ক্ষুধার সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকলেও নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে৷
বিজ্ঞাপন
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট মঙ্গলবার চলতি বছরের ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক' প্রকাশ করেছে, তাতে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম৷ ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৬ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৮৬, ৮৮ ও ৯০ নম্বরে৷
ক্ষুধা ও অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত থাকলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান গত কয়েক বছর ধরে একই বৃত্তে আটকে আছে৷
অপুষ্টির হার, পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম ওজনের শিশুর হার, পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর হার- এই চারটি মাপকাঠিতে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রতিটি দেশের স্কোর হিসেব করে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) তৈরি করা হয়েছে৷
সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যু
গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রভুত অগ্রগতি হয়েছে৷ কমেছে শিশুমৃত্যুর হার৷ ইউনিসেফ-এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট দিচ্ছে এমন তথ্য৷ তারপরও এখনো যেতে হবে বহুদূর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত দেখুন৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
আড়াই দশকে কমেছে ৫৭ ভাগ
১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মারা যেত৷ ২০১৬ সালে সংখ্যাটি কমে ১৫ হাজার হয়েছে৷ অর্থাৎ আড়াই দশকে প্রায় ৫৭ ভাগ কমেছে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুমৃত্যুর হার৷
ছবি: AP
নবজাতকের মৃত্যুর হার
২০১৬ সালে সারাবিশ্বে ২৬ লাখ নবজাতক (এক মাস বয়সি বা তার কম) মারা গেছে৷ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার৷ এই সংখ্যা পাঁচ বছরের কম যত শিশু মারা যায় তার ৪৬ শতাংশ৷ অথচ ২০০০ সালে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ৷ তুলনামূলক হারে বাড়লেও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি হাজারে ২৫ বছরে ৩৭ থেকে কমে ১৯ হয়েছে৷
ছবি: DW/J. Abdullah
প্রথম মাসেই ঝুঁকি বেশি
জন্মের প্রথম মাসেই শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম মাসে প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯, যেখানে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত তা ১২ এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সেটি ১১৷ ইউনিসেফ বলছে, ১ থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেলেও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোর গতি খুবই শ্লথ৷
ছবি: imago/i Images/A. Parsons
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি
জনসংখ্যা বেশি, তাই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৯ ভাগ শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এরপর সাবসাহারান আফ্রিকায়, ৩৮ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে পাঁচ দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুমৃত্যু
যত নবজাতকের মৃত্যু হয় তার অর্ধেকই হয় পাঁচটি দেশে৷ এগুলো হলো, পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া৷ সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় এমন দশটি দেশের আটটিই আফ্রিকার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
সবচেয়ে কম জাপানে
জাপান শিশুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ সেখানে প্রতি ১ হাজার ১শ ১১ জন শিশুর মধ্য একজন প্রথম মাসে মারা যায়৷ এছাড়া আইসল্যান্ডে প্রতি হাজারে, সিঙ্গাপুরে প্রতি ৯০৯ জনে, ফিনল্যান্ডে প্রতি ৮৩৩ জনে, এস্তোনিয়া ও স্লোভেনিয়ায় প্রতি ৭৬৯ জনে, সাইপ্রাসে প্রতি ৭১৪ জনে এবং বেলারুশ, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ৬৬৭ জনে একজন নবজাতক মারা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
পার্থক্য কমাতে হবে
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে, মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে কমপক্ষে ৫০ গুণ খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে৷ এই পার্থক্য কমিয়ে আনা খুব দরকার বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ তাদের হিসেবে, যদি প্রতিটি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার রোধে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে পারে তাহলে ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি শিশুর জীবন বাঁচবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel/W. Dolder
চিকিৎসা আছে
ইউনিসেফ-এর গবেষণা অনুযায়ী, যেসব রোগে বেশির কম বয়সি শিশু (০-৫ বছর) মারা যায়, তার অধিকাংশেরই প্রমাণিত চিকিৎসা আছে এবং মোটেই ব্যয়বহুল নয়৷ তারা বলছে, বড় বাচ্চাদের (৫-১৪ বছর) চেয়ে ছোট বাচ্চারাই সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়৷ তবে বড় বাচ্চারা বেশি মারা যায় দুর্ঘটনা বা অসংক্রামক রোগে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
বাংলাদেশ ভালো করছে, তবে...
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে৷ আড়াই দশকে বাংলাদেশ পাঁচ বছরের কম শিশুমৃত্যু বছরে ২ রাখ ৪১ হাজার থেকে কমিয়ে ৬২ হাজারে নামিয়েছে৷ অর্থাৎ হার কমিয়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ৷ তবে নবজাতকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এখনো পৃথিবীর দশটি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়ে গেছে৷ এছাড়া এখনো বছরে ৮৩ হাজার শিশু জন্মের সময়েই মারা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Sh. Alam
9 ছবি1 | 9
এই সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হল শূন্য৷ স্কোর বাড়লে বুঝতে হবে, ক্ষুধার রাজ্যে সেই দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ আর স্কোর কমা মানে, সেই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে ধারাবাহিকভাবে৷ মোট স্কোর গতবারের ২৬.১ থেকে কমে হয়েছে ২৫.৮৷ তারপরও বাংলাদেশ বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে কারণ অন্যদের উন্নতি ঘটছে আরও দ্রুত গতিতে৷
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শিশুর প্রতিদিনের গ্রহণ করা খাদ্যের পুষ্টিমান গড়ে ১৮০০ কিলোক্যালরির কম হলে বিষয়টিকে ক্ষুধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷
ক্ষুধা সূচক বলছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ অপুষ্টির শিকার; পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ১৪ দশমিক ৪ শতাংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম; ওই বয়সি শিশুদের ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ শিশুর ওজন বয়সের অনুপাতে কম এবং পাঁচ বছরের কম বয়সি হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ৷
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা৷ ১৭.১ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান সূচকের ৬৬ নম্বরে৷ আর সাত দেশের মধ্যে ৩৩.৮ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তানের অবস্থান সূচকের ১০৮ নম্বরে৷
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে এগিয়ে থাকা অর্থনীতি ভারতের এই সূচকে পিছিয়ে থাকার মূল কারণ বিপুল জনসংখ্যা৷ খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত রাখলেও জনসংখ্যার বিপুল বিস্তারের তুলনায় তার গতি ধীর৷ ভারতে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ২০ দশমিক ৮ শতাংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম, যা প্রতিবেদনের ১১৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷