সম্প্রতি বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের স্থান সেখানে আরো নিচে নেমেছে। সমীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারত।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব ক্ষুধাসূচকে ভারতের স্থান ছিল ১০৭ নম্বরে। এবছর তা আরো চার বেড়েছে। ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এখন ১১১ নম্বরে। শিশুদের অপুষ্টির হারের দিক থেকেও ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। দেশে শিশুদের অপুষ্টির হার ১৮ দশমিক সাত শতাংশ। গোটা বিশ্বে যা সর্বোচ্চ। ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, যে পদ্ধতিতে এই সমীক্ষা হয়েছে তা ত্রুটিযুক্ত। ভারতের পরিস্থিতি এত খারাপ নয়। সমীক্ষাটি অভিসন্ধিমূলক বলেও দাবি করা হয়েছে।
বেশি ক্ষুধার্ত মানুষ যে ১০ দেশে
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবারের বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশ করেছে৷ সেখানে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম৷ কোন কোন দেশে বেশি ক্ষুধার্ত মানুষ বাস করছে দেখুন ছবিঘরে৷
কীভাবে এই সূচক?
অপুষ্টির হার এবং পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম ওজন, কম উচ্চতা ও মৃত্যুর হার বিবেচনায় নিয়ে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রতিটি দেশের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স করা হয়েছে৷ এই সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হল শূন্য৷ স্কোর বাড়লে বুঝতে হবে, ক্ষুধার সূচকে সেই দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ আর স্কোর কমা মানে, সেই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (৫৩.৬)
এখানকার ৬৩ শতাংশ মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন৷ ২০১২ সাল থেকে জাতিগত সহিংসতা আর সংঘাতে এখানকার খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে৷ একশর মধ্যে ৫৩.৬ স্কোর পেয়ে ক্ষুধার রাজ্যে এদের পরিস্থিতি সবথেকে বেশি খারাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Delay
ইয়েমেন (৪৫.৯)
সংঘাতে জর্জরিত দেশটিতে মানবিক সংকট চলছে৷ দিন দিন খাদ্য নিরাপত্তহীনতা বেড়েই চলছে৷ দেশটির ১০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধায় কষ্ট করেন আর শিশুসহ প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
চাদ (৪২.২)
ক্রমাগত খরা আর প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে দেশটির মানুষ খাবার সংকটে পড়েন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দেশটিতে মারত্মকভাবে নানান প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে৷
ছবি: Reuters/Emmanuel Braun
মাদাগাস্কার (৪১.৫)
দেশটিতে বছরে গড়ে দেড়টি করে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে৷ এছাড়া তীব্র খরার সঙ্গে প্রকট বন্যা দেশটির অর্ধেক অঞ্চলকে গ্রাস করে৷ জাতিসংঘের ধারণা, দেশটির সাত লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তহীনতায় রয়েছে৷
ছবি: AP
জাম্বিয়া (৩৮.১)
দেশটির বেশিরভাগ কৃষক ফসল উৎপাদনে বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখানকার ফসল উৎপাদন মারত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে৷ বৃষ্টি, বন্যা আর জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷
ছবি: Imago Images/Zumapress
লাইবেরিয়া (৩৪.৯)
গত দুই বছরে চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে৷ এই দেশের ১.৮ মিলিয়ন মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন, আর ২.৯ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Jallanzo
হাইতি (৩৪.৭)
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেশি৷ ২০১০ সালের ভূমিকম্প এবং হারিকেন ম্যাথিউর চলমান প্রভাবসহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক সংমিশ্রণে ভুগছে দ্বীপ দেশটি৷
ছবি: Roberto Schmidt/AFP/Getty Images
পূর্ব তিমুর (৩৪.৫)
ছোট এই দ্বীপ দেশটি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম দরিদ্র৷ এই দেশের ১.২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তাহনীতায় ভুগছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জিম্বাবুয়ে (৩৪.৪)
চলমান খরা আর কয়েকটি প্রদেশে ঘূর্ণঝড়ের বিরূপ প্রভাবে দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরো বাড়ছে৷ খরা, ঘুর্ণিঝড় আর বন্যায় দেশটিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়৷ দেশটির ৩.৬ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
আফগানিস্তান (৩৩.৮)
কয়েক দশকের মধ্যে সম্প্রতি ভয়ঙ্কর খরার মুখে পড়ে দেশটি৷ গতবার প্রবল বৃষ্টি এবং তুষারপাত হওয়ায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়৷ দেশটির পাঁচ মিলিয়ন অর্থাৎ, ১৪ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে৷
ছবি: Gemeinfrei
বাংলাদেশের অবস্থান (২৫.৮)
১১৭টি দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম৷ ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৬ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৮৬, ৮৮ ও ৯০ নম্বরে৷ এবার বৈশ্বিক অবস্থানে বাংলাদেশের দুই ধাপ পেছানোর কারণ হলো অন্য দেশের দ্রুত গতিতে উন্নতি৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
12 ছবি1 | 12
সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির পরিস্থিতি ভারতের চেয়ে ভালো। পাকিস্তান আছে ১০২ নম্বরে। বাংলাদেশ ৮১ নম্বরে। নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ৬৯ এবং ৬০ নম্বরে। রিপোর্টের দাবি, ভারতে ১৬ দশমিক ছয় শতাংশ মানুষের যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর খাবার জোটে না। ১৫ থেকে ২৪ বছরের নারীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক এক শতাংশ রক্তাল্পতায় ভোগেন। পাঁচ বছরের নীচে শিশু মৃত্যুর হার তিন দশমিক এক শতাংশ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, মাত্র তিন হাজার স্যাম্পেল সাইজে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। ফলে সমীক্ষাটি ত্রুটিপূর্ণ। গোটা দেশের পরিস্থিতি এখানে উঠে আসেনি। বস্তুত, কেন্দ্রের দাবি, এদেশে শিশু অপুষ্টির হার সাত দশমিক দুই শতাংশের নিচে। বহুদিন ধরেই এই পরিসংখ্যান আছে। ফলে নতুন রিপোর্টের বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য সহমত নয় কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের তরফে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে, সরকারের অপারগতা স্পষ্ট হয়েছে রিপোর্টে। কেন্দ্র এখন সত্য ধামা চাপা দিতে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।