রবিবার হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া৷ বিশ্লেষকরা যেটাকে বলছেন, গত বছরের চেয়ে প্রায় ৯ গুণ শক্তিশালী৷ এই বোমার পরীক্ষার ফলে আবারো কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এই হাইড্রোজেন বোমাটি দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে জুড়ে দেওয়া যাবে৷ রবিবার উত্তরপূর্ব কিজু এলাকায় ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে ষষ্ঠ এ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানোর কথা জানানো হয়৷ শক্তিশালী বোমা
গত বছরের সেপ্টেম্বরে চালানো পঞ্চম পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে এবারেরটি ৯ দশমিক ৮ গুণ বেশি শক্তিশালী বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ৷ পিয়ংইয়ং বলছে, তাদের পরীক্ষা চালানো হাইড্রোজেন বোমাটি আনবিক বোমার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী৷
পিয়ংইয়ং-এর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ জানিয়েছে, দেশটির নেতা কিম জং উন পারমাণবিক অস্ত্র ইন্সটিটিউটে এ সব অস্ত্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি জানিয়েছেন বোমা তৈরির সব উপকরণের পুরোটাই তাঁর দেশে তৈরি৷
পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়ছে উত্তর কোরিয়ার
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার দাবি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা যে বাড়ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ রবিবার সকালে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ ‘আরও উন্নত প্রযুক্তির হাইড্রোজেন বোমা' তৈরির দাবি করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পানগেয়ি-রি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছেই ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূ-কম্পনের খবর দেয় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান৷
উত্তর কোরিয়ার মিসাইলের বিরুদ্ধে বেলুন যুদ্ধ
উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাব দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কর্মকর্তা অভিনব পন্থা নিয়েছেন৷ বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার মানুষদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Il Ryu
বাতাসের চেয়ে হালকা
ভারী বিস্ফোরক এবং দূরে আঘাত হানতে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া উত্তর কোরিয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কর্মকর্তা হালকা বেলুনের মাধ্যমে একধরনের অভিনব যুদ্ধ শুরু করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
বেলুনে কী আছে?
এসব বেলুনে আছে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন-এর কার্টুন আঁকা পোস্টার৷ এছাড়া ভেতরে গণতন্ত্রের আবেদন জানিয়ে লিফলেট, এ ছাড়া ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ভরে দক্ষিণ কোরিয়ার সোপ অপেরা, হলিউডের সিনেমা, ডকুমেন্টারি থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
বেলুনের বার্তা
দক্ষিণ কোরিয়ার এসব কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়াকে এই বার্তা পাঠাতে চান যে, গণতন্ত্র কতটা জরুরি এবং ভালো৷ দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের মানুষের জীবন-যাপন কতটা সহজ, এসব বোঝানোর জন্য খাওয়া-দাওয়ার প্যাকেট বেলুনের মধ্যে ভরে দেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Il Ryu
যুদ্ধের সূচনা
যাঁরা এই কার্যক্রম শুরু করেছেন, তাঁরা বলছেন, কিম জং উন-এর যে ভাবমূর্তি সেখানকার মানুষের মনে আছে, বাইরের পৃথিবীর তথ্যের মাধ্যমে তা প্রভাবিত করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
প্রতি বছর লাখো বেলুন
এই কর্মকর্তারা প্রতি বছর লাখো বেলুন এবং হাজারো ফ্ল্যাশ ড্রাইভ উত্তর কোরিয়ায় পাঠান৷ তাঁদের বদ্ধমূল ধারণা, এই বেলুনগুলো পেলে তা থেকে সেখানকার জনগণ যেসব তথ্য পাবে, তাতে তাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসবে৷ তার ফলে তাঁদের দ্বারা যে কোনো কিছু করা সম্ভব৷ এগুলো পাঠানোর জন্য কখনো কখনো তাঁরা চোরের সাহায্য নিয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Il Ryu
বেলুন ওড়ানোও বিপজ্জনক
বেলুন ওড়ানোটা একটা খেলা মনে হতে পারে, কিন্তু এ ধরনের ড্রাইভ ও অন্যান্য জিনিস সমৃদ্ধ বেলুনকে উত্তর কোরিয়া মোটেও খেলনা হিসেবে দেখবে না৷ উত্তর কোরিয়ার সরকার এ ধরনের কাজের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
উত্তর কোরিয়ার বেলুন
উত্তর কোরিয়া যদিও অন্যদের এ ধরনএর বেলুন ওড়ানোয় নাখোশ হতে পারে, কিন্তু নিজেরা এমন লিফলেট বিতরণে ওস্তাদ৷ প্রতি বছর উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় হাজার হাজার লিফলেট ছোড়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
বেলুনের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব
আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও বেলুন এবং লিফলেট নিজের দেশের ভেতরে ছড়াতো৷ কিন্তু বর্তমানে তারা এটা বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/L. Jin-man
বেলুনের ফলে কী প্রভাব পড়ে?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ওপর এসবের কোনো প্রভাবই পড়ে না৷ উত্তর কোরিয়ায় গ্রামবাসীরা এই বেলুনগুলো পেলে সেগুলো নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়৷
ছবি: Picture alliance/dpa/Uncredited/KRT/AP
দক্ষিণ কোরিয়ার আশা
উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে নানা তর্জন-গর্জন সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়া আশা ছাড়েনি৷ নতুন রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইনকে উদার হিসেবে পরিচিত৷ তাঁর আশা, আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব৷
ছবি: Reuters/Jung Yeon-Je
10 ছবি1 | 10
চীনের আর্থকোয়েক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও উত্তর কোরিয়ার ভূমিকম্প ‘বিস্ফোরণের কারণে' সৃষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করছে৷ প্রথম কম্পনের পর ৪ দশমিক ৬ মাত্রার 'আফটার শক' অনুভূত হয়৷ প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-জরিপ অধিদপ্তর ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৬ মাত্রার বললেও পরে সেটি বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার করা হয়৷ কম্পনের শক্তির কারণে একে উত্তর কোরিয়ার চালানো সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷ প্রতিক্রিয়া
কম্পনের পরপরই জরুরি বৈঠকে বসে দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিল৷ দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষার কেন্দ্রস্থল ও আশেপাশে আজ কৃত্রিম ভূমিকম্প হয়েছে, যা দেশটির ষষ্ঠতম পরমাণু পরীক্ষা বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
জাপানের প্রধানমন্ত্রী এই পরীক্ষার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, পিয়ংইয়ং-এর এই আচরণ ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য'৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আবহাওয়া সংস্থার দেওয়া তথ্যসহ নানা তথ্য–উপাত্ত পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার পর সরকার নিশ্চিত করছে যে উত্তর কোরিয়া পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে৷''
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া৷ এরপরও তারা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মাত্রার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে আসছে৷ গত সপ্তাহে তাদের ছোড়া হোয়াসং-১২ ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)