করে তথ্য দিয়ে৷
রাস্তায় নৈরাজ্য, যেন আইন ভাঙার হিড়িক
১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা৷ শুধু রাজধানীই নয়, দেশের আইন-শাসন-বিচার বিভাগ এখান থেকেই পরিচালিত হয়৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্যসহ নানা কাজের কেন্দ্রও এটাই৷ অথচ কোনো সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই ঢাকায়৷
ছবি: bdnews24.com
উলটো পথে চলাচল
ঢাকা শহরে নানা ট্রাফিক অব্যবস্থপনার মধ্যে উলটো পথে চলা অন্যতম৷ বাইকার, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভিআইপি – অনেকেই নিজের তাড়াতাড়ি যাওয়া নিশ্চিত করতে উলটো পথে গাড়ি ছোটান৷ তাতে আরো বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন রাস্তায় নামা সাধারণ মানুষ৷
ছবি: bdnews24.com
বেপরোয়া ড্রাইভিং
এমনিতে হয়ত যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেক গাড়িকে৷ তবে রাস্তা ফাঁকা পেলে যেন দেরি সয় না অনেক চালকের৷ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দেন তাঁরা৷ এর ফলে অনেক সময়ই প্রাণ যায় মানুষের৷ প্রিয়জন হারানোর আহাজারিতে ভারী হয় আকাশ বাতাস৷ কেবল ঢাকার রাস্তাতেই প্রতি বছর কয়েক শত মানুষের প্রাণ যায়৷
ছবি: bdnews24.com
যত্রতত্র পার্কিং
ঢাকা মহানগরের সড়কগুলো আর যাই হোক, বিপুল পরিমাণ মানুষ আর যান বাহনের চাপ সামলানোর মতো নয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত৷ সরু সেই সব রাস্তার অবস্থা আরো করুণ হয়ে যায়, যখন যত্রতত্র পার্কিংয়ে এই রাস্তা আরো সরু হয়ে যায়৷
ছবি: bdnews24.com
অননুমোদিত ড্রাইভিং
গত মে মাসে এক স্কুলছাত্র এই গাড়িটি নিয়ে বের হয়ে পড়ে রাস্তায়৷ অননুমোদিত এই ড্রাইভিংয়ে আহত হয় আরেক শিশু৷ অবৈধ ড্রাইভিংয়ে কেবল শিশু নয়, বড়রা জড়িয়ে পড়েন৷ লাইসেন্স ছাড়াই অনেকে নেমে পড়েন রাস্তায়৷ লাইসেন্স থাকলেও মাদক গ্রহণের পর, শারিরীক বা মানসিকভাবে অনুপযুক্ত অবস্থায়ও গাড়ি চালানো আইনে নিষেধ৷ সড়কে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো, রেসে অংশ নেয়াও নিষিদ্ধ৷ বীমার বাধ্যবাধকতাও অনেকে মানেন না৷
ছবি: bdnews24.com
উলটো পথে চললে চাকা ফুটো
উলটো পথে গাড়ির চলাচল বন্ধ করতে একটি যন্ত্র বসিয়েছিল ট্রাফিক পুলিশ৷ কথা ছিল গাড়ি উলটো পথে চললে তাতে চাকা ফুটো হয়ে যাবে৷ কিছুদিন পর এই যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে যায়৷ ঢাকা শহরের গাড়িকে স্বয়ংক্রিয় সংকেত বাতির উপর নির্ভরশীল করে দিতে সর্বশেষ ২০১৫ সালে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়৷ কিন্তু পুলিশের অসহযোগিতায় সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এই শহরে ট্রাফিক আইন ভাঙা মামলাও হয় গতানুগতিকভাবে, হাতে লিখে৷
ছবি: bdnews24.com
যত্রতত্র পথচারীদের চলাচল
ঢাকার রাস্তায় আরেক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে খোদ পথচারীরাই৷ নির্ধারিত জায়গার পরিবর্তে যেখানে সেখানে রাস্তা পার হয়ে যান তাঁরা৷ রাজধানীতে পথচারীদের আইন না মানার প্রবণতাও এখানকার দুর্ঘটনার একটা কারণ৷
ছবি: bdnews24.com
আইন প্রয়োগে ফাঁকি
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে নানা আইন থাকলেও, সেটা প্রয়োগে ফাঁকি রয়েছে৷ প্রায়ই খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সদস্যকেই আইন ভাঙতে দেখা যায়৷ লেগুনা নামের এই ‘আনফিট’ গাড়ি ব্যবহার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷
ছবি: bdnews24.com
ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য
রাজধানী ঢাকায় যে সব গাড়ি চলে তার অধিকাংশই ব্যক্তিগত৷ এ সব গাড়িকে যত্রযত্র যানজট সৃষ্টির জন্যও দায়ী করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গণপরিবহনে নৈরাজ্য
ঢাকার সমস্যা গণপরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য৷ মানসম্মত গণপরিবহনের অভাব তো রয়েছেই৷ যে গাড়িগুলো রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল৷ যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলা যেন নগরীর নিত্যদিনের চিত্র৷
ছবি: bdnews24.com
9 ছবি1 | 9
এ ধরনের ঘটনা তুলে ধরা গণমাধ্যমের জন্য কতটা জরুরি?
খুবই জরুরি৷ আমার মনে আছে, ২০১৩ সাল বা তার কিছু আগে-পরে নতুন সরকার এসে একটা কমিটি গঠন করে৷ যাতে দেখা যায় যে অসংখ্য মানুষকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে৷ আমি প্রথমদিকে দেখলাম, প্রায় ১ হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, যেগুলো আসলে রাজনৈতিক মামলা না৷ খুন, ডাকাতি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, ধর্ষণের মামলা, শিশু হত্যা....কী নেই! আমি মনে হয় এ নিয়ে শতাধিক রিপোর্ট করেছি৷ একটা সময় রাজনৈতিক দলের লোকজনই এসে বলেছেন যে, তাঁদের মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে না৷ চোর-ডাকাতদের মামলা টাকা-পয়সার বিনিময়ে তুলে নেয়া হচ্ছে৷ পরে সেই কমিটিই বাতিল করা হয৷ সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখলাম, জেলাখানায় থাকা প্রভাবশালীরা ২০ মাস, ২৫ মাস ধরে হাসপাতালে থাকে৷ হাসপাতালের এসি রুম, ফোনে কথা বলা সবই তারা করছে৷ শীর্ষ সন্ত্রাসী যোসেফ, ইয়াবা ব্যবসায়ী আমিন হুদা – এদের ব্যাপারে আমি রিপোর্ট করি৷ এ সব লেখার পর তিন দিনের মধ্যে সবাইকে আবার কারাগারে নেয়া হয়৷
ঠিক কতগুলো রিপোর্ট আপনি নিজে করেছেন?
আইনের ফাঁকফোকর বলেন আর অনিয়ম বলেন – এ ধরনের রিপোর্ট তো আমি নিজেই শতাধিক করেছি৷ সঠিক সংখ্যা হয়ত বলা সম্ভব হবে না৷ করেছি, করে যাচ্ছি৷ এটাই আমার কাজ৷