1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোগ ব্যাধি

২৬ মে ২০১২

আয়তন তার মাত্র কয়েক মিলিমিটার৷ ক্ষুদ্র রক্তচোষা এই কীটকে বলা হয় এঁটেল পোকা৷ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কম বেশি দেখা যায় আট পা বিশিষ্ট এই জীবটিকে৷ মশার মতোই নানা ধরনের মারাত্মক অসুখ-বিসুখ ছড়ায় প্রাণীটি৷

Eine Zecke sitzt auf einem Grashalm und wartet darauf, von vorbeikommenden Tieren oder Menschen abgestreift zu werden
ছবি: zecken.de

অতি ক্ষুদ্র এই এঁটেল পোকাকে অনেক সময় লক্ষ্যই করা যায় না৷ বনজঙ্গল, ঝোপঝাড় বা বাগানে ঘাপটি মেরে বসে থাকে তারা৷ সুযোগ পেলেই মানুষ বা জীব-জন্তুর ওপর চড়াও হয়ে রক্ত পান করে৷ হাইকে ট্রাপহোফ'এরও হয়েছিল এই রকম অভিজ্ঞতা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার কাঁধ ও হাঁটুতে ব্যথা শুরু হয়েছিল৷ সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করতেও খুব কষ্ট হতো৷ সকালে উঠতে হতো ফোলা আঙুল নিয়ে৷ দেখা দিত ডিপ্রেশন৷ যা ১০ মিনিট কিংবা দুই ঘণ্টা পর্যন্তও থাকতো৷ ইচ্ছা হতো কোনো সেতু থেকে ঝাঁপ দেই৷''

দেখা দেয় নানা উপসর্গ

চুল পড়ে যাওয়া, কথা আঁটকে যাওয়া, অসম্ভব ক্লান্তি আরো কতো রকমের যে উপসর্গ দেখা দেয় বলে শেষ করা যায় না৷ বনের কাছাকাছি এক শহরে সমাজ শিক্ষাবিজ্ঞানী হাইকে নিজের বাগানে কাজ করার সময় এঁটেল পোকার কামড় খান৷ বোরেলিয়া ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও ঘটে৷ প্রথম দিকে চিকিত্সকরা তা ধরতে পারেননি৷ ফলে সারা শরীরে বিস্তৃত হয় এই ব্যাকটেরিয়া৷ দেখা দেয় ক্রনিক অসুখ৷

দীর্ঘ এগারো বছর পর এক ডাক্তার শনাক্ত করতে পারেন রোগের কারণটি৷ শুরু হয় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিত্সা৷ হাইকে ট্রাপহোফ বলেন, ‘‘ভালো হতে হতে অনেক দিন লাগলেও ধীরে ধীরে রোগের সব লক্ষণ দূর হয়ে যায়৷ আমি ভেবেছিলাম, এটা সম্ভব নয়৷ মনে হতো, বয়সের জন্যই বুঝি এরকমটি হচ্ছে৷ এখন তো রীতিমত তারুণ্য অনুভব করছি৷''

হাইকে ট্রাপহোফ'এর ভাগ্য ভালো বলতে হবে৷ কেননা অনেকেরই কিন্তু বহু দিন ক্রনিক অসুখ থাকার পর অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না৷ তাই কাউকে এই কীটটি হুল ফোটালে বিষয়টি হালকাভাবে নেয়া ঠিক নয়৷ বিশেষ করে হুল ফোটানোর পর জায়গাটা লাল হয়ে গেলে বা জ্বরজ্বর ভাব দেখা দিলে৷ বনের ডা. ভাল্টার ব্যার্গহোফ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এরকম অবস্থায় সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে চিকিত্সা নিতে হবে, তা না হলে বছরের পর বছর কঠিন ক্রনিক অসুখ বিসুখ সহ্য করতে হবে৷ এতে জীবনের মান অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ হয়৷''

মানুষের ত্বকে বসে রক্ত চুষে নিচ্ছে এঁটেল পোকাছবি: eye of science/Oliver Meckes

মারাত্মক জীবাণুর বাহক

ডা. ব্যার্গহোফ এঁটেল পোকার কামড় খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়া বহু রোগীর চিকিত্সা করেছেন৷ এই পোকা মারাত্মক জীবাণুর বাহক৷ এই সব জীবাণু কীটটির অন্ত্র ও লালায় আস্তানা গাড়ে৷ তাই এই পোকা কাউকে হুল ফোটালে সেখানেও ঢুকে পড়ে এই সব জীবাণু৷ তবে হুল ফোটানোর সাথে সাথে নয়, বরং ধীরে ধীরে জীবাণুগুলি শরীরে ছড়ায়৷ ধরা না পড়লে এঁটেল পোকা কয়েক দিন ধরে রক্ত পান করতে থাকে আর এ সময়টাই সবচেয়ে বিপজ্জনক৷ এটিকে আবিষ্কার করার সাথে সাথেই দূর করা প্রয়োজন৷ খুব সাবধানে একটি চিমটি দিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হবে পোকাটিকে৷

জার্মানিতে এঁটেল পোকা বিশেষ করে বোরেলিয়া ব্যাকটেরিয়া ও এফএসএমই নামের ভাইরাসের বাহক৷ এই দেশটিতে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ বোরেলিয়া ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়৷ এফএসমই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা যায় ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও এশিয়ায়৷ এছাড়া আরো নানা রকমের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বাহকও এঁটেল পোকা৷ আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার মতো এক ধরনের জ্বর হয় এই পোকার মাধ্যমে৷ ভাল্টার ব্যার্গহোফ জানান, ‘‘ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখ বিসুখগুলি অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে চিকিত্সা করা যায়৷ তবে এঁটেল পোকা বাহিত ভাইরাসকে কাবু করার মতো কোনো ওষুধ এখন পর্যন্ত বের হয়নি৷''

ঝোপঝাড় বা বাগানে সাবধানতা

এফএসএমই ভাইরাসকে প্রতিহত করার জন্য টিকা দেয়া যায়৷ কিন্তু বোরেলিয়াসহ এঁটেল পোকা বাহিত অন্যান্য জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাবধান হওয়াটাই জরুরি৷ ডা. ভাল্টার ব্যার্গহোফের ভাষায়, ‘‘এঁটেল পোকার কামড় থেকে সাবধান হতে হলে উপযুক্ত কাপড়চোপড় পরা প্রয়োজন৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এটা এক সমস্যা৷ গরম আবহাওয়ায় স্বল্প পোশাকের সুযোগটা নিয়ে নেয় এই কীট৷''

এঁটেল পোকা গাছ গাছালিতে নয়, বরং লম্বা লম্বা ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকে৷ সেখানে ঘসা লাগলেই সুযোগটা নিয়ে নেয় তারা৷ হুল ফুটিয়ে দেয় শরীরে৷ কোনো ক্রিম বা স্প্রে দিলেও ঘাবড়ায় না৷ হাইকে ট্রাপহোফ বোরেলিয়োসিস রোগটি হওয়ার পর থেকে বাগানে কাজকর্ম করেন সতর্ক দৃষ্টি রেখে৷ তবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে ইচ্ছুক নন তিনি৷ হাইকের ভাষায়, ‘‘গ্রামাঞ্চলে বসবাস করতে চাইলে নাক মুখ ঢেকে চলফেরা করা সম্ভব নয়৷ আমি বাগানেও কাজ করি৷ কিন্তু কাজের পর সারা শরীর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি৷ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সন্ধ্যার সময় শরীরের আনাচকানাচ খুঁজে খুঁজে দেখি, যেখানে এই পোকা হৃষ্ট চিত্তে বসে হুল ফোটাতে ভালোবাসে৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ