একাধিক তদন্তের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ প্রশ্ন উঠছে, তিনি আদৌ প্রথম কার্যকাল পূরণ করে পুনর্নিবাচনের পথে এগোতে পারবেন কিনা৷
বিজ্ঞাপন
ক্ষমতায় আসার প্রায় পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা কারণে একাধিক তদন্তের মুখে পড়ছেন৷ অন্তবর্তী সংসদ নির্বাচনের পর নিম্ন কক্ষে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর তদন্তের সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে৷ বলা বাহুল্য, এর ফলে ট্রাম্প নিজে অত্যন্ত বিরক্ত৷ তিনি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে এমন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন৷ তাঁর মতে, এর আগে অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন আক্রমণের মুখে পড়েননি৷
এই অবস্থায় সবার মানে একটাই প্রশ্ন – ট্রাম্প সবকিছু সামলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন কি? নাকি প্রথম কার্যকাল শেষ হবার আগেই ক্ষমতাচ্যুত হবেন তিনি? চাপের মুখে বিরক্ত হয়ে পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনাকল্পনা শোনা যাচ্ছে৷ ট্রাম্প নিজে অবশ্য অবিচল থেকে দ্বিতীয় কার্যকালের প্রচার আগেভাগেই শুরু করে দিয়েছেন৷
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মালারের তদন্তকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ রয়েছে৷ ২০১৬ সালে নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ট্রাম্প টিম রাশিয়ার সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগ রেখেছিল কিনা, এবং প্রেসিডেন্ট হবার পর ট্রাম্প সেই তদন্তে বাধা দিয়েছিলেন কিনা, প্রাক্তন এফবিআই প্রধান মালার সেই প্রশ্নের চূড়ান্ত জবাব দিতে পারবেন বলে বিভিন্ন মহল আশা করছে৷ এখনো পর্যন্ত ট্রাম্প-এর ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলেও সরাসরি প্রেসিডেন্ট-এর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ প্রকাশ্যে আসেনি৷
নিউ ইয়র্ক শহরে সরকারি কৌঁসুলিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেকটি তদন্তও চালাচ্ছেন৷ প্রচার অভিযানের সময় যৌন কেলেঙ্কারিতে ধামাচাপা দিতে ট্রাম্প তাঁর তৎকালীন ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোয়েনকে দিয়ে দুই নারীকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য অর্থ দিয়েছিলেন কিনা, সে বিষয়ে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে৷
মার্কিন কংগ্রেসেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত চলছে৷ এর মধ্যে নিম্ন কক্ষের আইন বিষয়ক কমিটি ৮১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে সোমবারের মধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শেষ করেছে৷ অসংখ্য নথিপত্র জমা পড়েছে বলে কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন৷ তবে প্রেসিডেন্টের দুই পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও এরিক ট্রাম্প, জামাই জ্যারেড কুশনার এবং প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা কোনো নথিপত্র জমা করেছেন কিনা, তা এখনো জানা যায়নি৷ ট্রাম্প নিজের পদের অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন কিনা এবং রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে তদন্তে বাধা দেবার চেষ্টা করেছেন কিনা, এই কমিটি তা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে৷ ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল এমন উদ্যোগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে৷
মালার তাঁর চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবার পর তার কতটা অংশ প্রকাশ্যে জানা যাবে, তাও স্পষ্ট নয়৷ এক্ষেত্রেও সংসদে বিরোধীরা গোটা রিপোর্ট প্রকাশের জন্য চাপ সৃষ্টি করার হুমকি দিয়েছে৷ তাছাড়া রিপোর্ট জমা পড়লে তার কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ ফাঁস হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
এসবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)
ডনাল্ড ট্রাম্প: ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট
রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এবং রিয়েলিটি টিভি স্টার হিসেবে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট৷ হোয়াইট হাউজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবার, সাম্রাজ্য
তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদের নিয়ে তোলা ছবি৷ এখানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং টিফানি, ছেলে এরিক এবং ডোনাল্ড জুনিয়র এবং নাতি কাই ও ডোনাল্ড জন থ্রি৷ তাঁর তিন বড় সন্তান ট্রাম্প অরর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিলিয়নিয়ার থেকে বিলিয়নিয়ার
১৯৮৪ সালে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিউ জার্সির ট্রাম্প প্লাজায় হারাহ’স ক্যাসিনো উদ্বোধন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এটা অন্যতম এক খাত যেখানে বিনিয়োগ করে বাপের টাকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া ট্রাম্প নিজেকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Lederhandler
বাপের টাকায় ব্যবসা শুরু
রিয়েল স্টেট সাম্রাজ্যের শুরুটা ট্রাম্প করেছিলেন তাঁর বাবা ফ্রিডরিকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে৷ তিনি তাঁর ছেলেকে শুরুতে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন৷ এবং তাঁর মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তাঁর তিন ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন৷
ছবি: imago/ZUMA Press
একটি নামের মধ্যে কী আছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং মার্কেটের উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন৷ নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে কখনো তিনি তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো আর্থিক কাগজপত্র প্রকাশ করেননি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সম্পদের পরিমাণ তিনি যা বলেন তাঁর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
‘খুব ভালো, খুব স্মার্ট’
ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেন একথা৷ তিনি সুপরিচিত সুপরিচিত ‘ওয়ার্টন স্কুল অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেলভেনিয়ায়’ লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.J. Harpaz
ক্যাপ্টেন ট্রাম্প
কলেজে পাঠানোর আগে ১৩ বছর বয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে পাঠানো হয়েছিল ট্রাম্পকে৷ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের আগেই একাডেমি থেকে একটি অফিসার’স ব়্যাংক অর্জন করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারাভিযানকালে তিনি জানান যে, তিনি স্কুলে কাঠামো এবং সামরিক সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/
ভিয়েতনাম যাওয়ার বদলে গোড়ালির চিকিৎসা
মিলিটারি শিক্ষা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি ট্রাম্প৷ পড়াশোনা করার সময় তিনি চারবার কালহরণ করেছিলেন এবং গোড়ালির চিকিৎসার জন্য একবার বিরতি নিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি কোনো সরকারি কার্যালয় বা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম স্ত্রী: ইভানা জেলনিউকোভা
১৯৭৭ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ইভানা জেলনিউকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প৷ তাঁদের তিন সন্তান হয়৷ ডোনাল্ড জন জুনিয়র, ইভানকা মারি এবং এরিক ফ্রেডরিক৷ তবে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কসহ নানা জটিলতায় ১৯৯০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ ইভানা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ট্রাম্পের ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ডোনাল্ড৷’
ছবি: Getty Images/AFP/Swerzey
দ্বিতীয় পরিবার
ট্রাম্প পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৩ সালে তাঁদের মেয়ে টিফানির জন্ম দেন ম্যাপেলস৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Minchillo
অন্য নারীদের সঙ্গে ট্রাম্প
ট্রাম্প সম্ভবত নিজের স্ত্রীর বদলে অন্য নারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ তিনি প্রায়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেতেন এবং তরুণী মডেলদের সঙ্গে ছবি তুলতেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ অবধি আয়োজিত সব ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার একজন অংশীদার ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনের আগে আগে এক অডিও প্রকাশ হয় যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর খ্যাতি তাঁকে কোনোরকম পরিণতির ভয় ছাড়াই মেয়েদের ‘গায়ে হাত দেয়ার’ সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Lemm
বাণিজ্য এবং বিনোদনের মিশ্রণ
ট্রাম্প জানতেন কীভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়৷ এই ছবিতে তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের’ একটি শোতে দেখা যাচ্ছে৷ রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য এপ্রেন্টিস’, যেখানে প্রার্থীদের নিয়োগ অথবা বাতিল করা হতো, ট্রাম্পকে খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছে৷ শোতে ট্রাম্পের প্রিয় লাইন ছিলে, ‘ইউ আর ফায়ার্ড!’
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
রাজনীতিতে ট্রাম্প
যদিও অতীতে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল, তারপরও ২০১৫ সালে সালের ১৬ জুলাই তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন৷ রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন৷’ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় তিনি অভিবাসী, মুসলমান, নারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রত্যেককে অপমান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াশিংটনের পথে
প্রেসিডেন্ট হিসেবেও হোয়াইট হাউসে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ ৷ সবশেষ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করল সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়েছে।